বিবিধফাতওয়া  নং  ১০৮

কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পেলে কি কারো তওবা কবুল হবে না?

কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পেলে কি কারো তওবা কবুল হবে না?

কিয়ামতের আলামত প্রকাশ পেলে কি কারো তওবা কবুল হবে না?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

কিয়ামতের কোনো আলামত প্রকাশ পেলে কি তওবা করলে তওবা কবুল হবে না? বা কেউ ঈমান আনলে কি তার ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না?

প্রশ্নকারী- আব্দুল্লাহ

ঠিকানা- অজ্ঞাত

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

কেয়ামতের পূর্বে ছোট বড় অনেকগুলো আলামত প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পর আর কারো তাওবা কবুল হবে না এবং কোনো কাফের ঈমান গ্রহণ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যান্য আলামতগুলোর ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلِ انْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ”.-سورة الانعام 158

“তারা কি (ঈমান আনার জন্য) এরই অপেক্ষা করছে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা আসবে বা তোমার প্রতিপালক নিজে আসবেন অথবা তোমার প্রতিপালকের কিছু নিদর্শন আসবে? যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোনো নিদর্শন এসে যাবে, সেদিন এমন ব্যক্তির ঈমান তার কোনো কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান গ্রহণ করেনি কিংবা নিজ ঈমানের সঙ্গে কোনো সৎকর্ম অর্জন করেনি। (সুতরাং তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় আছি”। -সূরা আনআম (০৬) : ১৫৮

আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহ. (৩১০ হি.)  বলেন-

” وأولى الأقوال بالصواب في ذلك، ما تظاهرت به الأخبار عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: ذلك حين تطلع الشمس من مغربها”. –جامع البيان ج: 12، ص: 266، ط: مؤسسة الرسالة

“এক্ষেত্রে সঠিক কথা হল সেটা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক হাদীস দ্বারা যার সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, এটা যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে”। -জামিউল বায়ান: ১২/২৬৬

ইমাম বগভী রহ. (৫১০ হি.) বলেন-

“{أو يأتي بعض آيات ربك} يعني طلوع الشمس من مغربها، عليه أكثر المفسرين”. –معالم التنزيل في تفسير القرآن ج: 3، ص: 207، ط: دار طيبة

“{অথবা তোমার প্রতিপালকের কিছু নিদর্শন আসবে}  অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া। এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামের মত”। -মা’আলিমুত্তানযিল ফি তাফসীরিল কুরআন: ৩/২০৭

এছাড়া একাধিক হাদীসেও বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে যে, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়াই কেয়ামতের এমন নিদর্শন, যার পর থেকে আর তাওবা কবুল হবে না। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” لا تقوم الساعة حتى تطلع الشمس من مغربها، فإذا رآها الناس آمن من عليها، فذاك حين {لا ينفع نفسا إيمانها لم تكن آمنت من قبل}”. –صحيح البخاري 4635، صحيح مسلم 157

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত হবে না। মানুষ যখন তা দেখবে, তখন পৃথিবীর সকলেই ঈমান নিয়ে আসবে। কিন্তু এটা সেই সময়, যখন {এমন কোনো ব্যক্তির ঈমান তার কোনো কাজে আসবে না, যে পূর্বে ঈমান আনেনি}”। -সহীহ বুখারী: ৪৬৩৫, সহীহ মুসলিম: ১৫৭

আরেকটি হাদীসে এসেছে-

عن أبي موسى، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: “إن الله عز وجل يبسط يده بالليل ليتوب مسيء النهار، ويبسط يده بالنهار ليتوب مسيء الليل، حتى تطلع الشمس من مغربها”. –صحيح مسلم 2759

আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তায়ালা রাতের বেলা তাঁর (রহমতের) হাত প্রসারিত করে রাখেন, যেন দিনের বেলা অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবা করে নেয়, আবার দিনের বেলা তাঁর (রহমতের) হাত প্রসারিত করে রাখেন, যেন রাতের বেলা অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবা করে নেয়। (এ বিষয়টি) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে”। -সহীহ মুসলিম: ২৭৫৯

অপর হাদীসে এসেছে-

عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها، تاب الله عليه”. –صحيح مسلم 2703

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগে তাওবা করবে, আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করবেন”। -সহীহ মুসলিম: ২৭০৩

শেষোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. (৬৭৬ হি.) বলেন-

قوله صلى الله عليه وسلم “من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها تاب الله عليه”: قال العلماء: هذا حد لقبول التوبة، وقد جاء في الحديث الصحيح: إن للتوبة بابا مفتوحا فلا تزال مقبولة حتى يغلق، فإذا طلعت الشمس من مغربها أغلق وامتنعت التوبة على من لم يكن تاب قبل ذلك، وهو معنى قوله تعالى: “يوم يأتي بعض آيات ربك لا ينفع نفسا إيمانها لم تكن آمنت من قبل أو كسبت في إيمانها خيرا”. –شرح النووي على مسلم ج: 17، ص: 25، ط: دار إحياء التراث العربي

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগে তাওবা করবে, আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করবেন’, উলামায়ে কেরাম বলেন, তাওবা কবুল হওয়ার এটা শেষ সীমা। একটি সহীহ হাদীসে এসেছে, ‘তাওবার জন্য একটি খোলা দরজা আছে, এই দরজাটি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত তাওবা কবুল হবে। পশ্চিম দিক থেকে যখন সূর্য উদিত হবে তখন এই দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে এবং যারা আগে তাওবা করেনি, তাদের তাওবা আর গৃহিত হবে না। হাদীসের এই বক্তব্যটি আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত বাণীর অর্থ ধারণ করছে, {যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোনো নিদর্শন এসে যাবে, সেদিন এমন ব্যক্তির ঈমান তার কোনো কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা নিজ ঈমানের সাথে কোনো সৎকর্ম অর্জন করেনি।} -শরহে মুসলিম: ১৭/২৫

فقط، والله أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

০২-০২-১৪৪২ হি.

২০-০৯-২০২০ ঈ.

আরো পড়ূন
বারবার তাওবা ভঙ্গ করলে কি তাওবার রাস্তা একদম বন্ধ হয়ে যায়?

Related Articles

Back to top button