বিবিধফাতওয়া  নং  ৩৭

সালাফদের অনুসরণ করব, না আঞ্চলিক মাযহাব এর?

সালাফদের অনুসরণ করব, না আঞ্চলিক মাযহাব এর?

সালাফদের অনুসরণ করব, না আঞ্চলিক মাযহাব এর?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

এক. আমি শায়েখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ.-এর মাজহাবি ইখতিলাফের ওপর লেখা প্রবন্ধটি পড়েছি। আলহামদুলিল্লাহ বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, আমি যদি বাড়িতে একা একা সালাত আদায় করি বা অন্য কোনো আমল করি, তাহলে কি আমি সালাফদের অনুসরণ করতে পারব? নাকি এখানেও আঞ্চলিক মাযহাব বা প্রচলিত নিয়মেরই অনুসরণ করব? বাসা-বাড়িতে তো আর কেউ আমাকে দেখছে না, ফলে ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে বা কেউ আমার থেকে দূরে সরে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনা নেই। তাহলে আমি কি এটা করতে পারি?

দুই. আপনাদের নিকট আমার নিবেদন, এই সাইটে প্রকাশিত অন্যান্য ভাইদের প্রশ্নের উত্তরগুলোও যেন আমরা দেখতে পারি সেজন্য একটি আইকন রাখলে ভালো হত। তাহলে ওই সব প্রশ্নের উত্তরগুলো থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারতাম।

উত্তর:  

এক. আমরা মূলত কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ করব। আর কোরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা নিব সালাফ থেকে। সুতরাং কেউ যদি নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরামের ফতোয়া অনুযায়ী আঞ্চলিক মাযহাব অনুসরণ করেন, তিনিও মূলত সালাফের ব্যাখ্যা অনুসারে কোরআন-সুন্নাহরই অনুসারী এবং সালাফেরই অনুসারী। এভাবে আঞ্চলিক মাযহাবের অনুসরণ করলে, তিনি সালাফের অনুসারী নয়, এমন ধারণা করা নিতান্তই অজ্ঞতা ও কঠিন রকমের ভুল। কারণ, মৌলিকভাবে কোনো মাযহাবই কোরআন-সুন্নাহ ও সালাফের আদর্শের বাইরে নয়। যদিও প্রত্যেক মাযহাবের ইমামেরই বিচ্ছিন্ন কিছু ভুল আছে; যা মানুষ মাত্রই থাকে এবং থাকা জরুরিও। কিন্তু মাযহাবের পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম সেগুলো চিহ্নিত করে, তা পরিহার করেছেন।

তবে আপনার উদ্দেশ্য যদি এমন হয় যে, আমি যে মাযহাবের অনুসরণ করি, কোনো মাসআলায় যদি অন্য মাযহাবের মত আমার কাছে দলিলের দিক থেকে অগ্রগণ্য মনে হয়, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে তা আমল করতে পারব কি না?

এ প্রশ্নের উত্তর হল, আপনি যদি বিজ্ঞ আলেম না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এই মনে হওয়ার ভিত্তি হবে কিছু অনুবাদ গ্রন্থ, কিছু লেকচার বা এ জাতীয় কিছু জিনিস, যা শরীয়তের মূল উৎস নয় এবং ফিকহেরও মূল উৎস নয়। যাদের বই বা লেকচার থেকে গ্রহণ করবেন, তাদের কেউ হয়তো যোগ্যই নন, যদিও আপনি অনেক সূত্র দেখিয়ে বলতে চাইবেন, তিনি যোগ্য, কিন্তু বাস্তবতা হল, আপনি তাকে যোগ্য ভেবে ভুল করেছেন। আবার কেউ হয়তো যোগ্য, কিন্তু তিনি আলোচনায় শুধু ততটুকু অংশই এনেছেন, যতটুকু সাধারণ মানুষের প্রয়োজন, বাকি আলোচনা তিনি করেননি। এসব উৎস থেকে ফিকহ ফতোয়ার নীতির আলোকে বিষয়টির পূর্ণ অধ্যয়ন কখনোই সম্ভব নয়, দলিলের আলোকে অগ্রগণ্যতা যাচাইয়ের জন্য যা অপরিহার্য বিষয়। বস্তুত একটি মাসআলা আসলেই দলিলের আলোকে অগ্রগণ্য কি না, তা আরবী ভাষা, তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস, ফিকহ, উসূলে ফিকহসহ এরকম আরও অনেকগুলো বিষয়ের আলোকে বিচার্য হয়। সুতরাং এগুলোর জ্ঞান ছাড়া শুধু কারো লেকচার শুনে বা বই পড়ে, কোনো একটি মতকে অগ্রগণ্য মনে হওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

তাছাড়া যেসব মাসআলায় দুই মাযহাবে ভিন্নমত রয়েছে, সেগুলোতে ভিন্ন মাযহাবের ওপর আমল করার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তাতে এমন শর্তও আছে, যাতে তাঁদের কারোই দ্বিমত নেই। আপনি হয়তো কারো বয়ান কিংবা বই পড়ে সেই মাযহাবের মতটি অগ্রগণ্য মনে করলেন, কিন্তু তা আমল করার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, তা সেই বয়ানে বা বইয়ে উল্লেখ করা হয়নি, তখন এমনও হতে পারে যে, আপনার এ আমল কোনো মাযহাব অনুযায়ীই বিশুদ্ধ হবে না।

সুতরাং নির্জনে একাকি অবস্থায়ও আপনি ভিন্ন মাযহাবের কোনো মতের ওপর আমল করতে চাইলে, সুনির্দিষ্ট সেই আমলটিতে তার অবকাশ আছে কি না? তা আসলেই দলিলের আলোকে অগ্রগণ্য কি না? থাকলে কীভাবে আমল করতে হবে? ইত্যাদি বিষয়গুলো একজন নির্ভরযোগ্য, মুত্তাকি ও বিজ্ঞ আলেমের কাছে পেশ করে তাঁর থেকে বিস্তারিত জেনে নেয়া জরুরি। শুধু আপনার কাছে অগ্রগণ্য মনে হওয়া এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।

দুই. অন্য ভাইদের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখার যে আবেদন করেছেন, এ বিষয়ে বলব, আমাদের কাছে পাঠানো সবার সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই আমরা সকল পাঠকের জন্য fatwaa.org তে প্রকাশ করছি আলহামদুলিল্লাহ।

আপনি মূল পাতার ওপরে বাম দিকে ‘ফাতওয়া’ শব্দটিতে ক্লিক করলে একে একে সবগুলো ফাতওয়াই [নিচের Next Page এ ক্লিক করতে থাকলে] দেখতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

فقط. والله تعالى اعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১ লা যুলকা’দাহ, ১৪৪১ হি.

২৩ শে জুন, ২০২০ ইং

আরো পড়ূন
সাধারণ মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য কি যেকোনো আলেমের ওপরই আস্থা রাখা যাবে?

Related Articles

Back to top button