জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ১৩৮

কাফের নারী ও শিশুদের হত্যা করা কি সর্বাবস্থায়ই নিষিদ্ধ?

কাফের নারী ও শিশুদের হত্যা করা কি সর্বাবস্থায়ই নিষিদ্ধ?

কাফের নারী ও শিশুদের হত্যা করা কি সর্বাবস্থায়ই নিষিদ্ধ?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

আমরা জানি, যুদ্ধের ময়দানে কাফের নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী -যারা যুদ্ধ করার উপযুক্ত নয়- তাদেরকে হত্যা করা নাজায়েয। এখন আমার জানার বিষয় হল, এরা যদি কোনোভাবে মুজাহিদদের বিপক্ষে কাফেরদের সহায়তা করে, তাহলেও কি এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে? না, তখন তাদেরকে হত্যা করা যাবে?

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বিমান হামলা ইত্যাদিতে প্রায়ই নারী শিশু নিহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আবার তাদেরকে পৃথক করে শুধু টার্গেটের ওপর আক্রমণ করাও সম্ভব হয় না, এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? এবং তাদের কেউ নিহত হলে, এর বিধান কী? সবিস্তারে জানানোর অনুরোধ রইল।

নিবেদক

আব্দুল্লাহ হাসান

 

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

حامدا ومصليا ومسلما

সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই! আল্লাহ তা’য়ালা আপনাদের বিজয়ী করুন এবং শরীয়ত সম্মতভাবে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন।

নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী; এক কথায় যারা স্বাভাবিকভাবে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়, তাদেরকে হত্যা করা শরীয়তে নিষেধ। তবে তারা যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, তাহলে অন্যান্য কাফেরদের মতো তারাও হত্যার উপযুক্ত হয়ে যায়। তখন তাদের হত্যা করতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন তারা যদি জান-মাল দিয়ে, উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে, গোয়েন্দাগিরি করে বা যুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ দিয়ে বা অন্য যে কোনোভাবে মুজাহিদদের বিপক্ষে কাফেরদের যুদ্ধে কোনরূপ সাহায্য করে, তাহলে তাদের হত্যা করা যাবে। অবশ্য নাবালেগ শিশু ও পাগলকে শুধু যুদ্ধরত ও সহযোগিতারত অবস্থায়ই হত্যা করা যাবে। বন্দী করার পর হত্যা করা যাবে না। বাকিদেরকে উভয় অবস্থায়ই হত্যা করা যাবে।

আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন,

[فصل في بيان من يحل قتله من الكفرة ومن لا يحل] وأما بيان من يحل قتله من الكفرة ومن لا يحل، فنقول: الحال لا يخلو إما أن يكون حال القتال، أو حال ما بعد الفراغ من القتال، وهي ما بعد الأخذ والأسر؛

أما حال القتال فلا يحل فيها قتل امرأة ولا صبي، ولا شيخ فان، ولا مقعد ولا يابس الشق، ولا أعمى … ولو قاتل واحد منهم قتل، وكذا لو حرض على القتال، أو دل على عورات المسلمين، أو كان الكفرة ينتفعون برأيه، أو كان مطاعا، وإن كان امرأة أو صغيرا؛ لوجود القتال من حيث المعنى.

وقد روي «أن ربيعة بن رفيع السلمي – رضي الله عنه – أدرك دريد بن الصمة يوم حنين، فقتله وهو شيخ كبير كالقفة، لا ينفع إلا برأيه، فبلغ ذلك رسول الله – صلى الله عليه وسلم – ولم ينكر عليه»

والأصل فيه أن كل من كان من أهل القتال يحل قتله، سواء قاتل أو لم يقاتل، وكل من لم يكن من أهل القتال لا يحل قتله إلا إذا قاتل حقيقة أو معنى بالرأي والطاعة والتحريض، وأشباه ذلك على ما ذكرنا…

 وأما حال ما بعد الفراغ من القتال، وهي ما بعد الأسر والأخذ، فكل من لا يحل قتله في حال القتال لا يحل قتله بعد الفراغ من القتال، وكل من يحل قتله في حال القتال إذا قاتل حقيقة أو معنى، يباح قتله بعد الأخذ والأسر إلا الصبي، والمعتوه الذي لا يعقل، فإنه يباح قتلهما في حال القتال إذا قاتلا حقيقة ومعنى، ولا يباح قتلهما بعد الفراغ من القتال إذا أسرا، وإن قتلا جماعة من المسلمين في القتال؛ لأن القتل بعد الأسر بطريق العقوبة، وهما ليسا من أهل العقوبة، فأما القتل في حالة القتال فلدفع شر القتال، وقد وجد الشر منهما فأبيح قتلهما لدفع الشر، وقد انعدم الشر بالأسر، فكان القتل بعده بطريق العقوبة، وهما ليسا من أهلها والله – سبحانه وتعالى أعلم. اهـ

“অধ্যায়: যেসব কাফেরকে হত্যা করা জায়েয এবং যাদের হত্যা করা জায়েয নয়ঃ

এ সম্পর্কে আমরা বলব, এক্ষেত্রে দুটি অবস্থা। যুদ্ধরত অবস্থা এবং যুদ্ধ থেকে ফারেগ হওয়ার পর গ্রেফতার ও বন্দী করা অবস্থা।

যুদ্ধ চলাকালে নারী, শিশু, অতিশয় বৃদ্ধ, বিকলাঙ্গ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং অন্ধকে… হত্যা করা জায়েয নেই। তবে এদের কেউ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করা হবে। এমনিভাবে যদি তাদের কেউ যুদ্ধে উৎসাহ দেয়, মুসলমানদের বিপক্ষে গোয়েন্দাগিরি করে, কাফেররা তার মতামত দ্বারা লাভবান হয় অথবা সে নেতৃস্থানীয় হয় -হোক সে নারী বা শিশু- তাহলে পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার কারণে তাকেও হত্যা করা হবে।

এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত রবিআ ইবনে রাফি আসসুলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু হুনাইন যুদ্ধের দিন দুরাইদ ইবনে সিম্মাহকে বাগে পেয়ে হত্যা করেন। অথচ তখন সে ছিল ক্ষীণকায় ও অতিশয় বৃদ্ধ। তার বুদ্ধি-পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে উপকৃত হওয়ার পথ তাদের ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি কোন আপত্তি করেননি।

এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, যে কেউ যুদ্ধ করার উপযুক্ত, সে যুদ্ধ করুক বা না করুক- তাকে হত্যা করা জায়েয। আর যে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়, তাকে হত্যা করা নাজায়েয। তবে যদি তারা সরাসরি যুদ্ধে আসে অথবা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে, কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হওয়ার কারণে কিংবা উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে লড়াইয়ে অংশ নেয়, তাহলে তাদের হত্যা করা জায়েয।

আর বন্দী করার পরের বিধান হল- যাকে যুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা জায়েয নেই, তাকে বন্দী করার পরও হত্যা করা জায়েয নেই। যাদেরকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে যুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা জায়েয, তাদের মধ্য থেকে শিশু ও পাগল ছাড়া বাকি সকলকে বন্দী করে আনার পরও হত্যা করা জায়েয। পক্ষান্তরে এ দুই শ্রেণিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধে লিপ্ত অবস্থায় হত্যা করা যাবে; কিন্তু যুদ্ধের পর বন্দী অবস্থায় তাদেরকে হত্যা করা যাবে না- যদিও ইতিমধ্যে তারা অনেক মুসলমানকে হত্যা করুক না কেন। কারণ, বন্দী করার পর হত্যা করা হয় শাস্তিরূপে। কিন্তু পাগল ও শিশু শাস্তির পাত্র নয়। পক্ষান্তরে যুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা হয় তাদের যুদ্ধের অনিষ্ট প্রতিহতকরণার্থে। যুদ্ধ চলাকালে যেহেতু এদের থেকে অনিষ্ট পাওয়া গেছে, তাই অনিষ্ট প্রতিহতকরণার্থে হত্যা করা জায়েয। আর বন্দী হওয়ার ফলে যেহেতু অনিষ্ট প্রতিহত হয়ে গেছে, এখন হত্যা করলে তা হবে শাস্তিরূপে। কিন্তু এরা শাস্তির পাত্র নয়।”

–বাদায়িউস সানায়ি’: ৬/৬৩-৬৪

হিদায়া গ্রন্থকার (৫৯৩ হি.) বলেন,

ولا يقتلوا امرأة ولا صبيا ولا شيخا فانيا ولا مقعدا ولا أعمى لأن المبيح للقتل عندنا هو الحراب ولا يتحقق منهم ولهذا لا يقتل يابس الشق والمقطوع اليمني والمقطوع يده ورجله من خلاف … وقد صح [ أن النبي عليه الصلاة و السلام نهى عن قتل الصبيان والذراري ] و [ حين رأى رسول الله صلى الله عليه و سلم امرأة مقتولة قال : هاه! ما كانت هذه تقاتل فلم قتلت؟ ] قال : إلا أن يكون أحد هؤلاء ممن له رأي في الحرب أو تكون المرأة ملكة لتعدي ضررها إلى العباد وكذا يقتل من قاتل من هؤلاء دفعا لشره ولأن القتال مبيح حقيقة ولا يقتلوا مجنونا لأنه غير مخاطب إلا أن يقاتل فيقتل دفعا لشره غير أن الصبي والمجنون يقتلان ما داما يقاتلان وغيرهما لا بأس بقتله بعد الأسر لأنه من أهل العقاب لتوجه الخطاب نحوه. اهـ

“মুজাহিদগণ নারী, শিশু, অতিশয় বৃদ্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও অন্ধকে হত্যা করবে না। কেননা আমাদের মতে হত্যার কারণ হচ্ছে লড়াই। আর তা এদের থেকে পাওয়া যায় না। … সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আরো বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত এক মহিলাকে দেখে বললেন, ‘আহ! এ তো লড়াই করত না। তাকে কেন হত্যা করা হল?’

তবে এদের কেউ যদি যুদ্ধ বিষয়ে মতামত প্রদানের যোগ্য হয়, কিংবা মহিলা যদি রাষ্ট্রপ্রধান হয়, তাহলে আল্লাহর বান্দারা তাদের অনিষ্টের শিকার হওয়ায় তাদের হত্যা করা যাবে। এমনিভাবে এদের যারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করবে, অনিষ্ট প্রতিহতকরণার্থে তাকেও হত্যা করা যাবে। অধিকন্তু যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াই তো মূলত হত্যার বৈধতা প্রদায়ক।

পাগলকে হত্যা করবে না। কেননা, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বিধানে আদিষ্ট নয়। অবশ্য যুদ্ধে শরীক হলে অনিষ্ট প্রতিহতকরণার্থে তাকেও হত্যা করা হবে।

তবে শিশু এবং পাগলকে শুধু যুদ্ধরত অবস্থায় হত্যা করা যাবে। আর অন্যদেরকে বন্দী করার পরও হত্যা করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আল্লাহর বিধানে আদিষ্ট হওয়ায় তারা শাস্তির উপযুক্ত।” -আলহিদায়া: ২/৩৪০-৩৪১

ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা ইত্যাদির মতো যেসব হামলায় সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট নির্ণয় করে শুধু টার্গেটের উপর আক্রমণ করা প্রায় অসম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে যাদেরকে হত্যা করা নিষেধ, তারা আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যথাসম্ভব তাদেরকে রক্ষা করে আক্রমণ করার চেষ্টা করবে। সম্ভাব্য চেষ্টার পরও যদি তারা আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে এজন্য কেউ দায়ী হবে না। আর এমন লোক নিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আক্রমণ থেকেও বিরত থাকা যাবে না। হাদীসে এসেছে-

سئل النبي صلى الله عليه و سلم عن الدار من المشركين؟ يبيتون فيصيبون من نسائهم وذراريهم فقال هم منهم

“রাতের আঁধারে মুশরিকদের ভূমিতে অতর্কিত আক্রমণের ফলে আক্রান্ত নারী-শিশুদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘ওরাও ওদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত’।” -সহীহ মুসলিম:২/৮৪, হাদীস নং: ৪৬৪৭

অর্থাৎ এ অবস্থায় ওদের বিধান ওদের মুশরিক বাপ দাদারই অনুরূপ। কাজেই তারা আক্রান্ত হলে তার দায় আমাদের উপর বর্তাবে না এবং তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আক্রমণও বন্ধ রাখা যাবে না।

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মাযিরি রহ. (৫৩৬ হি.) বলেন,

المراد بقوله “هم منهم” أنّ أحكام الكفّار جارية عليهم في مثل هذا، والدّار دار كفر بكل من فيها منهم ومن ذراريهم. وإن اعتُرض هذا بالنّهي عن قتل النّساء والولدان قلنا: هذا وارد فيهم إذا لم يتميّزوا وقتلوا من غير قصد لقتلهم بل كان القصد قتل الكبار فوقعوا في الذّراري من غير عمد ولا معرفة، والأحاديث المتقدمة وردت فيهم إذا تميّزوا. اهـ

“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী ‘ওরাও ওদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত’ দ্বারা উদ্দেশ্য, এক্ষেত্রে ওদের উপর কাফেরদের বিধানই বর্তাবে। কাফের এবং তাদের সন্তান-সন্ততি সকলকে নিয়েই দারুল কুফর। এখানে যদি আপত্তি করা হয় যে, অন্য হাদীসে নারী-শিশু হত্যায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাহলে বলব, (নারী-শিশু হত্যার বৈধতা প্রদানকারী) এ হাদীসের প্রয়োগক্ষেত্র হচ্ছে, যখন তারা পৃথক ও আলাদা না থাকে এবং তাদেরকে টার্গেট বানিয়ে হত্যা না করা হয় বরং উদ্দেশ্য থাকে যোদ্ধাদের হত্যা করা, কিন্তু অনিচ্ছায় বা অজান্তে নারী ও শিশুরাও হত্যার শিকার হয়ে যায়। আর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত পূর্ববর্তী হাদীসগুলোর ক্ষেত্র হল, যখন নারী ও শিশুরা যোদ্ধাদের থেকে পৃথক ও আলাদা থাকে।” –আলমু’লিম: ৩/১১

দারুল হারবে সাধারণত মুসলমানও থাকে এবং হামলা করলে তারাও নিহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতদসত্ত্বেও ফুকাহায়ে কেরাম সর্বসম্মতভাবে সেখানে আক্রমণ করা বৈধ বলেছেন এবং একারণে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১ হি.) বলেন,

وجه الإطلاق أمران. الأول أنا أمرنا بقتالهم مطلقا، ولو اعتبر هذا المعنى انسد بابه، لأن حصنا ما أو مدينة قلما تخلو عن أسير مسلم فلزم من افتراض القتال مع الواقع من عدم خلو مدينة أو حصن عادة إهدار اعتبار وجوده فيه، وصار كرميهم مع العلم بوجود أولادهم ونسائهم فإنه يجوز إجماعا مع العلم بوجود من لا يحل قتله فيهم واحتمال قتله وهو الجامع. [فتح القدير:5\431]

“ব্যাপক আক্রমণ বৈধ হওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নিঃশর্ত আদেশ দেয়া হয়েছে। এখন যদি আমরা কাফেরদের ভূমিতে মুসলমান থাকার বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে জিহাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কেননা এমন দূর্গ বা শহর খুব কমই থাকে, যেখানে কোনো মুসলিম বন্দী থাকে না। সাধারণত কোন শহর বা দূর্গ মুসলিম বন্দী থেকে মুক্ত না থাকা সত্ত্বেও জিহাদ ফরজ হওয়া থেকে আবশ্যিকভাবে এটাই সাব্যস্ত হয়ে যে, মুসলিম বন্দী থাকার বিষয়টা ধর্তব্য নয়। এ বিষয়টা দারুল হারবে কাফেরদের নারী-শিশু বিদ্যমান থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও হামলা জায়েয হওয়ার অনুরূপ দাঁড়াল। এটি সর্বসম্মতভাবে জায়েয। অথচ জানা কথা যে, সেখানে এমনসব লোক বিদ্যমান, যাদের হত্যা বৈধ নয় এবং হামলা করলে তারা নিহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই কারণ (যাদেরকে হত্যা করা বৈধ নয়, তাদের উপস্থিতি এবং নিহত হওয়ার সম্ভাবনা) এ মাসআলাতেও বিদ্যমান।” -ফাতহুল ক্বাদীর:৫/৪৩১

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন, ‫‏‫

المحرم إنما هو قصد قتلهن فأما إذا قصدنا قصد الرجال بالإغارة أو نرمي بمنجنيق أو فتح شق أو إلقاء نار فتلف بذلك نساء أو صبيان لم نأثم بذلك لحديث الصعب بن جثامة أنه سأل النبي صلى الله عليه وسلم عن أهل الدار من المشركين يبيتون فيصاب الذرية فقال “هم منهم” متفق عليه ولأن النبي صلى الله عليه وسلم رمى أهل الطائف بالمنجنيق مع أنه قد يصيب المرأة والصبي وبكل حال فالمرأة الحربية غير مضمونة بقود ولا دية ولا كفارة لأن النبي صلى الله عليه وسلم لم يأمر من قتل المرأة في مغازيه بشيء من ذلك فهذا ما تفارق به المرأة الذمية

 وإذا قاتلت المرأة الحربية جاز قتلها بالاتفاق لأن النبي صلى الله عليه وسلم علل المنع من قتلها بأنها لم تكن تقاتل فإذا قاتلت وجد المقتضى لقتلها وارتفع المانع. اهـ

“নিষেধ হল- ইচ্ছাকৃত টার্গেট বানিয়ে মহিলাদের হত্যা করা। সুতরাং যদি আমরা পুরুষদের উদ্দেশ্যে বা কোন অঞ্চল বিজয়ের জন্য অতর্কিত আক্রমণ করি বা মিনজানিক (প্রাচীন ক্ষেপণাস্ত্র) দিয়ে আগুন ইত্যাদি নিক্ষেপ করি, ফলে কিছু নারী বা শিশু ধ্বংসের শিকার হয়, এ কারণে আমরা গুনাহগার হব না। কেননা, সা’ব ইবনে জাসসামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, তিনি মুশরিকদের ভূমিতে অতর্কিত আক্রমণের ফলে নিহত শিশুদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ওরা ওদের (মুশরিকদের)-ই অন্তর্ভুক্ত’। (সহীহ বুখারী ও সহীহ ‍মুসলিম)। এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ বাসীর উপর মিনজানিক হামলা করেছেন। অথচ এর দ্বারা অনেক সময় নারী-শিশু আক্রান্ত হয়ে থাকে।

সর্বোপরি কথা হল, হারবী মহিলার কোন কিসাস, দিয়ত বা কাফফারার বিধান নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুদ্ধসমূহে কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে হত্যা করে থাকলে, তিনি তাকে এসব কিছুর হুকুম দেননি। এটাই হারবী ও যিম্মি নারীর পার্থক্য।

হারবী মহিলা যদি লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে সকলের ঐকমত্যে তাকে হত্যা করা জায়েয। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করা নিষেধ হওয়ার কারণ এই বলেছেন যে, ‘সে তো কিতাল করে না’। সুতরাং যখন সে কিতালে লিপ্ত হবে, তখন হত্যার উপযুক্ত কারণ পাওয়া গেল এবং নিষেধাজ্ঞার কারণ বিলুপ্ত হয়ে গেল …।” –আসসারিমুল মাসলূল: ১০৪

আরো দেখুন: শরহুসসিয়ারিল কাবির: ১/৩৫; ফাতহুল কাদীর: ৫/৪৩৮; তাবইনুল হাকায়েক: ৪/৮৯-৯০; আননাহরুল ফায়েক: ৩/২০৭

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৫-০৫-১৪৪২ হি.

৩১-১২-২০২০ ইং

আরও পড়ুনঃ শত্রুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যা করার হুকুম কী?

Related Articles

Back to top button