বিবিধফাতওয়া  নং  ২১৯

কাউকে বোন ডাকলে তিনি কি আপন বোনের মতো মাহরাম হয়ে যান?

কাউকে বোন ডাকলে তিনি কি আপন বোনের মতো মাহরাম হয়ে যান?

কাউকে বোন ডাকলে তিনি কি আপন বোনের মতো মাহরাম হয়ে যান?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

আমি একটি বাড়িতে লজিং থাকি। আমার কোন আপন বোন না থাকায় ঐ বাড়ির আপুকে আপন বোনের মত মনে করি। তার সঙ্গে আপন বোনের মতই আচরণ করি। তার ব্যাপারে মনে কখনও কোন খারাপ কল্পনা আসেনি। আসবেও না ইনশা-আল্লাহ। এখন জানার বিষয় হল, যেহেতু আমার কোন আপন বোন নেই তাই তাকে আপন বোনের মত মনে করে বোনের মতই আচরণ করা, দেখা করা ইত্যাদি, এসব কি আমার জন্য বৈধ হচ্ছে?

প্রশ্নকারী- মুহাম্মদ তাইফুর

 

উত্তর:

মুসলিম নারী-পুরুষ মানেই পরস্পর ভাই-বোন। তবে এই ভাই-বোনের সম্পর্ক রক্তের ভাই-বোনের মত নয়। এটি হচ্ছে দ্বীনি ভাই-বোনের সম্পর্ক। এটির বিধান আর রক্তের ভাই-বোনের বিধান কখনই এক নয়।

শরীয়তে হুরমত তথা রক্তের ভাই-বোন ও মাহরামের মত দেখা-সাক্ষাত বৈধ হওযার সম্পর্ক স্থাপিত হয় তিনটি উপায়ে।

এক. নসব তথা বংশীয় রক্ত সম্পর্কের কারণে। দুই. রাদায়াত বা দুধ পানের কারণে। তিন. মুসাহারাত তথা বিবাহ বন্ধনের কারণে। এছাড়া অন্য কোন উপায়ে রক্তের ভাই-বোনের মত সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। কেউ কাউকে বোন ডাকলে, দাবি করলে কিংবা মনে করলেও হয় না। এটি কুরআনে কারীমের সম্পূর্ণ বিপরীত।

আল্লাহ তা`আলা বলেন-

}وَمَا جَعَلَ أَدْعِيَاءَكُمْ أَبْنَاءَكُمْ ذَلِكُمْ قَوْلُكُمْ بِأَفْوَاهِكُمْ وَاللَّهُ يَقُولُ الْحَقَّ وَهُوَ يَهْدِي السَّبِيلَ (4) ادْعُوهُمْ لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَمَوَالِيكُمْ} [الأحزاب: 4، 5[

“তিনি তোমাদের পালকপুত্রদেরকে প্রকৃত পুত্র বানাননি। এটা তোমাদের মুখের কথামাত্র। আল্লাহ সত্য বলেন এবং তিনিই ঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তাদেরকে সম্বোধন করবে তাদের পিতাদের নামে। এটাই আল্লাহর নিকট ইনসাফের কথা। যদি তাদের পিতাদের না চেন,তবে  তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই কিংবা তোমাদের আজাদকৃত দাস।” (সূরা আহযাব: ৪-৫)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস (র) (মৃ: ৩৭০ হি.) বলেন:

 وقوله تعالى ذلك قولكم بأفواهكم يعني أنه لا حكم له وإنما هو قول لا معنى له ولا حقيقة. -أحكام القرآن للجصاص (3/ 464(ط. دار الكتب العلمية, بيروت.

”আল্লাহ তা’আলার বানী, ‘এটা তোমাদের মুখের কথা’ -এর অর্থ, এর কোন প্রভাব ও ফলাফল নেই। এ কথার না আছে কোন অর্থ, না আছে কোন বাস্তবতা।” (আহকামুল কুরআন: ৩/৪৬৪)

সুতরাং এভাবে কাউকে বোন বানানো এবং তার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করা ও আপন বোনের মত আচরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এতে শরীয়তের পর্দার বিধানসহ অনেক বিধান লঙ্ঘিত হয়। আপনাকে অবশ্যই উক্ত নারীর সঙ্গে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে এবং তার সঙ্গে গায়রে মাহরাম তথা বেগানা নারীর মত আচরণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, আপনি যে মনে করছেন, ‘তার ব্যাপারে আপনার মনে কোন দিন কোন খারাপ কল্পনা আসেনি আর আসবেও না ইনশা-আল্লাহ’, এটাও শয়তানের একটা ধোঁকা। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

5232 – إياكم والدخول على النساء فقال رجل من الأنصار يا رسول الله أفرأيت الحمو قال الحمو الموت. – صحيح البخاري ـ م م(7/ 37

“তোমরা বেগানা নারীর ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। এক আনাসারি সাহাবী জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামীর নিকটাত্মীয় তথা দেবর-বাসুর সম্পর্কে আপনি কী বলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা তো মৃত্যু সমতুল্য!” (সহীহ বুখারী: ৫২৩২)

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان قالها ثلاثا …… روى الحاكم في المستدرك على الصحيحين للحاكم مع تعليقات الذهبي في التلخيص:1/ 158، بترقيم الشاملة آليا.  وقال: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين فإني لا أعلم خلافا بين أصحاب عبد الله بن المبارك في إقامة هذا الإسناد عنه و لم يخرجاه

“সাবধান! যেকোন পুরুষ কোন বেগানা নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান উপস্থিত থাকে। কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।” (মুসতাদরাকে হাকীম: ১৫৮)

অন্য এক হাদীসে বলেন-

14364- لا تلجوا على المغيبات فإن الشيطان يجري من أحدكم مجرى الدم، قلنا ومنك يا رسول الله؟ قال ومني ولكن الله أعانني عليه فأسلم. – مسند أحمد بن حنبل: 3/ 309، وقال شعيب الأرنؤوط: إسناده ضعيف لضعف مجالد وقد جمع مجالد في هذا المتن ثلاثة أحاديث وهي صحيحة

“তোমরা স্বামীহীন নারীদের কাছে যেও না। কারণ, শয়তান তোমাদের মধ্যে রক্তের মত চলাচল করে। আমরা বলি, আপনারও একই অবস্থা ইয়া রাসূলাল্লাহ? বলেন হ্যাঁ, তবে আমাকে আল্লাহ শয়তানের মোকাবেলায় সাহায্য করেন, তাই আমি নিরাপদ থাকি।” (মুসনাদে আহমাদ: ১৪৩৬৪)

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৪-০৪-১৪৪৩ হি.

৩০-১১-২০২১ ঈ

আরও পড়ুনঃ জন্মদিন পালন করার হুকুম কী?

Related Articles

Back to top button