হালাল-হারাম:ফাতওয়া  নং  ১৮৫

নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যাকারিনী কী গুনাহগার হবেন?

নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যাকারিনী কী গুনাহগার হবেন?

পাওনাদার মারা গেলে তার পাওনা টাকার ব্যাপারে করণীয় কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

যদি কোনো নারী নিজের ইজ্জত বাঁচাতে আত্মহত্যা করে, তাহলে সে কি গুনাহগার হবে?

প্রশ্নকারী- মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

 

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

আত্মহত্যা হারাম ও কবীরা গুনাহ। সম্ভ্রম রক্ষার জন্যও আত্মহত্যা করা জায়েয নয়।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا

“তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু।” (সূরা নিসা (০৪) : ২৯

হাদীসে এসেছে,

       عن أنس بن مالك عن النبي صلى الله عليه وسلم قال أكبر الكبائر الإشراك بالله وقتل النفس وعقوق الوالدين وقول الزور أو قال وشهادة الزور (صحيح البخاري 6871)

“হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মানুষ হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।” (সহীহ বুখারী: ৬৮৭১)

অন্য হাদীসে এসেছে,

  عن أبي هريرة رضي الله عنه : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال (من تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيه خالدا مخلدا فيها أبدا ومن تحسى سما فقتل نفسه فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا ومن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجأ بها في بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا) (صحيح البخاري 5442، صحيح مسلم 313)

“হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পাহাড় হতে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে সর্বদা পাহাড় হতে পড়তে থাকবে। এভাবেই সে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ কাল শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে দেওয়া হবে। সে জাহান্নামের আগুনে সর্বদা তা পান করতে থাকবে। এভাবেই সে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ কাল শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ধারালো কোন অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা করবে, তার হাতে সেই অস্ত্র ধরিয়ে দেয়া হবে। সে তা দ্বারা জাহান্নামের আগুনে সর্বদা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। এভাবেই সে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ কাল শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।” (সহীহ বুখারী: ৫৪৪২, সহীহ মুসলিম: ৩১৩)

সুতরাং আল্লাহ না করুন, কোনো মুসলিম বোন যদি ইজ্জত-আব্রুর ওপর হামলার শিকার হন, তাহলে তিনি আক্রমণকারীকে তাঁর সম্ভ্রমহানির সুযোগ দেবেন না; বরং যথাসাধ্য মোকাবেলা করে যাবেন। প্রয়োজনে অস্ত্র প্রয়োগ করে তাকে হত্যা করবেন। কোনো অবস্থায়ই নিজে আত্মহত্যা করবেন না। যদি তিনি আক্রমণকারীকে হত্যা করতে সক্ষম হন, তবে তিনি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবেন। যদি আক্রমণকারী তাঁকে হত্যা করে, তাহলে তিনি ইনশাআল্লাহ শহীদদের কাতারে শামিল হবেন। আর যদি সর্বাত্মক চেষ্টার পরও তিনি নিজের ইজ্জত রক্ষায় অক্ষম হন, তবে আল্লাহ তাআলার ফায়সালা মনে করে সবর করবেন। এজন্য তাঁর কোনো গোনাহ হবে না; বরং আল্লাহর কাছে অবশ্যই তিনি এর মহা প্রতিদান পাবেন।

তবে কোনো বোন যদি শরীয়তের বিধান না জানার কারণে ইজ্জত রক্ষার জন্য আত্মহত্যা করেই ফেলেন, তাহলে তিনি একটি গুনাহের কাজ করলেন। তবে কেউ কোনো গুনাহের কাজ করলেই তিনি নিশ্চিত জাহান্নামি হবেন, এমনটি বলা যায় না। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে মুমিনদের যে কোনো গুনাহই ক্ষমা করে দিতে পারেন। বিশেষত যখন তিনি না জানার কারণে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির কাজ মনে করে করেছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে আমরা আশা রাখতে পারি, আল্লাহ তাআলা হয়তো তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

আত্মহত্যার ব্যাপারে আপনি সাইটে প্রকাশিত নিম্নোক্ত ফতোয়া দু’টি দেখতে পারেন:

ফাতওয়া নং ১২৬: ‘নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যা করা কি বৈধ হবে?

ফাতওয়া নং ১২৮: ‘কেউ নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যা করে ফেললে তার হুকুম কী?

 

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

 

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৫-১২-১৪৪২ হি.

২৬-০৭-২০২১ ইং

Related Articles

Back to top button