আন্তঃধর্মীয় সংলাপ সম্প্রীতির নামে ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ
সম্প্রীতির নামে ইসলাম
ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
মাওলানা আবদুল্লাহ রাশেদ (হাফিযাহুল্লাহ)
সূচিপত্র
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ – শুরুর কথা.. 4
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ : উগ্রবাদী চিন্তা থেকে অন্য ধর্মের ওপর আক্রমণ. 5
প্রতিবেদন থেকে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মৌলিক কয়েকটি দাওয়াত পাওয়া গেল: 8
এ হলো আন্তঃধর্মীয় সংলাপের দাওয়াতের বিষয়বস্তু। এর বিপরীতে ইসলাম কী বলে? 9
আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম. 9
ইসলাম সকল ধর্মকে মানসুখ-রহিত করে দিয়েছে.. 10
আহলে কিতাব ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করে ফেলেছে.. 11
ইসলাম ব্যতীত ভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের অনুসারীরা কাফের. 12
মানবধর্মের প্রবক্তা সম্প্রীতিবাদিরা কাফের. 14
কাফের আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলিমের দুশমন. 15
কাফেররা জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট. 18
মুমিনরা সৃষ্টির সেরা ও সম্মানি.. 19
মুমিনরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বন্ধু, তাঁরা পরস্পরে বন্ধু ও ভাই ভাই. 20
আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা (মুমিনকে ভালোবাসা ও নুসরত করা এবং কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা) ঈমানের দাবি 21
সম্প্রীতিবাদীদের দাওয়াত: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি.. 26
আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য.. 31
দুই. মুসলিম সমাজে ধর্মান্তর ও ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তা খোলা.. 36
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: দরবারি আলেমদের বিকৃতির অপচেষ্টা.. 43
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বৈধ করার অপচেষ্টা: দরবারিদের কুরআন-সুন্নাহ বিকৃতির নমুনা 47
নববি দাওয়াত বনাম কুফরি সংলাপ. 49
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: উলামায়ে কেরামের ফতোয়া.. 50
শায়খ নাসির বিন হামদ আলফাহাদ. 51
সৌদি ইফতা বোর্ড লজনায়ে দায়েমা.. 52
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وأصحابه ومن والاه. أما بعد …
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ – শুরুর কথা
দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় ইসলামের দুশমনরা বুঝতে পেরেছে, ইসলামের বিরুদ্ধে স্রেফ সামরিক যুদ্ধে মুসলিমদের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। কারণ, তারা এমন এক সুদৃঢ় ইসলামী আকিদা নিয়ে যুদ্ধ করে, যে আকিদায় বিশ্বাসীরা পিছু হটার নয়। তাই তারা অনেক চিন্তা ভাবনা করে ভিন্ন একটি পথ বেছে নিল। তারা চাইল, ইসলামী আকিদাকে বিনষ্ট করে দিতে। ঈমান ও কুফরের সীমারেখা উঠিয়ে দিতে। আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার আকিদা বিস্মৃত করে দিতে। ধর্মে ধর্মে ব্যবধানের মানসিকতা মুসলিমদের থেকে উঠিয়ে দিতে। এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে মুমিন ও কাফের ভিন্ন চোখে দেখা হবে না। কাফেরের সাথে দুশমনির মনোভাব থাকবে না। আর স্পষ্টতই, এমন সমাজ কখনোই দখলদার কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না। বরং ভালোবেসে বুকে টেনে নেবে। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের উদারপন্থী মনোভাবীদের খুব সহজেই ধর্মান্তরিত করে খ্রিষ্টান বানানো যাবে। এটিও তাদের একটি বড় উদ্দেশ্য।
এ ঘৃণ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারা আয়োজন করলো ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপের’। সব ধর্মের পণ্ডিতরা সেখানে আমন্ত্রিত হবে। মুসলিম নামধারী ভাড়া করা কিছু মোল্লাও সেখানে থাকবে। আলোচনা পর্যালোচনায় তারা একমত হবে যে, ধর্মে ধর্মে কোনো বিভেদ নেই। কোনো বিদ্বেষ নেই। এক ধর্ম অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার সমর্থন করে না। ধর্মের কারণে যুদ্ধ করা কোনো ধর্ম সমর্থন করে না। ধর্ম শুধু ভালোবাসতেই শেখায়। শুধু সম্প্রীতিই শেখায়। সব ধর্মের একই কথা সবার উপর মানবতা। যারা ধর্মের ভিত্তিতে ব্যবধান করতে চায়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা উগ্রবাদী। তারা জঙ্গি। তারা সন্ত্রাসী। তারা শান্তি-সম্প্রীতির জন্য হুমকি। তাদের নির্মূল অত্যাবশ্যক।
মুখে মুখে সব ধর্মের কথা বলা হলেও মূল টার্গেট ইসলাম। মুসলিমদের মাঝে এ ধারণার প্রসার করা যে, ইসলাম অন্য ধর্মকে হেয় করে দেখে না। অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ শেখায় না। ইসলাম শুধু ভালোবাসা শেখায়। দখলদার কাফের হলেও, দ্বীন-ধর্ম ও মুসলিম ভূমি, সম্পদ ও সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারী হলেও তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা যাবে না। ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে হবে।
সব ধর্মই যদি ভালোবাসার কথা বলে তাহলে মুসলিমরা বৌদ্ধদের হাতে আরাকান-উইঘুরে কেন নিষ্পেষিত? হিন্দ-কাশ্মিরে হিন্দুদের হাতে কেন নির্যাতিত? ফিলিস্তিন-শাম-ইরাক-আফগানসহ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে কেন ইয়াহুদ-নাসারা-শিয়াদের হাতে নিপীড়িত? কোথায় গেল মানবতা? কোথায় গেল সম্প্রীতি ভালোবাসা সহমর্মিতা? আসলে সম্প্রীতির নামে ঔপনিবেশ কায়েমের এ এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র।
আলোচনায় যাওয়ার আগে ২৬শে অক্টোবর ২০১৯ইং তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ নিয়ে অনলাইন নিউজপেপার ‘সারাবাংলা’র একটি প্রতিবেদন তুলে ধরছি-
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ : উগ্রবাদী চিন্তা থেকে অন্য ধর্মের ওপর আক্রমণ
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেছেন, প্রত্যেক ধর্ম সম্প্রীতির কথা বলে, কিন্তু কিছু মানুষ ধর্মের মূল সুর কি সেটাই বোঝে না। ভুল চিন্তা থেকে তারা ভাবে, তার নিজের ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এই চিন্তা একটি উগ্রবাদী চিন্তা। এই উগ্রবাদী চিন্তা থেকেই তারা অন্য ধর্মের লোকের ওপর আক্রমণ করে। দেশে বিভিন্ন সময় দুর্বল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর যেসব আক্রমণ হয়, তা এই উগ্রবাদী চিন্তার ফল।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় আর্চবিশপ ভবন সভাকক্ষে এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক বিশেষ আলোচনা সভা হয়েছে। খ্রিস্টিয় ঐক্যপ্রচেষ্টা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিস এই সভার আয়োজন করে। সভায় খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা অংশ নেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খ্রিস্টিয় ঐক্যপ্রচেষ্টা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের কো-অর্ডিনেটর জেমস গোমেজ।
চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের জুডিশিয়াল ভিকার ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সম্প্রীতি আছে সেটা বিশ্বে অনুসরণযোগ্য। কিন্তু এরপরও কিছু ঘটনা এখানে ঘটে। এটা মূলত ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব যার ফলে সম্প্রীতিতে ফাটল এবং অজ্ঞানতা থেকে হয়। খ্রিস্টান ধর্ম বলছে, কাউকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ কোনো মানুষকে বাদ রেখে সম্প্রীতি হতে পারে না, সেটা যে ধর্মের বা যে জাতিগোষ্ঠীর হবে হোক। সম্প্রীতি তৈরি করতে হবে মানুষে-মানুষে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে নয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল হোসেইন বলেন, ‘উগ্রবাদী চিন্তা থেকে এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে আক্রমণ করে। ভোলায় সাম্প্রতিক যে ঘটনা ঘটেছে, একই ঘটনা কিন্তু আগেও আমাদের দেশে ঘটেছে। এর সবই উগ্রবাদী চিন্তার ফল। ধর্ম যে শুধু চর্চার বিষয় নয়, এটি যে পড়াশোনা করে ধারণের বিষয় সেটা আমরা অনেকসময় মাথায় রাখি না। আবার আমি এক ধর্মের অনুসারী বলে যে আরেকটি ধর্ম সম্পর্কে আমার পড়াশোনার প্রয়োজন নেই, সেটিও সঠিক নয়। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে। প্রত্যেক ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। অন্য ধর্মে কি লেখা আছে সেটা যদি আমি জানি, তাহলে আমার মধ্যে ওই ধর্ম সম্পর্কে কোনো বিদ্বেষ থাকবে না। সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এই বিশ্বকে শান্তিময় করে তুলতে হবে, এটাই হোক প্রত্যেক ধর্মের মূল সুর।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘আমাদের সমাজে ক্ষমতা পেলে অন্যকে মানুষ বলে গণ্য না করার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অথচ ধর্ম বলছে, যত বেশি উপরে উঠবে তত বেশি বিনয়ী হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে হচ্ছে উল্টোটা। ক্ষমতার জোরে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুকে মানুষ বলে মনে করে না। আমি যদি ভাবি যে, আমার মতবাদ বা আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ, বাকি ধর্মগুলো কিছুই না, তখন অন্য ধর্মগুলো গৌণ হয়ে পড়ে। এতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। অথচ মানুষকে ভালো না বাসলে প্রভুকে ভালোবাসা যায় না। এটাই বৌদ্ধ ধর্মের মূলরীতি।’
অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘ভোলায় সাম্প্রতিক যে ঘটনা ঘটেছে, গত কয়েক বছরে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেটা দেখেছি। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসা। কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে মুচি, কে শিক্ষক এই ভেদাভেদের ঊর্দ্ধে যদি আমরা উঠতে না পারি তাহলে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে না। হিন্দু-মুসলিম, মুচি-শিক্ষক সবাই মানুষ। মানুষকে বাদ দিয়ে, মানুষকে দূরে সরিয়ে কোনো সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা হবে না সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তখন শুধু সনাতন ধর্মের জন্য করে না। সমগ্র মানবজাতির জন্য করে। সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই- এর চেয়ে বড় সম্প্রীতির জয়গান আর হতে পারে না।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ মজেস এম কস্তা বলেন, ‘সংলাপ হচ্ছে একে অপরের কাছে আসার, একে অপরের অন্তরে ধারণের একটা পদ্ধতি। সংলাপের মাধ্যমে সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে ওঠে। এই সংলাপ অব্যাহত থাকবে। ১০ জন নিয়েও সংলাপ করা যায়, ১০০-৫০০ জন নিয়েও করা যায়। মূল সুরটা থাকবে শুধু সম্প্রীতি। ধর্মে-ধর্মে, জাতিতে-জাতিতে, মানুষে-মানুষে সম্প্রীতিই হচ্ছে এর মূল সুর।’
জেমস গোমেজ বলেন, ‘সারাবিশ্বে আজ যে ধরনের সংঘাত, রক্তপাত, হানাহানি চলছে, মানুষে-মানুষে বিভেদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে, তার থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে সম্প্রীতি। সব ধর্মের মানুষকে সম্প্রীতির মন্ত্রে এক করাই হচ্ছে এর সমাধান। মানুষ হিসেবে নিজেকে বড় মনে না করে আমরা যদি বিনয়ী হই, নত হই তাহলে সংঘাত অনেকাংশে কমে যাবে। সংলাপের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবিকতাবোধ জাগানোর একটা প্রয়াস আমরা শুরু করেছি মাত্র।’
‘সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আমাদের নেতৃত্ব’ শীর্ষক এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ সঞ্চালনা করেন সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুলের শিক্ষিকা মার্গারেট ইউগিনি। এতে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীতও পরিবেশন করা হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিকেরাও।
(প্রতিবেদন সমাপ্ত)
প্রতিবেদন থেকে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মৌলিক কয়েকটি দাওয়াত পাওয়া গেল:
১. নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখা যাবে না। এটি একটি উগ্রবাদী চিন্তা।
২. কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না।
৩. ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন হবে না। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ভালোবাসা যাবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করা বা কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করা যাবে না। বন্ধুত্বের মাপকাঠি ধর্ম নয়। ‘সম্প্রীতি তৈরি করতে হবে মানুষে-মানুষে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে নয়।’ ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, সেদিকে লক্ষ না করে সকলকে ভালোবাসতে হবে।
৪. পড়াশুনা নিজ ধর্মে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে। প্রত্যেক ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। অন্য ধর্মে কী লেখা আছে জানতে হবে।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ নিয়ে যতগুলো প্রতিবেদন আপনি পড়বেন সবগুলোর মূলকথা মোটামুটি কাছাকাছি।
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং রোজ শনিবার ডিবিসি নিউজের সাপ্তাহিক বিশেষ আয়োজন ‘চেতনায় সম্প্রীতি’তে ‘উগ্রবাদ: ধর্ম যখন হাতিয়ার’ শীর্ষক আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন হয়। মুসলিম প্রতিনিধি হিসেবে তাতে যোগ দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মানজুরে ইলাহী।[1] এ সংলাপেরও মৌলিক বিষয়বস্তু মোটামুটি ঐগুলোই ছিল যেগুলো উপরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়াও ভারতের মাহমুদ মাদানি, বাংলাদেশের ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ আরও যারা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির প্রচারক কিংবা মুভ ফাউন্ডেশনের কর্মী বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত, তাদের সকলের বক্তব্যে মোটামুটি এ ধরনের কথাই থাকে।
এ হলো আন্তঃধর্মীয় সংলাপের দাওয়াতের বিষয়বস্তু। এর বিপরীতে ইসলাম কী বলে?
§ আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” –সূরা মায়েদা (৫) : ৩
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হবে।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫
§ ইসলাম সকল ধর্মকে মানসুখ-রহিত করে দিয়েছে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ –صحيح مسلم: 403
“ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! এই উম্মতের ইহুদি নাসারা যেকোনো লোক আমার (আগমনের) কথা শুনবে তারপর আমি যে দ্বীন নিয়ে এসেছি তাতে ঈমান না এনেই মারা যাবে নিঃসন্দেহে সে জাহান্নামি হবে।” –সহীহ মুসিলম : ৪০৩
ইমাম নববি রহিমাহুল্লাহ (৬৭৬হি.) বলেন,
وإنما ذكر اليهودي والنصراني تنبيها على من سواهما وذلك لأن اليهود النصارى لهم كتاب فإذا كان هذا شأنهم مع أن لهم كتابا فغيرهم ممن لا كتاب له أولى –شرح مسلم للنووي: 2\188
“ইহুদি নাসারার কথা বিশেষভাবে বলেছেন এ কথা বুঝানোর জন্য যে, অন্যদের বেলায় তা এর আগেই প্রযোজ্য। কারণ, ইহুদি নাসারার আসমানি কিতাব রয়েছে। কিতাব থাকার পরও যখন তাদের এ হাল, তখন অন্য যাদের কিতাব নেই তারা তো এর আগেই জাহান্নামি।” –নববি রহিমাহুল্লাহ কৃত শরহে মুসলিম : ২/১৮৮
§ আহলে কিতাব ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করে ফেলেছে
আহলে কিতাব তাদের ধর্ম বিকৃত করে ফেলেছে। আল্লাহর কিতাবে নিজেদের সুবিধামতো সংযোজন-বিয়োজন, পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে। ফলে বর্তমান তাওরাত ইঞ্জিলকে হুবহু আল্লাহর নাযিলকৃত বলা যায় না। আল্লাহ তাআলা অসংখ্য আয়াতে তাদের এ অপকীর্তির বিবরণ দিয়েছেন। যেমন,
أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (75) البقرة
“তবুও কি তোমরা (হে মুসলমানরা) আশা করছো যে, ওরা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ ওদের একটা দল তো এমন ছিল যে, আল্লাহর বাণী শুনত এরপর বুঝেশুনে তা বিকৃত করতো। অথচ ওরা জানতো (যে, ওরা অন্যায় করছে)।” –সূরা বাকারা (২) : ৭৫
فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ (79) البقرة
“অতএব, ধ্বংস ওদের কপালে যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে, অতঃপর বলে, ‘এ (কিতাব) আল্লাহর পক্ষ থেকে (নাযিলকৃত)’- যাতে এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য লাভ করতে পারে। অতএব, ওদের কপালে ধ্বংস- স্বীয় হাতের এ লেখার কারণে এবং ধ্বংস নিজেদের এ উপার্জনের কারণে।” –সূরা বাকারা (২) : ৭৯
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُمْ بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (78) آل عمران
“নিঃসন্দেহে তাদের একটা দল এমন রয়েছে যারা নিজেদের জিহ্বা মোচড়িয়ে কিতাব পড়ে, যাতে তোমরা তা কিতাবের অংশ মনে কর, অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। ওরা বলে, ‘এ আল্লাহর নিকট থেকে (নাযিলকৃত)’- অথচ তা আল্লাহর নিকট থেকে (নাযিলকৃত) নয়। আর এরা জেনেশুনে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ৭৮
§ ইসলাম ব্যতীত ভিন্ন ধর্ম ও মতবাদের অনুসারীরা কাফের
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসূহ বিকৃত হয়ে গেছে। যতটুকু সহীহ ছিল ইসলাম আসার সাথে সাথে তাও রহিত হয়ে গেছে। কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা একমাত্র ইসলামকে গ্রহণযোগ্য ধর্ম মনোনীত করেছেন। অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ বাতিল করে দিয়েছেন। অতএব, যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অনুসরণ করবে না, কিংবা অন্য কোনো ধর্ম বা মত-পথ অনুসরণ করাকে বৈধ মনে করবে কিংবা সেগুলোকেও সহীহ এবং নাজাতের ওসিলা মনে করবে, সে নিশ্চিতভাবে কাফের এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামি। এ ব্যাপারে উম্মাহর কারো মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। তদ্রূপ যে ব্যক্তি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাফের মনে করবে না সেও কাফের।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৭২৮হি.) বলেন,
ومعلوم بالإضطرار من دين المسلمين وبإتفاق جميع المسلمين أن من سوغ إتباع غير دين الإسلام أو إتباع شريعة غير شريعة محمد فهو كافر. اهـ
“ইসলাম ধর্মে সর্বজনবিদিত এবং সকল মুসলমানের ঐক্যমতে সাব্যস্ত যে, যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য কিছু কিংবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরীয়ত ব্যতীত ভিন্ন কোনো শরীয়ত অনুসরণের বৈধতা দেবে সে কাফের।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৫২৪
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ (৭৫১হি.) বলেন,
وقد جاء القرآن، وصحّ الإجماع بأن دين الإسلام نسخ كل دين كان قبله، وأن من التزم ما جاءت به التوراة والإنجيل، ولم يتبع القرآن، فإنه كافر، وقد أبطل الله كل شريعة كانت في التوراة والإنجيل وسائر الملل، وافترض على الجن والإنس شرائع الإسلام، فلاحرام إلا ما حرمه الإسلام، ولا فرض إلا ما أوجبه الإسلام. اهـ
“কুরআনে বর্ণিত এবং উম্মাহর ইজমায় প্রতিষ্ঠিত, ‘দ্বীনে ইসলাম পূর্ববর্তী সকল দ্বীনকে রহিত করে দিয়েছে এবং যে ব্যক্তি তাওরাত ও ইনজিলের বিধি-বিধানকে জীবনবিধান বানিয়ে নেবে আর কুরআনের অনুসরণ ছেড়ে দেবে, সে কাফের।’ তাওরাত, ইনজিল ও অন্য সকল ধর্মের প্রতিটি বিধান আল্লাহ তায়ালা বাতিল করে দিয়েছেন এবং মানুষ ও জ্বিন জাতির উপর ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান ফরজ করেছেন। সুতরাং হারাম শুধু তা-ই, যা ইসলাম হারাম করেছে। ফরজ শুধু তা-ই, যা ইসলাম ফরজ করেছে।” –আহকামু আহলিযযিম্মাহ: ২/৫৩৩
ইমাম ইবনে হাযম রহিমাহুল্লাহ (৪৫৬হি.) বলেন,
لاخلاف بين اثنين من المسلمين أن هذا منسوخ وأن من حكم بحكم الإنجيل مما لم يأت بالنص عليه وحي في شريعة الإسلام فإنه كافر مشرك خارج عن الإسلام. اهـ
“মুসলমানদের মাঝে কোনও দ্বিমত নেই যে, এটি (ইঞ্জিল) রহিত হয়ে গেছে এবং যে ব্যক্তি ইঞ্জিলের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করবে, যে বিধানের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তে সুস্পষ্ট ওহী অবতীর্ণ হয়নি, সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত কাফের ও মুশরিক।” –আলইহকাম ফি উসূলিল আহকাম: ৫/৬২
কাযি ইয়ায রহিমাহুল্লাহ (৫৪৪হি.) বলেন,
نكفر من لم يكفر من دان بغير ملة المسلمين من الملل أو وقف فيهم أو شك أو صحح مذهبهم وإن أظهر مع ذلك الإسلام -الشفا: 2\286
“যে ব্যক্তি ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের কাফের না বলবে বা কাফের-মুমিন কোনোটাই না বলে নিরপেক্ষ থাকবে অথবা তারা কাফের হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে কিংবা তাদের ধর্মকে সহীহ বলবে- এমন ব্যক্তি কাফের, যদিও সে নিজেকে মুসলিম দাবি করে।” –আশশিফা : ২/২৮৬
§ মানবধর্মের প্রবক্তা সম্প্রীতিবাদিরা কাফের
আমরা দেখেছি, যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত ভিন্ন কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী বা বিশ্বাসী হবে সে কাফের। অতএব, সম্প্রীতিবাদিরা, যারা ধর্মে ধর্মে ব্যবধান উঠিয়ে দিতে চায়, সব ধর্ম এক করে মানবধর্ম প্রবর্তন করতে চায়, কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা কাফের।
§ কাফের আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলিমের দুশমন
মুখে মুখে যতই সম্প্রীতির কথা বলুক কাফের আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন। তাদের সাথে কখনই সম্প্রীতি হতে পারে না। না তারা আমাদের মেনে নিতে পারবে আর না আমরা তাদের মেনে নিতে পারবো। এ দুশমনি চিরন্তন। সূরা কাফিরূনে আল্লাহ তাআলা এ হাকিকতটিই তুলে ধরেছেন। এছাড়াও কুরআনে কারীমে অসংখ্যবার এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এখানে কয়েকটি আয়াতে কারীমা তুলে ধরছি-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَاعَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ (118) هَاأَنْتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ (119) إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (120)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাকো, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতামূলক বিদ্বেষ তো তাদের মুখ থেকেই প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। আমি আসল কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ্য হও।
দেখো! তোমরা তো এমন যে তোমরা তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা মোটেও তোমাদের ভালোবাসে না। তোমরা তো সমস্ত (আসমানি) কিতাবেই বিশ্বাস করো। অথচ (তাদের অবস্থা হলো) তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ আর যখন যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাকো। আর আল্লাহ্ মনের কথা ভালই জানেন।
তোমাদের যদি কোনো কল্যাণ হয়, তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অকল্যাণ হয় তাহলে আনন্দিত হয়। যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের চক্রান্তে তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্ত আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১৮-১২০
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ (1) إِنْ يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُمْ بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ (2)
“হে মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে তারা তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে কেবল এই অপরাধে (মক্কা থেকে) বের করে দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জিহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর, তা আমি খুব ভাল করে জানি। তোমাদের মধ্যে কেউ এমনটা করলে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হল।
(তাদের চরিত্র হচ্ছে) কোনোরূপে তোমাদেরকে বাগে পেয়ে গেলে তারা তোমাদের মারাত্মক শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও।” -সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ১-২
وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
“তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে, যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরাতে পারে; যদি তারা তা করতে সক্ষম হয়।” -সূরা বাকারা (২) : ২১৭
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
“ইয়াহুদ-নাসারা কিছুতেই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি (তোমার ধর্ম ছেড়ে) তাদের ধর্ম অনুসরণ কর।” -সূরা বাকারা (২) : ১২০
لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ (10)
“কোনো ঈমানদারের ব্যাপারে এরা যেমন আত্মীয়তার ধার ধারে না তেমনি কোনো অঙ্গীকারের মর্যাদাও রক্ষা করে না। মূলত এরাই হচ্ছে সীমালঙ্গনকারী।” –সূরা তাওবা (৯) : ১০
সমগ্র কুরআনের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আল্লাহ তাআলা এ হাকিকত তুলে ধরেছেন। কাজেই কাফেরের সাথে সম্প্রীতি হতে পারে না। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে তেমন, যেমনটা আমাদের পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম দেখিয়ে গেছেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর অনুসারীদের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চিরশত্রুতা ও বিদ্বেষ- যাবৎ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।” -সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ৪
§ কাফেররা জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট
আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে কাফেররা জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট। ওদের তো জ্ঞানবুদ্ধি নেই। কিন্তু এসব লোক জ্ঞানবুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও আপন প্রভুর সাথে কুফরি করেছে। আল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতে এ হাকিকত তুলে ধরেছেন-
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ (55)
“নিঃসন্দেহে সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা কুফর অবলম্বন করেছে, যে কারণে তারা ঈমান আনছে না।” -আনফাল: ৫৫
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِنْدَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ (22)
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাআলার নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জানোয়ার ঐসব বধির ও বোবারা, যারা বিবেক কাজে লাগায না।” -সূরা আনফাল (৮) : ২২
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ (6)
“আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট।” -সূরা বায়্যিনাহ (৯৮) : ৬
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ (179) الأعراف
“দোযখের জন্য আমি বহু জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর রয়েছে, কিন্তু তা দ্বারা বিবেচনা করে না; তাদের চোখ রয়েছে, কিন্তু তা দ্বারা দেখে না; তাদের কান রয়েছে, কিন্তু তা দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং এরা আরও বিভ্রান্ত। এরাই হল গাফেল।” -সূরা আ’রাফ (৭) : ১৭৯
أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا (44)
“আপনি কি মনে করেন, তাদের অধিকাংশরা শোনে ও বোঝে? না, তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং আরও বিপথগামী।” -সূরা ফুরকান (২৫) : ৪৪
§ মুমিনরা সৃষ্টির সেরা ও সম্মানি
আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে তারাই সৃষ্টির সেরা ও সম্মানি, যারা বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আপন প্রভুর উপর ঈমান এনেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ (7)
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা।” -সূরা বায়্যিনাহ (৯৮) : ৭
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ (8)
“মর্যাদা তো কেবল আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং মুমিনদের; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” -সূরা মুনাফিকুন: ৮
§ মুমিনরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বন্ধু, তাঁরা পরস্পরে বন্ধু ও ভাই ভাই
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا
“যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের বন্ধু।” –সূরা বাকারা (২) : ২৫৭
وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ (68)
“আর আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু।” -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৬৮
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (55)
“(হে ঈমানদারগণ) তোমাদের বন্ধু তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা। যারা আল্লাহর সামনে বিনম্র হয়ে নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয়।” -সূরা মায়েদা (৫) : ৫৫
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“মুমিন নর-নারীরা একে অপরের বন্ধু।” –সূরা তাওবা (৩) : ৭১
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
“মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ভাই।” –সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০
§ আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা (মুমিনকে ভালোবাসা ও নুসরত করা এবং কাফেরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা) ঈমানের দাবি
আমরা দেখেছি, কাফেররা আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের দুশমন। এরা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব। পক্ষান্তরে মুমিনরা সৃষ্টির সেরা এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আল্লাহর এই প্রিয়পাত্রদের ভালোবাসা ও নুসরত করা আর আল্লাহর দুশমনদের সাথে দুশমনি পোষণ করা ঈমানের দাবি। এই আকিদারই নাম ওয়ালা বারা। মুমিন দুনিয়ার যে প্রান্তেরই হোক, যে বর্ণেরই হোক সে আমার ভাই, আমার বন্ধু। তাকে নুসরত করা, তার পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব। পক্ষান্তরে কাফের আমার মায়ের সন্তান হলেও সে আমার দুশমন। তার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা অপরিহার্য। একেই বলে ‘আলহুব্বু ফিল্লাহ ওয়ালবুগদু ফিল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আল্লাহরই জন্য দুশমনি’।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إن أوثق عرى الإيمان أن تحب في الله، وتبغض في الله -مسند الإمام أحمد، رقم: 18524؛ ط. الرسالة، ت: شعيب الأرنؤوط، عادل مرشد، وآخرون، قال المحققون: حديث حسن بشواهده. اهـ
“নিঃসন্দেহে ঈমানের সর্বাপেক্ষা মজবুত হাতল হলো, তুমি আল্লাহরই জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহরই জন্য ঘৃণা করবে।” –মুসনাদে আহমাদ : ১৮৫২৪
কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য নুসুস এ আকিদার শিক্ষা দিচ্ছে। এ আকিদা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে কিছু আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করছি-
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
“মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদেরকে নিজেদের মিত্র (কিংবা অভিভাবক) না বানায়। যে এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে তাদের (জুলুম) থেকে বাঁচার জন্য যদি আত্মরক্ষামূলক কোনো পন্থা অবলম্বন কর, সেটা ভিন্ন কথা। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তার নিজের সম্পর্কে সতর্ক করছেন। (কারণ, একদিন) তারই কাছে সকলকে ফিরে যেতে হবে।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ২৮
আরো ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (51)
“হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” -সূরা মায়িদা (৫) : ৫১
আরো ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
“হে মুমিনগণ, তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছে, তোমরা তাদেরকে এবং কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মুমিন হয়ে থাক, তাহলে একমাত্র আল্লাহকেই (বন্ধু বানাও এবং তাকেই) ভয় কর।” -সূরা মায়িদা (৫) : ৫৭
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مثل المؤمنين فى توادهم وتراحمهم وتعاطفهم مثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى . صحيح البخاري: 5665، صحيح مسلم: 6751
“পরস্পর ভালোবাসা, রহমত ও সাহায্যের বেলায় মুমিনদের অবস্থা একটি দেহের মতো। তার কোন অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।” -সহীহ বুখারি : ৫৬৬৫; সহীহ মুসলিম : ৬৭৫১
অন্য হাদিসে এসেছে,
عن أبي موسى رضي الله عنه: عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضا ) . وشبك بين أصابعه. صحيح البخاري: 2314، صحيح مسلم: 6750
“হযরত আবু মূসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য অট্টালিকার ন্যায়, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে’। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এক হাতের আঙ্গুলগুলো আরেক হাতের আঙ্গুলগুলোতে প্রবেশ করালেন।” –সহীহ বুখারি : ২৩১৪; সহীহ মুসলিম : ৬৭৫০
অন্য হাদিসে এসেছে,
المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولا يسلمه ومن كان في حاجة أخيه كان الله في حاجته ومن فرج عن مسلم كربة فرج الله عنه كربة من كربات يوم القيامة ومن ستر مسلما ستره الله يوم القيامة. صحيح البخاري: 2310، صحيح مسلم: 6743
“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর জুলুম করতে পারে আর না তাকে (জালেমের হাতে) অর্পণ করতে পারে। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের হাজত পূরণে সচেষ্ট হবে আল্লাহ তাআলা তার নিজের হাজত পূরণে তার সহায় হবেন। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মুসলিমের একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার একটি মুসিবত দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।” –সহীহ বুখারি: ২৩১০, সহীহ মুসলিম: ৬৭৪৩
অন্য হাদিসে এসেছে,
المسلم أخو المسلم لا يظلمه ولا يخذله ولا يحقره. صحيح مسلم: 6706
“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, না তাকে সাহায্য করা থেকে দূরে থাকতে পারে আর না তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে।” –সহীহ মুসলিম : ৬৭০৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا. صحيح مسلم: 203
“যতক্ষণ তোমরা মুমিন না হবে, জান্নাতে যেতে পারবে না। আর মুমিন ততক্ষণ হতে পারবে না, যতক্ষণ একে অপরকে ভালো না বাসবে।” –সহীহ মুসলিম: ২০৩
আরো ইরশাদ করেন,
والذى نفسى بيده لا يؤمن عبد حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه. صحيح مسلم: 180
“ওই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, কোনো বান্দা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।” –সহীহ মুসলিম ১৮০
§ সম্প্রীতিবাদীদের দাওয়াত: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
এতক্ষণ আমরা যে আলোচনা করলাম তার সারকথা হল,
- আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। ইসলাম আসার সাথে সাথে পূর্বেকার সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির দুনিয়াবি সফলতা ও আখেরাতের মুক্তির একমাত্র পথ দ্বীনে ইসলাম। যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারী বা বিশ্বাসী হবে কিংবা সেগুলোকে সহীহ ও মুক্তির পথ মনে করবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত কাফের এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামি।
- কাফেররা জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট। আল্লাহ, রাসূল, আল্লাহর দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের দুশমন। পক্ষান্তরে মুমিন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র।
- মুমিন পরস্পরের ভাই ও বন্ধু। ওয়ালা বারার আকিদা তথা মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব এবং কাফেরের সাথে দুশমনি ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উপরোক্ত আকিদা অন্তরে ধারণ করার পর আশা করি বুঝতে বাকি থাকবে না যে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপের নামে সম্প্রীতিবাদীরা যেসব দাওয়াত প্রচার করতে চাচ্ছে তা ইসলাম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। শুরুতে আমরা যে প্রতিবেদন পেশ করেছি সেখানে মৌলিকভাবে এ দাওয়াতগুলো ছিল,
১. নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখা যাবে না। এটি একটি উগ্রবাদী চিন্তা।
২. কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না।
৩. ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন হবে না। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে মুহাব্বত করা যাবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করা বা কারো প্রতি শত্রুতা পোষণ করা যাবে না। বন্ধুত্বের মাপকাঠি ধর্ম নয়। ‘সম্প্রীতি তৈরি করতে হবে মানুষে-মানুষে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে নয়।’ ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, সেদিকে লক্ষ না করে সকলকে ভালোবাসতে হবে।
৪. পড়াশুনা নিজ ধর্মে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে। প্রত্যেক ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। অন্য ধর্মে কি লেখা আছে জানতে হবে।
উপরোক্ত দাওয়াতগুলোর প্রথম তিনটি সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক ও কুফর, যা ব্যক্তিতে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করে দেয়। আর চতুর্থটি সরাসরি কুফর না হলেও কুফরের দিকে ধাবিতকারী।
এক. “নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখা যাবে না। এটি একটি উগ্রবাদী চিন্তা।”
ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র হক ধর্ম। যে ব্যক্তি ইসলামকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং একমাত্র হক ধর্ম এবং অন্য সকল ধর্মকে বাতিল না মানবে সে কাফের।
সকল বাতিল ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা আল্লাহর নির্দেশ। একে উগ্রবাদ নাম দিলেও কিছু আসে যায় না। ইসলাম এরই শিক্ষা দেয়।
দুই. “কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না।”
ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম বাতিল, মনগড়া এবং শয়তানের বানানো। এগুলোর প্রতি শুধু বিদ্বেষ-ই নয়, বরং এগুলোর অনুসারীদেরকে যে কাফের মনে না করবে সেও কাফের।
তবে হ্যাঁ, যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরাম আল্লাহর তরফ থেকে যে সত্য-সঠিক ধর্ম নিয়ে এসেছেন আমরা তার সবগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করি। তবে ইসলাম আসার সাথে সাথে আগেকার সকল শরীয়ত রহিত হয়ে গেছে। অধিকন্তু ইয়াহুদ নাসারা তাদের ধর্ম বিকৃত করে ফেলেছে। যদি অবিকৃতও থাকতো তবুও তা অনুসরণ করা যেতো না। যারা ইসলাম ছেড়ে আগেকার ধর্মের অনুসরণ করতো নিঃসন্দেহে তারা কাফের বলে পরিগণিত হতো। কাজেই “কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না” শিরোনামে অন্য ধর্মগুলোকে হক বিশ্বাস করার বা অনুসরণ বৈধতার যে দাওয়াত তারা দিচ্ছে তা সুস্পষ্ট কুফর।
তিন. “ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন হবে না। ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে মুহাব্বত করা যাবে না, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ঘৃণা করা বা কারো প্রতি শত্রুতা পোষণ করা যাবে না। বন্ধুত্বের মাপকাঠি ধর্ম নয়। ‘সম্প্রীতি তৈরি করতে হবে মানুষে-মানুষে, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে নয়।’ ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’। কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, সেদিকে লক্ষ না করে সকলকে ভালোবাসতে হবে।”
মানব জাতির বিভাজন হবে ঈমান ও কুফরের ভিত্তিতে। একদল ঈমানদার, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয়পাত্র, সৃষ্টির সেরা এবং চিরস্থায়ী জান্নাতি। আরেকদল কাফের, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দুশমন, সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামি। কাজেই যারা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন উঠিয়ে দিতে চায়, ঈমান ও কুফরের সীমারেখা মিটিয়ে চায়, সম্প্রীতির নাম করে ঈমান ও কুফরকে এক করে ফেলতে চায় তারা নিঃসন্দেহে কাফের।
চার. “পড়াশুনা নিজ ধর্মে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে। প্রত্যেক ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। অন্য ধর্মে কি লেখা আছে জানতে হবে।”
প্রকারান্তে এটি কুফরের দাওয়াত। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অন্য সকল ধর্ম বাতিল এ ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই। তখন কেন আমি কুফরি ও বাতিল ধর্ম সম্পর্কে জানতে যাবো? জানার তো দরকার পড়ে যেখানে হক-বাতিল অস্পষ্ট। হক খুঁজে বের করার জন্য জানার দরকার পড়ে। কিন্তু আমি তো ইসলামের ব্যাপারে সন্দিহান নই। তাহলে কেন আমি অন্যসব ধর্ম সম্পর্কে জানতে যাব, যেগুলো বাতিল হওয়ার ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই? আসলে এর দ্বারা উদ্দেশ্য ধর্মান্তরের পথ খোলা। সাধারণ মুসলমানদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করা। ইসলামের ব্যাপারে সংশয় তৈরি করা। এভাবে একসময় ইসলাম থেকে বের করে কুফরে ঠেলে দেবে। সম্প্রীতিবাদীদের এটিই উদ্দেশ্য। এক হাদিসে এসেছে,
عن جابر بن عبد الله، أن عمر بن الخطاب، أتى النبي صلى الله عليه وسلم بكتاب أصابه من بعض أهل الكتب ، فقرأه على النبي صلى الله عليه وسلم فغضب وقال: ” أمتهوكون فيها يا ابن الخطاب، والذي نفسي بيده لقد جئتكم بها بيضاء نقية، لا تسألوهم عن شيء فيخبروكم بحق فتكذبوا به، أو بباطل فتصدقوا به، والذي نفسي بيده لو أن موسى كان حيا، ما وسعه إلا أن يتبعني ” –مسند الإمام أحمد: 15156؛ الحديث حسنه الشيخ الألباني رحمه الله في إرواء الغليل (6\37) بشواهده، قال: الحديث قوي ، فإن له شواهد كثيرة. اهـ
“জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু একদিন আহলে কিতাবের কারো থেকে পাওয়া একটা কিতাব নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন। এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিতাবটি পড়ে শুনাতে লাগলেন। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এবং বললেন, দ্বীনের ব্যাপারে কি তোমরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য দিশাহীনতায় নিপতিত হয়েছো হে খাত্তাবের বেটা? ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কাছে আমি শুভ্র সাদা, স্বচ্ছ পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। আহলে কিতাবের কাছে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। হতে পারে তারা সত্য বললে তোমরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বসবে কিংবা মিথ্যা বললেও বিশ্বাস করে বসবে। ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, স্বয়ং মূসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, আমার অনুসরণ ছাড়া তার কোনো গত্যন্তর থাকতো না।” –মুসনাদে আহমাদ: ১৫১৫৬
ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এর মতো সাহাবি, যাকে দেখলে শয়তান পালিয়ে যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পর্যন্ত ভিন্ন ধর্ম অধ্যয়নের অনুমতি দেননি, নাখোশ হয়েছেন। সেখানে সাধারণ মুসলিমদের ভিন্ন ধর্ম অধ্যয়নের দাওয়াত কুফরির পথে আহ্বান ছাড়া আর কি হতে পারে?
আল্লামা বাহুতি রহিমাহুল্লাহ (১০৫১হি.) বলেন,
(ولا يجوز النظر في كتب أهل الكتاب نصا) ؛ لأنه – صلى الله عليه وسلم – «غضب حين رأى مع عمر صحيفة من التوراة، وقال أفي شك أنت يا ابن الخطاب» الحديث (ولا) النظر في (كتب أهل البدع، و) لا النظر في (الكتب المشتملة على الحق والباطل، ولا روايتها) لما في ذلك من ضرر إفساد العقائد – كشاف القناع عن متن الإقناع للبهوتي (1051هـ): 1\434
“আহলে কিতাবদের কিতাবাদি অধ্যয়ন করা জায়েয নয়। ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ পরিষ্কার তা বলে গেছেন। কারণ, ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু’র হাতে যখন তাওরাতের কপি দেখলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এবং শাসিয়ে বললেন, আমার ব্যাপারে কি তোমার সন্দেহ আছে হে খাত্তাবের বেটা?
তদ্রূপ বিদআতিদের কিতাবাদি অধ্যয়নও জায়েয নয় এবং এমন সব কিতাবাদিও না যেগুলোতে হক-বাতিল মিশ্রিত। সেসব কিতাব বর্ণনা করাও জায়েয নয়। কারণ, তাতে এই অনিষ্ট বিদ্যমান যে, তা আকিদা বিনষ্ট করবে।” –কাশশাফুল কিনা’ : ১/৪৩৪
হ্যাঁ, সুগভীর ইসলামি জ্ঞানসম্পন্ন, পাহাড়সম সুদৃঢ় আকিদার অধিকারী, মুত্তাকি পরহেযগার ইসলামী কতক বিশেষজ্ঞ যদি খণ্ডনের প্রয়োজনে ভিন্ন ধর্ম অধ্যয়ন করেন তাহলে তাদের বিষয়টা ভিন্ন। তারা বাতিলের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হবেন না। সাধারণ মানুষ বা সাধারণ ওলামা-তলাবার জন্য নাজায়েয।
বড়ই পরিতাপের বিষয়, ড. মানজুরে ইলাহী সাহেব জুমআর খুতবা, ওয়াজ মাহফিল ও যেকোনো দ্বীনি মাহফিলে ভিন্ন ধর্মের মৌলিক কথাগুলোও তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুসলিম কোমলমতি শিশুরা যখন স্কুলে ভর্তি হবে, তাদের শুধু ইসলাম ধর্ম না পড়িয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান সবগুলো প্রধান ধর্মই পড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং সেভাবেই শিক্ষা কারিকুলাম সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। সঙ্গে কাজল দেবনাথ যোগ করেছেন, শুধু এক ধর্ম পড়ালে সাম্প্রদায়িকতা হয়ে যায়। সব ধর্ম পড়ানো হবে। পরে বাচ্চা বড় হয়ে নিজের মনমতো ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃস্টান যেকোনো ধর্ম গ্রহণ করে নেবে। মানজুরে ইলাহী সাহেব নীরবে তা সমর্থন করে গেছেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক! কি ভয়ানক কুফরির দাওয়াত তারা দিচ্ছে!![2]
এতক্ষণের আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ মূলত একটি কুফরি সংলাপ। ইসলাম ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র। এ ব্যাপারে আমরা আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
আর্চবিশপ মজেস সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরেছে: ‘সংলাপ হচ্ছে একে অপরের কাছে আসার, একে অপরের অন্তরে ধারণের একটা পদ্ধতি’। ‘সব ধর্মের মানুষকে সম্প্রীতির মন্ত্রে এক করা’।
অর্থাৎ ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে এক হয়ে যাবে। সকলের ধর্ম হবে মানবধর্ম। সকলে সকলকে অন্তরে ধারণ করবে। সকলে সকলকে ভালোবাসবে। বন্ধন গড়ে তুলবে। কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ – এসব ভেদাভেদে জড়ানো যাবে না।
কোনো সন্দেহ নেই যে, ধর্মে ধর্মে বিভেদ উঠিয়ে দেয়া এবং সব ধর্মকে এক করে ফেলার ফিকির, ঈমান-কুফরকে এক করে ফেলা এবং ঈমানদার ও কাফেরের বৈষম্য উঠিয়ে দেয়ার ফিকির সুস্পষ্ট কুফর যা ব্যক্তিকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে মুরতাদে পরিণত করে। আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য যদি শুধু এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকত তাহলেও তা নিঃসন্দেহে কুফর ছিল। তবে প্রকৃত অর্থে এটির পেছনে অন্য উদ্দেশ্য কাজ করছে। এর মধ্য থেকে মৌলিক দুটি উদ্দেশ্য হচ্ছে,
এক. জিহাদ দমন
সম্প্রীতির নাম করে ওয়ালা বারার আকিদা তথা আল্লাহর বন্ধুদের ভালোবাসা এবং আল্লাহর দুশমনদের ঘৃণা করা- এই আকিদা বিনষ্ট করে দেয়া। যাতে ঔপনিবেশিক দখলদার কাফেরগোষ্ঠী এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী তাগুতদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা অস্ত্র না ধরে।
তদ্রূপ যারা আল্লাহর যমিনে ইসলামের হারানো বিজয় ফিরিয়ে আনার জন্য জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ডাক দেবে তাদেরকে সম্প্রীতির দুশমন, উগ্রবাদী, জঙ্গী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে তাদের ওপর দমন পীড়ন চালানো যায়। এভাবে দুই দিক থেকে তারা জিহাদ দমনের প্রয়াস পাবে:
ক. যারা সংলাপের প্রচার-প্রপাগাণ্ডায় পড়ে মানবধর্মে বা ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী হয়ে পড়বে বা অন্তত যারা সন্দিহান ও শিথিল হয়ে পড়বে তারা ইসলাম ও মুসলানদের পক্ষে কাফের মুরতাদদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না।
খ. যারা ইসলামী আকিদায় অটল অবিচল থাকবে এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ডাক দেবে তাদেরকে সম্প্রীতির দুশমন ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে দমন পীড়নের বৈধতা পাবে।
এভাবে মুসলিম ভূমিগুলোতে তাদের দখলদারিত্ব কায়েম থাকবে। বিনা বাধায় মুসলিমদের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতে পারবে। মুসলিমদের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ রাখতে পারবে।
এজন্য আপনি দেখবেন, যতগুলো আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে মোটামুটি সবগুলোতেই জঙ্গিবাদ বিরোধী ইস্যু বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কয়েকটি সংলাপ ও সংলাপ নিয়ে লেখালেখির সংশ্লিষ্ট অংশ দেখুন:
‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে সিলেটে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে’।[3]
সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছে,
‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় প্রগতিশীল চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’[4]
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেছে,
‘পৃথিবীর দেশে দেশে যে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার জন্ম হয়েছে তা থেকে মুক্তি প্রত্যাশা করি প্রত্যেকে। উগ্রবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সর্বধর্ম সম্প্রদায়ের সমগ্র জনগোষ্ঠীকে জাগ্রত করতে হলে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সৃষ্টির বিকল্প নেই’।[5]
এর আরো একটি প্রমাণ, যারা আন্তঃধর্মীয় সংলাপে আমন্ত্রিত হয়, ট্রেনিং নেয় বা এ মতবাদ বিস্তারে কাজ করে তারা সব সময়ই জিহাদের বিরোধীতা করে আসে। বিভিন্নভাবে তারা একাজটি করে। যেমন:
- জিহাদের জন্য আজগুবি শর্ত আরোপ করে ও সংশয় ছড়ায়। যেমন জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত, রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি ছাড়া জিহাদ হারাম, শত্রু সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলে জিহাদ হারাম, নফসের জিহাদ বড় জিহাদ, আত্মশুদ্ধি না হলে জিহাদ করা যাবে না ইত্যাদি।
- তাগুত শাসকদের আনুগত্য ফরয এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম ফতোযা দিয়ে বেড়ায়।
- মুজাহিদদের জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খারিজি, তাকফিরি ইত্যাদি মন্দ বিশেষণ লাগিয়ে বিভৎসরূপে তুলে ধরে। আলকায়েদা তালেবানসহ হকপন্থী মুজাহিদদের জিহাদকে হারাম ফতোয়া দিয়ে এবং তাদেরকে জঙ্গি সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে তাদের প্রতি বদ ধারণা সৃষ্টির পায়তারা করে।
এভাবে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে জিহাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি:
ক. ফরিদ উদ্দীন মাসউদ
বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির একজন বিশিষ্ট প্রচারক ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। তার জিহাদ বিরোধীতার কথা সকলে অবগত। এক লাখ আলেমের জাল স্বাক্ষরিত শান্তির ফতোয়া নামে সে জিহাদ বিরোধী একটি ভূয়া ফতোয়া প্রকাশ করেছে, যা সকলের জানা আছে।
খ. ড. মানজুরে ইলাহী
ইদানিং আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি সমর্থকদের মাঝে নতুন মুখ উঠে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মানজুরে ইলাহী। কিছুদিন আগে ডিবিসি নিউজ কতৃক আয়োজিত একটি সংলাপে তিনি যোগ দেন- যেমনটা পূর্বে বলেছি এবং ভিডিওর লিংকও দিয়েছি। এছাড়া ২০১৮ সালে জার্মান সরকারের আমন্ত্রণে বৈচিত্র্য এবং আন্তর্ধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ক প্রোগ্রামের আওতায় তিনি জার্মানীতেও গিয়েছিলেন।[6]
এক অনুষ্ঠানে তিনি জিহাদের জন্য রাষ্ট্রশক্তি থাকা শর্ত করেছেন। অন্যথায় জিহাদ নাজায়েয বলেছেন। এভাবে তিনি মূলত উম্মাহর এ দুর্বলতার সময়ে জিহাদের রাস্তাটা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেটা তার মতো অনেকেই এ বুলির আড়ালে করে থাকে। আলকায়েদার জিহাদকে ইসলাম সমর্থন করে না বলেছেন। রাশিয়া পরবর্তী তালেবানের জিহাদকেও তিনি ইসলামি জিহাদ নয় বলেছেন।[7]
গ. ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’ নামে ড. মোঃ আবদুল কাদের একটি পুস্তিকা লিখেছেন। এ পুস্তিকায় মূলত তিনি কুরআন সুন্নাহ ও সিরাত বিকৃত করে কুফরি সংলাপের পক্ষে দলীল যোগাড় করার পায়তারা করেছেন। এ সম্পর্কে ইনশাআল্লাহ আমরা সামনে আলোচনা করবো। ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া এ পুস্তিকার সম্পাদনা করেছেন। আর স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের মন্তব্য ছাড়া সম্পাদনা করার অর্থ পুস্তিকার বিষয়বস্তুকে স্বীকৃতি দেয়া। ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সাহেব সেটিই করেছেন। আর তার জিহাদ বিরোধীতার কথা তো সকলের জানা। কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে জিহাদ বিরোধী বক্তব্য তিনি দিয়েছেন সে কারণে সকলের নিকট ধিকৃত হয়ে আছেন।[8]
দুই. মুসলিম সমাজে ধর্মান্তর ও ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তা খোলা
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ খৃস্টান মিশনারী তৎপরতার অংশ। বাহ্যত বলা হয় সংলাপের উদ্দেশ্য সব ধর্ম সম্পর্কে জানা এবং ধর্মগুলোর পারস্পরিক বিরোধ নিরসন করা। প্রকৃত অর্থে এটি একটি বুলি। যদি তাই হতো তাহলে সব ধর্ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা হতো। সবাইকে নিজ নিজ ধর্মীয় আকিদা বিশ্বাস স্পষ্টভাবে বলার এবং অন্য ধর্মের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হতো। যাতে বিরোধের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত হয়ে সমাধানের এবং হক গ্রহণের সুযোগ হয়। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত। মুখলিস কতক মুসলিম বিদ্বান যারা না বুঝে বা ইসলামের দাওয়াতের লক্ষ্যে এসব সংলাপে যোগ দিয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হলো, ইসলাম ধর্মে কুঠারাঘাত, ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও সমালোচনা, খ্রিস্টবাদের জয়গান এবং খ্রিস্টবাদের অসাড় মতবাদ ও স্যাকুলারিজমের দিকে দাওয়াতই থাকে এসব সংলাপের মুখ্য বিষয়। মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে ইসলামের স্বরূপ ফুটিয়ে তুলে ভিন্ন ধর্মের সমালোচনার ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরার কোনো সুযোগই দেয়া হয় না। তদ্রূপ ফিলিস্তিন, কাশ্মির, তুর্কিস্তান, চেচনিয়া, বসনিয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলো সমাধানের কথা তুলতেই দেয়া হয় না। আর উঠে গেলে ধামাচাপা দেয়া হয় যেকোনো পন্থায়। কারণ, সংলাপের চাবিকাঠি থাকে তাদেরই হাতে। তাদের অনুগ্রহের বাইরে মুসলিম প্রতিনিধিরা কিছুই বলতে পারে না।
মোটকথা, সম্প্রীতির বুলি আওড়িয়ে ইসলামী আকিদা বিনষ্ট করা, কুফর-শিরক-ইলহাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পথ সুগম করা এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে দমন করাই সংলাপের মূল নিয়ামক।
ড. মুহাম্মাদ উমারা, যিনি বহু সংখ্যক সংলাপে যোগ দিয়েছেন এবং অবশেষে নিরাশ হয়ে এ পথ পরিত্যাগ করেছেন, তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি। مأزق المسيحية والعلمانية في أوربا গ্রন্থের ভূমিকায় (পৃষ্ঠা: ৫-১২) তিনি বলেন[9],
تجربتي مع الحوارات الدينية -وخاصة مع ممثلي النصرانية الغربية- تجربة سلبية، لا تبعث على رجاء آمال تُذكر من وراء هذه الحوارات التي تُقام لها الكثير من اللجان والمؤسسات، وتُعقد لها الكثير من المؤتمرات والندوات واللقاءات، ويُنفق عليها الكثير من الأموال.
وذلك أن كل هذه الحوارات التي دارت وتدور بين علماء الإسلام ومفكريه وبين ممثلي كنائس النصرانية الغربية، قد افتقدت ولا تزال مفتقدة لأول وأبسط وأهم شرط من شروط أي حوار من الحوارات؛ وهو شرط الاعتراف المتبادل والقبول المشترك بين أطراف الحوار، فالحوار إنما يدور بين “الذات” وبين “الآخر”؛ ومن ثم بين “الآخر” وبين “الذات”، ففيه إرسال وفيه استقبال، على أمل التفاعل بين الطرفين، فإذا دار الحوار -كما هو حاله الآن- بين طرف يعترف بالآخر، وآخر لا يعترف بمن “يحاوره”، كان حواراً مع “الذات”، وليس مع “الآخر”، ووقف عند “الإرسال” دون”الاستقبال”، ومن ثم يكون شبيهاً -في النتائج- بحوار الطرشان .. !!
موقف الآخرين من الإسلام، والمسلمين، هو موقف الإنكار، وعدم الاعتراف، أو القبول، فلا الإسلام في عرفهم دين سماوي، ولا رسوله صادق في رسالته، ولا كتابه وحي من السماء، حتى لتصل المفارقة في عالم الإسلام إلى حيث تعترف الأكثرية المسلمة بالأقليات غير المسلمة، على حين لا تعترف الأقليات بالأغلبية!
فكيف يكون، وكيف يثمر حوار ديني بين طرفين، أحدهما يعترف بالآخر، ويقبل به طرفاً في إطار الدين السماوي، بينما الطرف الآخر يصنفنا كمجرد “واقع”، وليس كدين، بالمعنى السماوي لمصطلح الدين؟!
ذلك هو الشرط الأول، والضروري المفقود، وذلك هو السر في عقم كل الحوارات الدينية التي تمت وتتم رغم ما بُذل ويُبذل فيها من جهود، وأنفق ويُنفق عليها من أموال، ورُصد ويُرصد لها من إمكانات!
أما السبب الثاني لعزوفي عن المشاركة في الحوارات الدينية -التي أُدعى إليها- فهو معرفتي بالمقاصد الحقيقية للآخرين من وراء الحوار الديني مع المسلمين، فهم يريدون التعرّف على الإسلام، وهذا حقهم إن لم يكن واجبهم، لكن لا ليتعايشوا معه وفقاً لسنة التعددية في الملل والشرائع، وإنما ليحذفوه ويطووا صفحته بتنصير المسلمين!
وهم لا يريدون الحوار مع المسلمين، بحثاً عن القواسم المشتركة حول القضايا الحياتية التي يمكن الاتفاق على حلول إيمانية لمشكلاتها، وإنما ليكرسوا -أو على الأقل يصمتوا- عن المظالم التي يكتوي المسلمون بنارها، والتي صنعتها وتصنعها الدوائر الاستعمارية التي كثيراً ما استخدمت هذا الآخر الديني في فرض هذه المظالم وتكريسها في عالم الإسلام.
فحرمان كثير من الشعوب الإسلامية من حقها الفطري، والطبيعي في تقرير المصير واغتصاب الأرض، والسيادة في القدس، وفلسطين، والبوسنة والهرسك، وكوسوفا والسنجق، وكشمير، والفلبين .. إلخ .. إلخ .. كلها أمور مسكوت عنها في مؤتمرات الحوار الديني.
بل إن وثائق مؤتمرات التدبير لتنصير المسلمين التي تتسابق في ميادينها كلّ الكنائس الغربية، تعترف -هذه الوثائق- بأنَّ الحوار الديني -بالنسبة لهم- لا يعني التخلي عن “الجهود القسرية، والواعية، والمتعمدة، والتكتيكية لجذب الناس من مجتمع ديني ما إلى آخر” بل ربما كان الحوار مرحلة من مراحل التنصير! …
ومؤتمر آخر للحوار حضرته في عمّان -بإطار المجمع الملكي لبحوث الحضارة الإسلامية- مع الكنيسة الكاثوليكية في الثمانينيات وفيه حاولنا -عبثاً- انتزاع كلمة منهم تناصر قضايانا العادلة في القدس وفلسطين، فذهبت جهودنا أدراج الرياح! على حين كانوا يدعوننا إلى “علمنة” العالم الإسلامي لطي صفحة الإسلام كمنهاج للحياة الدنيا، تمهيداً لطي صفحته -بالتنصير- كمنهاج للحياة الآخرة!
ومنذ ذلك التاريخ عزمت على الإعراض عن حضور “مسارح”هذا “الحوار”!. – مأزق المسيحية والعلمانية في أوربا، ص: 5 – 14
“আন্তঃধর্মীয় সংলাপ – বিশেষত যেগুলো পশ্চিমা খ্রিস্টীয় প্রতিনিধিদের সাথে হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপার আমার অভিজ্ঞতা নেতিবাচক। এসব সংলাপের জন্য অসংখ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। অংসখ্য কনফারেন্স, বৈঠক ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশাল অংকের অর্থ এগুলোর পেছনে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হলো, উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কোনো ফলাফলের আশা নেই।
কারণ, পশ্চিমা খ্রিস্টীয় চার্চ প্রতিনিধিদের সাথে ওলামায়ে ইসলাম ও ইসলামি স্কলারদের যে সংলাপগুলো হয়েছে এবং হচ্ছে; যেকোনো সংলাপের প্রথম, প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে শর্তটি সেটিই তাতে অনুপস্থিত। সব সময়ই এমনটি হয়ে আসছে। সে শর্তটি হল প্রতিনিধিরা একজন অপরজনকে (প্রতিপক্ষ হিসেবে) মেনে নেবে এবং তার কথা (হক প্রমাণিত হলে) গ্রহণ করবে। সংলাপ তো দু’পক্ষের মাঝে হয়ে থাকে। একপক্ষ পেশ করবে আরেকপক্ষ গ্রহণ করবে; যেন উভয়ের মাঝে বিনিময় হয়। কিন্তু সংলাপ যদি এভাবে হয় যেভাবে বর্তমানে চলছে যে, একপক্ষ তো অপরপক্ষকে মেনে নেবে কিন্তু অপরপক্ষ তার প্রতিপক্ষকে মেনে নেবে না তাহলে এখানে আসলে সংলাপ হচ্ছে শুধু নিজের সাথে, অপরপক্ষের সাথে না। এখানে শুধু পেশই হচ্ছে, গ্রহণ হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে এটি বধিরদের সংলাপে পরিণত হবে।
ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে প্রতিপক্ষের অবস্থান অস্বীকৃতিমূলক। তারা ইসলামকে একটা পক্ষ বলে স্বীকারও করবে না, এ পক্ষের কোনো কিছু গ্রহণও করবে না। তাদের দুনিয়ায় ইসলাম কোনো আসমানি ধর্ম নয়। এ ধর্মের রাসূল তাঁর রাসূল হওয়ার দাবিতে সত্যবাদীও নয় এবং এ ধর্মের ধর্মীয় কিতাব আসমান থেকে অবতীর্ণ কোনো ইলাহি কিতাবও নয়। …
যেখানে একপক্ষ (অর্থাৎ মুসলিমরা) তার প্রতিপক্ষকে প্রতিপক্ষরূপে মেনে নেয় এবং প্রতিপক্ষের ধর্মকে (বিকৃত হলেও) আসমানি ধর্ম স্বীকৃতি দিয়ে তাকে প্রতিপক্ষরূপে গ্রহণ করে অথচ অপরপক্ষ আমাদেরকে কেবল একটা নিছক মতবাদের কাতারে রাখে, আসমানি ধর্মের আওতায় ধরে না- সেখানে সংলাপই কিভাবে হবে আর সংলাপ ফলপ্রসূইবা কিভাবে হবে?!
এটিই হল সেই প্রথম ও অত্যাবশ্যকীয় শর্তটি যেটি অনুপস্থিত। সংলাপের পেছনে শত শ্রম দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশাল অংকের ব্যয় হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্ভাব্য সকল পথ-পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও প্রত্যেকটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, যেগুলো ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে, সবগুলো নিষ্ফল হয়ে যাওয়ার এটিই রহস্য (যে, প্রথম শর্তটিই তাতে অনুপস্থিত)।
আহুত সংলাপগুলো থেকে আমার দূরে সরে আসার দ্বিতীয় কারণটি হলো, সংলাপের অন্তরালে মুসলমানদের নিয়ে প্রতিপক্ষের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমি অবগত হতে পেরেছি। তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়। আর এটা জন্য আবশ্যক না বললেও তাদের অধিকার বলতে পারি। তবে ইসলাম সম্পর্কে তারা এ জন্য জানতে চায় না যে, বিভিন্ন ধর্ম ও শরীয়তের মধ্যে ইসলামকেও একটি ধর্ম হিসেবে মেনে নেবে; বরং এজন্য জানতে চায় যেন ইসলামকে মিটিয়ে দিতে পারে এবং মুসলমানদের খ্রিস্টান বানানোর মাধ্যমে ইসলামের নাম-নিশানা বিলীন করে দিতে পারে।
তারা মুসলিমদের সাথে সংলাপ এজন্য করতে চায় না যে, জীবনের নানাবিধ সমস্যাগুলো সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঈমানিপন্থায় সমাধান করবে, বরং সংলাপ করতে চায় এজন্য যাতে ঐসব জুলুমকে বৈধ সাব্যস্ত করতে পারে – বা অন্তত সেগুলোর আলাপ-আলোচনা বন্ধ করে দিতে পারে- যেগুলোর আগুনে মুসলিমরা দগ্ধ হচ্ছে। যেগুলো উপনিবেশবাদী মহলগুলো চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। বরং মুসলিম বিশ্বে এসব জুলুম চাপাতে এবং সেগুলো বৈধ করতে উপনিবেশবাদী মহলগুলো অনেক ক্ষেত্রে এই সংলাপধারী প্রতিপক্ষটিকেই ব্যবহার করেছে।
মুসলমানরা যে তাদের জীবন ধারণের মৌলিক ও মানবিক অধিকারটুকু থেকেও বঞ্চিত; জেরুজালেম, ফিলিস্তিন, বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, কোসোভো, সান্দজাক, কাশ্মির, ফিলিপাইনসহ অসংখ্য ভূমিতে যে তারা নেতৃত্বহারা এবং আগ্রাসনের শিকার- ধর্মীয় সংলাপ সম্মেলনগুলোতে এর কোনোটিই আলোচনায় আসে না।
বরং মুসলিমদের খ্রিস্টান বানানোর প্রচেষ্টামূলক এসব সম্মেলন –যেগুলোতে পশ্চিমা প্রতিটি চার্চ প্রতিযোগিতামূলকভাবে অংশ নেয়- সেগুলোর দলিল-দস্তাবেজ এ কথার সাক্ষী যে, তাদের কাছে ধর্মীয় সংলাপ মানে কিছুতেই এমনটি নয় যে, ধর্মান্তরিত করার জন্য তারা যে বিপুল আগ্রাসী শক্তি ও কৌশলগত প্রচেষ্টা ব্যয় করে থাকে সেগুলো থেকে তারা ফিরে আসবে। বরং অনেক সময় এসব সংলাপ খ্রিস্টান বানানোর স্তরগুলোর একটা স্তর হয়ে থাকে। …
আশির দশকে ওমানে আরেকটি সংলাপে আমি যোগ দিয়েছিলাম। ‘সরকারি ইসলামী সভ্যতা গবেষণা সংস্থা’ তার আয়োজন করে। ক্যাথলিক চার্চের সাথে এ সংলাপ হয়েছিল। জেরুজালেম ও ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আমাদের ন্যায়সংগত পদক্ষেপগুলোর সমর্থনে কোনো একটা বাক্য তাদের থেকে বের করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনর্থক। আমাদের সকল প্রচেষ্টা হাওয়ায় উড়ে গেল। বরং উল্টো তারা আমাদের মুসলিম বিশ্বকে ধর্মনিরপেক্ষ বানিয়ে ফেলার দাওয়াত দিলো। যাতে জাগতিক জীবনে ইসলাম কোনো জীবন-বিধানরূপে বহাল না থাকে। আর এটি মূলত মুসলিমদের খ্রিস্টান বানানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ, যার ফলে আখেরাত জীবনে (মুক্তি ও কামিয়াবির) মাধ্যমরূপেও ইসলামের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না (বরং খ্রিস্টধর্মই মুক্তির পয়গামরূপে পরিগণিত হবে)।
সেদিন থেকে ধর্মীয় সংলাপের এ নাট্যমঞ্চগুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার পাকাপোক্তা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।” ড. উমারার বক্তব্য শেষ হল।।
ড. উমারাসহ আরো বহু ইসলামিক স্কলারের অভিজ্ঞতা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রতিবেদনগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে:
- আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইসলামের দাওয়াত নয়, ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
- আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আন্তর্জাতিক কুফফারগোষ্ঠী এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী তাগুতদের হাতে প্রতিষ্ঠিত এবং সেগুলোর কলকব্জা তারাই নাড়িয়ে থাকে।
- সম্প্রীতির নাম করে ইসলামকে তরলায়িতকরণ এবং ইসলামী আকিদা বিনষ্ট করার প্রয়াস আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।
- মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার প্রাথমিক প্রকল্প আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।
- আন্তঃধর্মীয় সংলাপ মুসলিম বিশ্বে ধর্মদ্রোহিতা ও সেকুলারিজম বিস্তারের দাওয়াত।
- জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ দমনের ভিন্নরূপী কৌশল আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।
- মুসলিমদের উপর উপনিবেশবাদী আগ্রাসী শক্তিকে চাপিয়ে দেয়া এবং সর্বপ্রকারের জুলুম অনাচারের বৈধতা দানের প্রয়াস আন্তঃধর্মীয় সংলাপ।
- আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: দরবারি আলেমদের বিকৃতির অপচেষ্টা
আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আসল চেহারা এবং এর আসল উদ্দেশ্য আমরা তুলে ধরেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, খেলাফত ব্যবস্থা পতনের পর মুসলিম বিশ্বে যখন আগ্রাসী কুফরি শক্তি এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী তাগুতরা চেপে বসে তখন থেকে উলামা শ্রেণীর মাঝে এমন বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে যে, সামান্য দুনিয়ার লোভে দ্বীন বিক্রি করে দেয়ার মতো আলেম প্রচুর পরিমানে দেখা যাচ্ছে। যেকোনো কুফরি মতবাদের স্বপক্ষে কাফের ও তাগুতগোষ্ঠী একদল আলেম যোগাড় করতে সমর্থ্য হচ্ছে। শরীয়তের নুসূসের বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা করে এরা আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় যেকোনো কর্মকাণ্ডকে বৈধ প্রমাণ করার অপচেষ্টা করছে। আন্তঃধর্মীয় কুফরি সংলাপের বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, মানজুরে ইলাহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ জাতীয় লোকেরা এ কাজটিই করেছেন ও করছেন। তবে এ ব্যাপারে তাদের লেখালেখি নেই বললেই চলে। কুরআন সুন্নাহ বিকৃত করে কুফরি সংলাপের পক্ষে দলীল প্রমাণ যোগাড়ে এগিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবদুল কাদের। ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’ নামে তিনি একটি পুস্তিকা লিখেছেন।[10] সম্পাদনা করেছেন, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। সেখানে বলা হয়েছে,
‘ইসলাম আন্তঃধর্মীয় সংলাপের সমর্থক। সমগ্র মানবজাতির কাছে ইসলামকে বিশ্বজনীনরূপে প্রচার, প্রসার করতে সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম’। -পৃষ্ঠা ১৪
‘সংলাপ শুধু জায়েযই নয় বরং ফরয এবং সংলাপের ব্যাপারে আমরা আদিষ্ট’। -পৃষ্ঠা ২০
এদের ধৃষ্টতা দেখে লজ্জায় মরে যেতে হয়। ইসলাম ধ্বংসের এ গভীর ষড়যন্ত্রকে ইসলাম প্রচারের মাধ্যম বলে চালিয়ে দেয়ার পায়তারা করেছে। এতটুকুতেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং একে ফরয সাব্যস্ত করেছে।
আপনি হয়তো বলবেন, লেখক ঐ সংলাপ উদ্দেশ্য নেয়নি যে সংলাপের কথা উপরে বলা হয়েছে’।
কিন্তু এ ধারণা বিভিন্ন দিক থেকে অমুলক:
এক. আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কাফের মুরতাদ ও তাগুতদের আবিষ্কৃত এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত। এর সে ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য যেটা তারা দিয়েছে। যেমন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদি কুফরি পরিভাষাগুলোর সংজ্ঞা তাদের থেকেই নিতে হবে যারা এগুলোর আবিষ্কারক ও ধারক-বাহক। নিজে থেকে ভিন্ন ব্যাখ্যা করে বৈধ সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই।
দুই. বাস্তব দুনিয়াতেও সেসব সংলাপই অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেগুলো উপরে বলা হয়েছে। ভিন্ন কোনো সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
তিন. যেখানে কাফের মুরতাদরা ইসলামের নামটাও শুনতে পারে না, ইসলাম প্রতিষ্ঠার কর্মীদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তেই হোক, দমনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করে: সেখানে আপনি কিভাবে ধারণা করতে পারেন যে, সহীহ ইসলাম প্রচার প্রসারের জন্য তারা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে স্বউদ্যোগে স্বাগ্রহে সম্মেলনের ব্যবস্থা করে দেবে?!
চার. যে কাফেররা শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে কোটি কোটি মুসলমানকে হত্যা করেছে এবং করে যাচ্ছে, কিভাবে কল্পনা করতে পারেন যে, তারা সহীহ ইসলামের দাওয়াত বিস্তারের সুযোগ করে দেবে?
পাঁচ. আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কাফেররা ইসলামের ঘোরতর শত্রু। ইসলাম চিরতরে মিটিয়ে দিতে তারা অনবরত যুদ্ধ করে যাবে। সেখানে কিভাবে আপনার এতবড় আস্থা যে, তারা ইসলাম প্রচারের সংলাপ খুলে দেবে?
ছয়. লেখকের কথা থেকেও সংলাপের সে অর্থই বুঝে আসে যে অর্থ উপরে বলা হয়েছে। তবে শব্দের মারপ্যাঁচে এবং কিছু কমিয়ে বাড়িয়ে তারা হাকিকতটাকে একটু আড়াল করার চেষ্টা করেছে। যেমন তাদের কয়েকটি বক্তব্য দেখুন,
‘ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, সম্মান প্রদর্শনপূর্বক পারস্পরিক যে ধর্মীয় যে আলোচনা করা হয়; তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ’। -পৃষ্ঠা ৭
‘সংলাপ হল নিজের সত্যতা, ধর্মীয় মূল বিশ্বাস, ন্যায্যতা, তথা সমুদয় মূল্যবোধ বজায় রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও মহানুভবতা প্রদর্শন করে পারস্পরিক যে আলাপ সহভাগিতা করা হয়, তাই সংলাপ’। -পৃষ্ঠা ৬
“আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা একটি বৃহৎ সত্তায় অন্তর্ভুক্ত একটি বিশাল পরিবারের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছি এবং আমরা সকলেই ভালোবাসা ও সত্যের আত্মিক বাস্তবায়নের দিকে ধাবমান। আন্তঃধর্মীয় সংলাপে বিশ্বাসী কেউ কেউ বলেন, জগদ্বাসীকে নতুন করে আবার আহ্বান জানাতে হবে: ‘বিবাদ নয়, সহায়তা; বিনাশ নয় পরস্পরের ভাবগ্রহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি’।’’ –পৃষ্ঠা ১৪
‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উদ্দেশ্য হলো পরস্পরকে জানা। এর উদ্দেশ্য অন্য ধর্মকে জয় করা নয়। অন্য ধর্মের সাথে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বিশ্বজনীন ধর্ম প্রতিষ্ঠাও এর উদ্দেশ্য নয়। এর উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ধমের্র মধ্যে অজ্ঞতাজনিত যে বিরোধ আছে তার মধ্যে সেতু বন্ধন রচনা করা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিকে অনুধাবন করা। যার ফলে প্রত্যেকেই তার নিজেদের ভাষায় নিজস্ব বক্তব্যকে ব্যক্ত করতে পারবে’। -পৃষ্ঠা ১০
তারা যে সংলাপের কথা বলছে সে সংলাপে কাফের মুশরিকদের প্রতি গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন থাকবে। সকলের সাথে বিরোধ বিদ্বেষ উঠিয়ে দিতে হবে। এক পরিবারের মতো সবাইকে ভালোবাসতে হবে। সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ শান্তি-সম্প্রীতির পথে হাঁটতে হবে। এ সংলাপে কাফেরদের ধর্মের বিপরীতে ইসলামকে জয়ী করার চেষ্টা করা যাবে না।
তাহলে ভিন্ন আর কোন সংলাপের কথা তারা বলছে? আর যখন ইসলামকে জয়ী করারও কোনো প্রসঙ্গ থাকছে না তাহলে এ সংলাপ ইসলাম প্রচারের মাধ্যম, বরং আবশ্যকীয় ফরয দায়িত্ব কিভাবে হচ্ছে? যেকোনো বিবেকবানের কাছেই এটা স্পষ্ট যে, শব্দের মারপ্যাঁচে তারা হাকিকতটাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। নতুবা সংলাপের কনফারেন্সগুলো কাফের মুরতাদদের তত্বাবধানেই হচ্ছে। লেখক সেগুলো সম্পর্কেই আলোচনা করছে; ভিন্ন কোনো সংলাপ নয়।
‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রন্থে আন্তঃধর্মীয় কুফরি সংলাপ বৈধ বরং ফরয হওয়ার স্বপক্ষে অনেক দলীল পেশ করা হয়েছে। যেকোনো একজন সাধারণ পাঠকও বুঝতে পারবে দরবারিরা এখানে কত বড় দাজ্জালি করেছে। ভরা দিবসে এমন জঘন্য মিথ্যাচার দেখে লজ্জার কোনো অন্ত থাকে না। কুরআনে কারীমের দাওয়াতসংক্রান্ত আয়াতসমূহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতে তাওহিদের গোটা জীবনটাকেই তারা আন্তঃধর্মীয় কুফরি সংলাপের স্বপক্ষে পেশ করে দিয়েছে। মৌলিকভাবে যেসব পয়েন্টকে তারা কুফরি সংলাপের দলীল পেশ করেছে:
এক. কুরআনে কারীমে কাফের-মুশরিকদের ইসলামের দাওয়াত দিতে, প্রয়োজনে আলাপ আলোচনা করতে, তাদের সন্দেহ সংশয় দূর করতে এবং অসার যুক্তি প্রমাণ খণ্ডন করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। যেমন,
ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ وَجَٰدِلۡهُم بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِۦ وَهُوَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُهۡتَدِينَ [النحل: ١٢٥]
“আপনি আপনার রবের পথে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশসমূহের দ্বারা এবং তাদের সহিত উত্তম পদ্ধতিতে বির্তক করুন। আপনার রব তার পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে বিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবগত।” –সূরা নাহল (১৬) : ১২৫
এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত।
দুই. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মুশরিকসহ অন্যান্য মুশরিকদের দাওয়াত দিয়েছেন। যেমন, নবুওয়াতের শুরুতে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে কুরাইশদের ডেকে এনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছেন। তখন আবু লাহাব রাসূলকে গালমন্দ করেছিল। ফলে সূরা লাহাব নাযিল হয়। আবু লাহাব শোচনীয়ভাবে মৃত্যুবরণ করে জাহান্নামবাসী হয়।
তিন. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের দাওয়াত দিয়েছেন। যেমন, আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা।
চার. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খ্রিস্টানদের দাওয়াত দিয়েছেন। যেমন, নাজরানের খ্রিস্টানরা মদীনায় আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাদের কথা বার্তা হয়। রাসূলকে সত্য নবী বুঝতে পেরেও তারা ঈমান আনেনি। হটকারিতায় অটল থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চ্যালেঞ্জ দিয়ে মুবাহালার ডাক দেন। এতে তারা পিছু হটে যে, নবীর সাথে মুবাহালা করতে গেলে আমাদের বংশশুদ্ধ নিপাত যাবে। তাদের ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়,
فَمَنۡ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡاْ نَدۡعُ أَبۡنَآءَنَا وَأَبۡنَآءَكُمۡ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمۡ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمۡ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلۡكَٰذِبِينَ [آل عمران: ٦١]
“আপনার কাছে (ঈসা আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্পর্কে) যে প্রকৃত জ্ঞান এসেছে, তারপরও যারা এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদেরকে বলুন, চলো, আমরা ডেকে আনি আমাদের সন্তানদের আর তোমরা তোমাদের সন্তানদের, আমরা আমাদের নারীদের তোমরা তোমাদের নারীদের, আমরা আমাদের নিজেদের লোকদের আর তোমরা তোমাদের নিজেদের লোকদের, তারপর আমরা সকলে মিলে আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতি করে দোয়া করি যে, (আমাদের দু’পক্ষের মধ্যে) যারা মিথ্যাবাদী তাদের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক।” –সূরা আলে ইমরান (৩) : ৬১
এতে তারা ভড়কে যায়। বিতর্ক পরিত্যাগ করে সন্ধির রাস্তা ধরে। জিযিয়া দিতে সম্মত হয়। সহীহ বুখারিসহ অন্যান্য হাদিস ও সীরাত গ্রন্থে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ আছে।
কুরআনে কারীমের দাওয়াতের আয়াতসমূহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতি জীবনের ঘটনাবলী দিয়ে আন্তঃধর্মীয় কুফরি সংলাপের পক্ষে দলীল দেয়া, لا اكراه فى الدين – لكم دينكم ولى دين – فمن شاء فليؤمن ومن شاء فليكفر ইত্যাদি আয়াত থেকে কুফরি গণতান্ত্রিক শাসন ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রমাণের নামান্তর। ইসলামের সাম্য ও আদল-ইনসাফ থেকে সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক কুফরি শাসন প্রমাণের নামান্তর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এধরনের দ্বীন বিক্রেতা কিছু মোল্লাও পৃথিবীতে জন্মেছিল এবং এখনও আছে। আন্তঃধর্মীয় কুফরি সংলাপের বিষয়টাও এমনি। দ্বীন বিক্রেতা কিছু মোল্লা তারা ভাড়া করতে সমর্থ্য হয়েছে।
সংলাপের প্রকৃত চিত্র ও উদ্দেশ্য আমরা ইতোমধ্যে তুলে ধরেছি। যেকোনো একজন সচেতন পাঠক প্রথম দৃষ্টিতেই ফায়সালা দিতে পারবেন যে, নববি দাওয়াতের সাথে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কোনোই সম্পর্ক নেই। আসমান যমিন ব্যবধান।
নববি দাওয়াতের প্রকৃত চিত্র: এ কথার সাক্ষ্য ও ঘোষণা যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মনোনীত তাওহিদের ধর্ম ইসলাম একমাত্র হক দ্বীন। অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ বাতিল। আমরা তোমাদের মানি না, তোমাদের ধর্মও মানি না। তোমাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন। তোমরা আমাদের দুশমন, আমরা তোমাদের দুশমন। দ্বীনে হকের দাওয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হও, নয়তো চিরস্থায়ী জাহান্নামের আগুনের জন্য প্রস্তুত হও। আর দুনিয়াতে তোমাদের সাথে ফায়সালা হবে তরবারি দিয়ে। মুসলমান হও, নয় জিযিয়া দিয়ে যিম্মি হও, নয় তরবারি হাতে ময়দানে আস।
এ হলো নববি দাওয়াতের চিত্র।
পক্ষান্তরে সংলাপের চিত্র হলো: ইসলামি আকিদা গোড়া থেকেই বিসর্জন। অন্য সকল মতবাদের মতো ইসলামও একটা মতবাদ। অন্য ধর্ম ও মতবাদগুলো বাতিল নয়, এককভাবে ইসলামও হক নয়। ইসলামকে আলোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। কাটাছেঁড়া হবে। আল্লাহর দুশমনদের দৃষ্টিতে ইসলামের যতটুকু মানবতা বলে মনে হয়, যতটুকুর সাথে কোনো কুফরি মতবাদের সংঘর্ষ না হয় ততটুকু সত্য। ততটুকু অনুমোদিত। বাকিটুকু মানবতাবিরোধী। যারা পূর্ণ ইসলামের আকিদায় বিশ্বাসী তারা জঙ্গি। সন্ত্রাসী। মানবতার হুমকি। তাদের দমন অপরিহার্য।
মোটকথা নববি দাওয়াত দ্বীনে হকের দাওয়াত আর সংলাপ কুফরের দাওয়াত। কিংবা অন্তত ইসলামকে তরলায়িত করে কুফরের রাস্তা সুগম করার দাওয়াত। এ সংলাপের উপর লা’নত। এ সংলাপের প্রতিষ্ঠাতা ও আয়োজকদের উপর লা’নত।
আরব অনারবের অসংখ্য মুহাক্কিক আলেম এ ব্যাপারে ফতোয়া জারি করেছেন। দু’টি ফতোয়া তুলে ধরছি:
শায়খ নাসির বিন হামদ আলফাহাদ
শায়খ নাসির বিন হামদ আলফাহাদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইনস্টিটিউট এবং তাতে অংশগ্রহণের কি বিধান’? তিনি উত্তর দেন,
فهذا مركزٌ خبيثٌ، مناقضٌ لدين الإسلام، محاربٌ لله ورسوله، منافٍ لملة إبراهيم، هادمٌ للولاء والبراء، مكذّبٌ للنصوص المتواترة الآمرة بمعاداة الكفار والبراءة منهم، قاصمٌ لأوثق عرى الإيمان (الحب في الله والبغض في الله)، معطّلٌ لأحكام الجهاد في سبيل الله، مغيّرٌ لدين المسلمين، ومعارضٌ للتوحيد تمام المعارضة، فهو – بحق – (مركز حوار أصحاب الجحيم): فمن أسّسه أو شارك فيه أو رضي به فهو كافرٌ مرتدٌ عليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين، ويجب التحذير منه بكل وسيلة – وإسلاماه، للشيخ ناصر بن حمد الفهد -فك الله أسره- 1435 ه | 2014 م، ص: 1، نسخة شاملة المنبر
“এটি একটি খবিস ইনস্টিটিউট। দ্বীনে ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। মিল্লাতে ইবরাহীমের সম্পূর্ণ বিপরীত। ওয়ালা বারা আকিদা বিধ্বংসী। কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য মুতাওয়াতির নসকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী; যেসব নস পরিষ্কার নির্দেশ দিচ্ছে কাফেরদের সাথে দুশমনি রাখতে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। এটি ঈমানের মজবুত হাতল ‘আলহুব্বু ফিল্লাহ ওয়ালবুগদু ফিল্লাহ-আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, আল্লাহর জন্যই দুশমনি’ আকিদার ধুলিস্যাৎকারী। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর বিধান নির্মূলকারী। দ্বীনে ইসলামের পবির্তনকারী। তাওহিদের সাথে শতভাগ সাংঘর্ষিক। বাস্তব বলতে গেলে এটি ‘জাহান্নামবাসীদের সংলাপ ইনস্টিটিউট’। যে এটি প্রতিষ্ঠা করেছে, তাতে শরীক হয়েছে বা যে এর প্রতি সন্তুষ্ট সে কাফের ও মুরতাদ। তার উপর আল্লাহর লা’নত, সকল ফেরেশতার লা’নত এবং সকল মানুষের লা’নত। যতভাবে পরা যায় এটির ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করা অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব।” –শায়খের ফতোয়া ‘ওয়া ইসলামাহ!’, পৃষ্ঠা: ১
সৌদি ইফতা বোর্ড লজনায়ে দায়েমা
فإن الدعوة إلى (وحدة الأديان) والتقارب بينها وصهرها في قالب واحد، دعوة خبيثة ماكرة، والغرض منها خلط الحق بالباطل، وهدم الإسلام وتقويض دعائمه، وجر أهله إلى ردة شاملة، ومصداق ذلك في قول الله سبحانه: سورة البقرة الآية 217 وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا وقوله جل وعلا: سورة النساء الآية 89 وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً سابعا: وإن من آثار هذه الدعوة الآثمة إلغاء الفوارق بين الإسلام والكفر، والحق والباطل، والمعروف والمنكر، وكسر حاجز النفرة بين المسلمين والكافرين، فلا ولاء ولا براء، ولا جهاد ولا قتال لإعلاء كلمة الله في أرض الله، والله جل وتقدس يقول: سورة التوبة الآية 29 قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ ويقول جل وعلا: سورة التوبة الآية 36 وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ وقال تعالى: سورة آل عمران الآية 118 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ ثامنا: إن الدعوة إلى (وحدة الأديان) إن صدرت من مسلم فهي تعتبر ردة صريحة عن دين الإسلام؛ لأنها تصطدم مع أصول الاعتقاد، فترضى بالكفر بالله عز وجل، وتبطل صدق القرآن ونسخه لجميع ما قبله من الشرائع والأديان، وبناء على ذلك فهي فكرة مرفوضة شرعا، محرمة قطعا بجميع أدلة التشريع في الإسلام من قرآن وسنة وإجماع. -فتاوى اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والإفتاء (12/ 356-358)
“সকল ধর্মকে এক ধর্মে রূপান্তর, ধর্মসমূহের পরস্পর সম্প্রীতি এবং সকল ধর্মকে এক ছাঁচে গড়ে তোলার আহ্বান একটি খবিস ও প্রতারণাপূর্ণ আহ্বান। এর উদ্দেশ্য হক বাতিল গুলিয়ে ফেলা। ইসলাম ধ্বংস করা এবং ইসলামের মূল ভীতসমূহ ভেঙে দেয়া। ব্যাপকভাবে মুসলিমদেরকে মুরতাদ বানিয়ে ফেলা। যার বাস্তবতা আল্লাহ তাআলার এ বাণীসমূহে বিধৃত হয়েছে-
“তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই থাকবে, যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরাতে পারে- যদি তারা তা করতে সক্ষম হয়।”-সূরা বাকারা: ২১৭
“তারা চায় তারা নিজেরা যেমন কুফর অবলম্বন করেছে, তেমনি তোমরাও কাফের হয়ে যাও।” -সূরা নিসা: ৮৯
সাত. এ নাপাক দাওয়াতের পরিণতি দাঁড়াবে যে, ঈমান-কুফর, হক-বাতিল ও ভাল-মন্দের পার্থক্য মিটে যাবে। মুসলিম-কাফেরের মধ্যকার ঘৃণার বাঁধ ভেঙে যাবে। না থাকবে কোনো ওয়ালা বারা, আর না থাকবে আল্লাহর যমিনে আল্লাহর কালিমা বুলন্দের জন্য কোনো জিহাদ ও কিতাল। অথচ আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন,
“তোমরা কিতাল কর আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে।” -সূরা তাওবা: ২৯
“তোমরা সমবেতভাবে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যেমন তারা সমবেতভাবে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। আর মনে রেখো, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” -সূরা তাওবা: ৩৬
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” -সূরা আলে ইমরান: ১১৮
আট. সকল ধর্মকে এক ধর্মে রূপান্তরের দাওয়াত যদি কোনো মুসলিম থেকে প্রকাশ পায় তাহলে তা দ্বীনে ইসলাম থেকে সুস্পষ্ট রিদ্দাহ ও বহিষ্কার বলে গণ্য হবে। কারণ, তা ইসলামের মৌলিক আকিদা বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তা আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লাহর সাথে কুফরের প্রতি সন্তুষ্টি। কুরআনের সত্যতা এবং তা যে পূর্বেকার সকল শরীয়ত ও ধর্মের রহিতকারী তার পরিপন্থী। অতএব, এটি শরীয়ত পরিপন্থী বিশ্বাস। কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা: ইসলামের সর্ব প্রকার দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে অকাট্য হারাম।” -ফাতাওয়া লজনায়ে দায়েমা: ১২/৩৫৬-৩৫৮
- একনজরে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ
- আন্তর্জাতিক কুফফারগোষ্ঠী এবং তাদের স্থানীয় এজেন্ট মুসলিমনামধারী মুরতাদ তাগুতদের হাতে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত।
- ইসলাম ধ্বংসের এক গভীর ষড়যন্ত্র।
- মুসলিমদের ধর্মান্তরকরণ, খ্রিস্টবাদ ও সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ।
- সম্প্রীতির নামে তাওহীদ, ওয়ালা বারা ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নির্মূলের চক্রান্ত।
- ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান, আফগান, শাম, ইরাক, চেচনিয়া, বসনিয়াসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে উপনিবেশ কায়েম এবং আগ্রাসন চালানো ও জুলুম অত্যাচার এবং সম্পদ লুট বৈধ করণের পদক্ষেপ।
***
[1] এই লিংকে ভিডিওটি পাওয়া যাবে: https://www.youtube.com/watch?v=8maRxpswFOQ
পাঠককে সতর্ক করা হচ্ছে, ভিডিওতে বেপর্দা নারী আছে
[2] এই লিংকে ভিডিওটি পাওয়া যাবে: https://www.youtube.com/watch?v=8maRxpswFOQ
পাঠককে সতর্ক করা হচ্ছে, ভিডিওতে বেপর্দা নারী আছে
[3] লিঙ্ক- https://cutt.ly/4hP3FHN
[4] https://www.priyo.com/articles/201811222034-dialog-should-strengthened-among-religions
[5] https://www.jagonews24.com/opinion/article/549454
[6] জার্মানির অভিজ্ঞতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি, তারেক শামসুর রেহমান।
লিংক: https://cutt.ly/ThP8y2T
[7] জিহাদ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী।
লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=ll0YHthaXBs
[8] কাশ্মীর জিহাদ নিয়ে ড. আবুবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=t-2qqxewRPw
লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=jPw02Mdfs4U
[9] লিংক: https://cutt.ly/7hP8Sr5
[10] গ্রন্থের লিংক: https://drive.google.com/file/d/1eHJrYIGzWX21SI2ITH0J-Ie0r0WVSHfM/view