কুরবানী: জরুরি মাসায়েল || মুফতি আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি হাফিযাহুল্লাহ
কুরবানী: জরুরি মাসায়েল
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
সূচিপত্র
কুরবানীর নেসাবে বছরপূর্তি জরুরি নয়. 11
‘হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ’র অর্থ এবং কিছু ভুল ধারণা.. 12
এজেন্সিকে দেয়া অর্থ, এক বছরের খোরাকি ও নির্মাণ সামগ্রী হিসেব হবে না.. 14
কারো অংশ এক-সপ্তমাংশের কম না হওয়া জরুরি.. 16
একান্নভুক্ত পরিবারের কুরবানী.. 17
শরীকের অর্থ হারাম কিংবা নিয়ত গলদ হলে.. 19
ভেড়া দুম্বার বয়স কম হলেও চলে যদি… 20
বয়স নির্ণয়ে বিক্রেতার কথা বিশ্বাস করা.. 21
কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম. 21
কান কিংবা লেজ কাটা পশুর কুরবানী.. 27
পশু ক্রয় করার পর যদি ত্রুটি সৃষ্টি হয়. 28
কুরবানীর পশু দ্বারা উপকৃত হওয়া.. 28
আগে ঈদের নামায পরে কুরবানী.. 29
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী.. 30
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানীর মূল্য কেমন হবে?. 31
কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম. 31
পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুটি শাহরগ কর্তন করা। 32
জবাইয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির অংশ গ্রহণ. 33
জবাই পূর্ণ হওয়ার পর খোঁচাখুঁচি করা.. 33
কুরবানীর পশু জবাই করার দোয়া.. 34
জবাই করার সময় পশুকে প্রয়োজন অতিরিক্ত কষ্ট না দেয়া.. 35
কুরবানীর হাড্ডি ও চর্বি বিক্রি করা.. 38
কুরবানীর হাড্ডি, চর্বি ও গোশত ক্রয় করা.. 38
কুরবানীর পশুর চামড়া নিজে ভোগ করা বা হাদিয়া দেয়া.. 39
মূল্য নিজে ভোগ করার জন্য চামড়া বিক্রি করা জায়েয নয়. 39
কুরবানীর গোশত-চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যাবে না.. 40
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী.. 42
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কুরবানী.. 43
কুরবানীর গোশত দিয়ে খাবার শুরু করা.. 44
সামাজিকভাবে গোশত বণ্টনের প্রথা অবিলম্বে পরিহার করা জরুরি.. 45
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وحده، والصلاة على من لا نبي بعده
কুরবানীর ফযীলত ও মর্যাদা
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذا الأيام، قيل : ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال : ولا الجهاد في سبيل الله إلا من خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء. –أخرجه الترمذي: (2/122 رقم: 757 ط. دار الغرب الإسلامي) وقال: “هذا حديث حسن صحيح”. وأخرج البخاري نحوه (2/20 رقم: 969 ط. دار طوق النجاة) عن ابن عباس رضي الله عنهما.
“এমন দিন নেই, যার নেক আমল আল্লাহর নিকট এই দিনগুলোর (যিলহজর প্রথম দশদিনের) চেয়েও বেশি প্রিয়। আরজ করা হলো, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়, তবে যে তার জান ও মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে এবং কোনো কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি (অর্থাৎ নিজে শাহাদাত বরণ করেছে এবং সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় হয়ে গেছে কিংবা শত্রুরা নিয়ে গেছে)।”[1] -জামে তিরমিযী, হাদীস: ২/১২২ হাদীস: ৭৫৭ ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীতেও ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে অনুরূপ বর্ণনা আছে। দেখুন, সহীহ বুখারী: ২/২০ হাদীস: ৯৬৯
নির্ভরযোগ্য সনদে আম্মাজান আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم، إنها لتأتي يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها، وإن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع من الأرض، فطيبوا بها نفسا. –رواه الترمذي (4/83 رقم: 1493) وقال: “هذا حديث حسن”. ولكن قال المنذري في “الترغيب والترهيب” (2/ 154) : “رواه ابن ماجه والترمذي، … والحاكم … من طريق أبي المثنى، واسمه سليمان بن يزيد عن هشام بن عروة عن أبيه عنها، وسلمان واهٍ، وقد وثق”. وقال العراقي في “تخريج أحاديث الإحياء” (2/ 674) : “وضعفه ابن حبان، وقال البخاري: إنه مرسل”.
“আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন, কুরবানীর দিন কোনো মানুষই এমন কোনো আমল করে না, যা আল্লাহর কাছে কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করা থেকে অধিক প্রিয়। এই কুরবানী কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও খুর সবকিছু নিয়ে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা মনের আনন্দে কুরবানী করো।” –জামে তিরমিযী: ৪/৮৩ হাদীস: ১৪৯৩
কুরবানী না করার ভয়াবহতা
عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا”
–رواه أحمد (8273) وابن ماجه (3123) وقال ابن عبد الهادي في “تنقيح التحقيق” (3/ 564) “هذا الحديث رجاله كلهم مخرج لهم في الصحيحين، إلا عبد الله ابن عياش بن عباس القتباني، فإنه من أفراد مسلم …. ورواه … جعفر بن ربيعة وعبيد الله بن أبي جعفر عن الأعرج عن أبي هريرة موقوفا، وهو أشبه بالصواب”. وقال الطحاوي –كما في مختصر اختلاف العلماء- (3/221) : “وعبيد الله بن [أبي] جعفر فوق ابن عياش في الضبط والجلالة فلم يرفعه”. وكذا رجح الوقف ابن عبد البر في التمهيد (23/ 191) وعبد الحق في “الأحكام الوسىطى” (4/127) والمنذري في “الترغيب والترهيب” (2/155) ولكن قال الحافظ ابن حجر في “الدراية” (2/ 213) : “وقد اختلف في وقفه ورفعه، والذي رفعه ثقة”. ولو سلم الوقف فقد قال القاري في “مرقاة المفاتيح” (3/ 1077) : “مثل هذا الموقوف في حكم المرفوع”.
“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।” –মুসনাদে আহমাদ: ১৪/২৪ হাদীস: ৮২৭৩ (মুআসসাসাতুর রিসালাহ); সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩ (দারুল রিসালাহ)
জরুরি মাসায়েল
যে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন (পাগল নয়) প্রাপ্তবয়স্ক মুকিম নারী বা পুরুষের মালিকানায় ঈদুল আযহার তিন দিন তথা ১০ যিলহজ সুবহে সাদিকের পর থেকে ১২ যিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কুরবানীর নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। -বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬৪ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); আদ্দুররুর মুখতার: ৬/৩১২, ৩১৯ (দারুল ফিকর)
পাগল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও মুসাফির নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -কিতাবুল আসল: ৫/৪০৭ (দারু ইবনি হাযম); মাবসুতে সারাখসী: ১২/১২ (দারুল মারেফা); মাওয়াহিবুর রহমান, পৃ: ৭৯৩ (বুকস পাবলিশার, বৈরুত); তাইসীরুল মাকাসিদ, শুরুম্বুলালী, পৃ: ৫৯৮ (দারুস সামমান); রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৫-৩১৬ (দারুল ফিকর)
কুরবানীর নেসাব হলো, ‘হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ’ তথা জীবন যাপনে ফিলহাল ব্যবহৃত সম্পদ এবং ঋণ বাদ দিয়ে যেকোনো ধরনের সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ। কারো কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকলে তিনি নেসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৫৪ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); রদ্দুল মুহতার: ২/৩৬০ (দারুল ফিকর)
ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সোনা রূপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, ব্যবসার সম্পদ, অব্যবহৃত জমি, আসবাবপত্র, কাঠের গাছ ও পোশাক সবই কুরবানীর নেসাবে হিসেবযোগ্য। -আল-ফাতাওয়াল বাযযায়্যিাহ: ৩/১৫৫ (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ); আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/২৯২ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১২, ৩৪৮ (দারুল ফিকর)
কুরবানীর নেসাবে বছরপূর্তি জরুরি নয়
যাকাতের নেসাবের মালিক হওয়ার পর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর অতিক্রম করতে হয়। এক বছর অতিক্রম করার পর যাকাত আদায় করতে হয়। কিন্তু কুরবানীর নেসাবে এমন কোনো শর্ত নেই। অর্থাৎ কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যেকোনো সময় নেসাবের মালিকানা থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। -রদ্দুল মুহতার: ২/৩৬০, ৬/৩১২
‘হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ’র অর্থ এবং কিছু ভুল ধারণা
‘হাওয়াযেজে আসলিয়াহ’ ফিকহে ইসলামীর একটি পরিভাষা, যা কুরবানী, যাকাত ও হজ ইত্যাদির নেসাবের বিবরণে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় যারা লিখেন তারা সাধারণত এটির অনুবাদ করেন ‘মৌলিক প্রয়োজন’। অর্থাৎ যাদের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমপরিমাণ সম্পদ থাকবে, তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। এখান থেকে কেউ কেউ একটা ভুল ধারণা গ্রহণ করেন। যেমন:
অনেকের নিজস্ব বাড়ি থাকে না। তারা বাড়ি করার উদ্দেশ্যে জমি ক্রয় করে রাখেন এবং তা ফিলহাল কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার হয় না। তারা ধারণা করেন এটি তো আমার ভবিষ্যত প্রয়োজনে কেনা হয়েছে এবং বাড়ি আমার মৌলিক প্রয়োজন। সুতরাং এজমির কারণে আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না।
একইভাবে অনেকে বিশেষ কোনো প্রয়োজন সামনে রেখে অর্থ জমা রাখেন। যেমন বাড়ি নির্মাণ, হজ পালন, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য অর্থ সঞ্চয় করেছেন। তারাও মনে করেন এটি যেহেতু বিশেষ প্রয়োজনে রাখা আছে, সুতরাং একারণে কুরবানী ওয়াজিব হবে না।
এই ধারণাগুলো ভুল। বস্তুত ‘হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ’ তথা মৌলিক প্রয়োজন বলতে শরীয়তে উদ্দেশ্য হলো, যা ফিলহাল বান্দার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে কিংবা ইতিমধ্যে ব্যবহৃত হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে যার ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি, ভবিষ্যতে হবে, সেটা এই মুহূর্তের প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং সেটা নেসাবের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কেউ যদি বাড়ি করার জন্য জমি ক্রয় করে রাখে অথবা চিকিৎসা কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অর্থ সঞ্চয় করে রাখে, আর এরকম অব্যবহৃত সম্পদ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্যের হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); আল-বাহরুর রায়েক: ২/২২২ (দারুল কিতাবিল ইসলামী); রদ্দুল মুহতার: ২/২৬২, ২৬৩ (দারুল ফিকর) ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদীদ) : ৩/৫৭৪ (যাকারিয়া বুক ডিপো, ভারত)
এজেন্সিকে দেয়া অর্থ, এক বছরের খোরাকি ও নির্মাণ সামগ্রী হিসেব হবে না
তবে ১০ই যিলহজের পূর্বে হজের অর্থ এজেন্সিকে জমা দিয়ে দিলে তা নেসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। একইভাবে কেউ যদি বছরের খোরাকি সংগ্রহ করে রাখে কিংবা বাড়ি ঘর নির্মাণের সামান কিনে ফেলে, তাহলে সেগুলোও নেসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এই গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। – কিতাবুল আসল: ৫/৪১০ (দারু ইবনি হাযম); ফাতাওয়া কাযীখান ৩/২৪৫ (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ); বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৯ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ)
কুরবানীর পশু গৃহপালিত হওয়া জরুরি। বন্য ছাগল, বন্য গরু, বন্য মহিষ ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়। -কিতাবুল আসল: ৫/৪১১ (দারু ইবনি হাযম); বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৯ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, কিরমানী, পৃ: ৭৩৬ (দারুল মে’রাজ)
শরীকে কুরবানী
উট, গরু অথবা মহিষে এক থেকে সাত পর্যন্ত যেকোনো সংখ্যক শরীকে কুরবানী করা যায়। আর ভেড়া, দুম্বা কিংবা ছাগলে একের অধিক কুরবানী জায়েয নয়। -কিতাবুল আসল: ৫/৪০৬ (দারু ইবনি হাযম)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ، فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلّ سَبْعَةٍ مِنّا فِي بَدَنَةٍ. –صحيح مسلم: (2/882 رقم: 1213 ط. دار إحياء التراث)
“আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন, যেন আমরা প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।” -সহীহ মুসলিম: ২/৮৮২, হাদীস: ১২১৩ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস)
অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “একটি গরু সাত জনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ থেকে (কুরবানী করা হবে)।” -জামে তিরমিযী: ২/২৪০ হাদীস ৯০৪ (দারুল গরবিল ইসলামী); সুনানে আবু দাউদ: ৪/৪৩২ হাদীস: ২৮০৮ (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ) ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
এ ব্যাপারে আরো জানতে সাইটে প্রকাশিত নিম্মোক্ত ফাতাওয়াটি দেখুন,
ফাতওয়া নং ৭৩: একটি গরু বা মহিষে কি সাত ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে?
কারো অংশ এক-সপ্তমাংশের কম না হওয়া জরুরি
যেসব পশু সাত শরীকে কুরবানী করা যায়, সেগুলোতে কারো অংশ এক-সপ্তমাংশ থেকে কম হতে পারবে না। কারো ভাগ এক-সপ্তামাংশ থেকে কম হলে তার কুরবানী যেমন সহীহ হবে না, তেমনি অন্য শরীকদের কুরবানীও সহীহ হবে না। -আল-বাহরুর রায়েক: ৮/১৯৮ (দারুল কিতাবিল ইসলামী); রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৫ (দারুল ফিকর)
একান্নভুক্ত পরিবারের কুরবানী
আমাদের দেশে অনেক একান্নভুক্ত পরিবারেই একাধিক সদস্যের আলাদা আলাদা সম্পদ থাকে। যেমন স্ত্রী ও বালেগ ছেলে মেয়েরাও আলাদা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। অথচ তারা একান্নভুক্ত পরিবার বলে শুধু গৃহকর্তার একটি কুরবানী আদায় করেন। স্ত্রী সন্তানদের কেউ কুরবানী দেয় না। এটি অনেক বড় ভুল এবং নাফরমানির কাজ। নেসাবের মালিক সকলের জন্যই আলাদা আলাদা কুরবানী করা ওয়াজিব। না করলে গুনাহগার হবেন।
আরো অজ্ঞতার বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন একান্নভুক্ত পরিবারের সবাই মিলে একটি বড় পশু দ্বারা সাতটি কুরবানী দেয়। বাবার একটি কিংবা বাবা মায়ের জন্য দুটি দিয়ে বাকি পাঁচটি বিভিন্ন মৃত মানুষের নামে নফল কুরবানী আদায় করে। অথচ তাদের মধ্যে যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব, তাদের কুরবানী দেয় না। ফরয বাদ দিয়ে নফল আদায় করার মতো অজ্ঞতা ও বোকামি আর কি হতে পারে! আসলে দীনের বিষয়গুলো গুরুত্বহীন হলে এমনি হয়। দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি বিন্দুতে যারা নিখুঁত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়, তারাই আবার দীনের সহজ সরল মোটা দাগের বিষয়গুলোও বুঝে না এবং বুঝার চেষ্টাও করে না; বরং বলা ভালো বুঝার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই মনে করে না, যা ঈমান পরিপন্থী কাজ।
কুরবানী পারিবারিক আমল নয় যে, পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হলেই দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে; বরং কুরবানী ব্যক্তিগত আমল। যেই নেসাবের মালিক হবে, তারই কুরবানী আদায় করতে হবে; চাই তিনি পরিবারের কর্তা হোন কিংবা কর্তার অধীন স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে কিংবা অন্য কেউ হোন। -কিতাবুল আসল: ৫/৪০৭ (দারু ইবনি হাযম); আল-হাভীল কুদসী, পৃ: ৩৬৩ (দারুন নাওয়াদির)
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
কুরবানীর পশুর এক বা একাধিক অংশে যদি কেউ আকীকার উদ্দেশ্যে শরীক হয়, তাতেও সমস্যা নেই। কুরবানী ও আকীকা দুটিই সহীহ হবে। তবে কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ না দেয়া উত্তম। -আল-ফাতাওয়াত তাতারখানিয়া: ১৭/৪৫২ (যাকারিয়া বুক ডিপো); আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/৩০৪ (দারুল ফিকর)
শরীকের অর্থ হারাম কিংবা নিয়ত গলদ হলে
শরীকদের কেউ যদি হারাম অর্থ দিয়ে অংশ গ্রহণ করে কিংবা আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্যে অংশ গ্রহণ করে, তাহলে উক্ত পশুর কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩১৫ (আশরাফিয়া, দেওবন্দ); আল-ফাতাওয়াস সিরাজিয়া, পৃ: ৪৩১ (মাকতাবাতুল বুশরা, দেওবন্দ); আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/৩০৪ (দারুল ফিকর); কেফায়াতুল মুফতী: ৮/১৯০ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
বর্তমানে যে ব্যাপক হারে মানুষ হালাল হারামের বিষয়কে গুরুত্বহীন মনে করে এবং যেভাবে মুসলিমদের ঘরে ঘরে হারামের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, এই পরিস্থিতিতে শরীকে কুরবানী না করাই নিরাপদ। প্রয়োজনে বড় পশুর পরিবর্তে ছোট পশু কিংবা ছাগল ভেড়া দিয়ে এককভাবে কুরবানী করা উত্তম।
গোশত খাওয়ার নিয়ত কি গলদ?
শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করার অবকাশ নেই। তবে কেউ যদি প্রধানত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী করে এবং পাশাপাশি এজন্য কুরবানীর গোশত খাওয়ারও নিয়ত রাখে যে, কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত এবং আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা নেয়ামত হিসেবে আমাদের জন্য তা হালাল করেছেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। বরং এভাবে খাওয়ার নিয়তের কারণেও সে অতিরিক্ত সাওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। -শরহুস সিয়ারিল কাবীর, পৃ: ২৬ (আশ-শারিকাতুশ শারকিয়্যাহ); ফাতহুল বারী: ৬/২৮ (দারুল ফিকর); আল-ফাতাওয়াত তাতারখানিয়া: ১৭/৪৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩১৫; আল-ফাতাওয়াস সিরাজিয়্যাহ, পৃ: ৪২১ (মাকতাবাতুল বুশরা)
কুরবানীর পশুর বয়সসীমা
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৫ হাদীস: ১৯৬৩; মুআত্তা মালেক: ১/৩৮০ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); কিতাবুল আসল: ৫/৪০৪ (দারু ইবনে হাযম, বৈরুত); মাবসুত: ১২/৯ (দারুল মারিফা, বৈরুত)
ভেড়া দুম্বার বয়স কম হলেও চলে যদি…
তবে ভেড়া ও দুম্বার বয়স যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে। ৬ মাস পূর্ণ না হলে হৃষ্টপুষ্ট হলেও তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৫ হাদীস: ১৯৬৩; হেদায়া: ৪/৩৫৯ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); ফাতাওয়া কাযীখান: ৩/২৪৫
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়। -আল-ফাতাওয়াস সিরাজিয়্যাহ, পৃ: ৪২০; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২১
বয়স নির্ণয়ে বিক্রেতার কথা বিশ্বাস করা
কুরবানীর জন্য যে পশু যে বয়সের হওয়া জরুরি, বিক্রেতা যদি বলে সে বয়স হয়েছে এবং পশুটির শারীরিক গঠনেও তার কথা সঠিক মনে হয়, তাহলে তার কথার উপর নির্ভর করে উক্ত পশু ক্রয় করা যাবে এবং তা দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে। -জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৬/২৭২ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম
হাদীসে এসেছে-
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ضَحّى بِكَبْشَيْنِ سَمِينَيْنِ عَظِيمَيْنِ أَمْلَحَيْنِ أَقْرَنَيْنِ مُوْجَيَيْنِ. –رواه ابن ماجه (4/301 رقم:3122 ط. دار الرسالة العالمية) وقال البوصيري في “مصباح الزجاجة” (3/ 222) : “هذا إسناد حسن”. ويشهد له حديث أنس عند أبي عوانة (3220) وقال الحافظ ابن حجر في “تغليق التعليق” (5/ 4) : “ورواه بلفظ “سمينين” الحافظ أبو عوانة في مسنده الصحيح … وهذا الإسناد صحيح”
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি বড় শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের হৃষ্টপুষ্ট খাসি-দুম্বা জবাই করেছেন।” -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪/৩০১, হাদীস: ৩১২২ (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ)
বন্ধ্যা পশুর কুরবানী
বন্ধ্যা পশুর কুরবানীও জায়েয। -আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/২৯৭; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৫
খাসি ছাগলের কুরবানী
খাসি ছাগলের কুরবানীও জায়েয। বরং সাধারণ ছাগল অপেক্ষা খাসি ছাগল কুরবানী করা উত্তম। -কিতাবুল আসল: ৫/৪০৫; মাবসুত: ১২/১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩১৪; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২২
গর্ভবতী পশুর কুরবানী
গর্ভবতী পশুর কুরবানী জায়েয। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে মাকরূহ। কুরবানী করার পর বাছুর জীবিত পাওয়া গেলে সেটিও জবাই করতে হবে। -মুআত্তা মালেক: ২/৪৯০; সুনানে কুবরা, বায়হাকী: ৯/৫৬৩; খিযানাতুল আকমাল: ৩/৫৪৭ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৪৩; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/১৯৫
কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর কুরবানী করার আগে বাচ্চা প্রসব করলে তা জীবিত সাদাকা করে দেয়া উত্তম। চাইলে বাছুর জবাই করেও সাদাকা করা যাবে। তবে বাছুরের গোশত কুরবানীদাতা নিজে খেতে পারবে না। -আল-আজনাস, নাতেফী: ১/৫১০ (দারুল মা’সুর); খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ৪/৩২২ (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ); ফাতাওয়া কাযীখান: ৩/২৪৯; আত-তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৩; আল-হিন্দিয়া: ৫/৩০১; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২২
অসুস্থ পশুর কুরবানী
বারা ইবনে আযিব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
«أربع لا يضحى بهن: العوراء البين عورها، والمريضة البين مرضها، والعرجاء البين ظلعها، والعجفاء التي لا تنقي». -أخرجه مالك في الموطأ (2/482 ط. دار إحياء التراث) والترمذي (3/137 رقم: 1497 ط. دار الغرب الإسلامي) وقال: “هذا حديث حسن صحيح”، وابن حبان في صحيحه (13/240 رقم: 5919 ط. مؤسسة الرسالة) –واللفظ له-.
“চার ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না; যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট, যে পশু অতি রুগ্ন, যে পশু সম্পূর্ণ খোঁড়া এবং যে পশু এত শীর্ণ যে, তার হাড়ে মগজ নেই।” –মুআত্তা মালেক: ২/৪৮২ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); জামে তিরমিযী: ৩/১৩৭, হাদীস: ১৪৯৭ (দারুল গরবিল ইসলামী); সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৩/২৪০ হাদীস নং: ৫৯১৯ (মুআসসাসাতুর রিসালাহ)
কুরবানী প্রকৃতপক্ষে বান্দার পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে নযরানা পেশ করার নাম। দরবারে আযীমের শান রক্ষা করার সাধ্য তো বান্দার নেই। তাই অন্তত বান্দার নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম ও ভালো পশু নির্বাচন করাই কাম্য। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰی تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ، وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَیْءٍ فَاِنَّ اللهَ بِه عَلِيْمٌ.
“তোমরা কিছুতেই পুণ্যের স্তরে উপনীত হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত।” -সূরা আলে ইমরান ০৩: ৯২
সুতরাং অসুস্থ ও ত্রুটিপূর্ণ পশু কুরবানী করে কোনো মতে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করা খুবই সঙ্কীর্ণ মানসিকতার পরিচয়।
যদিও সব ত্রুটির বিধান এক নয়। কোনো কোনো ত্রুটি একটি স্তর পর্যন্ত ছাড়যোগ্য। কিন্তু আমরা সর্বাবস্থায় সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত পশুই ক্রয় করব; যদিও তা শরীরে একটু ছোট হোক না কেন। -রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যার হাড়ের ভিতরের মগজ শুকিয়ে গেছে, তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী: ৩/১৩৭, হাদীস: ১৪৯৭; কিতাবুল আসল: ৫/৪০৯; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২৩
খোঁড়া পশুর কুরবানী
এমন খোঁড়া পশু যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ৩/১৪২ হাদীস: ১৫০৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৫৩ (দারুল বাশায়ের); মাবসূতে সারাখসী: ১২/১৬; আল-হিদায়াহ: ৪/৩৫৮ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); ফাতাওয়া কাজীখান: ৩/২৪৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৭৫; আল-ইখতিয়ার: ১/১৭৩ (মাতবাআতুল হালাবী); আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২৩
পশুর অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে, তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে, তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে, এমন পশু কুরবানী করা যাবে না। -ফাতাওয়া কাজীখান: ১/২৪৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৭৫; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/২৯৮; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে যদি মস্তিষ্কে আঘাত না পৌঁছে, তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। সুতরাং যে পশুর শিং অর্ধেক কিংবা তারও বেশি ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু মস্তিষ্কে আঘাত লাগেনি, সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। একইভাবে যে পশুর শিং একেবারে উঠেইনি, তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী: ৩/১৪২ হাদীস: ১৫০৩; কিতাবুল আসল: ৫/৪০৫; মাবসুত: ১২/১১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/২৯৭
কান কিংবা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
যে পশুর লেজ কিংবা কোনো কান অর্ধেক অথবা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের কম কাটা হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -শরহু মাআনিল আসার: ৪/১৬৯-১৭০ (আলামুল কুতুব); কিতাবুল আসল: ৫/৪০৯ (দারু ইবনি হাজম); শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৫৫ (দারুল বাশায়িরিল ইসলামিয়্যাহ); রদ্দুর মুহতার: ৬/৩২৩-৩২৪ (দারুর ফিকর); ইলাউস সুনান ১৭/২৪০ (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ)
অন্ধ পশুর কুরবানী সহীহ নয়। একইভাবে এক চোখও যদি অন্ধ হয়, কিংবা এক চোখের অর্ধেক অথবা তার অধিক দৃষ্টিশক্তিও যদি নষ্ট হয়, সে পশুর কুরবানীও সহীহ নয়। – জামে তিরমিযী: ৩/১৩৭, হাদীস: ১৪৯৭; কিতাবুল আসল: ৫/৪০৯ (দারু ইবনি হাজম); শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৫৭, ৩৬৩ (দারুল বাশায়িরিল ইসলামিয়্যাহ); রদ্দুর মুহতার: ৬/৩২৩ (দারুর ফিকর)
পশু ক্রয় করার পর যদি ত্রুটি সৃষ্টি হয়
কুরবানীর পশু ক্রয় করার পর যদি পশুতে নতুন করে এমন কোনো দোষ ত্রুটি দেখা দেয়, যে ত্রুটির কারণে কুরবানী হয় না, তাহলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। এর পরিবর্তে দোষমুক্ত একটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে পশুটি যদি এমন গরীব ব্যক্তির হয়ে থাকে, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তিনি এই ত্রুটিযুক্ত পশুটিই কুরবানী করতে পারবেন। -রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৫ (দারুল ফিকর); তাবয়িনুল হাকায়িক: ৬/৬ (আল-মাতবাআতুল কুবরা, বোলাক) মাজমাউল আনহুর: ২/৫২০ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস)
কুরবানীর পশু দ্বারা উপকৃত হওয়া
জবাইর পূর্বে কুরবানীর পশু দ্বারা কোনো প্রকারের উপকার গ্রহণ করা জায়েয নয়। অর্থাৎ পশু ক্রয় করার পর তার দুধ পান করা, তা দ্বারা হালচাষ করা, বোঝা বহন করানো ইত্যাদি কোনো কিছুই জায়েয নয়। কেউ ভুলক্রমে করে থাকলে দুধের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ মূল্য সাদাকা করতে হবে। আর হালচাষ কিংবা বোঝা বহনের দ্বারা যদি প্রাণীর কোনো ক্ষতি না হয় তাহলে শুধু তাওবা-ইস্তেগফার করলেই হবে। কিন্তু যদি এতে প্রাণীর ক্ষতি হয় এবং তার মূল্য কমে যায়, তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কমেছে তা সাদাকা করতে হবে। এসব কাজের জন্য কুরবানীর পশু ভাড়া দিলে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ভাড়াবাবদ প্রাপ্ত অর্থও সাদাকা করে দিতে হবে। -কিতাবুল আসল: ৫/৪০৭ দারু ইবনি হাজম; মাবসুত: ১২/১৫ শরহু মুখতাসারিত তহাবী: ৭/৩৬০; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৯; আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৫/৯৮
আগে ঈদের নামায পরে কুরবানী
বারা ইবনে আযিব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
خَطَبَنَا النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَوْمَ النّحْرِ، قَالَ: إِنّ أَوّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمّ نَرْجِعَ، فَنَنْحَرَ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَإِنّمَا هُوَ لَحْمٌ عَجّلَهُ لِأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النّسُكِ فِي شَيْءٍ. –صحيح البخاري (2/19 رقم: 968) صحيح مسلم (1961 رقم: 3/1553)
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন আমাদের উদ্দেশে খুতবা দিলেন। তাতে বললেন, এই দিনে আমাদের প্রথম কাজ নামায আদায় করা। এরপর কুরবানী করা। সুতরাং যে এভাবে করেছে তার কাজ আমাদের তরীকা মতো হয়েছে। আর যে আগেই জবাই করেছে, তা তার পরিবারের জন্য সময়ের আগেই পাঠানো গোশত, কুরবানী নয়।” -সহীহ বুখারী: ২/১৯, হাদীস: ৯৬৮; সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৩, হাদীস: ১৯৬১
হাদীসে আছে, কোনো কোনো সাহাবী ভুলক্রমে ঈদের নামাযের আগেই কুরবানী করে ফেলেছিলেন। নামাযের পর তা দেখতে পেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
من ذبح قبل الصلاة فليذبح مكانها أخرى، ومن كان لم يذبح حتى صلينا فليذبح على اسم الله. –صحيح البخاري (7/ 91 رقم: 5500) صحيح مسلم (3/ 1551 رقم: 1960)
“যারা সালাতের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছে তারা যেন পুনরায় কুরবানী করে। আর যারা করেনি তারা যেন (এখন) আল্লাহর নামে কুরবানী করে। -সহীহ বুখারী ২/৮২৭; সহীহ মুসলিম ২/১৫৩
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী
কেউ যদি এমন ব্যক্তির কুরবানী দিতে চায়, যিনি ভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন এবং সে দেশের কুরবানীর সময় ও আমাদের দেশের কুরবানীর সময় ভিন্ন, তাহলে যেখানে কুরবানী করা হবে সেখানকার সময়ে কুরবানী করতে হবে। যেমন মনে করুন সৌদিতে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী করা হবে বাংলাদেশে। তাহলে বাংলাদেশে যেদিন ঈদ, সেদিন যে এলাকায় কুরবানী করা হবে সে এলাকার ঈদের নামাযের পর কুরবানী করতে হবে। -ফাতাওয়া কাজীখান: ৯/২৪৩; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৮; আল বাহরুর রায়েক: ৮/২০০; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/২৯৬; ফাতাওয়া রহীমিয়্যাহ: ১০/৪০ (যাকারিয়্যা বুক ডিপো)
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানীর মূল্য কেমন হবে?
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানীর মূল্য যাই হোক, কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে। তবে তিনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানে যদি কুরবানীর উপযুক্ত পশুর মূল্য তুলনামূলক বেশি হয়, তাহলে দেশেও সেই পরিমাণ মূল্যের পশু কুরবানী করা উত্তম।
কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম
যার কুরবানী করা হবে, তার জন্য নিজের কুরবানীর পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। তা না করলে অন্তত জবাইর সময় উপস্থিত থেকে জবাই প্রত্যক্ষ করা উত্তম। তবে নারী হলে অবশ্যই পর্দার প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখা জরুরি। -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৭ হাদীস: ১৯৬৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৪৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৮; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/২০৩; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৫/৩০০
জবাইয়ের পদ্ধতি
পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা কেবলার দিকে করে শোয়ানো। -সুনানে আবু দাউদ: ৪/৪২১ হাদীস: ২৭৯৫; ফাতহুল বারী: ১০/১২ (দারুল ফিকর); আন-নুতাফ: ১/২২৯-২৩০ (দারুল ফুরকান); বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬০; রদ্দুল মুহতার: ৬/২৯৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৬৫; কিতাবুন নাওয়াজিল: ১৪/৪৫৩ (আল মারকাজুল ইলমী, মুরাদাবাদ)
জবাইয়ের পূর্ণ দোয়া মুখস্থ না থাকলে অন্তত ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করা। -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৭ হাদীস: ১৯৬৬; জামে তিরমিযী: ৩/১৫২ হাদীস: ১৫২১; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩০১; আল-মুগনী: ৯/৪৫৬ (মাকতাবাতুল কাহেরা)
পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুটি শাহরগ কর্তন করা।
চারটির যেকোনো তিনটি অবশ্যই কর্তন করতে হবে, অন্যথায় জবাই সহীহ হবে না, কুরবানীও হবে না এবং গোশতও হালাল হবে না। -আল-হিন্দিয়া: ৫/২৮৭; রদ্দুল মুহতার: ৬/২৯৫
জবাইয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির অংশ গ্রহণ
কখনো দেখা যায় প্রথমে যিনি জবাই করেন, তার জবাই পূর্ণ হয় না। এজন্য দ্বিতীয় ব্যক্তি তাতে শরীক হন। এতে কোনো সমস্যা নেই; যদি দ্বিতীয় ব্যক্তিও বিসমিল্লাহ বলে জবাইয়ের কাজে শরীক হন।
অবশ্য প্রথম ব্যক্তি যদি খাদ্যনালী, কণ্ঠনালী ও দুই শাহরগের মোট তিনটি কর্তন করতে পারেন, তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি শরীক হলে বিসমিল্লাহ না বললেও সহীহ হয়ে যাবে। তবে প্রথম ব্যক্তি যদি তিনটি কর্তন করতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই দ্বিতীয় ব্যক্তিকেও বিসমিল্লাহ বলতে হবে। -ফাতাওয়া কাজীখান: ৯/২৫১; আত-তাতারখানিয়া: ১৭/৪৪৯; তাইসীরুল মাকাসিদ, পৃ: ৫৭৫-৫৭৬; আল-হিন্দিয়া: ৫/৩০৪ রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৪;
জবাই পূর্ণ হওয়ার পর খোঁচাখুঁচি করা
উপরে যে চারটি অংশ কর্তন করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো কর্তন করার দ্বারাই জবাই পূর্ণ হয়ে যায়। এরপরও অযথা পশুর গলায় চাকু দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা অন্যায়। কসাইরা অধিকাংশই এই অন্যায় কাজটি করার চেষ্টা করে। একাজ থেকে নিজেও বিরত থাকুন এবং নিজের কুরবানীর পশুর সঙ্গে এমন আচরণ থেকে অন্যকেও বিরত রাখুন। -মুসান্নাফ ইবনে আব্দির রাযযাক: ৪/৪৯০ বর্ণনা নং: ৮৫৯০; কিতাবুল আসল: ৫/৩৯৯; আল-মাবসুত: ৪/১২; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৮০; রদ্দুল মুহতার: ৬/২৯৬; আল-হিন্দিয়া: ৫/২৮৭ কিতাবুন নাওয়াজিল: ১৪/৪৬৬
কুরবানীর পশু জবাই করার দোয়া
পশু কেবলামুখী করে শোয়ানোর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিন্মোক্ত দেয়াটি পড়তেন:
إِنِّي وَجّهْتُ وَجْهِيَ لِلّذِي فَطَرَ السّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللّهُمّ مِنْكَ وَلَكَ مِنْ مُحَمّدٍ وَأُمّتِهِ.
নিজের কুরবানী হোক বা অন্যের কুরবানী, সর্বাবস্থায় জবাইকারী উক্ত দেয়া পাঠ করে নিবে, তবে সর্বশেষ অংশে যেখানে مِنْ مُحَمّدٍ وَأُمّتِهِ (মিন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি) বলা হয়েছে, (যার অর্থ হলো, মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে) সেখানে কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং উম্মতে মুহাম্মাদিকে সাওয়াব পৌঁছানোর জন্য কুরবানী করলে, এরকমই বলবে। অন্যথায় এ অংশের পরিবর্তে যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম বলবে কিংবা মনে মনে তার নিয়ত করবে অথবা শুধু وَلَكَ (ওয়া লাকা) পর্যন্ত বললেও সমস্যা নেই।
এরপর بِسْمِ اللهِ اللهُ أَكْبَرُ বলে জবাই করবে।
-সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৫৭; হাদীস ১৯৬৭; সুনানে আবু দাউদ: ৪/৪২১, হাদীস: ২৭৯৫; সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৪/২৮৭ হাদীস: ২৮৯৯; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাসসাস: ৭/৩৪৬; মাবসুত, সারাখসি: ৪/১৪৬
উল্লেখ্য জবাই করার আগে এই পূর্ণ দোয়াটি পড়া সুন্নত। এটি না করলেও কুরবানী হয়ে যাবে। তবে জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ অথবা অন্তত ‘বিসমিল্লাহ’ অবশ্যই বলতে হবে। বিসমিল্লাহ না বললে জবাইকৃত পশু হালাল হয় না।
জবাই করার সময় পশুকে প্রয়োজন অতিরিক্ত কষ্ট না দেয়া
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذّبْحَ، وَلْيُحِدّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ. –صحيح مسلم: (3/1548 رقم: 1955)
“আল্লাহ তাআলা সকল কিছুর উপর ইহসান (সর্বোত্তমরূপে আঞ্জাম দেয়া) অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা (কাউকে শরীয়ত মুতাবেক হদ বা কিসাস হিসাবে) হত্যা করবে, তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর। যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই কর এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে ধার দিয়ে নাও, যেন জবাইকৃত প্রাণীর জন্য তা আরামদায়ক হয়।” -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৪৮ হাদীস: ১৯৫৫
অনেকে জবাই করার পর পশুর প্রাণ বের হওয়ার পূর্বেই চামড়া ছিলার কাজ শুরু করে দেয়, যা নাজায়েয। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। -বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৮০; আল-হিন্দিয়া: ৫/২৮৭; রদ্দুল মুহতার: ৬/২৯৬
অন্য পশুর সামনে জবাই করা
এক পশু অন্য পশুর সামনে জবাই করা ঠিক নয়। এটা থেকে বিরত থাকবে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৪/৪৯৪ বর্ণনা: ৮৬১০ (আল-মাকতাবুল ইসলামী); শরহু মুসলিম: ১৩/১০৭ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর: ১০/৫৮৫ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৩/৫৪০ (দারুল কলম)
কুরবানীর গোশত বিক্রি করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন দাঁড়িয়ে বললেন,
إِنِّي كُنْتُ أَمَرْتُكُمْ أَنْ لَا تَأْكُلُوا الْأَضَاحِيّ، فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ لِتَسَعَكُمْ، وَإِنِّي أُحِلّهُ لَكُمْ، فَكُلُوا مِنْهُ مَا شِئْتُمْ، وَلَا تَبِيعُوا لُحُومَ الْهَدْيِ، وَالْأَضَاحِيِّ فَكُلُوا، وَتَصَدّقُوا، وَاسْتَمْتِعُوا بِجُلُودِهَا، وَلَا تَبِيعُوهَا، وَإِنْ أُطْعِمْتُمْ مِنْ لَحْمِهَا ، فَكُلُوا إِنْ شِئْتُمْ. –رواه أحمد:(26/ 147 رقم: 16210 ط. الرسالة) وقال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (4/ 26) : “وهو مرسل صحيح الإسناد”.
“আমি তোমাদেরকে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি খেতে নিষেধ করেছিলাম। যাতে তোমরা সবাই তা পেয়ে যাও। এখন আমি তোমাদেরকে অনুমতি দিচ্ছি। সুতরাং, যতদিন ইচ্ছা তা খেতে পার। আর তোমরা ‘হাদী’ ও কুরবানীর গোশত বিক্রি করো না। নিজেরা খাও এবং অন্যদেরকে দান করো। আর এগুলোর চামড়া নিজেদের কাজে ব্যবহার করো। তা বিক্রি করো না। তোমাদেরকে যদি এর গোশত খেতে দেওয়া হয়, তাহলে তোমরা চাইলে তা খেতে পার।” -মুসনাদে আহমাদ: ২৬/১৪৭ হাদীস: ১৬২১০
কুরবানীর হাড্ডি ও চর্বি বিক্রি করা
একইভাবে কুরবানী দাতার জন্য কুরবানীর হাড্ডি ও চর্বি বিক্রি করাও নাজায়েয। কেউ ভুলে বিক্রি করে থাকলে তার মূল্য গরীবদের সাদাকা করে দেয়া জরুরি। নিজে ভোগ করা জায়েয নয়। অবশ্য এগুলো কাউকে দান করা হলে, তার জন্য তা বিক্রি করা নাজায়েয নয়। -শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৭/৩৪০; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৮; আল-হিন্দিয়া: ৫/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৮১; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/২০৩; ইলাউস সুনান: ১৭/২৫৯
কুরবানীর হাড্ডি, চর্বি ও গোশত ক্রয় করা
কুরবানী দাতার জন্য যেমন নিজের কুরবানীর গোশত, হাড্ডি ও চর্বি বিক্রি করা নাজায়েয, তেমনি তার থেকে এগুলো ক্রয় করাও নাজায়েয। হাঁ যেসব গরীবদেরকে দান করা হয়েছে বা যারা কুড়িয়ে সংগ্রহ করেছে, তাদের জন্য যেমন এগুলো বিক্রি করা জায়েয, তেমনি তাদের থেকে ক্রয় করাও জায়েয। -আত-তওযীহ, ইবনুল মুলাক্কিন: ২৬/৬৪৪; (দারুল ফালাহ)
কুরবানীর পশুর চামড়া নিজে ভোগ করা বা হাদিয়া দেয়া
কুরবানীর গোশত যেমন নিজে খাওয়া যায় এবং ধনী গরীব সবাইকে দেয়া যায়, তেমনি কুরবানীর চামড়াও ইচ্ছা করলে নিজে ব্যবহার করা যায় এবং গরীব ধনী যে কাউকে হাদিয়া বা দানও করা যায় (তবে বিক্রি করে ফেললে, বিক্রিলব্ধ অর্থ গরীবদেরকেই দিতে হয়, নিজেও ভোগ করা যায় না, ধনীকেও দেয়া যায় না)। আর দান করতে চাইলে বিক্রি না করে সরাসরি চামড়া দান করে দেয়াই ভালো। -হেদায়া: ৪/৩৬০; আল-বাহরুর রায়েক: ৮/২০৩; ইলাউস সুনান: ১৭/২৫৯;
মূল্য নিজে ভোগ করার জন্য চামড়া বিক্রি করা জায়েয নয়
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ : مَنْ بَاعَ جِلْدَ أُضْحِيّتِهِ فَلاَ أُضْحِيّةَ لَهُ. –رواه الحاكم، وقال: “هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ مِثْلُ الأَوّلِ وَلَمْ يُخْرِجَاهُ”. وقال المنذري في “الترغيب والترهيب” (2/ 156) : “في إسناده عبد الله بن عياش القتباني المصري مختلف فيه، وقد جاء في غير ما حديث عن النبي صلى الله عليه وسلم النهي عن بيع جلد الأضحية”. وقال الذهبي في “السير” في ترجمة عبد الله بن عياش(13/ 378) : “احتج به مسلم والنسائي، … حديثه في عداد الحسن”.
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে তার কুরবানীর চামড়া (নিজের জন্য) বিক্রি করবে, তার কুরবানী হবে না।” -মুসতাদরাকে হাকেম: ২/৪২২ হাদীস: ৩৪৬৮ আরো দেখুন, আল-আজনাস, নাতেফী: ১/৫১৭ (দারুল মাসুর)
কুরবানীর গোশত-চামড়া পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যাবে না
কুরবানীর গোশত দ্বারা কসাই অথবা অন্য কোনো শ্রমিককে পারিশ্রমিক দেয়া যাবে না। আলী ইবনে আবী তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ، وَأَنْ أَتَصَدّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلّتِهَا، وَأَنْ لاَ أُعْطِيَ الْجَزّارَ مِنْهَا، قَالَ: نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا. -صحيح البخاري (2/ 172 رقم: 1716) صحيح مسلم (2/ 954 رقم: 1317) –واللفظ له-.
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার (কুরবানীর উটের) আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন। তিনি কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, আচ্ছাদনের কাপড় সাদাকা করতে আদেশ করেন এবং এর কোনো অংশ কসাইকে দিতে নিষেধ করেন। তিনি বলেছেন, আমি তাকে (তার পারিশ্রমিক) নিজের পক্ষ থেকে দিব।” -সহীহ বুখারী: ২/১৭২ হাদীস: ১৭১৭; সহীহ মুসলিম: ২/৯৫৪ হাদীস ১৩১৭;
হাঁ, শ্রমিকের কাজের পূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়ার পর অতিরিক্ত হাদিয়া হিসেবে কুরবানীর গোশত দিতে সমস্যা নেই। বরং যারা গোশত প্রস্তুতের কাজ করে তাদের কিছু গোশত হাদিয়া দেয়া উচিত।
কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মদীনায় এক সময় খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশি জমিয়ে রাখতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। পরে যখন অভাব কমে গেল তখন আবার সংরক্ষণ করার অনুমতি দিয়ে দিলেন।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، أَنّهُ نَهَى عَنْ أَكْلِ لُحُومِ الضّحَايَا بَعْدَ ثَلَاثٍ، ثُمّ قَالَ بَعْدُ: كُلُوا، وَتَزَوّدُوا، وَادّخِرُوا. – صحيح مسلم (3/ 1562 رقم: 1972)
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর (অবকাশ দিয়ে) বললেন, খাও, পাথেয় হিসেবে সঙ্গে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখ।” -সহীহ মুসলিম: ৩/১৫৬২ হাদীস: ১৯৭২
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ لُحُومِ الأَضَاحِيِّ فَوْقَ ثَلاَثٍ لِيَتّسِعَ ذُو الطّوْلِ عَلَى مَنْ لاَ طَوْلَ لَهُ، فَكُلُوا مَا بَدَا لَكُمْ، وَأَطْعِمُوا وَادّخِرُوا. –جامع الترمذي (3/146 رقم: 1510)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, যেন সচ্ছল ব্যক্তিরা অসচ্ছলদের তা উদারভাবে দিতে পারে। এখন তোমরা যা ইচ্ছা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখতে পার।” -জামে তিরমিযী: ৩/১৪৬ হাদীস: ১৫১০
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী
মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানী করার অসিয়ত করে থাকেন, তাহলে তার পরিত্যাক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব। তবে এই কুরবানীর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না, গরীবদের সাদাকা করে দিতে হবে।
আর যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে থাকে; বরং কেউ নিজের সম্পদ থেকে মৃতের নামে কুরবানী করতে চায়, সেটাও করা যাবে। এটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে এবং এর সাওয়াব আল্লাহ মৃত ব্যক্তিকে পৌঁছে দেবেন ইনশাআল্লাহ। এই কুরবানীর গোশত, কুরবানীদাতা ও ধনী-গরীব সকলেই খেতে পারবে। -ফাতাওয়া কাজীখান: ৩/২৪৮; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৬; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৮/১৭৮
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কুরবানী
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কুরবানী করা অনেক বড় সাওয়াব ও সৌভাগ্যের বিষয়। সুতরাং যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের এটি করা উচিত। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রতি বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতেন। -জামে তিরমিযী: ৩/১৩৬ হাদীস: ১৪৯৫
কুরবানীর গোশত দিয়ে খাবার শুরু করা
১০ ই যিলহজ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে কুরবানীর গোশত দিয়ে প্রথম খাবার শুরু করা সুন্নত। -মুসনাদে আহমদ: ৩৮/৮৮ হাদীস: ২২৯৮৪; রদ্দুল মুহতার: ২/১৭৬; ফাতহুল কাদীর: ২/৭৯; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ১/১৫০
কুরবানীর গোশত বণ্টন
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কুরবানীর গোশত এক-তৃতীয়াংশ পরিবারের লোকদের খাওয়াতেন, এক-তৃতীয়াংশ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন, এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থনাকারীদের (যারা চাইতেন, তাদের) দিতেন। -আলমুগনি: ৯/৪৪৮; মুসান্নাফ, ইবনে আবি শাইবা: ৮/১৪৫
সুতরাং আমাদের কুরবানীর গোশতও আত্মীয়, গরীব ও প্রার্থনাকারীদের মাঝে এক-তৃতীয়াংশ করে বণ্টন করা কাম্য।
তবে কেউ যদি এর ব্যতিক্রম করে তাতেও সমস্যা নেই। যারা সামর্থ্যবান তারা অবশ্যই গরীবদের বেশি দিবেন। পক্ষান্তরে যাদের সামর্থ্য কম কিংবা পরিবারের সদস্য বেশি, তারা গরীবদের কম দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য বেশি রাখবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আবার কেউ যদি গরীব হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা কম খেয়ে গরীবদের বেশি দিয়ে দিতে পারেন তা আরো ভালো। -বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৮১; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩২৮; মাবসুত: ৪/৭৬; ইলাউস সুনান: ১৭/২৬১-২৬২
সামাজিকভাবে গোশত বণ্টনের প্রথা অবিলম্বে পরিহার করা জরুরি
অনেক এলাকায় সামাজিকভাবে গোশত বণ্টনের প্রথা দেখা যায়। গোশত বণ্টনের বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে না রেখে সামাজিকভাবে সকলের কুরবানী থেকে গোশত সংগ্রহ করা হয় এবং তা সমাজপতিরা যৌথভাবে প্রাপ্যদের মাঝে বণ্টন করেন। এটি একদমই অনুচিত কাজ; যদিও বাহ্যত অনেকেই এটাকে সুন্দর ও ভালো কাজ মনে করে থাকেন। কারণ দানের পরিমাণটা যেমন শরীয়ত ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর ছেড়েছে, তেমনি কাকে দান করব আর কাকে করব না, কাকে কম দিব আর কাকে বেশি, এই বিষয়গুলোও শরীয়ত সম্পূর্ণ ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর ছেড়েছে। ব্যক্তিগত স্বাধীন বিষয়ে সামাজিক হস্তক্ষেপ হলে এবং তাকে ইজতেমায়ি রূপ দিলে স্বভাবতই ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ব্যতীত তার সম্পদে হস্তক্ষেপসহ নানান আপত্তিকর বিষয়ের উদ্ভব ঘটে, যেগুলো স্বতন্ত্রভাবে নাজায়েয। সুতরাং যারা এসব প্রথা প্রচলনের সঙ্গে জড়িত, তাদের দায়িত্ব অবিলম্বে এগুলো পরিহার করে কুরবানীর গোশত বণ্টনে সকলকে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া। -সহীহ বুখারী: ৩/৯৯ হাদীস: ২৩০৭; মুসনাদে আহমদ: ৩৪/২৯৯ হাদীস: ২০৬৯৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩১৭; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ২৬/৩৯০-৩৯৩ (যাকারিয়া বুক ডিপো)
وما توفيقي إلا بالله، عليه توكلت وإليه أنيب، ما اصبت فمن الله وما أخطأت فمني ومن الشيطان، ربنا تقبل منا إنك أنت السميع العليم وتب علينا إنك أنت التواب الرحيم، وصلى الله تعالى عليه وعلى آله وصحبه أجمعين، وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১০-১১-১৪৪৫ হি.
১৯-০৫-২০২৪ ঈ.
[1] مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (3/ 1082): (إِلَّا رَجُلٌ) أَيْ: إِلَّا جِهَادُ رَجُلٍ. (خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ) أَيْ: مِمَّا ذَكَرَ مِنْ نَفْسِهِ وَمَالِهِ. (وَبِشَيْءٍ) أَيْ: صَرَفَ مَالَهُ وَنَفْسَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. وَقَالَ ابْنُ الْمَلَكِ: يَعْنِي أُخِذَ مَالُهُ، وَأُرِيقَ دَمُهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَهَذَا الْجِهَادُ أَفْضَلُ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى مِنَ الْأَعْمَالِ فِي هَذِهِ الْأَيَّامِ ; لِأَنَّ الثَّوَابَ بِقَدْرِ الْمَشَقَّةِ اهـ. وَفِي تَعْلِيلِهِ بَحْثٌ يَحْتَاجُ إِلَى تَطْوِيلٍ. اهـ