প্রশ্ন: আমি সৌদি আরবে থাকি। কিছুদিন আগে জনৈক শায়খকে নিয়ে ‘দরবারি আলেম’,’তাগুত শাসকদের দালাল’ এরূপ আলোচনা- সমালোচনা হয়। এরপর আমি কোনো এক আলেমকে বলি, আমি তো মসজিদুল হারামে মাঝে মাঝেই নামায পড়তে যাই। যদি এমন হয় যে উক্ত শায়খ নামায পড়াচ্ছেন, তাহলে আমি কি করব? তিনি আমাকে তার পিছনে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। আমার জানার বিষয় হলো, উক্ত শায়খ কি সত্যিই দরবারি আলেম? তার পিছনে নামায পড়া যাবে কি? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।
– আবু মিকদাম
উত্তর: প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি যে আলেমের কথা বলেছেন, তার মারাত্মক কিছু ভুল ভ্রান্তি অবশ্যই আছে। কিন্তু সেসব ভুল ভ্রান্তির কারণে তিনি দরবারি আলেম কি না তা একটি আলোচনা ও ধীর পদক্ষেপের বিষয়। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না। সে আলোচনায় না গিয়েও আপাতত ধরে নিলাম তিনি দরবারি আলেম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দরবারি আলেমের পেছনে কি নামায পড়া নিষেধ? অবশ্যই না। কর্তৃপক্ষের জন্য ফাসেক দরবারি আলেমকে ইমাম বানানো নিষেধ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ইমাম বানালে সাধারণ মানুষের জন্য তার পেছনে নামায পড়া নিষেধ নয়। বরং সাধারণ মানুষের জন্য জামাত বর্জন না করে এমন ইমামের পেছনে হলেও জামাতে নামায আদায় করা জরুরি। সহীহ বুখারীর হাদীসে এসেছে,
عن عبيد الله بن عدي بن خيار، أنه دخل على عثمان بن عفان رضي الله عنه، – وهو محصور – فقال: إنك إمام عامة، ونزل بك ما نرى، ويصلي لنا إمام فتنة، ونتحرج؟ فقال: «الصلاة أحسن ما يعمل الناس، فإذا أحسن الناس، فأحسن معهم، وإذا أساءوا فاجتنب إساءتهم». -صحيح البخاري (1/ 141 رقم: 695 ط. دار طوق النجاة)
“উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার রহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনি উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু অবরুদ্ধ থাকাকালে তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি জনগণের ইমাম। আপনার বর্তমান অবস্থা তো আমরা দেখছি। (আপনার অনুপস্থিতিতে) আমাদের ইমামতি করছে বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বললেন, মানুষের আমলের মধ্যে নামাযই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে।” -সহীহ বুখারী: ৬৯৫
আরো দেখুন: আকীদাতুত তাহাবী, পৃ: ২৩ (দারু ইবনি হাযম); মাজমাউল ফাতাওয়া: ২৩/৩৫৩ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ); রদ্দুল মুহতার: ১/৫৬২ ও ২/৫০ (দারুল ফিকর); আল-বাহরুর রায়েক: ১/৩৭০ (দারুল কিতাবিল ইসলামী); গুনয়াতুল মুতামাল্লী, পৃ: ৫১৩-৫১৪ (আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ); দুরারুল হুক্কাম শরহু গুরারিল আহকাম: ১/৮৬ (দারু ইহয়ায়িল কুতুবিল আরাবিয়্যাহ)
একারণে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মতো জালিম ও ফাসেকের ইমামতিতে সাহাবায়ে কেরাম নামায আদায় করেছেন।
عَنْ عُمَيْرِ بْنِ هَانِئٍ قَالَ: شَهِدْتُ ابْنَ عُمَرَ وَالْحَجَّاجُ مُحَاصِرٌ ابْنَ الزُّبَيْرِ، فَكَانَ مَنْزِلُ ابْنِ عُمَرَ بَيْنَهُمَا، فَكَانَ رُبَّمَا حَضَرَ الصَّلاَة مَعَ هَؤُلاَءِ، وَرُبَّمَا حَضَرَ الصَّلاَة مَعَ هَؤُلاَءِ. -رواه ابن أبي شيبة (عوامة) (6415)
“উমায়ের বিন হানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাজ্জাজ যখন আব্দুল্লাহ বিন যোবায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহুকে ঘেরাও করে রেখেছিল, তখন আমি ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে ছিলাম। তাঁর বাড়ি মধ্যবর্তী স্থানে থাকায় তিনি কখনো এদের সাথে সালাত আদায় করতেন কখনো ওদের সাথে।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৬৪১৫
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ بُرْقَانَ قَالَ: سَأَلْتُ مَيْمُونًا عَنْ رَجُلٍ، فَذَكَرَ أَنَّهُ مِنَ الْخَوَارِجِ، فَقَالَ: أَنْتَ لاَ تُصَلِّي لَهُ إنَّمَا تُصَلِّي لِلَّهِ، قَدْ كُنَّا نُصَلِّي خَلْفَ الْحَجَّاجِ. -رواه ابن أبي شيبة (عوامة) (7647)
“জাফর বিন বুরকান রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি মাইমুন রহিমাহুল্লাহকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, সে খারেজীদের অন্তর্ভুক্ত। এরপর বললেন, তুমি তো তার জন্য সালাত আদায় করছো না। তুমি সালাত আদায় করছো আল্লাহর জন্য। আমরা তো হাজ্জাজের পেছনেও সালাত আদায় করতাম।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৭৬৪৭
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي مَعَ الْحَجَّاجِ عِنْدَ أَبْوَابِ كِنْدَةَ وَخَرَجَ عَلَيْهِ. -رواه ابن أبي شيبة (عوامة) (7649)
“সাইদ বিন জুবায়ের রহিমাহুল্লাহ (কুফার বড় মসজিদে) কিনদাহ নামে পরিচিত দরজাগুলোর নিকট হাজ্জাজের পেছনে সালাত আদায় করতেন। অথচ তিনি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ: ৭৬৪৯
সুতরাং আপনি হারাম শরীফে গেলে অবশ্যই হারামের যেকোনো ইমামের পেছনে ইকতিদা করে জামাআতের সঙ্গে সালাত আদায় করবেন। জামাত বর্জন করবেন না।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৭-০১-১৪৪৭ হি.
০৩-০৭-২০২৫ ঈ.