ওকালতি পেশায় যুক্ত হওয়ার বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:-১ এ সাইটের বিগত এক পোস্টের মাধ্যমে জানলাম, তাগুতের আদালতে বিচারক-জজের চাকরি হারাম বলে বিবেচিত হবে। এখন আমার প্রশ্ন, আইনজীবী তথা উকীল পেশার বিধান কী? হারাম? না, হালাল?
-সাদিক আহমেদ
প্রশ্ন:-২ আমি আইন বিষয়ে LL.B. Hon’s শেষ করেছি। যেহেতু বাংলাদেশের আদালত মানব রচিত কুফরী আইনে পরিচালিত। এ ক্ষেত্রে আইনজীবী হিসেবে কাজ করা ঠিক হবে কিনা? অর্থাৎ উকীল হওয়া যাবে কি না?
উল্লেখ্য, এ কাজ করতে হলে আমাকে কখনও কুফরী কাজ করতে হবে। যেমন, কুফরী আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। আবার কখনও হারাম কাজ করতে হবে। যেমন, কোনো ব্যক্তি অন্যায় করেছে জেনেও তার পক্ষে আইনি লড়াই করা। আমি যখন উকীল হয়ে যাওয়ার পর এ কাজগুলো না করেও থাকতে পারবো। কিন্তু শুরুতে যতদিন আমি অন্য কোনো উকীলের কাছে ওকালতি প্র্যাকটিস করবো, তখন তার কারণে বাধ্য হয়েই আমাকে এগুলোও করতে হবে যদি আমি তার সঙ্গে থাকতে চাই। এ হলো এ পেশার খারাপ দিক। আবার এ পেশার মাধ্যমে আমি কিছু ভালো কাজও করতে পারবো। যেমন, মাজলুমকে সহায়তা করা। তাই আমি জানতে চাচ্ছি, আমি কি এ পেশা গ্রহণ করতে পারবো?
-আব্দুল হাফিয
প্রশ্ন:-৩ আমি একজন এডভোকেট। আমাকে মানবরচিত বিচার ব্যবস্থায় সকল ধরনের মামলাতেই ওকালতি করতে হয়। যেমন কেউ স্বেচ্ছায় বিচার প্রার্থনা করে, কেউ বাধ্য হয়ে আদালতে আসে, কারও মাদক মামলা, কারো নারী-শিশু আদালতে মামলা। কেউ জালেম, কেউ মজলুম। কিন্তু তা শনাক্ত করা কঠিন।
এখন আমার জানার বিষয় হলো-
ক) সাধারণভাবে মানবরচিত আদালতে ওকালতি করার বিধান কী?
খ) ওকালতি করার কোনও বৈধতা আছে কী? থাকলে তার সুরত কী এবং তার উপার্জনের হুকুম কী?
গ) যেহেতু শুধু মজলুমদের মামলার কাজ করে পরিবার চালানো সম্ভব নয়, আবার ওকালতি পেশা ছেড়েও তাদের খেদমত করা সম্ভব নয়, তাই ওকালতি পেশায় থাকা আমার মতো উকীলদের করণীয় কী?
-আব্দুর রহমান
উত্তর:
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبي بعده.
কুরআন সুন্নাহ’র শরীয়াহ আইন প্রত্যাখ্যান করা, সেই শরীয়াহ আইনের মোকাবেলায় আইন রচনা করা, সন্তুষ্ট চিত্তে তা গ্রহণ করা, কার্যকর করা এবং তার অধীনে বিচার করা ও বিচারপ্রার্থী হওয়া সবই কুফর; চাই কেউ বাদী হয়ে বিচারপ্রার্থী হোক কিংবা বাদীর পক্ষে উকীল হয়ে বিচারপ্রার্থী হোক। এতে ফুকাহায়ে কেরামের কারো দ্বিমত নেই।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا } الآية –سورة النساء: 60
“আপনি কি ওদের দেখেননি, যারা মুখে দাবি করে যে, ওরা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার প্রতি ঈমান এনেছে? কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওরা নিজেদের মামলা তাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তাগুতকে অমান্য করতে ওদের আদেশ করা হয়েছে। বস্তুত শয়তান ওদের চরম গোমরাহীতে লিপ্ত করতে চায়।” সূরা নিসা ০৪: ৬০
অন্য আয়াতে বলেন,
{فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا} الآية –سورة النساء: 65
“অতএব আপনার রবের কসম, শুধু মুখে ঈমান জাহির করার দ্বারা (আল্লাহর কাছে) ওরা মুমিন হবে না, যতক্ষণ না ওদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত বিবাদের ক্ষেত্রে আপনাকেই (আপনি না থাকলে আপনার শরীয়তকে) বিচারক বানাবে। অতঃপর (আপনি বিচার করে দিলে) সে ফায়সালা সম্বন্ধে নিজেদের মনে কোনো সঙ্কীর্ণতা বোধ করবে না এবং তা মনে-প্রাণে মেনে নিবে।” -সূরা নিসা ০৪:৬৫
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ. الآية –سورة المائدة: 50
“ওরা (কুরআনের বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে) জাহিলী বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী লোকদের জন্য আল্লাহর থেকে উত্তম বিধানদাতা আর কে আছে?” –সূরা মায়িদা ০৫:৫০
হাফেয ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ সূরা মায়িদার এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাতারদের নিয়ে আলোচনা করেন। তারা যে রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন বিধান প্রবর্তন করেছিল, সে কথা উল্লেখ করে বলেন,
ينكر تعالى على من خرج عن حكم الله المحكم المشتمل على كل خير الناهي عن كل شر وعدل إلى ما سواه من الآراء والاهواء والاصطلاحات التي وضعها الرجال بلا مستند من شريعة الله كما كان أهل الجاهلية يحكمون به من الضلالات والجهالات مما يضعونها بآرائهم وأهوائهم وكما يحكم به التتار من السياسات الملكية المأخوذة عن ملكهم جنكز خان الذي وضع لهم الياسق وهو عبارة عن كتاب مجموع من أحكام قد اقتبسها عن شرائع شتى من اليهودية والنصرانية والملة الاسلامية وغيرها. وفيها كثير من الاحكام أخذها من مجرد نظره وهواه فصارت في بنيه شرعا متبعا يقدمونها على الحكم بكتاب الله وسنة رسول الله – صلى الله عليه وسلم – فمن فعل ذلك فهو كافر يجب قتاله حتى يرجع إلى حكم الله ورسوله فلا يحكِّم سواه في قليل ولا كثير. اهـــــ. –تفسير ابن كثير: 3/119 ط. دار الكتب العلمية.
“আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তির নিন্দা করছেন, যে আল্লাহর দৃঢ় বিধান থেকে বের হয়ে যায়; অথচ তা সকল কল্যাণের আধার, সকল মন্দ হতে বাধা দানকারী। আল্লাহর বিধান থেকে বের হয়ে সে ধাবিত হয় এমন কিছু প্রবৃত্তি প্রসূত মতামত, পরিভাষা, রীতিনীতি ও প্রথার দিকে, যা প্রণয়ন করেছে মানুষেরাই। আল্লাহর শরীয়তের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমনটা করতো জাহিলী যুগের মানুষেরা। তারা তাদের চিন্তাপ্রসূত মতামত থেকে প্রণীত জাহিলী ভ্রান্ত বিধান দ্বারা ফায়সালা প্রদান করতো এবং যেমন তাতাররা তাদের ঐসব রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন দিয়ে বিচার-ফায়সালা করছে, যা তারা গ্রহণ করেছে তাদের বাদশাহ চেঙ্গিস খান থেকে। যে চেঙ্গিস খান তাদের জন্য ‘ইয়াসিক’ নামক সংবিধান প্রণয়ন করেছে। ইয়াসিক হলো ইসলামী, নাসরানী ও ইহুদীসহ বিভিন্ন ধর্ম থেকে গৃহীত বিধানের সমষ্টি, একটি সংবিধান। তাতে এমন অনেক বিধানও আছে, যা সে শুধু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা থেকেই গ্রহণ করেছে। অতঃপর তা তার অনুসারীদের নিকট পরিণত হয়েছে অনুসরণীয় একটি সংবিধানে। একে তারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়সালা করার উপর অগ্রাধিকার দেয়। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে সে কাফের। তার বিরুদ্ধে কিতাল করা ফরয, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানের দিকে ফিরে আসে এবং অল্প-বিস্তর কোনো কিছুর ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কিছুকে বিচারকরূপে গ্রহণ না করে।” -তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/১১৯
সূরা নিসার উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৭৭৪ হি.) বলেন,
هذا إنكار من الله عز وجل، على من يدعي الإيمان بما أنزل الله على رسوله وعلى الأنبياء الأقدمين، وهو مع ذلك يريد التحاكم في فصل الخصومات إلى غير كتاب الله وسنة رسوله، كما ذكر في سبب نزول هذه الآية: أنها في رجل من الأنصار ورجل من اليهود تخاصما، فجعل اليهودي يقول: بيني وبينك محمد. وذاك يقول: بيني وبينك كعب بن الأشرف. وقيل: في جماعة من المنافقين، ممن أظهروا الإسلام، أرادوا أن يتحاكموا إلى حكام الجاهلية. وقيل غير ذلك، والآية أعم من ذلك كله، فإنها ذامة لمن عدل عن الكتاب والسنة، وتحاكموا إلى ما سواهما من الباطل، وهو المراد بالطاغوت هاهنا. اهــــــ. –تفسير ابن كثير: 2/305 ط. دار الكتب العلمية.
“এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন ব্যক্তির দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছেন, যে দাবি করে, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল এবং পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের উপর যা অবতীর্ণ করেছেন, সে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে; অথচ সে বিবাদমান বিষয়াদিতে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহকে ছেড়ে ভিন্ন কোনো কিছুর কাছে বিচার-ফায়সালা চায়। এ আয়াতের শানে নুযূলে যেমনটি বর্ণিত হয়েছে, একজন আনসারী ও একজন ইহুদী পরস্পর বিবাদে জড়িয়ে পড়ল। ইহুদী বললো, তোমার ও আমার মাঝে ফায়সালা করবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। অপরজন বললো, তোমার ও আমার মাঝে ফায়সালা করবে কাআব বিন আশরাফ। কেউ বলেছেন, আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে একদল মুনাফিকের ব্যাপারে, যারা বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করতো আর জাহিলিয়াতের বিধান দ্বারা ফায়সালাকারী বিচারকদের কাছে বিচার প্রার্থনার ইচ্ছা পোষণ করতো। কেউ আবার অন্য মত ব্যক্ত করেছেন। আয়াতটি এই সবগুলো ব্যাখ্যা থেকেও ব্যাপক। কেননা আয়াতটি প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকে তিরস্কার করছে, যে কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে অন্য কোনো বাতিলের কাছে বিচার প্রার্থনা করে। এ আয়াতে তাগুত দ্বারা তাকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” –তাফসীরে ইবনে কাসীর: ২/৩০৫
হানাফী ফকীহ ও মুফাসসির ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৩৭০ হি.) বলেন,
وقال الله تعالى: {فليحذر الذين يخالفون عن أمره أن تصيبهم فتنة أو يصيبهم عذاب أليم}، فأوعد على مخالفة أمر الرسول، وجعل مخالف أمر الرسول والممتنع من تسليم ما جاء به والشاك فيه خارجا من الإيمان، بقوله تعالى: {فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما} … وفي هذه الآية دلالة على أن من رد شيئا من أوامر الله تعالى أو أوامر رسوله صلى الله عليه وسلم فهو خارج من الإسلام سواء رده من جهة الشك فيه أو من جهة ترك القبول والامتناع من التسليم وذلك يوجب صحة ما ذهب إليه الصحابة في حكمهم بارتداد من امتنع من أداء الزكاة وقتلهم وسبي ذراريهم لأن الله تعالى حكم بأن من لم يسلم للنبي صلى الله عليه وسلم قضاءه وحكمه فليس من أهل الإيمان.اهـــــــ -احكام القران للجصاص: 2/262-263 ط. دار الكتب العلمية.
“আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব এসে পড়ার ভয় করে।” এখানে আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করলে শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন, আর রাসূলের আদেশের বিরুদ্ধাচারী, তিনি যে বিধান নিয়ে এসেছেন তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী এবং তাতে সন্দেহ পোষণকারীকে ঈমান থেকে বহিষ্কৃত সাব্যস্ত করেছেন নিম্নোক্ত আয়াতে দ্বারা, “অতএব আপনার রবের কসম, শুধু মুখে ঈমান জাহির করার দ্বারা (আল্লাহর কাছে) ওরা মুমিন হবে না, যতক্ষণ না ওদের নিজেদের মধ্যে সংঘটিত বিবাদের ক্ষেত্রে আপনাকেই (আপনি না থাকলে আপনার শরীয়তকে) বিচারক বানাবে। অতঃপর (আপনি বিচার করে দিলে) সে ফায়সালা সম্বন্ধে নিজেদের মনে কোনো সঙ্কীর্ণতা বোধ করবে না এবং তা মনে-প্রাণে মেনে নিবে।’… এই আয়াত প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি আদেশও প্রত্যাখ্যান করবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে সন্দেহবশত প্রত্যাখ্যান করুক; অথবা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাক কিংবা মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকুক। আয়াতটি সাহাবায়ে কেরামের মতামতকে সঠিক বলে সাব্যস্ত করে। তারা ঐ ব্যক্তিদেরকে মুরতাদ আখ্যায়িত করেছেন, যারা যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিল। তাদেরকে হত্যা করার এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে বন্দী করার ফায়সালা দিয়েছিলেন। কেননা আল্লাহ তাআলা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধান ও ফায়সালাকে মেনে নেবে না, সে ঈমানদার নয়।” –আহকামুল কুরআন: -২/২৬২-২৬৩
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৭২৮হি.) বলেন,
ومعلوم بالإضطرار من دين المسلمين وبإتفاق جميع المسلمين أن من سوغ إتباع غير دين الإسلام أو إتباع شريعة غير شريعة محمد فهو كافر وهو ككفر من آمن ببعض الكتاب وكفر ببعض الكتاب كما قال تعالى: {إن الذين يكفرون بالله ورسله ويريدون أن يفرقوا بين الله ورسله ويقولون نؤمن ببعض ونكفر ببعض ويريدون ان يتخذوا بين ذلك سبيلا أولئك هم الكافرون حقا وأعتدنا للكافرين عذابا مهينا}. اهــــــ. –مجموع الفتاوى: 28/524 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف.
“ইসলাম ধর্মের অবশ্যম্ভাবী অংশ এবং সকল মুসলমানের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় হলো, যে ব্যক্তি দীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু কিংবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত ব্যতীত অন্য কোনো শরীয়ত অনুসরণের অনুমোদন দিবে, সে কাফের। তার এ কুফর ঐ ব্যক্তির কুফরের ন্যায়, যে কুরআনে একাংশের প্রতি ঈমান রাখে, অন্য অংশের সাথে কুফরী করে; যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফের। আর আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি লাঞ্ছনাকর আযাব।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৫২৪
অন্যত্র বলেন,
والإنسان متى حلل الحرام – المجمع عليه – أوحرم الحلال – المجمع عليه – أوبدل الشرع – المجمع عليه – كان كافراً مرتداً باتفاق الفقهاء. اهــــ -مجموع الفتاوى: 3/267 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف.
“ব্যক্তি যখন সর্বসম্মত কোনো হারামকে বৈধ করে কিংবা সর্বসম্মত কোনো হালালকে অবৈধ করে কিংবা সর্বসম্মত কোনো শরয়ী বিধানকে পরিবর্তন করে, তখন সে ফুকাহায়ে কেরামের ঐকমত্যে কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায়।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩/২৬৭
তিনি আরও বলেন,
ومتى ترك العالم ما علمه من كتاب الله وسنة رسوله واتبع حكم الحاكم المخالف لحكم الله ورسوله كان مرتداً كافراً، يستحق العقوبة في الدنيا والآخرة، قال تعالى: ﴿المص .كِتابٌ أُنْزِلَ إلَيْكَ فَلاَ يَكُنْ في صَدْرِكَ حَرَجٌ مِنْهُ لِتُنْذِرَ بِهِ وَذِكْرَى للمُؤْمنينَ . اتَّبِعوا ما أُنْزِلَ إلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعوا مِنْ دونِهِ أوْلِياءَ قَلِيلاً ما تَذَكَّرونَ﴾ ولو ضُرب وحُبس وأُوذي بأنواع الأذى ليدع ما علمه من شرع الله ورسوله الذي يجب اتباعه واتبع حكم غيره؛ كان مستحقاً لعذاب الله، بل عليه أن يصبر وإن أوذي في الله فهذه سنة الله في الأنبياء وأتباعهم اهـــــ -مجموع الفتاوى: 35/372-373 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف.
“যখন কুরআন সুন্নাহর কোনো বিধান সম্পর্কে অবহিত কোনো ব্যক্তি, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যা অর্জন করেছে তা ছেড়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানের বিপরীত কোনো শাসকের বিধান অনুসরণ করে, তখন সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির যোগ্য হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আলিফ-লাম-মীম-ছোয়াদ। এটি এমন কিতাব, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোনো সঙ্কীর্ণতা না থাকে। যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পারো এবং তা মুমিনদের জন্য উপদেশ স্বরূপ। তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।” সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়ত থেকে যে বিধান শিখেছে; যার আনুগত্য তার উপর ওয়াজিব, তা পরিত্যাগ করে অন্যের বিধান মানার জন্য যদি তাকে প্রহার করা হয়, বন্দী করা হয়, বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়, তবুও সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হবে। বরং তার উপর আবশ্যক হলো ধৈর্য ধারণ করা; যদিও আল্লাহর পথে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। এটাই আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং তাঁদের অনুসারীদের সুন্নাহ্।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৫/৩৭২-৩৭৩
শহীদুল উম্মাহ শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ১৯৮৯ই)
الحاكم الذي يشرع بغير ما أنزل الله هذا غير مسلم خارج من الملة، لأنه كالذي يغير الصلاة. المقنن الذي قنن القوانين ووضعها، صاغها في قوالب، هذا كافر كذلك خارج من الملة، قد يكون يصلي ويصوم، لكنه كافر لأنه يحل الحرام ويحرم الحلال. اهـ -في ظلال سورة التوبة: 1/172
“যে শাসক আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান ব্যতীত ভিন্ন বিধান প্রণয়ন করে সে অমুসলিম; মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ। কেননা সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে নামাযকে পরিবর্তন করে। যে ব্যক্তি আইন প্রণয়ন করে এবং বিভিন্নরূপে তাকে বিন্যস্ত করে, সেও একইভাবে কাফের এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ। হতে পারে সে নামায আদায় করে, রোযা পালন করে; তথাপি সে কাফের। কেননা সে হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। -ফী জিলালি সূরাতিত তাওবা: ১/১৭২
তিনি আরও বলেন,
ولا يُشرّع أحدٌ قانوناً من القوانين الوضعية ويستبدلها بشرع الله وقانونه إلاّ ويمرّ في ذهنه أن هذا القانون أفضل من قانون الله لهذه المرحلة، وهذا كفرٌ بَوَاحٌ لا يشك في ذلك أحد من أهل هذه الملة، ليس هناك أي فرق بين من يقول إنّ صلاة الفجر ثلاث ركعات وبين من يقول إن حكم القاتل سجن سنة، وليس هناك فرق بين من يقول إن عقوبة الزاني سجن ستة أشهر وبين من يقول إن صيام رمضان محرّم على الناس. اهــــــ -مفهوم الحاكمية: 9
“যে ব্যক্তি মানব রচিত কোনো বিধান প্রণয়ন করে এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর বিধান ও আইনকে পরিবর্তন করে, অবশ্যই তার চিন্তায় এটা আসে যে, এ ক্ষেত্রে তার বিধানটি আল্লাহর বিধানের চেয়ে ভালো। আর এটি যে ‘কুফরে বাওয়াহ’ তথা স্পষ্ট কুফর এ ব্যাপারে উম্মাহ একজন ব্যক্তিও সন্দেহ করতে পারে না। যে ব্যক্তি বলে, ফজরের নামায তিন রাকাত আর যে ব্যক্তি বলে, হত্যাকারীর বিচার এক বছর জেল, তাদের উভয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি বলে যিনার শাস্তি ছয় মাস জেল আর যে বলে, রমযান মাসে রোযা মানুষের জন্য নিষিদ্ধ তাদের উভয়ের মাঝেও কোনো ব্যবধান নেই।” –মাফহুমুল হাকিমিয়া: ৯
অন্যত্র বলেন,
الذين يشرّعون بغير ما أنزل الله كفارٌ وإن صلّوا وصاموا وأقاموا الشعائر الدينية، والقانونُ الذي يحكم في الأعراض والدماء والأموال هو الذي يحدد هوية الحاكم من حيث الكفر والايمان. اهـــــ -مفهوم الحاكمية: 2
“যারা আল্লাহ তাআলার বিধানের বিপরীত বিধান রচনা করে তারা কাফের, যদিও তারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, দীনি শিয়ারগুলো প্রতিষ্ঠা করে। জান, মাল ও ইজ্জত-আব্রুর ক্ষেত্রে শাসক যে আইনকে বিচারের মানদণ্ডরূপে গ্রহণ করবে সেটিই তার ঈমান ও কুফরের বিষয়টি নির্ধারণ করবে।” –মাফহুমুল হাকিমিয়া: ২
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হল, আজ মুজাহিদদের দখলকৃত পৃথিবীর সামান্য কিছু ভূমি বাদে মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও শরীয়াহ বিচার ব্যবস্থা নেই। তার পরিবর্তে সকল মুসলিম ভূখণ্ডে পশ্চিমা কুফরী শাসনের অধীনে মানবরচিত কুফরী বিচার ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব, খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত সর্বত্র শরীয়াহ শাসন ও বিচার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৭২৮ হি.) বলেন,
ومع أنه يجوز تولية غير الأهل للضرورة إذا كان أصلح الموجود فيجب مع ذلك السعي في إصلاح الأحوال حقا يكمل في الناس ما لا بد لهم منه من أمور الولايات والإمارات ونحوها؛ كما يجب على المعسر السعي في وفاء دينه وإن كان في الحال لا يطلب منه إلا ما يقدر عليه وكما يجب الاستعداد للجهاد بإعداد القوة ورباط الخيل في وقت سقوطه للعجز فإن ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب بخلاف الاستطاعة في الحج ونحوها فإنه لا يجب تحصيلها لأن الوجوب هنا لا يتم إلا بها. اهـ -مجموع الفتاوى: 28/ 259 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف
“জরুরতের কারণে অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে- বিদ্যমানদের মধ্যে সর্বাধিক উপযুক্ত হওয়ার শর্তে- মুসলমানদের শাসক হিসেবে নির্ধারণ যদিও বৈধ, কিন্তু সেই সাথে এই অবস্থার সংশোধনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও জরুরি। যেন নেতৃত্ব ও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য যোগ্য লোকের ব্যাপক উপস্থিতি তৈরি হয়। যেমন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির উপর পুরো ঋণ পরিশোধের চেষ্টা জরুরি। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তার কাছ থেকে ততটুকুই তলব করা হয়, যতটুকু তার সামর্থ্যে আছে। অনুরূপভাবে অক্ষমতার দরুন কিছু কালের জন্য জিহাদের আবশ্যিকতা তুলে নেওয়া হলেও শক্তি অর্জন ও ঘোড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা ওয়াজিব থেকে যায়। কারণ, ওয়াজিব দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য যত কাজ প্রয়োজন সেগুলোও ওয়াজিব। হজ ও এ জাতীয় আমলগুলোর সামর্থ্যের বিষয়টি ভিন্ন। এগুলোর সামর্থ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করা জরুরি না। কেননা সামর্থ্য আসার আগে এগুলো ওয়াজিবই হয় না।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/২৫৯
মিম্বারুত–তাওহীদের একটি ফতোয়ায় এসেছে,
رقم السؤال: 754 ما حكم اقامة الخلافة في غزة
السائل: اكرم
المجيب: اللجنة الشرعية في المنبر
بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله وبعد ….. لا ريب أنَّ الخلافة ضرورة دينية من أجل التوحيد، ومن أجل إقامة العدل، ومن أجل استقامة أحوال الأمة، ومنع الفوضى والاضطراب، ولهذا فإنَّ العمل على إيجاد هذه الخلافة من أهم الواجبات وآكدها، ونصب الخليفة الذي يقوم بتولي أمور الخلافة من أهم الواجبات أيضًا، لا سيما في زماننا الذي غابت فيه الخلافة الإسلامية وغاب فيه خليفة المسلمين. لهذا وجب على كل المسلمين السعي إلى إقامة الخلافة ونصب الخليفة الذي يقودهم بكتاب الله، وليس مهم أن تنطلق هذه الخلافة من غزة أو من غيرها، المهم أن تُوجد، ويحيا المسلمون في ظل حكم الله وشرعه. وواجب على المسلمين أن يحاولوا جاهدين إيجاد مقومات تلك الخلافة، لأن ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب؛ فوجب عليهم تعلم العلم النافع والعقيدة الصحيحة والدعوة إليها ونشرها بين الناس، وإعداد العدة والعتاد، وتعبئة الناس للجهاد في سبيل الله الذي يحفظ به بيضة المسلمين، ويصان به جناب التوحيد. هذا وبالله تعالى التوفيق.
أجابه، عضو اللجنة الشرعية: الشيخ أبو الوليد المقدسي
“প্রশ্ন নং: ৭৫৪, গাযায় খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার হুকুম কী?
প্রশ্নকারী: আকরাম
উত্তরপ্রদানকারী: মিম্বারের শরয়ী বিভাগ
বিসমিল্লাহ, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ।
তাওহীদ, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, উম্মাহর সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখা এবং সবরকম বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের জন্য খিলাফাহ একটি দীনি জরুরত। একারণে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার কাজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধানগুলোর মধ্যে একটি। এমনিভাবে খিলাফাহ পরিচালনার মূল ব্যক্তি ‘খলীফা’ নিয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবগুলোর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত, খিলাফাতে ইসলামিয়া এবং খলীফাতুল মুসলিমীন না থাকার বর্তমান সময়কালে। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর কিতাব দিয়ে শাসন পরিচালনাকারী খলীফা নিয়োগ করার জন্য চেষ্টা করা আবশ্যক। এই খিলাফাহ গাযা ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত হবে নাকি অন্য কোনো ভূখণ্ড থেকে সেটা বিষয় না, বিষয় হলো খিলাফাহ বিদ্যমান থাকা এবং মুসলমানরা আল্লাহর বিধান ও শরীয়াহর ছায়ায় জীবন যাপন করা। মুসলমানদের উপর এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত করা আবশ্যক। কারণ, যে কাজ ছাড়া ওয়াজিব পূর্ণ হয় না সেটা করাও ওয়াজিব। সুতরাং তাদের কর্তব্য হলো, প্রয়োজনীয় ইলম ও বিশুদ্ধ আকীদার চর্চা করা, এর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া এবং এর প্রচার-প্রসার করা, জিহাদের উপায়-উপকরণ প্রস্তুত করা এবং জনসাধারণকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, যার মাধ্যমে মুসলমানদের প্রভাব প্রতিপত্তি ঠিক থাকবে এবং জমিনে আল্লাহর একত্ববাদ অক্ষুণ্ন থাকবে।” -মুনতাদাল আসয়িলা, সুওয়াল নং: ৭৫৪
যতদিন শরীয়াহ ব্যবস্থা পূর্ণরূপে ফিরে না আসবে, ততদিন বিজ্ঞ আলেমদের অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকা। নিজেদের পরস্পর বিবাদ বিসংবাদ ও বিচার আচারে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে শরীয়াহ অনুযায়ী তার ফায়সালা গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।
আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وأما بلاد عليها ولاة كفار فيجوز للمسلمين إقامة الجمع والأعياد ويصير القاضي قاضيا بتراضي المسلمين، فيجب عليهم أن يلتمسوا واليا مسلما منهم اهـ وعزاه مسكين في شرحه إلى الأصل ونحوه في جامع الفصولين.
مطلب في حكم تولية القضاء في بلاد تغلب عليها الكفار
وفي الفتح: وإذا لم يكن سلطان، ولا من يجوز التقلد منه كما هو في بعض بلاد المسلمين غلب عليهم الكفار كقرطبة الآن يجب على المسلمين أن يتفقوا على واحد منهم، ويجعلونه واليا فيولى قاضيا أو يكون هو الذي يقضي بينهم وكذا ينصبوا إماما يصلي بهم الجمعة اهـ. وهذا هو الذي تطمئن النفس إليه فليعتمد نهر. اهـــ. – رد المحتار: 5/369 ط. دار الفكر.
“যেসব ভূমি কাফের শাসক দ্বারা পরিচালিত সেখানকার মুসলমানদের জন্য জুমআ ও ঈদের জামাত প্রতিষ্ঠা করা বৈধ। সেসব অঞ্চলে মুসলমানদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কোনো কাজী নির্ধারিত হলে তিনি শরঈ দিক থেকেও কাজী হয়ে যাবেন। এ কারণে তথাকার মুসলমানদের জন্য তাদের মধ্য থেকে একজন মুসলিম শাসক খুঁজে নেওয়া আবশ্যক। মোল্লা মিসকিন রহিমাহুল্লাহ তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থে আলোচ্য মাসআলাটিকে ‘কিতাবুল আসল’ এর দিকে সম্বন্ধ যুক্ত করেছেন। জামিউল ফুসুলাইন কিতাবেও মাসআলাটি এভাবেই এসেছে।
প্রসঙ্গ: কাফেরদের বিজিত ভূমিতে মুসলিম কাজী নিয়োগদানের বিধান
ফাতহুল কাদীরে এসেছে, ‘যদি কখনো শাসক কিংবা অনুসরণীয় কোনো নেতা না থাকে, যেমনটা ঘটেছে কোনো কোনো মুসলিম অঞ্চলে; সেখানে কাফেররা তাদের উপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, বর্তমান কর্ডোভা যেমন, সেখানকার মুসলমানদের উপর আবশ্যক হলো, তারা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে শাসক বানিয়ে নিবে। তিনি কাজী নিয়োগ দিবেন অথবা নিজেই কাজীর দায়িত্ব পালন করবেন। এমনিভাবে তারা নিজেদের জন্য একজন ইমাম নির্ধারণ করে নিবে, যিনি তাদের নিয়ে জুমার সালাত আদায় করবেন।’ এই মতটি অন্তরপ্রশান্তকারী, তাই এটিই আমলযোগ্য। আননাহরুল ফায়েক।” -রদ্দুল মুহতার: ৩৬৯
ইমামুল হারামাইন আবুল মাআলী জুয়াইনী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৪৭৮ হিজরী) বলেন,
فإذا شغر الزمان عن الإمام وخلا عن سلطان ذي نجدة وكفاية ودراية، فالأمور موكولة إلى العلماء، وحق على الخلائق على اختلاف طبقاتهم أن يرجعوا إلى علمائهم، ويصدروا في جميع قضايا الولايات عن رأيهم، فإن فعلوا ذلك، فقد هدوا إلى سواء السبيل، وصار علماء البلاد ولاة العباد. فإن عسر جمعهم على واحد استبد أهل كل صقع وناحية باتباع عالمهم. وإن كثر العلماء في الناحية، فالمتبع أعلمهم، وإن فرض استواؤهم … فالوجه أن يتفقوا على تقديم واحد منهم.اهــــ –غياث الأمم: 391 ط. مكتبة إمام الحرمين
“প্রজ্ঞাসম্পন্ন শক্তিধর কোনো ইমাম অথবা সুলতান না থাকার সময়ে নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের দায়-দায়িত্ব আলেমদের উপর বর্তাবে। উম্মাহর সকল শ্রেণির লোকের জন্য আবশ্যক, আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া এবং নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের সকল বিষয়ে তাদের কথা মতো চলা। এমনটা করলে তারা সঠিক পথের দিশা পাবে। আলেমগণ তখন শাসকদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাবেন।
যদি এক আলেমের নেতৃত্বে সকলকে একত্রিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রত্যেক এলাকার অধিবাসীরা তাদের নিজেদের আলেমকে মেনে চলবে। এক এলাকায় অনেক আলেম থাকলে যিনি বড় আলেম, তিনিই হবেন অনুসরণীয়। সকল আলেম সমান স্তরের হলে…সকলে মিলে তাদের মধ্য থেকে একজনকে দায়িত্বশীল বানিয়ে নেবে।” – গিয়াসুল উমাম: ৩৯১
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হিজরী) বলেন,
يجب أن يعرف أن ولاية أمر الناس من أعظم واجبات الدين، بل لاقيام للدين ولا للدنيا إلا بها. فان بنى آدم لا تتم مصلحتهم إلا بالاجتماع لحاجة بعضهم إلى بعض. ولابد لهم عند الاجتماع من رأس. حتى قال النبى: (إذا خرج ثلاثة فى سفر فليؤمروا أحدهم). رواه أبو دواد من حديث أبى سعيد وابى هريرة. وروى الإمام أحمد فى المسند عن عبد الله بن عمرو أن النبى قال: (لا يحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم). فأوجب تأمير الواحد فى الاجتماع القليل العارض فى السفر تنبيها بذلك على سائر أنواع الاجتماع. ولأن الله تعالى أوجب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر. ولا يتم ذلك إلا بقوة وإمارة. وكذلك سائر ما أوجبه من الجهاد والعدل وإقامة الحج والجمع والأعياد ونصر المظلوم وإقامة الحدود لا تتم إلا بالقوة والامارة. –مجموع الفتاوى: 28\390 ط. مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف
“জেনে রাখা আবশ্যক যে, জনগণের নেতৃত্ব দেওয়া দীনের সুমহান আবশ্যিক দায়িত্ব। শুধু তাই নয়, এটি ব্যতীত বরং দীন-দুনিয়া কোনোটাই চলতে পারে না। কেননা, পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতীত মানব জাতির মাসলাহাত সমূহের পরিপূর্ণতা সম্ভব নয়। কারণ তারা একে অপরের মুখাপেক্ষী। আর ঐক্যবদ্ধ হতে গেলে তাদের একজন নেতা আবশ্যক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো এমনটি পর্যন্ত বলেছেন: إذا خرج ثلاثة فى سفر فليؤمروا أحدهم –“তিন ব্যক্তি সফরে বের হলে তারা যেন একজনকে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেয়।” ইমাম আবু দাউদ রহিমাহুল্লাহ হাদীসটি হযরত আবু সায়িদ রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ মুসনাদে আহমাদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: لايحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم – “যেকোনো তিন ব্যক্তির জন্য কোনো মরু ময়দানে অবস্থান করা জায়েয হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের একজনকে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেয়।” সফরের হালতে সৃষ্টি হওয়া ছোট্ট একটি জামাআতের বেলায়ও একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন, একথা বুঝানোর জন্য যে, সব ধরনের জামাআতের ক্ষেত্রেই আমীর বানিয়ে নেওয়া আবশ্যক। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা ‘আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকার’ ফরয করেছেন। আর তা প্রভাব-প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তদ্রূপ জিহাদ, ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা; হজ, জুমআ ও ঈদ কায়েম করা; মাজলুমকে সাহায্য করা, হদসমূহ কায়েম করা ইত্যাদিসহ আল্লাহ তাআলার ফরযকৃত যাবতীয় বিধান প্রভাব-প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৩৯০
এটি প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরয এবং তার ঈমানি দায়িত্ব। যেকোনো কলহ-বিবাদে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ শরীয়াহ’র ফায়সালার প্রতি আন্তরিক হলে আলেমদের শরণাপন্ন হয়ে জীবনের অনেকাংশের সমাধানই এভাবে সম্ভব।
তাই মানবরচিত আইনে বিচারপ্রার্থী হতে উলামায়ে কেরামের অনেকে সর্বাবস্থায়ই নিষেধ করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে কুফর এবং কিছু ক্ষেত্রে নাজায়েয বলেছেন। কারণ এর মাধ্যমে প্রচলিত তাগুতি শাসন ও বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়, যা অন্যায় কাজে সহযোগিতার শামিল। মুসলিমদের দায়িত্ব সর্বাত্মক শক্তি ব্যয় করে এই ব্যবস্থা ধ্বংস করা। -ফী জিলালি সূরাতিত তাওবাহ: ১/১৭৪, ফাতাওয়া রশীদীয়া: ২/৪২৯, মুনতাদাল আসইলা, প্রশ্ন নং: ৭০২৯
কিন্তু জুমহুর (অধিকাংশ) উলমায়ে কেরাম বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত সাপেক্ষে তা জায়েয বলেছেন। তাঁরা মনে করেন, বর্তমানে মানবরচিত আইনের আওতায় যে তীব্র মাত্রায় মুসলিম সমাজে জুলুম ও অন্যায় অনাচার চলছে, ক্ষেত্রবিশেষে উক্ত বিচার ব্যবস্থার শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও তা কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুযোগ সামর্থ্য থাকলে জুলুমের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা মনে করি, দলীল প্রমাণের আলোকে জুমহুরের মতটিই অগ্রগণ্য।
বিশেষ ক্ষেত্রটি হচ্ছে, যখন শরীয়াহ বিচারের কোনো ব্যবস্থা না থাকবে এবং কুফরী বিচার ব্যবস্থার শরণাপন্ন না হয়ে জুলুম থেকে নিস্তার পাওয়ার কিংবা ন্যায্য হক আদায়ের বিকল্প কোনো অবকাশ না থাকবে, তখন কিছু শর্তসাপেক্ষে মানবরচিত আইনে বিচারপ্রার্থী হওয়ার অবকাশ আছে। শর্তগুলো হচ্ছে:
০১. একথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা যে, শরীয়াহ আইনই একমাত্র ইনসাফ ও ন্যায়ানুগ আইন। অন্য কোনো আইন শরীয়াহ আইনের সমমর্যাদা পাবার যোগ্যতা রাখে না এবং ন্যায় ও ইনসাফের জামিন হতে পারে না। এও বিশ্বাস রাখা যে, অনন্যোপায় হওয়ার মতো ওজর ব্যতীত এই আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া কোনো মুসলিমের জন্য জায়েয নয়; বরং সন্তষ্ট চিত্তে বিচারপ্রার্থী হওয়া কুফর। এই আকীদা পোষণ করে জুলুমের মাত্রা কমানো ও ন্যায্য হক আদায়ের উদ্দেশ্যে মানবরচিত আইনের শরণাপন্ন হওয়া যাবে।
০২. অন্যের উপর জুলুম না করা এবং শরীয়াহ পরিপন্থী কোনো রায়ের আবেদন না করা। শরীয়াহ পরিপন্থী রায় হলে তা বাস্তবায়ন না করা। যেমন আমি ঋণ পরিশোধে সক্ষম দেনাদারের বিরুদ্ধে আমার দেয়া ঋণ ফিরে পাওয়ার জন্য মামলা করলাম। কিন্তু আদালত আমার জন্য বিগত দিনের সুদসহ ঋণ ফেরতের ফায়সালা করল। এক্ষেত্রে আমি শুধু আমার ঋণ ফেরত নিতে পারব, সুদ নয়। কারণ তা অন্যের উপর জুলুম এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয।
০৩. আমার জন্য যদি এমন কোনো হকের ফায়সালা করা হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার প্রাপ্য নয়, তাহলে তা প্রকৃত হকদারকে ফিরিয়ে দেয়া। যেমন আমি এমন কোনো হকের জন্য মামলা করলাম, যাতে আমার সঙ্গে আরেকজন শরীক আছে। আদালত পুরোটাই আমাকে দিয়ে দিল। এক্ষেত্রে শরীকের অংশ তাকে ফেরত দিতে হবে।
উপর্যুক্ত শর্ত সাপেক্ষে মানবরচিত আইনের কাছে যেমন বিচারপ্রার্থী হওয়া নাজায়েয নয়, তেমনি এমন ক্ষেত্রে বাদী বা বিবাদীর পক্ষে ওকালতি করাও নাজায়েয নয়। পেশা যখন জায়েয, তখন তার পারিশ্রমিকও হালাল। পক্ষান্তরে অন্যায় ও জুলুমের পক্ষে ওকালতি করা নাজায়েয। এজন্য যে কোনো মামলার দায়িত্ব নেয়ার পূর্বে সত্যাসত্য যাচাই করে মামলা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে কোনো মামলায় শরীয়তের বিধান কি, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনটা ন্যায় এবং কোনটা অন্যায় তাও একজন উকীলের জন্য জানা জরুরি। অন্যথায় তার জন্য ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
জামিয়া ইসলামিয়া বানুরী টাউনের একটি ফতোয়ায় এসেছে,
اگر کوئی شخص وکالت کو پیشہ بنانا چاہے تو اس کو چاہیے کہ کبھی کسی ناجائز بات اور ناحق شخص کے لیے وکالت نہ کرے، اور اپنی صلاحیت سے ناحق کو ثابت نہ کرے، جھوٹ، دھوکا اور رشوت کا سہارا نہ لے؛ لہذا بہت احتیاط سے کسی معاملہ کی ذمہ داری لے۔ نیز اس پیشہ کے اختیار کرنے میں مظلوم افراد کی مدد کی نیت کرے۔ ان شرائط کے ساتھ یہ پیشہ اختیار کرنا جائز ہے۔ -فتاوى بنوري تاون: 144203201357
“যদি কেউ ওকালতিকে পেশা বানাতে চায় তার জন্য জরুরি হলো, কখনো কারো অন্যায় দাবি অথবা কোনো অপরাধী ব্যক্তির পক্ষে ওকালতি করবে না। নিজের যোগ্যতা বলে অসত্যকে সত্য বানানোর চেষ্টা করবে না। মিথ্যা প্রতারণা ও জুলুমের পথে পা বাড়াবে না। এজন্য খুব ভেবে চিন্তে কোনো মামলার দায়িত্ব নিবে। এবং সর্বদা মজলুম ও অসহায়ের পাশে দাড়াঁনোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রাখবে। এসব শর্ত সাপেক্ষে এই পেশা গ্রহণ করা জায়েয।” –ফাতাওয়া বানুরী টাউন (অনলাইন), ফতোয়া নং: ১৪৪২০৩২০১৩৫৭
মুফতী আব্দুল হক হক্কানী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
مروجة وكالت كو بطور پيشه اختيار كرنا:
سوال: موجوده دور ميں وكلاء ملكي قوانين كي رو سے مدعي اور مدعي عليه كي نمائندگي كرتے هوئے طرفين سے بڑي بڑي رقميں وصول كرتے هيں، تو كيا وكالت كو بطور پيشه اختيار كرنا جائز هے يا نهيں؟
الجواب: واضح رهے كه موجوده ملكي قوانين ميں سے جو قوانين شريعت اسلاميه سے متصادم هوں تو ان كے مطابق مقدمات كي پيروي كرنا اور فيصله كرنا اور ان پر معاوضات لينا تمام كے تمام غير اسلامي هيں، شريعت مقدسه ميں اسكي كوئي گنجائش نهيں هے، تا هم ان كے دريعے سے اپنے جائز حقوق لينا اور ظالم كے ظلم سے نجات حاصل كرنا مرخص هے، اور جو قوانين قوانين شريعت سے متصادم نه هوں تو اس كے مطابق فيصله كرنا اور اسپر وكيل كا معاوضات لينا مرخص هے، اور جواز اجرت توكيل كيلئے يه تأويل كافي هے كه واقعي وكيل جو اجرت ليتا هے وه ايك خاص وقت اور خاص دن ميں محبوس رهنے كي اجرت ليتا هے جو كه فقهاء كرام نے جائز قرار ديا هے، الحاصل يه كه پيشۀ وكالت في نفسه جائز هے مگر شرط يه هے كه وكيل جائز مقدمات كي پيروي كرتا هو. -فتاوى حقانية: 6/362 ط. زكريا
“প্রশ্ন: বর্তমানে উকীলরা দেশীয় আইনের প্রতিনিধিত্ব করে দুই পক্ষ থেকে বড় অংকের অর্থ উপার্জন করে। তো এই ওকালতিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা কি জায়েয?
উত্তর: একথা স্পষ্ট যে, বর্তমান দেশীয় আইনের মধ্য থেকে যে সমস্ত আইন ইসলামী শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক, মামলা মুকাদ্দামার ক্ষেত্রে এর অনুসরণ করা, সে অনুযায়ী ফায়সালা করা এবং এর বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করা সবকিছুই অনৈসলামিক কাজ। পবিত্র শরীয়তে এর কোনো অনুমোদন নেই। তবে এর মাধ্যমে নিজের হক আদায় করা এবং জালেমের জুলুম প্রতিহত করার সুযোগ আছে। আর যে সমস্ত আইন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, সে অনুযায়ী ফায়সালা করা এবং এক্ষেত্রে ওকালতির বিনিময় নেয়া জায়েয। ওকালতির বিনিময় জায়েয হওয়ার কারণ হলো, উকীল যে বিনিময় গ্রহণ করে, সেটা প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা দিনে নিজেকে (অন্যের কাজে) আটকে রাখার বিনিময়; যা ফকীহগণ জায়েয বলেছেন। মোটকথা, ওকালতির চাকরি মূলত জায়েয। তবে শর্ত হলো, শুধু জায়েয মামলার দায়িত্ব নিতে হবে।” -ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া: ৬/৩৬২
শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৯৮৯ ঈসায়ী) বলেন,
نأتي إلى المحامي, لما أثيرت القضية قلت: المحامي عمله حرام, فطلع أحد إخواننا رجل صالح فقال: أنا محام, إعرض الأمر على أساتذة كلية الشريعة –كنا في الجامعة الأردنية– واحكموا لي وأنا ألتزم بما تحكمون, فاجتمعنا أساتذة كلية الشريعة –والإخوة في كلية الشريعة دكاترة, كلهم– قالوا: مزاولة العمل بالمحاماة حلال بشروط: الشرط الأول: أن لا يرافع في قضية حكمها في القانون الوضعي يختلف عن القانون الإسلامي هذه واحدة. الشرط الثاني: أن يقتنع أن صاحب القضية محق وأنه يدافع عن الحق. الشرط الثالث: إذا كان يظن أنه على الحق فاكتشف أثناء المحاكمة أنه على الباطل, يجب أن ينسحب من القضية.اهــــ –في ظلال سورة التوبة: 1/ 174
“আমরা এখন আইনজীবীর (পেশা হালাল না হারাম এ) আলোচনা করবো। একবার যখন আমাদের সহপাঠীদের মজলিসে বিষয়টি উত্থাপিত হলো, তখন আমি বললাম, আইনজীবীর পেশা হারাম। তখন এক ভাই (যিনি বাস্তবে সৎ লোক ছিলেন) আগে বেড়ে বললেন, আমি আইনজীবী। আপনি বিষয়টি শরীয়াহ অনুষদের শিক্ষকদের কাছে পেশ করুন। (আমরা তখন জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম।) আপনারা আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। আমি আপনাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিব। আমরা শরীয়াহ অনুষদের শিক্ষকদের সাথে বসলাম। (শরীয়াহ অনুষদের সকলেই ডক্টরেট ডিগ্রীধারী ছিলেন।) তাঁরা বললেন, আইনজীবীর পেশা কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে বৈধ:
১ম শর্ত: এমন কোনো মামলায় লড়া যাবে না, যেখানে মানব রচিত আইন শরীয়াহ আইন থেকে ভিন্ন। এটা একটা শর্ত। (অর্থাৎ এমন আইনের অধীনে শরীয়াহ পরিপন্থী ফায়সালার জন্য লড়া যাবে না। যেমন কোনো দেশে আইন আছে মেয়েরা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার ছেলেদের সমান পাবে। তাহলে মেয়েকে সমান দেয়ার জন্য এই আইনের অধীন মামলা লড়া যাবে না। পক্ষান্তরে মেয়েকে যেন ছেলেদের সমান দেয়া না হয়, এই উদ্দেশ্যে উক্ত মামলা লড়া যাবে)।
২য় শর্ত: এব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, মামলার দাবিদার সত্যের উপর আছেন এবং তিনি সত্যের পক্ষেই লড়ছেন।
৩য় শর্ত: যদি এমন হয় যে, প্রথমে ভেবেছিলেন- তিনি সত্যের উপর আছেন, কিন্তু মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি অন্যায়ের পক্ষে লড়ছেন, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে এই মামলা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।” -ফী জিলালি সূরাতিত-তাওবা: ১/১৭৪
আল-লাজনাতুদ দায়িমাহর একটি ফতোয়ায় এসেছে,
س: إنني الآن في كلية الحقوق بالمرحلة الثانية –أي قضيت عامين في الكلية– إنني أريد أن أعرف: هل أتركها؛ لأنها لا تتحاكم إلى شرع الله وتتبع القانون الوضعي؟ هل يجوز أن اشتغل وكيل نيابة (أي: التحقيق من قبل القانون الوضعي) ؟ وهل التدريس بالكلية للطلبة (حرام) أم لا؟ وهل ممارسة مهنة المحاماة لطلب الرزق منها حرام.
ج1: أولا: إذا كان من يريد دراسة القوانين الوضعية لديه قوة فكرية وعلمية يميز بها الحق من الباطل، وكان لديه حصانة إسلامية يأمن معها من الانحراف عن الحق ومن الافتتان بالباطل، وقصد بتلك الدراسة المقارنة بين أحكام الإسلام وأحكام القوانين الوضعية وبيان ميزة أحكام الإسلام عليها وبيان شمولها لكل ما يحتاجه الناس في صلاح دينهم ودنياهم وكفايتها في ذلك؛ إحقاقا للحق وإبطالا للباطل، والرد على من استهوته القوانين الوضعية فزعم صلاحيتها وشمولها وكفايتها – إن كان كذلك فدراسته إياها جائزة، وإلا فلا يجوز له دراستها، وعليه أن يستغني بدراسة الأحكام الإسلامية في كتاب الله تعالى والثابت من سنة رسول الله صلى الله عليه وسلم على ما درج عليه أئمه علماء الإسلام وطريقة سلف الأمة في دراستها والاستنباط منها. ثانيا: إذا كان في الاشتغال بالمحاماة أو القضاء إحقاق للحق وإبطال للباطل شرعا ورد الحقوق إلى أربابها ونصر للمظلوم – فهو مشروع؛ لما في ذلك من التعاون على البر والتقوى، وإلا فلا يجوز؛ لما فيه من التعاون على الإثم والعدوان؛ قال الله تعالى: {وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ}
وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم.
-فتاوى اللجنة الدائمة: رقم الفتوى: 3712، 1/ 793 ط. رئاسة إدارة البحوث العلمية والإفتاء.
“প্রশ্ন: আমি এখন আইন অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমি ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর অতিক্রম করেছি। আমি জানতে চাই, আমি কি এটা ছেড়ে দিব? কারণ এটা তো আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত শরীয়তকে মানদণ্ড বানায় না। বরং তা মানব রচিত আইন-কানুনের অনুসরণ করে। আমার জন্য কি ওকালতির পেশা গ্রহণ করা (অর্থাৎ মানব রচিত আইন দিয়ে মামলার বিচার-বিশ্লেষণ করা) বৈধ হবে? এবং এই অনুষদের ছাত্রদেরকে পাঠদান করানো কি হারাম? আর জীবিকা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে আইনজীবীর পেশা গ্রহণ করা কি অবৈধ?
“উত্তর: প্রথমত যিনি মানব রচিত আইন অধ্যয়ন করতে ইচ্ছুক, তিনি যদি এমন প্রখর চিন্তাশক্তি ও প্রজ্ঞার অধিকারী হোন যে, মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারবেন, এবং তার থাকে দীনি ইলমের শক্ত প্রতিরক্ষা প্রাচীর, যার মাধ্যমে তিনি হক থেকে বিচ্যুত হওয়া কিংবা বাতিল দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন এবং এই অধ্যয়নের পেছনে তার উদ্দেশ্য হয়- ইসলামের হুকুম-আহকাম ও মানব রচিত আইনের মধ্যে তুলনা করা, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা এবং একথা স্পষ্ট করা যে, মানব জীবনে প্রয়োজনীয় দীনি দুনিয়াবি সকল বিষয়ে ইসলামের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা রয়েছে এবং এ ব্যাপারে তা স্বতন্ত্রও; সত্যপ্রতিষ্ঠা ও বাতিল নিধনের নিমিত্তে, এবং যে ব্যক্তি মানব রচিত আইনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে, এর উপযুক্ততা সামগ্রিকতা ও স্বতন্ত্র হওয়ার দাবি করে তাকে সমুচিত জবাব দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই আইন অধ্যয়ন করা বৈধ। অন্যথায় তার জন্য একাজ বৈধ নয়। তার কর্তব্য হলো, কিতাবুল্লাহতে বিদ্যমান বিধানাবলী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বিষয়াদি ভালোভাবে অধ্যয়ন করা- যেভাবে তা অধ্যয়ন ও তা থেকে মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন ইসলামের অনুসৃত আলেমগণ এবং যে পথে চলেছেন উম্মতের প্রথম যুগের ব্যক্তিবর্গ।
দ্বিতীয়ত: আইনজীবী অথবা বিচারিক পেশা গ্রহণ করলে যদি শরঈভাবে সত্য প্রতিষ্ঠা ও মিথ্যা প্রতিহত করা সম্ভব হয় এবং হকসমূহ তার প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও মাজলুমকে সাহায্য করা যায়, তাহলে এই কাজ বৈধ। কেননা এর মাধ্যমে সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করা হয়। আর উপরের বিষয়গুলো না থাকলে এই কাজ বৈধ নয়। কেননা এর দ্বারা অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যের সহযোগিতা করবে, গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না।” –সূরা মায়িদা ০৫: ০২” –ফাতাওয়াল-লাজনাতিদ দায়েমা, ফতোয়া নং: ৩৭১২
‘ইসলাম কিউএ’ সাইটের একটি ফতোয়ায় এসেছে,
فيجوز للمحامي أن يعمل في هذا المجال بشروط:
الأول: أن يتبرأ إلى الله تعالى من هذه القوانين ، ومن واضعيها ، ومن التحاكم إليها دون ضرورة.
الثاني : ألا يترافع في القضايا التي يحكم فيها بحكم يناقض حكم الله ويضاده ، فلا يترافع مثلا في قضايا تتضمن الدفاع عن الزناة والسُرَّاق وآكلي الربا ونحوهم ، فلا يجوز له – بصفة عامة – الترافع إلا بعد معرفة مشروعية الدعوى ومضمونها ويتأكد من كون القضية بصفة عامة لا مخالفة فيها لشرع الله تعالى.
وهذا يتطلب من المحامي أن يكون على علم بالشرع حتى يعرف به المحق من المبطل ، وحتى يمكنه الإصلاح بين الناس وإبرام العقود الموافقة للشرع .
الثالث : أن يكون ترافعه من أجل إحقاق حق أو إبطال باطل ، أو نصرة المظلوم ، فإن رأى أن الحق مع مُوكِلِّه ، دافع عنه وانتصر للحق. … وأما إن رأى أن الحق على موكله ، لزِمَه بيان ذلك له ، ونصحه بترك الدعوى ورد الحقوق إلى أهلها ، ولا يتوكل عنه .
الرابع : أن يتعذر استيفاء الحقوق ودفع المظالم من غير طريق هذه المحاكم الوضعية ، أما إن وجد غيرها من محاكم شرعية أو تحكيم شرعي يتولاه العلماء والفقهاء ، فلا يجوز التحاكم إليها مطلقاً. –الإسلام سؤال وجواب: 112144
“অতএব আইনজীবীর জন্য এই বিভাগে কাজ করা বৈধ হবে কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে:
এক. আল্লাহর কাছে ‘বারাআত’ ও সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করতে হবে, এই সমস্ত আইন-কানুন থেকে, এর রচনাকারী থেকে এবং একান্ত বাধ্য না হলে এর শরণাপন্ন হওয়া থেকে।
দুই. যে সমস্ত মামলায় আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কোনো ফায়সালা দেওয়া হবে, সেগুলো কোর্টে উত্থাপন করবে না। উদাহরণস্বরূপ যিনাকারী, চোর, সুদখোর, এধরনের লোকদের পক্ষ নিতে হবে এমন কোনো মামলার দায়িত্ব নিবে না। সুতরাং মামলার বিষয়বস্তু, এর বৈধতা এবং এতে শরীয়ত বিরোধী কোনো কিছু নেই– এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কোনো মামলা কোর্টে উঠানো জায়েয নয়।
এর জন্য আইনজীবীর পর্যাপ্ত পরিমাণ শরঈ জ্ঞান থাকতে হবে। যেন সে ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করতে পারে। মানুষের পরস্পরের ঝগড়া–বিবাদ মীমাংসা করতে পারে। এবং মানুষের শরীয়ত সম্মত লেনদেন ও কায়–কারবারগুলোকে অনুমোদন দিতে পারে।
তিন. মামলায় লড়াই করার পেছনে তার উদ্দেশ্য থাকতে হবে, সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। অথবা মিথ্যাকে অপসারিত করা। কিংবা মজলুমকে সাহায্য করা। অতএব যদি সত্য তার মক্কেলের পক্ষে থাকে, তাহলে সে তার পক্ষ নিবে এবং সত্যের জন্য লড়াই করবে। পক্ষান্তরে যদি দেখা যায় সত্য তার মক্কেলের বিপক্ষে, তাহলে জরুরি হলো, সে তার মক্কেলের সামনে তা স্পষ্ট করে দিবে এবং তাকে উপদেশ দিবে যেন সে তার দাবি ছেড়ে দেয় এবং হক তার প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়। এই মামলায় সে তার ওকালতি করবে না।
চার. অবস্থা এমন হতে হবে যে, মানুষের বানানো এই আদলতগুলো ছাড়া জনগণের পাওনা আদায় করা এবং এদের থেকে জুলুম প্রতিহত করা সম্ভব নয়। অতএব এগুলো ছাড়া যদি কোনো শরঈ বিচারালয় পাওয়া যায়, অথবা আলেম ও ফকীহগণ দ্বারা পরিচালিত কোনো সালিস বিদ্যমান থাকে, তাহলে কোনোভাবেই মামলা নিয়ে ওই আদালতগুলোতে যাওয়া যাবে না। – ইসলাম কিউএ (https://islamqa.info/ar/answers/112144/), প্রশ্ন নং: ১১২১৪৪
‘ইসলাম ওয়েব’ এর একটি ফতোয়ায় এসেছে,
ويخلص إلى أن المبرر الوحيد الذي يجيز للمسلم الاشتغال بهذه المهنة وغيرها في ظل هذه الأنظمة وتلك القوانين، هو العمل على نصرة الدين وإقامة الحجة على المخالفين، وبيان تفاهة قوانينهم، والقيام بمصالح المسلمين ودفع الظلم عنهم أو تخفيفه حسب الإمكان في ذلك كله، فإذا أوصدت في وجهه الأبواب وتقطعت به السبل فحق عليه أن يعتزل؛ وإلا أصبح وجوده مشاركة في الظلم ويتحمل من الإثم بقدر عمله. –إسلام ويب: 18505
“সারকথা হল, একজন মুসলিমের জন্য এই পেশাসহ উক্ত সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার অধীনে অন্যান্য পেশা গ্রহণ করা তখনই বৈধ, যখন এর উদ্দেশ্য হবে- যথাসম্ভব দীনের সাহায্য করা, ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ দাঁড় করানো, তাদের বানানো সংবিধানের অসারতা তুলে ধরা এবং মুসলিমদের কল্যাণে কাজ করা, তাদের উপর থেকে জুলুম প্রতিহত করা বা হ্রাস করা। যখন তার সামনে (উপর্যুক্ত কাজগুলো করার) সকল দরজা বন্ধ হয়ে যাবে, সে চারদিক থেকে পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে, তখন তার কর্তব্য হলো, এই কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেওয়া। অন্যথায় সেখানে উপস্থিত থাকা মানে অন্যায় ও জুলুমে অংশগ্রহণ করা এবং কাজ অনুপাতে গুনাহের বোঝা বহন করতে থাকা।” –ইসলামওয়েব (https://www.islamweb.net/ar/fatwa/18505), ফতোয়া নং: ১৮৫০৫
বলা বাহুল্য, প্রত্যেক মামলায় শরীয়তের বিধান কী, সত্য কী, মিথ্যা কী, এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা একজন উকীলের জন্য খুব সহজ সাধ্য নয়। এজন্য উপর্যুক্ত শর্ত সাপেক্ষে ওকালতি পেশায় কাজ করা যদিও জায়েয, কিন্তু তা যে একজন জেনারেল শিক্ষিত ব্যক্তির ঈমান আমলের পক্ষে বেশ কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও দেখুন:
ফতোয়া নং ১৯৩: “নিরপরাধ কোনো মুসলিমকে মুক্ত করার জন্য তাগুতের কোর্টে কেস লড়ার হুকুম কী?”
ফতোয়া নং ২৩৫: “বর্তমান তাগুতি আদালতে বিচার চাওয়া যাবে কি?”
ফতোয়া নং ৩৫৭: “তাগুতের আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়ার বিধান”
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৪-০৫-৪৫ হি.
২৯-১১-২০২৩ ঈ.