পূজা উপলক্ষে প্রাপ্ত উপহার ও খাবার গ্রহণের বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমার পরিচিত এক ভাই ভারতে অন্যায়ভাবে বন্দী আছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, জেলে পূজা উপলক্ষে বন্দীদেরকে একটু ভালো খাবার, যেমন মাছ, গোশত, ডিম ইত্যাদি দেওয়া হয়। তারা কি সেই খাবার খেতে পারবে?
উল্লেখ্য, ওই দিন অন্য কোনও খাবার দেওয়া হয় না। তবে কেন্টিন খোলা থাকে, কেউ চাইলে কিনে খেতে পারে।
-আবদুল মুমিন
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد:
আল্লাহ তাআলা ভাইদের মুক্তি ত্বরান্বিত করুন, ধৈর্য ধারণের তাওফীক দান করুন এবং এ কুরবানীর বিনিময়ে আজরে আযীম নসীব করুন। ঈমানের উপর অবিচল রাখুন। আমীন!
জেলে সরবরাহকৃত যেসব খাবার বছরের অন্যান্য সময় খাওয়া জায়েয, সেসব খাবার পূজা উপলক্ষে সরবরাহ করা হলে তখনও খাওয়া জায়েয। পূজা উপলক্ষে সরবরাহ করার কারণে তা নাজায়েয হবে না।
আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে এক নারী সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের কিছু অগ্নিপূজারী প্রতিবেশী আছে, তারা তাদের উৎসবের দিন আমাদেরকে হাদিয়া দেয় (এটার বিধান কী)? তিনি বলেন,
أما ما ذبح لذلك اليوم فلا تأكلوا ، ولكن كلوا من أشجارهم. -المصنف لابن أبي شيبة، رقم الأثر: 24856، ط. شركة دار القبلة – مؤسسة علوم القرآن
“ওই দিন উপলক্ষে যা জবেহ করা হয়েছে, তা খাবে না, তবে তাদের দেওয়া ফলফলাদি খেতে পারো।” –মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: ২৪৮৫৬
আবু বারযা আসলামী রাযিয়াল্লাহু আনহুও অনুরূপ কথা বলেছেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: ২৪৮৫৭
সালাফের এসব বাণী উল্লেখ করার পর শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৭২৮ হি.) বলেন,
فهذا كله يدل على أنه لا تأثير للعيد في المنع من قبول هديتهم، بل حكمها في العيد وغيره سواء؛ لأنه ليس في ذلك إعانة لهم على شعائر كفرهم. –اقتضاء الصراط المستقيم لمخالفة أصحاب الجحيم (2/ 52)، ط. دار عالم الكتب، بيروت، لبنان
“সালাফের এসব বাণী প্রমাণ করে, তাদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উৎসবের নেতিবাচক কোনও ভূমিকা নেই। বরং উৎসব এবং অন্য সময়ের হাদিয়ার বিধান একই। কারণ, এ (হাদিয়া গ্রহণের মাঝে) কুফুরী শিআরে তাদেরকে সহযোগিতা করার মতো কিছু হচ্ছে না।” –ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম: ২/৫২
বুঝা গেল, ফলফলাদি বা মুশরিকদের অন্য যেসব খাবার মুসলিমদের জন্য অন্য সময় হালাল, তা পূজা উপলক্ষে হাদিয়া প্রদান করলেও হালাল। পূজা উপলক্ষে প্রদান করার কারণে তা নাপাক বা নাজায়েয হবে না। অবশ্য মুশরিকদের জবাইকৃত পশু-পাখির গোশত যেহেতু হালাল নয়, তাই তা খাওয়া জায়েয হবে না; পূজার সময়ও না, অন্য সময়ও না।
ইমাম সারাখসী রহিমাহুল্লাহ (৪৯০ হি.) বলেন,
ولا بأس بطعام المجوس، وأهل الشرك ما خلا الذبائح، فإن النبي – صلى الله عليه وسلم – كان لا يأكل ذبائح المشركين، وكان يأكل ما سوى ذلك من طعامهم، فإنه كان يجيب دعوة بعضهم تأليفا لهم على الإسلام.
… ولا بأس بالأكل في أواني المجوس، ولكن غسلها أحب إلي، وأنظف. … ولا بأس بالجبن، وإن كان من صنعة المجوس؛ لما روي أن غلاما لسلمان – رضي الله عنه – أتاه يوم القادسية بسلة فيها جبن، وخبز، وسكين، فجعل يقطع من ذلك الجبن لأصحابه، فيأكلونه، ويخبرهم كيف يصنع الجبن؛ ولأن الجبن بمنزلة اللبن.
ولا بأس بما يجلبه المجوس من اللبن. إنما لا يحل ما يشترط فيه الذكاة إذا كان المباشر له مجوسيا أو مشركا، والذكاة ليست بشرط لتناول اللبن والجبن، فهو نظير سائر الأطعمة والأشربة بخلاف الذبائح. – المبسوط 24/33، ط. دار الكتب العلمية
“যবাইকৃত জন্তু ছাড়া অগ্নিপূজকদের এবং মুশরিকদের অন্য সকল খাবার খাওয়াতে নাজায়েযের কিছু নেই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের যবাইকৃত জন্তু খেতেন না, অন্যান্য খাবার খেতেন। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য তিনি তাদের কারও কারও দাওয়াত কবুল করতেন।
… খাবারের জন্য অগ্নিপূজকদের পাত্র ব্যবহার করাতেও নাজায়েযের কিছু নেই। তবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
… পনির খাওয়াতেও নাজায়েযের কিছু নেই; যদিও তা অগ্নিপূজকদের তৈরিকৃত হয়। বর্ণিত আছে যে, সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর এক গোলাম কাদিসিয়ার যুদ্ধের দিন তাঁর কাছে একটি ঝুড়ি নিয়ে আসে, যাতে কিছু পনির, কিছু রুটি এবং সাথে একটি ছুরি ছিলো। তিনি পনির কেটে সবাইকে দিতে লাগলেন, তারা খেতে থাকলেন, আর তিনি তাঁদেরকে বলতে থাকেন, পনির কীভাবে বানানো হয়। তাছাড়া (পনির খাওয়া বৈধ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো) তা দুধের মতোই।
অগ্নিপূজকদের আনীত দুধ খাওয়াতেও নাজায়েযের কিছু নেই। যেটা (খাওয়া বৈধ হওয়ার জন্য) যবাই করা শর্ত, সরাসরি যদি অগ্নিপূজক বা মুশরিক তা যবাই করে, তাহলে তখন তা খাওয়া হালাল নয়। দুধ-পনির বৈধ হওয়ার জন্য যবাই শর্ত নয়। তাই এগুলো অন্যান্য খাবার-পানীয়ের মতোই। কিন্তু যবাইকৃত জন্তু ব্যতিক্রম।” –মাবসূত: ২৪/৩৩
ফাতাওয়া রশীদিয়াতে এসেছে (২/৩০৯),
ہندوؤں کا ہديہ قبول کرنا
سوال: ہندو تہوار ہولی ، يا ديوالی ميں اپنے استاذ يا حاکم يا نوکر کو کھيليں يا پوری يا اور کچھ کھا نا بطور تحفہ بھيجتے ہيں ،ان چيزوں کا لينا اورکھا نا استاذ و حاکم نوکر مسلمان کو درست ہے يا نہيں؟
(1096) جواب: درست ہے۔
فتاوی رشيديہ، کتاب جواز وحرمت کےمسائل 2/309، ط۔مکتبہ فقیہ الامت ديوبند
“হিন্দুদের হাদিয়া গ্রহণ”
প্রশ্ন:
হিন্দুরা হোলি বা দেওয়ালি উৎসবের দিন তাদের (মুসলমান) উস্তাদ, হাকেম এবং কর্মচারীদের কাছে খই, লূচি কিংবা অন্য কোনও খাবার বস্তু হাদিয়াস্বরূপ পাঠায়। এসব জিনিস নেওয়া এবং খাওয়া মুসলমান উস্তাদ, হাকেম ও কর্মচারীদের জন্য দুরস্ত কি না?
উত্তর: দুরস্ত হবে।” -ফাতাওয়া রশিদিয়া ২/৩০৯
ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দে এসেছে,
سوال : (67) جو شخص ہولی ديوالی وغيرہ تہوار ہندوؤں کا پکوان وغيرہ کھاوے اور مرغ وغيرہ بکرہ مينڈھا کہ جس کے بارے ميں قرآن شريف ميں ( ما اهل به لغير الله )ہے اس کا کھاوے ( تو اس کا کھا نا جائز ہے يا نہيں؟) (702/1335)
الجواب: کفار اگراپنے تہوار ديوالی وغيرہ ميں مسلمانوں کو کچھ ہديہ مٹھائی وغيرہ کا حسب رواج ديويں مسلمانوں کو اس کا کھانا درست ہے، يہ امر لائق اعتراض کے نہيں ہے، اور جو جانور بتوں پر چڑھا يا جاوے يا بتوں کے نام پر چھوڑا جاوے وہ (ما اهل به لغير الله )ہے اس کا کھانا مسلمانوں کو درست نہيں ہے۔
فتاوی دار العلوم ديوبند، کتاب الحظر والاباحہ16/72، ناشر۔ مکتبہ دار العلوم ديوبند
প্রশ্ন: হিন্দুদের হোলি, দেওয়ালি বা অন্য কোনও উৎসবের রান্না করা খাবার বা মিঠাই ইত্যাদি যে মুসলমান খায় এবং (দেবতাদের নামে উৎসর্গকৃত) মোরগ, বকরি-ভেড়া বা অন্য কোনও প্রাণীর গোশত খায়, যেগুলোকে কুরআনে কারীমে ما اهل به لغير الله তথা গায়রুল্লাহর জন্য যবাইকৃত বলা হয়েছে; এগুলো খাওয়া কি জায়েয?
উত্তর: কাফেররা যদি স্বাভাবিক প্রচলন অনুযায়ী তাদের হোলি, দেওয়ালি বা অন্য কোনও উৎসবের দিনে মুসলমানদেরকে মিঠাই ইত্যাদি হাদিয়া দেয়, তাহলে মুসলমানদের জন্য এগুলো খাওয়া জায়েয। এ বিষয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু যে জন্তু মূর্তির নামে উৎসর্গ করা হয় বা মূর্তির নামে আযাদ ছেড়ে দেয়া হয়, সেটা ما اهل به لغير الله তথা গায়রুল্লাহর নামে যবাইকৃতের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের জন্য তা খাওয়া জায়েয নয়। -ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ (১৬/৭২)
আরও দেখুন, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ২৭/৬২
এ হচ্ছে পূজা উপলক্ষে প্রদানকৃত হাদিয়া তোহফার বিধান। আর আপনাদের প্রশ্নোক্ত সুরতে যে ভালো খাবার দেওয়া হয়, তা মূলত স্বতন্ত্র কোনও হাদিয়াও নয়; বরং আপনাদের নামে বরাদ্দ খাবারই আপনাদের দেওয়া হচ্ছে। তাই তা খেতে কোনও সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, পূজা উপলক্ষে মুশরিকদের তরফ থেকে কোনও হালাল খাবার প্রদান করলে তা নাপাক বা হারাম নয় ঠিক, কিন্তু পূজা বা বিধর্মীদের অন্য কোনও ধর্মীয় উৎসবে শরীক হওয়া হারাম। এমনিভাবে এসব উপলক্ষে কোনও বিধর্মী বা মুসলিমকে হাদিয়া প্রদান করাও মুসলিমের জন্য হারাম, বরং ক্ষেত্র বিশেষে তা কুফর পর্যন্ত গড়াতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। দেখুন, তাবয়ীনুল হাকায়িক: ৬/২২৮, রদ্দুল মুহতার: ৬/৭৫৪-৭৫৫
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৬-০১-১৪৪৫ হি.
০৪-০৮-২০২৩ ঈ.