হালাল-হারাম:ফাতওয়া  নং  ৫২২

লটারির হুকুম কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন: শরীয়তের দৃষ্টিতে লটারির হুকুম কী? কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

-আবদুর রহমান

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد:

প্রচলিত লটারি এমন এক খেলা, যাতে অংশগ্রহণকারী লাভ কিংবা গচ্ছা দেয়ার ঝুঁকিতে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে খেলায় প্রবেশ করে। পুরস্কার পেলে বিপুল অর্থ পায়, অন্যথায় সব গচ্ছা যায়। এটি জুয়ার একটি প্রকার। জুয়া ইসলামে নাজায়েয ও হারাম।

জাহেলি আরবদের একটি প্রচলন ছিল, তারা সম্পদশালী কয়েকজন মিলে উট ক্রয় করে, জবাইয়ের পর গোশত দশ ভাগ করতো। এরপর দশটি তীর নিয়ে এর সাতটির কোনোটায় এক অংশ, কোনোটায় দুই অংশ এভাবে পাঁচ অংশ পর্যন্ত লিখে দিতো। আর বাকি তিনটিতে কোনো অংশ লিখতো না। তারপর তীরগুলোকে একটি চামড়ার পাত্রে রেখে বিশ্বস্ত লোকের হাতে তুলে দিতো। সে লোক একজনের নাম নিয়ে একটি তীর উঠাতো। ঐ তীরে যত অংশ লিখা থাকতো, যার নামে উঠানো হত, সে তা পেয়ে যেতো। যার নামে উঠানো তীরে কোনো অংশ লিখা থাকতো না, সে কিছুই পেতো না। এভাবে কারো লাভ হতো, কারো গচ্ছা যেতো। এ ধরনের জুয়ার রীতি আরবে প্রচলিত ছিল। -তাফসীরে বাগাবী থেকে সংক্ষেপিত, দেখুন: বাগাবী: ১/২৮০

 

পবিত্র কুরআন একে শয়তানের কর্ম বলে অভিহিত করেছে।

ইরশাদ হয়েছে,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ. –سورة المائدة: 90

“হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা এসব থেকে দূরে থাক, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। -সূরা মায়েদা ০৫: ৯০, ৯১

অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا. –سورة البقرة: 219

“লোকে আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, এ দুটোর মধ্যে মহা পাপও রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও রয়েছে। আর এ দুটোর পাপ তার উপকার অপেক্ষা গুরুতর।” -সূরা বাকারা ০২: ২১৯

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ইরশাদ করেছেন,

إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمِ الْخَمْرَ، وَالْمَيْسِرَ، وَالْكُوبَةَ .-مسند أحمد: 2625 ط. الرسالة. وقال الإمام الذهبي رحمه الله تعالى: إِسناده مقارب. اهــــ -المهذب في اختصار السنن الكبير: 8/4234 ط. دار الوطن للنشر.

“আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর মদ, জুয়া, তবলাকে হারাম করেছেন।” –মুসনাদে আহমাদ: ২৬২৫

ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৭০ হিজরী) বলেন,

ولا خلاف بين أهل العلم في تحريم القمار وأن المخاطرة من القمار. اهــــ. -أحكام القرآن للجصاص ط العلمية (1/ 398)

“আলেমদের মাঝে কোনো দ্বিমত নেই যে, জুয়া হারাম এবং যে কোনো (পাওয়া-না পাওয়ার) ঝুঁকি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।” -আহকামুল কুরআন-জাসসাস: ১/৩৯৮

 

তবে লটারির আরেকটি প্রকার রয়েছে, যা কোনো বৈধ বণ্টনের কোনো ভাগ কে নিবে, তা নির্ধারিত করার জন্য করা হয়। যেমন দুইজন ওয়ারিসের মাঝে একটি জমি বণ্টন হলো সমান হারে দুই ভাগে। এখন কে কোন ভাগ নেবেন, এটা নির্ধারিত করার জন্য লাটারি করা হলো।

অনুরূপ যে ক্ষেত্রে কারো হক নেই, তাদের কিছু দেয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত করা। যেমন কেউ দশজনকে কিছু হাদিয়া দিবে, তাই কোন দশজনকে দিবে তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হলো। এ ধরনের লটারি জায়েয ও বৈধ। -সহীহ বুখারী: ২৫৯৩; আল-মুহিতুল বুরহানী: ৭/৩৫৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক: ৭/৪৬৬; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/৩০৫; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৪০৩; রদ্দুল মুহতার: ৬/৪০৩; মওসুআ ফিকহিয়া কুয়াইতিয়া: ৪/৮১; ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৪/৫০৪

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৭-০৫-১৪৪৬ হি.

৩০-১১-২০২৪ ঈ.

আরো পড়ুন লিংক:

উপহার হিসেবে প্রাপ্ত হারাম সম্পদের বিধান

Related Articles

Back to top button