জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৫২১

জিহাদের জন্য অর্থ সঞ্চয় করব? না, হজের জন্য?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেক সচেতন মুসলিম গাযওয়াতুল হিন্দের আভাস পাচ্ছে। এমতাবস্থায় যারা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির, তারা হজের জন্য টাকা জমা করবে? না, জিহাদের জন্য? আমার পরিচিত এক ভাই হজের জন্য টাকা জমাতে বলেন, কিন্তু আরেক ভাই বলেন, জিহাদের জন্য টাকা জমাতে। শরীয়তের আলোকে কার কথা সঠিক? আমরা কোনটা করবো?

-আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ

উত্তর:

بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد!

হজের খরচ বহন করার সামর্থ্য যার নাই, তার উপর হজ ফরয নয় এবং হজের জন্য অর্থ জমা করাও তার দায়িত্ব নয়। এ অবস্থায় তার কর্তব্য, যেসকল কাজে অর্থ ব্যয় করা ফরয বা ওয়াজিব, সেগুলোতে অর্থ ব্যয় করা। ফরয ওয়াজিব দায়িত্ব পূর্ণ আদায় করার পর যদি সম্ভব হয় তাহলে নফল সাদাকা করা কিংবা হজ ওমরার মতো যেকোনো নফল ইবাদতের জন্য অর্থ জমা করতে কোনো সমস্যা নেই।

জিহাদ একটি ফরয দায়িত্ব। সামর্থ্যভেদে স্বশরীরে এবং অর্থ দিয়ে জিহাদে শরীক হওয়া মুসলিমদের ফরয দায়িত্ব। মুসলিম ভূমি কাফেরদের দখলে না থাকলে এবং মুসলিমরা কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত না হলে এ দায়িত্বটি ফরযে কেফায়া। পক্ষান্তরে মুসলিমদের ভূমি কাফেরদের দখলে থাকলে কিংবা মুসলিমরা কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হলে দায়িত্বটি ফরযে আইন। প্রয়োজন এবং সুযোগ-সক্ষমতার মাত্রানুযায়ী প্রতিটি মুসলিমের উপর এ দায়িত্বটি বর্তিায়।

ফরযে আইন জিহাদ সকল আমল অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَوُونَ عِنْدَ اللَّهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ (التوبة: 19)

“তোমরা কি হাজিদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারাম আবাদ করাকে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার সমতূল্য মনে করো? তারা তো আল্লাহর তাআলার নিকট সমান নয়। আল্লাহ তাআলা জালেমদের হেদায়াত দান করেন না। যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জানমাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহ তাআলার নিকট উচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং তারাই সফলকাম।” -সূরা তাওবা ০৯: ১৯-২০

আয়াতের তাফসীরে আল্লামা তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন,

“(উপর্যুক্ত) আয়াতে মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে, সমস্ত নেক কাজ সমমর্যাদার হয় না। … নিশ্চয়ই হাজিদেরকে পানি পান করানো একটি মহৎ কাজ, কিন্তু মর্যাদা হিসেবে তা নফল বৈ নয়। অনুরূপ মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধানও অবস্থাভেদে ফরযে কিফায়া কিংবা একটি নফল ইবাদত। পক্ষান্তরে ঈমান তো মানুষের মুক্তির জন্য বুনিয়াদী শর্ত। আর জিহাদ কখনো ফরযে আইন এবং কখনোও ফরযে কিফায়া। প্রথমোক্ত কাজ দুটির তুলনায় এ দুটোর মর্যাদা অনেক উপরে।” -তাওযীহুল কুরআন: ১/৫২৮

ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৬৫৬ হি.) বলেন,

وقد حصل من مجموع هذه الأحاديث: أن الجهاد أفضل من جميع العبادات العملية، ولا شك في هذا عند تعيينه على كل مكلف يقدر عليه، كما كان في أوّل الإسلام، وكما قد تعيَّن في هذه الأزمان؛ إذ قد استولى على المسلمين أهل الكفر والطغيان، فلا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم. (المفهم لما أشكل من تلخيص كتاب مسلم: 3/712 ط. دار ابن كثير: 1417 هـ )

“এই সকল হাদীস থেকে বুঝা যায়, জিহাদ সকল আমলী ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সুরতে জিহাদই সর্বোত্তম আমল। যেমন ইসলামের সূচনালগ্নে জিহাদ ফরযে আইন ছিল এবং বর্তমান যমানায়ও জিহাদ ফরযে আইন হয়ে গেছে, যেহেতু মুসলিমদের উপর কাফের ও সীমালঙ্ঘনকারীরা কর্তৃত্ব বিস্তার করেছে…।” –আল-মুফহিম: ৩/৭১২

একথা স্পষ্ট যে, বর্তমান বিশ্বে সর্বত্রই মুসলিমরা আক্রান্ত এবং মুসলিমদের প্রায় সকল ভূমি কাফেরদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ দখলে। এ পরিস্থিতিতে জান ও মাল দিয়ে জিহাদে শরীক হওয়া ফরযে আইন। এ ফরয আদায়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ তাআলা করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। কিছু ভূমিতে সরাসরি জিহাদের কাজটি চলমান রয়েছে আর কিছু ভূমিতে দাওয়াত ও প্রস্তুতির মারহালা চলছে। একজন মুমিন হিসেবে আমার দায়িত্ব হকপন্থি জিহাদি কাফেলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজন অনুপাতে শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য ব্যয় করা। এই বিবেচনায় ভবিষ্যতের জন্য জমা করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এখনি জিহাদ ও ইদাদের কাজে অর্থ খরচ করা। হাঁ নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র না পেলে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জিহাদের জন্য অর্থ জমা করাও কাম্য, যাতে নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া মাত্র অর্থ ব্যয় করা যায়।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২০-০৫-১৪৪৬ হি.

২৩-১১-২০২৪ ঈ.

 

আরো পড়ুন লিংক:

বিয়ে, না জিহাদ কোনটি অগ্রাধিকারযোগ্য?

Related Articles

Back to top button