ফাই-গনিমত:ফাতওয়া  নং  ৩৭৪

দাস-দাসীর বিধান কি রহিত হয়ে গেছে?

দাস-দাসীর বিধান কি রহিত হয়ে গেছে?

দাস-দাসীর বিধান কি রহিত হয়ে গেছে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

দাস-দাসীর বিধান কি রহিত হয়ে গেছে? না, এখনও আছে? বর্তমানে যুদ্ধবন্দী কাফির নারী-পুরুষকে কি দাস-দাসী বানানো যাবে? দলীল প্রমাণসহ বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

-আবদুল মুকতাদির

উত্তরঃ 

দাস-দাসীর বিধান শরীয়তের ‘মানসূখ’ কিংবা রহিত বিধান নয়; বরং ‘মুহকাম’ ও স্থায়ী বিধানের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল পর্যন্ত এই বিধান রহিত হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় শরীয়তের যেসব বিধান রহিত হয়নি, তা রহিত করার এখতিয়ার কারও নেই। কারণ শরীয়তের কোনো বিধান একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে নবীদের মাধ্যমেই রহিত হতে পারে। বলা বাহুল্য, নবুওয়াত ও ওহীর ধারা কিয়ামত পর্যন্তের জন্য বন্ধ। -সহীহ বুখারী: ২৬৪১, ফাতহুল বারী: ৫/২৫২, আলফুসুল ফিল উসুল: ২/২৯০, উসুলুস সারাখসী: ২/৭৯

জাতিসঙ্ঘের অধীনে পশ্চিমাদের এবং তথাকথিত মুসলিম শাসকদের মধ্যে দাসপ্রথা বিলুপ্তির যে যৌথ চুক্তি হয়েছে, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একে তো শরীয়তের কোনো বিধানই রহিত করার এখতিয়ার কোনো মানুষের নেই, চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম। দ্বিতীয়ত মুসলিমরা যদি কাফেরদের সঙ্গে শরীয়াহ পরিপন্থী কোনো চুক্তি করে, সেই চুক্তিও শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। -সহীহ বুখারী: ২৭৩৫, শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ১৭৮৮

হ্যাঁ, মুসলিমদের জন্য যেটুকু অবকাশ আছে, তা হল দাস-দাসী গ্রহণ করা যেহেতু শরীয়তে ওয়াজিব নয়; বরং মুবাহ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, তাই তারা বিশেষ কোনো কারণ থাকলে তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে এবং মুসলিমদের কোনো কল্যাণ থাকলে কাফেরদের সঙ্গেও সাময়িক সময়ের জন্য দাস-দাসী গ্রহণ না করার চুক্তি করতে পারে।-শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ১/১০২, বাবুল আমান

সুতরাং এখনও যদি মুসলিমরা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যুদ্ধবন্দী কাফেরদের দাস-দাসী বানাতে চায়, মৌলিকভাবে শরীয়তে তার অবকাশ আছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মুসলিমদের জন্য অধিক ক্ষতিকর বিধায় উলামায়ে কেরাম তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। কারণ বর্তমানে সমগ্র বিশ্বেই যেহেতু মুসলিমরা দুর্বল ও পরাজিত, পক্ষান্তরে কাফেররা শক্তিশালী ও বিজয়ী, এজন্য এই পরিস্থিতিতে মুসলিমরা যদি কাফেরদের দাস-দাসী বানাতে শুরু করে, কাফেররাও মুসলিমদের দাস-দাসী বানাতে শুরু করবে এবং এতে মুসলিমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

‘যুদ্ধ-ময়দানের বাস্তব অবস্থা না জেনে শুধু কিতাবি ইলমের উপর ভিত্তি করে যারা ফতোয়া দিবেন, তাদের ফতোয়া যে ভুল হবে’- এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ বলেন,

هذا كمن يأتي للشيخ عبد العزيز يقول له: شيخ عبد العزيز, هل يجوز سبي النساء الشيوعيات -اتخاذهن جواري- طبعا الجواب النظري .. نعم يجوز اتخاذهن جواري, لو جاء وسألني لقلت: يحرم اتخاذ هذه النساء جواري .. لماذا?! لأني أعرف مالا يعرفه الشيخ عبد العزيز, أعرف لو اتخذوا واحدة من نساء جلال آباد من نساء الشيوعيين اتخذها واحد عربي جارية, لذبح العرب جميعا .. لماذا?! لأن المرأة زوجة الشيوعي من القبيلة الفلانية التي معظم أبناؤها مجاهدين, فكيف يراد من ابنتهم, قد سرقها عربي واتخذها جارية?!! الحكم النظري يجوز هو مجاهد, لكن الشيخ ما يعرف طبيعتهم .. طبيعة هذه الأمور, هذه قليلة والأعراض أيضا غالية جدا , والمصلحة هنا تقدم وترجح الحرمان والمنع للمصلحة الشرعية.

ثم لو يستفتون شباب العرب المتحمسين الذين وصلوا بيشاور ودرسوا الفقه, وفلان في الحديث, هل يجوز اتخاذ النساء الروسيات اللواتي في المعركة يقاتلهم المسلمين وأخذناهن .. هل يمكن اتخاذهن جواري?! طبعا الجواب: نعم عند الشيخ .. أنا أقول له: لا يجوز لك, كذلك يحرم عليك .. لماذا?! لأنه لو أخذنا الروسية يأخذون مائة مسلمة, وينتهكون أعراضهن .. نفتي بالجواز أم بالحرمة عند ذلك?! إذا كان اتخاذ واحدة جارية يؤدي إلى انتهاك أعراض مائة مسلمة, نفتي بالجواز أم بالحرمة?! إذن, الذي يفتي يجب أن يفهم طبيعة الوضع, والأرض التي أنت فيها عن أي شيء تفتي?! لا بد أن تفهم القضية تماما على أرضها وعلى واقعها, ليس نظريا.-في الجهاد فقه واجتهاد- للشيخ عبد الله عزام (ص: 185)

“এর আরেকটি উদাহরণ হলো, যেমন কেউ শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায এর কাছে এসে যদি প্রশ্ন করে, ‘শায়খ! কমিউনিস্ট নারীদের বন্দী করে বাঁদি বানানো কি বৈধ? তাহলে শুধু ইলমি উত্তর স্বাভাবিক এটাই হবে যে, ‘হ্যাঁ, বাঁদি বানানো বৈধ’। পক্ষান্তরে এই প্রশ্নটি আমাকে করলে আমি উত্তর দিবো, ‘এসব নারীকে বাঁদি বানানো হারাম’। কেন? কারণ, এ ব্যাপারে আমি যা জানি, শায়খ আব্দুল আযীযের তা জানা নেই। আমি জানি, মুজাহিদরা যদি জালালাবাদের একটা কমিউনিস্ট মহিলাকে বাঁদি বানায়, কোনো একজন আরব যদি কোনো একটা মহিলাকে বাঁদি বানায়, তাহলে নামান্তরে সে সব আরব মুজাহিদকে জবাই করে দিলো। কেন? কারণ, এই মহিলাটি (হয়তো) অমুক গোত্রের কোনো কমিউনিস্টের স্ত্রী, যে গোত্রের বেশির ভাগ লোক মুজাহিদ। তাদেরই বংশের মেয়েকে কোনো আরব ধরে এনে বাঁদি বানাবে- এটা কীভাবে তারা বরদাশত করবে?! কিতাবি ইলমের কথা তো এটাই যে, জায়েয। কারণ, সে একজন মুজাহিদ (আর শত্রুপক্ষের কাফের মহিলাকে ধরে এনেছে)। কিন্তু শায়খ এখানকার লোকদের প্রকৃতি জানেন না। … এখানে শরয়ী মাসলাহাতের বিবেচনা এটাই অগ্রাধিকার দিবে যে, তা হারাম, নিষেধ।

এমনিভাবে মুজাহিদরা যদি পেশোয়ারে আগত আবেগ-উদ্বেলিত আরব যুবকদের প্রশ্ন করে– যাদের কেউ কেউ ফিকহ, কেউ কেউ হাদীস পড়ে এসেছে, ‘যেসব রুশ নারী ময়দানে যুদ্ধে এসেছে, মুসলিমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, আমরা যখন তাদের বন্দী করি, তাদেরকে কি বাঁদি বানানো যাবে’? – স্বাভাবিকভাবে এটার উত্তরও এমনই হবে যে, ‘হ্যাঁ, জায়েয’। এই শায়খের মতে তা জায়েয! কিন্তু আমি তাকে বলবো, ‘তোমার জন্য তা জায়েয নয়। (আফগান নারীদের মতো) এটাও তোমার জন্য হারাম’। কেন? কারণ, আমরা যদি একজন রুশ নারীকে বাঁদি বানাই, রুশরা শতজন মুসলিম নারী ধরে নিবে। ইজ্জত হরণ করবে। এবার বলুন, তাহলে জায়েযের ফতোয়া দিবো? না, হারামের? একটা (রুশ) নারীকে বাঁদি বানালে যদি শত মুসলিম নারীর ইজ্জত হারাতে হয়, তাহলে জায়েযের ফতোয়া দিবো, না হারামের? এ কারণে বলি, ফতোয়া যে দিবে, তাকে বাস্তব ময়দানের হাল বুঝতে হবে। তুমি যে ভূমিতে আছো, তার সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে হবে। বুঝতে হবে, তুমি কি ব্যাপারে ফতোয়া দিতে যাচ্ছো। কোন ভূমির প্রসঙ্গ, কোন পরিস্থিতির প্রসঙ্গ, সব কিছুর আলোকে তোমাকে বুঝতে হবে। শুধু কিতাবি বুঝে হবে না।” -ফিলজিহাদ ফিকহুন ওয়া ইজতিহাদ, আব্দুল্লাহ আযযাম, পৃষ্ঠা: ১৮৫ (হাকিবা শামেলা)

বলা বাহুল্য, শরীয়তে জায়েয ও মুবাহ যে কাজগুলো; বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে মুসলিমদের উপকার অপেক্ষা অধিক ক্ষতির কারণ হওয়ার ফলে, ফুকাহায়ে কেরাম সেগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তা মান্য করা মুসলিমদের জন্য জরুরি। কারণ জায়েয বিষয়টি তখন নাজায়েয হয়ে যায়। হ্যাঁ, উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে আবার তার মূল বিধান ফিরে আসে।-সূরা আনআম: ১০৮, তাফসীরে কাশশাফ: ২/১৫৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৩১৫, তাফসীরে কুরতুবী: ৭/৬১, ইলামুল মুআক্কিয়িন: ৩/১১০; সহীহ বুখারী: ১৫০৬, সহীহ মুসলিম: ৩৩১৩, শারহু মুসলিম লিননববী: ৯/৮৯

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২০-১০-১৪৪৪ হি.

১১-০৫-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ বিয়ে করলে জিহাদ থেকে সরে পড়ার আশঙ্কা হলে করণীয় কী?

Back to top button