বাগি- খাওয়ারিজ, মুরতাদ:ফাতওয়া  নং  ৫৮০

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তিকারীর ব্যাপারে করণীয়

প্রশ্ন: বর্তমানে দেশে নাস্তিকবাদ বিস্তার লাভ করেছে। যদি কখনো আমাদের সামনে এমন কোনো ব্যক্তি পড়ে, যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল অথবা ইসলামকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে, এমতাবস্থায় যে কেউ কি তাকে হত্যা করতে পারবে? কিংবা তখন আমাদের করণীয় কী হবে?

-আবু জানদাল

উত্তর: কোনো মুসলিম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দ্বীনের কোনো বিষয়ে বাজে মন্তব্য করলে তাকে হত্যা করার প্রশ্ন তখনই আসে, যখন সে তার মন্তব্যের কারণে মুরতাদ হয়ে যায়। কিন্তু কোন মন্তব্যের কারণে একজন মানুষ মুরতাদ হয়, আর কোন মন্তব্যে মুরতাদ হয় না, তা একটি জটিল বিষয়। এই সিদ্ধান্ত শুধু একজন বিজ্ঞ আলেমই নিতে পারেন। সাধারণ মানুষের দায়িত্ব এবিষয়ে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া।
গত শতাব্দীর বরেণ্য আলেমদের তত্ত্বাবধানে রচিত ফিকহে ইসলামীর অনবদ্য গ্রন্থ ‘আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যায়’ বলা হয়েছে,

ويجب قبل تكفير أي مسلم النظر والتفحص فيما صدر منه من قول أو فعل ، فليس كل قول أو فعل فاسد يعتبر مكفرا .
ويجب كذلك على الناس اجتناب هذا الأمر والفرار منه وتركه لعلمائهم لخطره العظيم ، فعن ابن عمر رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا قال الرجل لأخيه يا كافر فقد باء به أحدهما ، فإن كان كما قال ، وإلا رجعت عليه.
وعن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : من دعا رجلا بالكفر ، أو قال : عدو الله ، وليس كذلك إلا حار عليه. -الموسوعة الفقهية الكويتية (13/ 228 ط. وزارة الأوقاف)

“কোনো মুসলমানকে তাকফীর করার আগে তার কথাবার্তা বা কাজের দিকে গভীরভাবে নজর দেওয়া উচিত। সব খারাপ কথা বা কাজ কুফর হিসেবে গণ্য হয় না।
এছাড়াও, বিষয়টি গুরুতর হওয়ায় সাধারণ মানুষের উচিত এ থেকে বেঁচে থাকা এবং আলেমদের নিকট তা ন্যস্ত করা। ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ তার ভাইকে কাফের বলে সম্বোধন করলে উভয়ের একজন তা নিয়ে ফিরবে। যাকে কাফের বলা হয়েছে সে কাফের হলে তো হলোই, নতুবা কথাটি বক্তার উপরই ফিরে আসবে। [সহীহ বুখারী: ৬১০৪; সহীহ মুসলিম: ৬০]

আবু যর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “কোনো ব্যক্তি কাউকে কাফের বলে সম্বোধন করলে বা আল্লাহর দুশমন বলে ডাকলে, সম্বোধিত ব্যক্তি যদি অনুরূপ না হয়, তাহলে তা বক্তার প্রতি ফিরে আসবে।” [সহীহ মুসলিম: ৬১] –আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ১৩/২২৮ (ওযারাতুল আওকাফ, কুয়েত)
দ্বিতীয়ত, শরীয়তের আলোকে ইরতিদাদ প্রমাণিত হলে তাকে হত্যা করা স্বাভাবিক অবস্থার বিধান। তবে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান দুর্বলতার সময়ে একজন শত্রু কিংবা মুরতাদকে খতম করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটার লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করা। পরিণতির বিচারে এর দ্বারা জিহাদ ও মুসলিমদের উপকার বেশি হবে, না ক্ষতি বেশি হবে? বিশেষত বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মতো ভূমিতে তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি বুঝার জন্য অবশ্যই বিজ্ঞ কোনো মুজাহিদ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৭-০১-১৪৪৭ হি.
০৩-০৭-২০২৫ ঈ.

Back to top button