নিকাহ-তালাকফাতওয়া  নং  ৫১৩

ম্যাসেজের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার বিধান

প্রশ্ন:

স্বামী তার স্ত্রীকে ম্যাসেজের মাধ্যমে লিখে পাঠাল যে, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। তারপর তার চিন্তা হলো, কাজটি আমি সঠিক করিনি। তখন সে মোবাইলটি হাতে নিয়ে দেখে, তার স্ত্রী ম্যাসেজটি দেখেনি। সে দ্রুত ম্যাসেজটি কেটে ফেলে। এখন জানার বিষয় হলো, স্বামীর ওই তালাক কি পতিত হবে?

-আসাদুল্লাহ গালিব

উত্তর:

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেসেজে ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম’ লিখেছে, তাই স্ত্রী তা না দেখলেও পূর্ণ কথা লেখার দ্বারাই স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়ে গেছে। কারণ তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে শুধু তালাকের কথা লিখলেও তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তা কার্যকর হওয়ার জন্য স্ত্রীর মেসেজ দেখা কিংবা তার কাছে বার্তা পৌঁছা জরুরি নয়। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ২/৯১ (আল মাকতাবুল আশরাফিয়্যাহ); ফাতাওয়া কাজীখান: ৭/২৮৭ (আল- মাকতাবাতুল আশরাফিয়্যাহ, দেওবন্দ); আল-হাভীল কুদসী: ১/৪১১ (দারুন নাওয়াদির); আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ১/ ৩৭৮ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৩/২৪৬ (দারুল ফিকর); আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩৪/১৭৪ (ওযারাতুল আওকাফ, কুয়েত)

এখন তাকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিতে চাইলে ইদ্দতের ভেতর (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়ার আগে। আর অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য সন্তান প্রসবের আগে) তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করলে কিংবা তার সঙ্গে স্ত্রীসুলভ কোনো আচরণ করলেই তারা স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাবে। কিন্তু ইদ্দতের ভেতর যদি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করা হয় বা স্বামী-স্ত্রীসুলভ কোনো আচরণও না করা হয়, তাহলে তালাকটি বায়েন হয়ে যাবে। -সূরা বাকারা (০২) : ২২৮; কিতাবুল আসল: ৪/৩৯৬ (দারু ইবনি হাযম); শরহু মুখতাসারিত তাহাবী: ৫/১৩৯ (দারুল বাশায়িরিল ইসলামিয়্যাহ): আল মাবসূত: ৬/১৯ (দারুল মারিফাহ); বাদায়েউস সানায়ে: ৩/১৮০ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); আল-হাভীল কুদসী: ১/৪৩৭ (দারুন নাওয়াদির); ফাতহুল কাদীর: ৪/১৫৮ (দারুল ফিকর); লিসানুল হুক্কাম, পৃ: ৩২৮ (আল-বাবুল হালাবী); আল-হিন্দিয়া: ১/৪৭০ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৩/৩৯৮ (দারুল ফিকর); আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৯/৫৩ (ওযারাতুল আওকাফ, কুয়েত)

তালাকটি বায়েনে রূপান্তরিত হওয়ার পর তারা একত্রে সংসার করতে চাইলে নতুন মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের সামনে পুনরায় বিবাহ করতে হবে। উক্ত উভয় ক্ষেত্রেই তারা পুনরায় একত্রিত হলে স্বামী শুধু দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। পরবর্তীতে কখনো দুই তালাক হলেই স্ত্রী সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিবাহ নবায়নেরও সুযোগ থাকবে না। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। -সূরা বাকারা (০২) : ২২৯, ২৩০; মাবসূতে সারাখসী: ৬/৮ (দারুল মারিফাহ); রদ্দুল মুহতার: ৩/৪০৯ (দারুল ফিকর); ফাতহুল কাদীর: ৪/১৭৬ (দারুল ফিকর); আল-হিন্দিয়া: ১/৪৭২ (দারুল ফিকর); আত-তাতারখানিয়া: ৫/১৪৮ (যাকারিয়্যা বুক ডিপো)

প্রকাশ থাকে যে, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা একেবারে জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই বিনা কারণে অথবা রাগের সময় তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। হাদীসে এসেছে,

عن محارب بن دثار عن ابن عمر، عن النبي – صلى الله عليه وسلم – قال: “أبغض الحلال إلى الله عز وجل الطلاق.” -رواه أبو داود (3/505 رقم: 2178 ط. دار الرسالة العالمية، باب كراهية الطلاق) والحاكم (2/214 رقم: 2794 ط. دار الكتب العلمية) وقال: “هذا حديث صحيح الإسناد.” وقال الذهبي في “مختصر المستدرك” – كما في مختصر تلخيص الذهبي لابن الملقن: (2/663 ط. دار العاصمة) – : “على شرط مسلم.”

ويشهد له حديث أبي موسى الأشعري قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تطلقوا النساء إلا من ريبة، فإن الله لا يحب الذواقين ولا الذواقات». –رواه البزار (8/70 رقم: 3064-3066 ط. مكتبة العلوم والحكم) والطبراني في “المعجم الأوسط” (8/ 24 رقم: 7848 ط. دار الحرمين، القاهرة) وقال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (4/ 335) “وأحد أسانيد البزار فيه عمران القطان وثقه أحمد وابن حبان، وضعفه يحيى بن سعيد، وغيره.”

“আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল বিষয় হল তালাক।” -সুনানে আবু দাউদ: ৩/৫০৫ হাদীস: ২১৭৮ (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ)

জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إن إبليس يضع عرشه على الماء، ثم يبعث سراياه، فأدناهم منه منزلة أعظمهم فتنة، يجيء أحدهم فيقول: فعلت كذا وكذا، فيقول: ما صنعت شيئا، قال ثم يجيء أحدهم فيقول: ما تركته حتى فرقت بينه وبين امرأته، قال: فيدنيه منه ويقول: نعم أنت. قال الأعمش: أراه قال: فيلتزمه. -صحيح مسلم (4/ 2167 رقم 2813) قال القاري في «المرقاة» (1/142) : “نعم أنت: أي: نعم الولد، أو العون أنت.”

“ইবলীস পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সে হয়ে থাকে, যে সর্বাধিক ফিতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছুই করোনি। অন্যজন এসে বলে, অমুকের মাঝে ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো পর্যন্ত আমি তাকে ছাড়িনি। তখন শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে তুমি কতই না ভালো। বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে পড়ে, তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।” -সহীহ মুসলিম: ৪/২১৬৭ হাদীস: ২৮১৩

আরও দেখুন: সহীহ ইবনে হিব্বান: ১০/৮২ হাদীস: ৪২৬৫ (আর-রিসালাহ); আল-মাকাসিদুল হাসানাহ, পৃ: ৫০ (দারুল কিতাবিল আরাবী); আহকামুল কুরআন: ৩/৪৭ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); ফাতহুল কাদীর: ৩/৪৬৫ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৩/২২৮ (দারুল ফিকর)

فقط. والله تعالى أعلم بالصواب

 আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৩-০৫-১৪৪৬ হি.

২৬-১১-২০২৪ ঈ.

Related Articles

Back to top button