প্রশ্ন: একটা ক্ষুদ্র সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একটা ছোট পিকআপ কিনতে চাচ্ছি। যারা সুদ নেয় না, কিন্তু ভাড়া বাবদ প্রতিদিনের জন্য একটা চার্জ দাবি করছে আর গাড়ির যাবতীয় খরচ আমার দায়িত্বে থাকবে। এভাবে ঋণ নেয়া উচিত হবে?
-হাসান
উত্তর: আপনি যেভাবে বলেছেন, এভাবে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি ক্রয় করা আবার সমিতিকে সেই গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করা শরীয়ত সম্মত কোনো প্রক্রিয়া নয়। বাস্তবেই যদি সমিতি শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে আপনাকে গাড়ি ক্রয়ের সেবাটি দিতে চায়, তাহলে এর শরীয়ত সম্মত সুন্দর প্রক্রিয়া হচ্ছে, সমিতি নিজে গাড়ি ক্রয় করে আপনার নিকট কিস্তিতে বিক্রি করবে। ব্যবসা না করে সেবা দিতে চাইলে ক্রয়মূল্যে বিক্রি করবে, আর যদি কিছু ব্যবসা করতে চায়, তাহলে ক্রয়মূল্যের সঙ্গে মুনাফা যুক্ত করে বিক্রি করবে। আপনি পুরো মূল্য কিস্তিতে পরিশোধ করবেন।
এই কারবারটি শরীয়ত সম্মত হওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি:
ক. গাড়িটি প্রথমে বিক্রেতার নিকট থেকে সমিতি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্রয় করতে হবে।
খ. ক্রয় সম্পন্ন হবার পর আপনার সঙ্গে বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
গ. ক্রয় করার পর আপনার কাছে বিক্রি করে আপনাকে গাড়িটি বুঝিয়ে দেয়ার আগে যদি গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়, সেটার দায় সমিতিকে বহন করতে হবে।
ঘ. আপনি কত টাকা মূল্যে এবং কতদিনের মেয়াদে কত কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করবেন, তার সবকিছু চুক্তির সময়ই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। পক্ষান্তরে চুক্তির সময় তা চূড়ান্ত না করে ঝুলন্ত রাখলে নাজায়েয হবে। যেমন এভাবে চুক্তি হলো যে, এক বছর মেয়াদে মূল্য পরিশোধ করলে এত টাকা, দেড় বছর মেয়াদে পরিশোধ করলে এত টাকা—এটা জায়েয নয়।
ঙ. চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে কিস্তি পরিশোধ করা আপনার জন্য জরুরি। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চুক্তির ব্যতিক্রম করা নাজায়েয। হাঁ, বাস্তবেই যদি কখনো সামর্থ্য না থাকার কারণে কোনো কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হয়, সে কারণে মূল্য বাড়ানো যাবে না এবং আর্থিক জরিমানা করা যাবে না। -সহীহ বুখারী: ৩/৬৮ হাদীস: ২১৩৬ (দারু তাওকিন নাজাহ), সহীহ মুসলিম: ৩/১১৬১ হাদীস: ১৫২৫ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); জামে তিরমিযী: ৩/৫২৫ হাদীস: ১২৩১ (মাতবাআতুল হালাবী); মুসনাদে আহমদ: ৬/৩২৪ হাদীস: ৩৭৮৩ (আর-রিসালাহ); আল-মুগনী: ৪/১৭৬ (মাকতাবাতুল কাহেরাহ); বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৪২ (দারুল কুতুব); বুহুস ফি কযায়া ফিকহিয়া মুআসারা: ১/১১- ১৫ (দারুল কলম)
আরও দেখুন ফাতওয়া নং ৯০: ব্যাংক থেকে মাল ক্রয় বাবদ টাকা নেওয়ার বৈধ পদ্ধতি কী?
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৭-০১-১৪৪৭ হি.
০৩-০৭-২০২৫ ঈ.