সালাতফাতওয়া  নং  ১৩

মুশতারাকা সময়ে জোহর ও আসর আদায় করার বিধান কী?

মুশতারাকা সময়ে জোহর ও আসর আদায় করার বিধান কী?

মুশতারাকা সময়ে জোহর ও আসর আদায় করার বিধান কী? 

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

শাইখ আসসালামু আলাইকুম,

শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাজহাব অনুসারে আসরের ওয়াক্ত শুরু এখন ৩:৩১টায়। কিন্তু হানাফি মাজহাব অনুসারে এখন ৪:৩৬টায়। মাঝের এই ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট হানাফী অনুযায়ী যোহর অথবা শাফেয়ী, মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী আসর আদায় করলে তো একে অপরের বিপরীত হয়। এখানে কি উভয়েই সঠিক?

প্রশ্নকর্তা

গোলাম রাইহান রাফসান

উত্তর:

ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হল, এখানে উভয়ই সঠিক। বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করে বুঝতে হলে একটু পেছন থেকে বুঝে আসতে হবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শরীয়তের মৌলিক বিষয়গুলো অকাট্য ও সর্বসম্মত। স্বভাবতই যেটা শরীয়তে অকাট্যভাবে প্রমাণিত, তাতে কারো দ্বিমত করার সুযোগ নেই। এজন্য সেগুলোতে ফুকাহায়ে কেরামের পরস্পর মতভেদ হয়ও নি।

মুজতাহিদদের মতভেদ সেখানেই হয়,যেখানে শরীয়তের নির্দেশনা অকাট্য নয়; বরং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিলগুলোতে দুই রকম অবকাশ থাকে। হতে পারে একাধিক দলিলের একটি দলিল থেকে এক রকম বুঝা যায়, আরেকটি থেকে অন্য রকম বুঝা যায়। কিংবা একটি দলিলেরই দুটি অর্থ হওয়ার অবকাশ থাকে। এখানে কোন দিকটি অগ্রগণ্য, প্রত্যেক মুজতাহিদ শরীয়তের নীতিমালার আলোকে গবেষণা করে সেটি নির্ধারিত করার চেষ্টা করেন। স্বভাবতই এখানে তাঁদেরকে অনেকগুলো স্তর পার করতে হয়। যেমন ভাষার দিক থেকে এটার কি অর্থ হতে পারে। তৎকালীন পরিবেশ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এর কি ব্যাখ্যা দাঁড়ায়। এই সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলোর কোনটি বিশুদ্ধ, কোনটি বিশুদ্ধ নয়। বিশুদ্ধগুলো কোনটি কোন স্তরের। সাহাবায়ে কেরাম এখানে কোরআন সুন্নাহর নির্দেশনা কিভাবে বুঝেছেন বা এখানে তাঁদের বাস্তব কর্ম ও প্রয়োগ পদ্ধতি কি ছিল? এরকম আরো অনেক বিষয়। তো এই সবগুলো স্তর পার হতে অনিবার্যভাবেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মেধার সূক্ষ্মতা, দূরদর্শীতা, প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত কম বেশি থাকা, নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য সূত্রে পৌঁছা এবং এ জাতীয় অনেকগুলো যৌক্তিক কারণেই মতভেদ হওয়া অবশ্যম্ভাবী।

খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সাহাবিদের মাঝেও এমন মতভেদ হয়েছে। তাঁদের মতভেদের ছো্ট্ট একটি সহজ উদাহরণ সামনে রাখলে আশা করি বিষয়টি খুব সহজেই অনুধাবন করা যাবে ইনশাআল্লাহ।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে উমর রাযি. হতে বর্ণিত,

قال النبي صلى الله عليه وسلم لنا لما رجع من الأحزاب: لا يصلين أحد العصر إلا في بني قريظة» فأدرك بعضهم العصر في الطريق، فقال بعضهم: لا نصلي حتى نأتيها، وقال بعضهم: بل نصلي، لم يرد منا ذلك، فذكر للنبي صلى الله عليه وسلم، فلم يعنف واحدا منهم. رواه البخاري (946) ومسلم (1770) وهذا لفظ البخاري.

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন খন্দকের যুদ্ধ হতে ফিরলেন (এবং বনু কুরাইযার উপর আক্রমণের ইচ্ছা করলেন) আমাদের ঘোষণা দিলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বনু কুরাইযায় পৌঁছার পূর্বে আসরের সালাত আদায় না করে।’

পথিমধ্যে তাদের অনেকের আসরের সময় হয়ে গেল। তাদের কেউ বলল, বনু কুরাইযায় যাওয়ার আগে আমরা সালাত আদায় করব না। কিছু লোক বলল, আমরা বরং সালাত আদায় করে নিব। কারণ এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য ছিল না (যে, সালাতের সময় শেষ হয়ে গেলেও আমরা সেখানে গিয়েই সালাত আদায় করব)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন দুই দলের আলোচনা করা হল, তিনি কাউকেই ভর্ৎসনা করলেন না।” -সহিহ বুখারী, ৯৪৬

মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় এসেছে,

فَتَخَوَّفَ نَاسٌ فَوْتَ الْوَقْتِ فَصَلُّوا دُونَ بَنِى قُرَيْظَةَ. وَقَالَ آخَرُونَ لاَ نُصَلِّى إِلاَّ حَيْثُ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَإِنْ فَاتَنَا الْوَقْتُ قَالَ فَمَا عَنَّفَ وَاحِدًا مِنَ الْفَرِيقَيْنِ. – رواه البخاري (946) ومسلم (1770) وهذا لفظ مسلم، في رواية البخاري: فقال بعضهم: لا نصلي حتى نأتيها، وقال بعضهم: بل نصلي، لم يرد منا ذلك

 

পথিমধ্যে কিছু লোক সালাতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন। তাদের কেউ বনু কুরাইযায় পৌঁছার আগে সালাত আদায় করে নিলেন। কিছু লোক বললেন, সালাতের সময় শেষ হয়ে গেলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে সালাত আদায় করতে বলেছেন, সেখানে না গিয়ে আমরা সালাত আদায় করব না। -সহিহ মুসলিম, ১৭৭০

দেখুন, এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বললেন, বনু কুরাইযায় পৌঁছার পূর্বে সালাত আদায় করবে না। স্বাভাবিকভাবে সবাই যদি সালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বেই সেখানে পৌঁছে যেতে পারতেন, কোনো ঝামেলা হত না, সবাই সেখানে গিয়েই সালাত আদায় করতেন। কিন্তু যখন পথিমধ্যে দেখা গেল, সেখানে পৌঁছতে সালাতে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে, এখানে দ্বিধায় পড়া খুব স্বাভাবিক এবং সাহাবায়ে কেরাম দ্বিধায় পড়েছেনও। তখন তাঁরা ইজতেহাদ করেছেন। কিছু লোক ইজতেহাদ করে বুঝলেন, এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য ছিল না যে, সালাত কাযা হলেও বনু কুরাইযায় পৌঁছার আগে সালাত আদায় করবে না। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, দ্রুত সালাতের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই সেখানে পৌঁছে যাও এবং সেখানে গিয়ে সালাত আদায় কর। মূলত দ্রুত পৌঁছার জন্যই তিনি এভাবে বলেছেন। তিনি যদি জানতেন, সালাতের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে, তাহলে অবশ্যই তিনি পথিমধ্যে সালাত আদায়ের কথা বলতেন, সালাত কাযা করতে বলতেন না। কারণ সালাত নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ। বাস্তবে যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য এটিই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কথাই সঠিক।

আবার কিছু লোক চিন্তা করেছেন, আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কারভাবে, সেখানে যাওয়ার আগে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। হয়তো আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা সেখানে যেতে যেতে আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে। তিনি সেটা জেনেই আল্লাহর নির্দেশে আমাদেরকে সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করতে বলেছেন। সালাত যদিও নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ, কিন্তু আজকের জন্য এটা বিশেষ হুকুম এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এটাই আমাদের আসরের সালাতের ওয়াক্ত। সুতরাং অবস্থা যাই হোক, আমরা সেখানে গিয়েই সালাত আদায় করব। বাস্তবে যদি এমনই হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে এ উদ্দেশ্যেই তাদের নির্দেশনাটি দিয়েছেন, তাহলে তাদের মতই সঠিক।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যদি কেউ তার অধীনস্তদের এমন নির্দেশ দেন, তাহলে দ্বিতীয় প্রকারের চিন্তাটির অবকাশ থাকবে না। অনিবার্যভাবেই তার একটিমাত্র অবকাশ থাকবে, সেটা হল কাযা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, পথেই সালাত আদায় করে নিতে হবে; কাযা করা যাবে না। কারণ সময়মতো সালাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ। এর বিপরীতে অন্য কারো নির্দেশ মান্য করা যাবে না। আর এখন তার বিপরীত আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন কোনো নির্দেশ আসারও সুযোগ নেই, যেটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে ছিল।

তো সাহাবায়ে কেরামের এই ইখতেলাফ থেকে যে বার্তাটি পাওয়া গেল, তা হল, তাঁরা যে পরস্পর মতভেদ করলেন এবং প্রত্যেক গ্রুপ একটি মত গ্রহণ করলেন, অপরটি বর্জন করলেন, তাঁদের দুটি মতেরই ভিত্তি ছিল, উক্ত হাদীস এবং দু’ দলই উক্ত হাদীসের উপরই আমল করেছেন; যদিও হাদীসটি বুঝার ক্ষেত্রে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে দু’ গ্রুপ দু’রকম বুঝেছেন। এখানে বিষয়টি অকাট্য ছিল না এবং তাঁরাও কেউ নিজেদের মতটিকে অকাট্য মনে করেননি। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের উদ্দেশ্য কি হতে পারে, সবাই চিন্তা ফিকির করে যেটা অগ্রগণ্য ও অধিক সম্ভাবনাময় মনে করেছেন, সেটাই গ্রহণ করেছেন। আবার অপর পক্ষের মতটিকে অকাট্যভাবে ভুল মনে করেননি, যদিও অগ্রগণ্য মনে না করার কারণে সেটি নিজেরা গ্রহণ করেনি। এজন্যই তাঁরা অপর পক্ষের সঙ্গে এটা নিয়ে কোনো বিরোধ ও দ্বন্দ্বে জড়াননি। তারা হাদীস মানে না, হাদীস বুঝে না, হাদীসের খেলাফ করছে এজাতীয় কোনো মন্তব্য করেননি। তাদেরকে নিজেদের মতের উপর টেনে আনার চেষ্টাও করেননি। এটিই হচ্ছে মতভেদপূর্ণ মাসআলায় উলামায়ে কেরামের অবস্থান।

ইমাম ইবনে নুজাইম রহ. (৯৭০ হি.) বলেন,

قَالَ فِي آخِرِ الْمُصَفَّى: إذَا سُئِلْنَا عَنْ مَذْهَبِنَا وَمَذْهَبِ مُخَالِفِينَا فِي الْفُرُوعِ، يَجِبُ عَلَيْنَا أَنْ نُجِيبَ بِأَنَّ مَذْهَبَنَا صَوَابٌ يَحْتَمِلُ الْخَطَأَ وَمَذْهَبَ مُخَالِفِينَا خَطَأٌ يَحْتَمِلُ الصَّوَابَ ؛ لِأَنَّك لَوْ قَطَعْت الْقَوْلَ لِمَا صَحَّ قَوْلُنَا إنَّ الْمُجْتَهِدَ يُخْطِئُ وَيُصِيبُ.

وَإِذَا سُئِلْنَا عَنْ مُعْتَقَدِنَا وَمُعْتَقَدِ خُصُومِنَا فِي الْعَقَائِدِ يَجِبُ عَلَيْنَا أَنْ نَقُولَ : الْحَقُّ مَا نَحْنُ عَلَيْهِ وَالْبَاطِلُ مَا عَلَيْهِ خُصُومُنَا.

هَكَذَا نُقِلَ عَنْ الْمَشَايِخِ رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى (انْتَهَى). -الأشباه والنظائر، دار الكتب العلمية، بيروت،لبنان، الطبعة :1400هـ=1980م ص: 381

“আলমুসাফফা’র শেষদিকে বলা হয়েছে, আমাদেরকে শাখাগত মাসআলায় আমাদের মাযহাব এবং বিপরীত পক্ষের মাযহাব সম্পর্কে যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের দায়িত্ব হল এই উত্তর প্রদান করা যে, আমাদের মাযহাব সঠিক, তবে ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আমাদের বিপরীত পক্ষের মাযহাব ভুল, তবে সঠিক হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। কারণ তুমি যদি এখানে অকাট্যভাবে কোনো একটাকে সঠিক বা ভুল বল, তাহলে একথা সহীহ হবে না যে, মুজতাহিদ ভুল শুদ্ধ দু’টোই করেন (অথচ একথা সর্বজনবিদিত যে, যে কোনো মুজতাহিদ তাঁর ইজতেহাদে কখনো কখনো ভুল করেন)। আর যদি আমাদের আকিদা এবং আমাদের প্রতিপক্ষের আকিদা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আমাদের দায়িত্ব হল এভাবে উত্তর দেয়া যে, সত্য সেটাই, যেটার উপর আমরা আছি। আর বাতিল সেটাই যেটার উপর আমাদের প্রতিপক্ষ রয়েছে। মাশায়েখ থেকে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে।” -আলআশবাহ ওয়া নাযায়ের, পৃ: ৩৮১

উক্ত হাদীস থেকে আমরা দ্বিতীয় যে বার্তাটি পেলাম, তা হল মতভেদপূর্ণ বিষয়ে দুটি মতের উপর আমলকারীদের আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। এজন্যই সংবাদটি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছল, তিনি কাউকেই তিরস্কার করেননি এবং কাউকেই পুনরায় সেই সালাত আদায় করতে বলেননি। সুতরাং প্রত্যেকের ইজতেহাদে যদিও নিজেরটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং প্রবল, অপর পক্ষেরটা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, কিন্তু আল্লাহর কাছে দুটোই সঠিক হিসেবে গ্রহণযোগ্য। সুতরাং আপনার প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও উভয়েই সঠিক।

সুফিয়ান সাওরী রহ. (১৬১ হি.) বলেন,

إذا رأيت الرجل يعمل العمل الذي قد اختلف فيه وأنت ترى غيره فلا تنهه

“যখন তুমি মতভেদপূর্ণ মাসয়ালায় কাউকে কোনো একটি মতের অনুসরণ করতে দেখ, তবে তুমি ভিন্নমতের অনুসারী হলেও তাকে নিষেধ করো না।” -আলফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, খতীব বাগদাদী, ২/১৩৬

উল্লেখ্য, আগেই বলেছি, মতভেদ হয় এমন বিষয়ে, যেগুলো শরীয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়; বরং তার দলিলে দ্বৈততার অবকাশ রয়েছে। একইভাবে কোনো মতভেদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আরেকটি শর্ত হল, মতভেদটি শরীয়তের গ্রহণযোগ্য দলিলের ভিত্তিতে হতে হবে এবং বিজ্ঞ আলেম থেকে হতে হবে। স্বভাবতই গ্রহণযোগ্য দলিলের আলোকে শরঈ বিষয়ে মতভেদ করা, বিজ্ঞ আলেম ব্যতীত সম্ভবই নয়। সুতরাং গ্রহণযোগ্য দলিল ব্যতীত মতভেদ করলেও তা প্রত্যাখ্যাত এবং অযোগ্য ব্যক্তি মতভেদ করলেও তা প্রত্যাখ্যাত।

যেমন সালাত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ, জিহাদ শরীয়তের বিধান, এগুলোতেও এক শ্রেণির মানুষ মতভেদ করে। কিন্তু তাদের এই মতভেদের নির্ভরযোগ্য কোনো দলিল নেই এবং বিষয় দুটি শরীয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তাদের ভুলটাও অকাট্য দলিল দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। যাতে মতভেদের অবকাশই নেই। এখানে যদি কেউ মনে করে, অপর পক্ষের মতটিও সঠিক হতে পারে, তাহলে তার ঈমানই থাকবে না।

একটি দু:খজনক বাস্তবতা

কিন্তু আমাদের সমাজের একটি দু:খজনক বাস্তবতা হল, আমরা মুসলিমরা শাখাগত যে মতভেদগুলোর সবগুলোই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য এবং সবগুলোরই দলিল আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা খুব বেশি বাড়াবাড়ি করি। একে অপরকে গালাগালি করি এবং সবাইকে নিজের মতের উপর টেনে আনার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকি। আর শরীয়তের যে মূল বিষয়গুলোতে মতভেদ নেই, তাওহীদ, শিরিক, ঈমান, কুফুর, মুসলিমদের ভ্রাতৃত্ববোধ, জালেম কাফেরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ইত্যাদি, সেগুলোর প্রতি আমরা মনোযোগী হই না। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে অনেক বড় অন্যায়।

অপরদিকে আরেকটি গ্রুপ আছে, যারা ঈমান কুফরের মতো অকাট্য বিষয়, যেগুলোতে মতভেদের অবকাশ নেই এবং যা অকাট্য ও সুস্পষ্ট ভুল এবং জাহান্নামের পথ, সেগুলোকেও শ্রদ্ধা ও সমীহ করার দাওয়াত চালায়। তারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ইত্যাদির নামে এরকম কুফুর শিরিককে মুসলিম সমাজে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র করে।

বিষয়টি একটু দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে এতটুকুই বললাম। এবিষয়ে আমরা সকল মুসলিম ভাইকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই পড়ার অনুরোধ করব। বইটির নাম ‘উম্মাহর ঐক্য: পথ ও পন্থা’। লেখক, মাওলানা আব্দুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ।

আরেকটি কথা হল, আপনি যে উদাহরণটি দিয়েছেন, তাতে মধ্যবর্তী এক ঘণ্টা যদিও হানাফিদের মতে জোহরের সময়, কিন্তু তারা বলেছেন, এসময়ের পূর্বেই জোহর আদায় করা উত্তম, যাতে সকল ইমামের মতেই জোহরটি যথাসময় আদায় হয়।

আল্লামা শামী রহ. বলেন,

والأحسن ما في السراج عن شيخ الإسلام أن الاحتياط أن لا يؤخر الظهر إلى المثل، وأن لا يصلي العصر حتى يبلغ المثلين ليكون مؤديا للصلاتين في وقتهما بالإجماع -رد المحتار 1/ 359

“এ মাসয়ালায় ‘আসসিরাজ’ কিতাবে শাইখুল ইসলামের যে বক্তব্য রয়েছে তাই সর্বোত্তম। তিনি বলেন, সতর্কতা হল যোহরের সালাত এক মিছল থেকে বিলম্বিত করবে না, আর আসরের সালাত দুই মিছলের পূর্বে আদায় করবে না, তাহলে ইমামদের ঐকমত্যে ওয়াক্ত অনুযায়ী উভয় সালাত আদায় হবে।” –ফতোয়া শামী, ১/৩৫৯

আরো দেখুন শরহে মুসলিম, নাবাবী, খ. ২, পৃ. ২৩; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল ‍মুহতারসহ), খ. ১, পৃ. ৩৫৯

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (গুফিরা লাহু)

৫ রমজান, ১৪৪১ হি.

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ঈ.

আরো পড়ূন
সফরে কখন কসর করতে হবে?

Related Articles

Back to top button