পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন: আমি কিছু দিন আগে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন একটি পাপকাজ করে ফেলি, যা কুফর কিংবা শিরকের পর্যায়ের পড়ে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আল্লাহ কি আমার তাওবা কবুল করবেন? তিনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন? এ মুহূর্তে আমার করণীয় কী?
-মুহাম্মাদ সিরাত
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:
যেকোনো অপরাধের পর কেউ যদি আল্লাহ তাআলার নিকট লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে খালেস দিলে তাওবা ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{كَيْفَ يَهْدِي اللَّهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (86) أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (87) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ (88) إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ} [آل عمران: 86 – 89]
“আল্লাহ এমন লোকদের কিভাবে হেদায়াত দেবেন, যারা ঈমান আনার পর কুফর অবলম্বন করেছে, অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, রাসূল সত্য এবং তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলীও এসেছিল। আল্লাহ এরূপ জালিমদেরকে হেদায়াত দান করেন না। এরূপ লোকদের শাস্তি হচ্ছে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফিরিশতাদের ও সমস্ত মানুষের লানত। তারই মধ্যে (লানতের মধ্যে) তারা সর্বদা থাকবে। তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। অবশ্য যারা এসব কিছুর পরও তাওবা করবে ও নিজেদেরকে সংশোধন করবে, (তাদের জন্য) আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” – সূরা আলে ইমরান ০৩: ৮৬-৮৯
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
{إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا (145) إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا } [النساء: 145، 146]
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে এবং আপনি তাদের পক্ষে কোনো সাহায্যকারী পাবেন না। তবে যারা তাওবা করবে, নিজেদেরকে সংশোধন করে নিবে, আল্লাহর আশ্রয়কে শক্তভাবে ধরে রাখবে এবং নিজেদের দ্বীনকে আল্লাহর জন্য খালেস করে নেবে, তারা মুমিনদের সঙ্গে শামিল হয়ে যাবে। আল্লাহ অবশ্যই মুমিনদেরকে মহা প্রতিদান দান করবেন।” -সূরা নিসা ০৪: ১৪৫-১৪৬
আরও ইরশাদ করেন,
{وَالَّذِينَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ ثُمَّ تَابُوا مِنْ بَعْدِهَا وَآمَنُوا إِنَّ رَبَّكَ مِنْ بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَحِيمٌ} [الأعراف: 153]
“আর যারা মন্দ কাজ করে ফেলে তারপর তাওবা করে ও ঈমান আনে, তোমার প্রতিপালক সেই তাওবার পর (তাদের পক্ষে) অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” -সূরা আরাফ ০৭: ১৫৩
আরও ইরশাদ করেন,
{وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ (25) وَيَسْتَجِيبُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيدُهُمْ مِنْ فَضْلِهِ وَالْكَافِرُونَ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ} [الشورى: 25، 26]
“এবং তিনিই নিজ বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কিছু করো তা তিনি জানেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের দোয়া তিনি শোনেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বেশি দান করেন। আর কাফেরদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি।” -সূরা শূরা ৪২: ২৫-২৬
আরও ইরশাদ করেন,
{وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى} [طه: 82]
“আর এটাও সত্য যে, যে ব্যক্তি তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে অতঃপর সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে, আমি তার প্রতি পরম ক্ষমাশীল।” –সূরা তহা ২০: ৮২
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا، فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ. -صحيح مسلم (4/994 رقم: 2577 ط. دار إحياء التراث)
“হে আমার বান্দারা, তোমরা দিন-রাত গুনাহ করে থাকো, আর আমি সকল গুনাহ ক্ষমা করি। তোমরা ক্ষমা চাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিবো।” -সহীহ মুসলিম: ২৫৭৭
অন্য হাদীসে এসেছে,
عن أبي عبيدة بن عبد الله عن أبيه، قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: “التائب من الذنب كمن لا ذنب له”. –سنن ابن ماجه ت الأرنؤوط (5/ 320): 4250، قال المحققون: حديث محتمل للتحسين بشواهده. اهـ وقال الحافظ ابن حجر في فتح الباري (13/471) : “سنده حسن”. وقال الحافظ السخاوي في المقاصد الحسنة (ص: 249) : “رجاله ثقات، بل حسنه شيخنا يعني لشواهده…”.
“গুনাহ থেকে তাওবাকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার কোনো গুনাহ নাই।” –সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫০
কাজেই যত বড় গুনাহই করে থাকুন নিরাশ হবেন না। আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তাওবা ইস্তেগফার করুন। প্রতিজ্ঞা করুন আর কখনো এমন কাজ করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ তাআলা গুনাহগার বান্দাদের তাওবার দিকে আহ্বান করে বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ. –الزمر 53
“আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজের উপর সীমালঙ্ঘন করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” -সূরা যুমার ৩৯: ৫৩
তাওবা ইস্তেগফারের পাশাপাশি আপনি নতুন করে কালিমায়ে শাহাদাত গ্রহণের মাধ্যমে ঈমানের নবায়ন করুন এবং এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের শরণাপন্ন হোন। বিষয়টি তাঁকে বিস্তারিত জানান। যদি সত্যই আপনার গুনাহটি শিরক-কুফর পর্যায়ের হয় এবং আপনি বিবাহিত হন, তাহলে তাঁর নির্দেশনা অনুাযায়ী বিবাহও দোহরিয়ে নিন।
উল্লেখ্য, সূরা নিসার ৪৮ নং আয়াতে এসেছে,
{إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا} [النساء: 48]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এর নিচের সকল গোনাহ, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করল, সে তো মহাপাপে লিপ্ত হলো।” –সূরা নিসা ০৪: ৪৮
উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিরকের গোনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা করেন না। পক্ষান্তরে অন্যান্য গোনাহ তাওবা ছাড়াও আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন; যদিও যেকোনো কবীরা গোনাহ ক্ষমা পাওয়ার সাধারণ নিয়ম হচ্ছে তওবা করা। -তাফসীরে তাবারী (মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ) : ৮/৪৫০
فقط، والله تعالى أعلم الصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৪-০৫-১৪৪৬ হি.
২৭-১১-২০২৪ ঈ.
আরো পড়ুন লিংক: