বিবিধফাতওয়া  নং  ৫০২

আগ্রাসী জালিমের হত্যাকারীর বিচার প্রসঙ্গে

আগ্রাসী জালিমের হত্যাকারীর বিচার প্রসঙ্গে

প্রশ্ন: ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে যেসব আওয়ামী কর্মী ও সমর্থক, পুলিশ, বিডিআর, র‌্যাব, আর্মি, যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে জনসাধারণের আক্রমণে নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার দায়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদেরকে কি বিচারের সম্মুখীন করা যাবে?

-আবদুস সালাম

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسوله محمد وآله وأصحابه أجمعين أما بعد:

এক. জালিমকে প্রতিহত করা জরুরি। চাই জালেম ব্যক্তি, সংঘবদ্ধ দল কিংবা রাষ্ট্র যেই হোক। যদি হত্যা ছাড়া প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তাহলে হত্যা করাও জায়েয।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৭০ হিজরী) বলেন,

فإذا لم يمكنه تغييره إلا بالقتل فعليه قتله حتى يزيله. وكذلك قلنا في أصحاب الضرائب والمكوس التي يأخذونها من أمتعة الناس: إن دماءهم مباحة وواجب على المسلمين قتلهم. اهـــــ. –احكام القرآن للجصاص: 2/40 ط. دار الكتب العلمية.

“যখন হত্যা ব্যতীত অন্যায় প্রতিরোধ করা সম্ভব না হবে, তখন হত্যা করে হলেও প্রতিরোধ করা জরুরি। অনুরূপ যারা অন্যায় টেক্স ও শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ গ্রাস করে, তাদের ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো, তাদের রক্ত হালাল এবং তাদেরকে হত্যা করা মুসলিমদের কর্তব্য।” -আহকামুল কুরআন: ২/৪০
দুই. কোনো অস্ত্রধারী অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, অস্ত্রধারীকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়।
ইমাম আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৭০ হিজরী) বলেন,

ولا نعلم خلافا أن رجلا لو شهر سيفه على رجل ليقتله بغير حق أن على المسلمين قتله.اهـــ -أحكام القرآن للجصاص ط العلمية (2/ 503)

“যদি কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য তরবারি উত্তোলন করে, তাহলে তাকে হত্যা করা মুসলিমদের কর্তব্য। এ বিষয়ে কারো দ্বিমত আছে বলে আমাদের জানা নাই।” –আহকামুল কুরআন: ২/৫০৩
তিন. প্রতিহত করতে গিয়ে জালিমকে হত্যা করে ফেললে কেসাস, দিয়াত, কাফফারা, জরিমানা কোনোটাই আদায় করা যায় না।
ইমাম মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৮৯ হিজরী) বলেন,

رجل شهر سيفا على المسلمين فلهم أن يقتلوه ولا شيء عليهم.اهــــ -الجامع الصغير: 513 ط. محمد بوينوكالن.

“যদি কেউ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তরবারি ধরে, তাকে হত্যা করা মুসলিমদের কর্তব্য। এ হত্যার কারণে মুসলিমদের উপর কোনো শাস্তি বা জরিমানা কিছুই আরোপিত হবে না।” -আলজামিউস সগীর: ৫১৩
ইমাম ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ (৪৪৯ হি.) বলেন,

ولا يختلفون أن من شهر سلاحا، وأومأ إلى قتله وهو صحيح العقل، فقتله المشهور عليه دافعا له عن نفسه؛ أنه لا ضمان عليه.اهــــ -شرح صحيح البخارى لابن بطال (8/ 521)، كتاب الديات، باب إذا عض رجلا فوقعت ثناياه، دار النشر: مكتبة الرشد – السعودية، الرياض

“হত্যা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হত্যা করে ফেললে, কোনো জরিমানা আসবে না।” –শরহে সহীহ বুখারী-ইবনে বাত্তাল: ৮/৫২১
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে সরকার ও সরকারের বাহিনী, আওয়ামী লীগ, পুলিশ, বিডিআর, র‌্যাব, আর্মি সবাই যে আগ্রাসী জালিম ও অন্যায় হত্যাকারী ছিল, বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। তাদের প্রতিরোধ করা এবং প্রয়োজনে হত্যা করা ছিল সকলের দায়িত্ব। সুতরাং একারণে কাউকে তাদের হত্যার দায়ে বিচারের সম্মুখীন করা যাবে না। করলে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা অন্যায় বিবেচিত হবে।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৪-০৪-১৪৪৬ হি.
১৮-১০-২০২৪ ঈ.

Related Articles

Back to top button