বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তির করণীয়
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
একটি মেয়ে জানতে চেয়েছে, বিয়ের আগে এক ছেলের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া সব কিছুই হয়েছে। এখন সে ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত। তার জানার বিষয় হলো, দেশে যেহেতু শরীয়াহ আইন নেই, তাই এখন তার ক্ষমা পাওয়ার উপায় কী?
-মুহাম্মদ হাসান
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
যেকোনো গুনাহ হয়ে গেলে ব্যক্তির কর্তব্য হলো তওবা ও ইস্তেগফারের আশ্রয় নেয়া। অর্থাৎ সেই গুনাহ পরিহার করে আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে আসা এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা। গুনাহের কথা কাউকে না জানানো। শরীয়তের আইন থাকলেও শাসক বা বিচারককে নিজের অপরাধের বিষয়ে জানানো জরুরি না; বরং তা গোপন রাখাই কাম্য। -আল-মুহিতুল বুরহানী: ৫/৪০৯ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ); লিসানুল হুক্কাম, পৃ: ৪০০ (আল-বাবুল হালাবী); আল-বাহরুর রায়েক: ৫/৩ (দারুল কিতাবিল ইসলামী); আল-হিন্দিয়া: ২/১৪৭ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৪/৪ (দারুল ফিকর); আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩/১৮১ (ওযারাতুল আওকাফ, কুয়েত)
হাদীসে এসেছে,
عن عبد الله، قال: جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال: يا رسول الله إني عالجت امرأة في أقصى المدينة، وإني أصبت منها ما دون أن أمسها، فأنا هذا، فاقض في ما شئت، فقال له عمر: لقد سترك الله، لو سترت نفسك، قال: فلم يرد النبي صلى الله عليه وسلم شيئا، فقام الرجل فانطلق، فأتبعه النبي صلى الله عليه وسلم رجلا دعاه، وتلا عليه هذه الآية: [أقم الصلاة طرفي النهار وزلفا من الليل، إن الحسنات يذهبن السيئات ذلك ذكرى للذاكرين]. فقال رجل من القوم: يا نبي الله هذا له خاصة؟ قال: «بل للناس كافة». -صحيح البخاري (6/ 75 رقم: 4687 ط. دار طوق النجاة) صحيح مسلم (4/2116 رقم: 2763 ط. دار إحياء التراث) واللفظ له.
“আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মদীনার এক প্রান্তে এক স্ত্রীলোককে আমি ভোগ করেছি। সহবাস ব্যতীত তার সাথে আমি মিলিত হয়েছি। আমি উপস্থিত। আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা ফায়সালা দিন। তখন উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ গোপন রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার নিজের ব্যাপারটি গোপন রাখতে! বর্ণনাকারী বলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আর কোনো উত্তর দেননি। তারপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন। নবীজী তাকে এ আয়াত পড়ে শোনালেন, “দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে সালাত আদায় কর। নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, তাদের জন্যে এটা এক উপদেশ।” তখন উপস্থিত লোকদের একজন বলল, হে আল্লাহর নবী! এ বিধান কি শুধু তার জন্য? উত্তরে নবীজী বললেন, না, বরং এ বিধান সকলের জন্য প্রযোজ্য।” –সহীহ বুখারী: ৬/৭৫ হাদীস: ৪৬৮৭ (দারু তাওকিন নাজাহ); সহীহ মুসলিম: ৪/২১১৬ হাদীস: ২৭৬৩ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস)
মাউসূআহ ফিকহিয়্যাহ কুয়েতিয়ায় এসেছে,
وقد اتفق الفقهاء على أن المرء إذا وقع منه ما يعاب عليه يندب له الستر على نفسه ، فلا يعلم أحدا ، حتى القاضي ، بفاحشته لإقامة الحد أو التعزير عليه (1) ، لما رواه البخاري وغيره عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : كل أمتي معافى إلا المجاهرين ، وإن من المجاهرة أن يعمل الرجل بالليل عملا ، ثم يصبح وقد ستره الله تعالى ، فيقول : يا فلان عملت البارحة كذا وكذا ، وقد بات يستره ربه ويصبح يكشف ستر الله عنه . (2) – الموسوعة الفقهية الكويتية (3/ 181)
“ফুকাহায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, ব্যক্তি থেকে যখন কোনো গুনাহ হয়ে যায়, তার জন্য উত্তম হলো তা গোপন রাখা।…. কারণ সহীহ বুখারীসহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে, তাদের ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করা হবে। সেই ব্যক্তিও প্রকাশ্যে গুনাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত, যে রাতে কোনো গুনাহ করল, যা আল্লাহ সকাল পর্যন্ত গোপন রাখলেন, কিন্তু সে সকালে কাউকে বলে দিল, আমি রাতে এমন এমন করেছি। অথচ সারা রাত আল্লাহ তার গুনাহ ঢেকে রেখেছিলেন। সকালে সে নিজেই আল্লাহর পর্দা খুলে দিল।” –মাউসূআহ: ৩/১৮১
-আরও দেখুন, রদ্দুল মুহতার: ৪/৪; আলমুহীতুল বুরহানি (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ): ৫/৪০৯; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম (দারু ইহয়ায়িত তুরাস): ৬/২৬
সুতরাং প্রশ্নোক্ত বোনের কর্তব্য হলো, খালেসভাবে তাওবা ও ইস্তেগফার করা, গুনাহের কথা আর কারো কাছে প্রকাশ না করা। তওবা করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০১-০১-১৪৪৫ হি.
০৮-০৭-২০২৪ ঈ.