জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৩০০

শহীদের দুনিয়াবি বিধান কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

শহীদের দুনিয়াবি বিধান কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

শহীদের দুনিয়াবি বিধান কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আফগানিস্তানে কি এখনও হাকিকি শহীদের বিধান বাকি আছে? আমরা জানি যে, সেখানে যুদ্ধ নেই। এখন সেখানে কেউ যদি কোনো শত্রুর আঘাতে বা ট্রেনিং অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে কি সে হাকিকি শহীদ হবে?

প্রশ্নকারী- মুস্তাফা আল-আরাবি

উত্তরঃ

হাকিকি শহীদের বিধান ও অবকাশ পৃথিবীর সর্বত্রই বিদ্যমান। চাই তা শত্রুমুক্ত কোনো স্বাধীন ইসলামী ভূমি বা দারুল ইসলাম হোক, কিংবা শত্রু কবলিত কোনো মুসলিম এলাকা হোক। এমনকি দারুর হারবেও হাকিকি শহীদ হওয়ার অবকাশ আছে। কারণ হাকিকি শহীদ হল:

এক. যে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ‘কাতলে আমাদ’-এর শিকার হয়। ফিকহের পরিভাষায় ‘কাতলে আমাদ’ এমন হত্যাকে বলা হয়, যা অন্যায়ভাবে এবং ইচ্ছাকৃত ঘাতক অস্ত্র দ্বারা সংঘটিত হয়। অথবা

দুই. যে মুসলিম জিহাদের রণাঙ্গনে শত্রুর আঘাতে নিহত হয় অথবা ডাকাত, সন্ত্রাসী, বিদ্রোহী কিংবা রাতের আঁধারে চোরের হাতে নিহত হয়। অথবা

তিন. যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন অথবা সাধারণ কোনো মুসলিম বা যিম্মির জীবন রক্ষা করতে গিয়ে শত্রুর হাতে নিহত হয়। অথবা

চার. যে ব্যক্তিকে জিহাদের রণক্ষেত্রে মৃত অবস্থায় এমন আলামতসহ পাওয়া যাওয়া যায়, যা থেকে বুঝা যায়; সে শত্রুর আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে।

উপরের সকল ব্যক্তি তখনই হাকিকি শহীদ বলে গণ্য হবে, যখন তারা আহত হবার পর মৃত্যুর আগে দুনিয়াবি কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করবে না এবং সজ্ঞানে পূর্ণ এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিবাহিত করবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে এই শর্ত কার্যকর হবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে। –বাদায়েউস সানায়ে’ ১/৩২০; আদ্দুররুল মুখতার: ১২৪; ইলইখতিয়ার: ১/৯৭

সুতরাং বর্তমান আফগানিস্তানে যদি কোনো মুজাহিদ বা সাধারণ মুসলিম উপর্যুক্ত কোনো এক প্রক্রিয়ায় নিহত হন এবং উল্লেখিত শর্তটি বিদ্যমান থাকে, তাহলে তিনিও হাকিকি শহীদ বলে গণ্য হবেন এবং তাকে গোসল ছাড়া জানাযা পড়ে রক্তমাখা অবস্থায় দাফন করা হবে।

উল্লেখ্য, দুনিয়ার হুকুমে সকলে শহীদ হলেও সাওয়াব ও ফযীলতের দিক থেকে সকলে সমান নয়। জীবিকা অন্বেষণে বের হয়ে ডাকাতের হাতে মারা পড়া, আর আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জান-মাল সাথে নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করতে করতে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়া সমমর্যাদার হতে পারে না; বরং যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের জান-মাল বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাত বরণ করেন, তাদেরও সকলের মর্যাদা সমান নয়। -সুনানে আবু দাউদ: ১৪৪৯

অতএব,উপরের সকল প্রকার শহীদ শুধু দুনিয়ার বিধান তথা গোসল ব্যতীত রক্তমাখা অবস্থায় দাফন করার ক্ষেত্রে বরাবর। পক্ষান্তরে আখিরাতের সাওয়াব ও মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককে প্রত্যেকের ইখলাস, নিয়ত ও আমল অনুযায়ী প্রদান করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে শামিল হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৫-০৩-১৪৪৪ হি.

২২-১০-২০২২ ঈ.

আরও পড়ুনঃ জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদে শরীর চর্চা করা কি বৈধ হবে?

Related Articles

Back to top button