জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ২৮১

জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদে শরীর চর্চা করা কি বৈধ হবে?

জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদে শরীর চর্চা করা কি বৈধ হবে?

জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে মসজিদে শরীর চর্চা করা কি বৈধ হবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

ভুলে যাওয়া ফরয ইদাদের অন্যতম অংশ ইদাদে বাদানী বা শারীরিক প্রস্তুতি। এটি সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে মসজিদে শরীর চর্চা করা কি জায়েয হবে? বিশেষত কারো যদি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকে। আমাদের এখানে কিছু ভাইয়ের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, মসজিদ শুধু নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও এ ধরনের ইবাদতের জন্য। মসজিদে শরীর চর্চা আদবের খেলাফ। কেউ বলছেন, এটিও গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বীনি কাজ। আর মসজিদে যেকোনো দ্বীনি কাজই করা যায়। আশা করি, বিষয়টির সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।

প্রশ্নকারী- গালিব মুসান্না

 

 

উত্তর: 

দুঃখিত! বিশেষ কারণে আপনার প্রশ্নটির মূল বিষয় ঠিক রেখে বিবরণে সামান্য পরিবর্তন করে উত্তর দেয়া হলো।

হাদীস শরীফে এসেছে,

أن عائشة، قالت: «لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما على باب حجرتي والحبشة يلعبون في المسجد، ورسول الله صلى الله عليه وسلم يسترني بردائه، أنظر إلى لعبهم» -صحيح البخاري: 454

 “আয়েশা রাযি. বলেন, আমি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার কামরার দরজায় দেখলাম। তখন হাবশীরা মসজিদে খেলছিলো (যুদ্ধের অনুশীলন করছিলো)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখলেন, আর আমি তাদের খেলা দেখছিলাম।” –সহীহ বুখারী : ৪৫৪

সহীহ বুখারীর অপর বর্ণনায় এসেছে,

والحبشة يلعبون بحرابهم – صحيح البخاري: 455

“হাবশীরা তাদের বর্শা দিয়ে খেলছিলো”। –সহীহ বুখারী: ৪৫৫

আরেক বর্ণনায় এসেছে,

فزجرهم عمر، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «دعهم أمنا بني أرفدة»… –صحيح البخاري: 988

“অতঃপর ওমর রাযি. তাদেরকে ধমক দিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে ওমর, তাদেরকে ছেড়ে দাও। হে বনু আরফিদা! তোমরা নিরাপদে অনুশীলন কর।”–সহীহ বুখারী: ৯৮৮

ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সহীহ বুখারীতে باب أصحاب الحراب في المسجد তথা ‘অধ্যায়: মসজিদে বর্শাধারীগণ’ নামে একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন। উক্ত অধ্যায়ে ইমাম বুখারী (রহ) উপরোল্লিখিত তিনটি হাদীসের প্রথম দুটি বর্ণনা করেন। শিরোনামের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী (৮৫৫ হি.) (রহ) বলেন:

أي: هذا باب في بيان جواز دخول أصحاب الحراب في المسجد، والمراد من أصحاب الحراب هنا هم الذين يتشاققون بالسلاح كالحراب ونحوها للاشتداد والقوة على الحرب مع أعداء الدين، وقال المهلب: المسجد موضوع لأمر جماعة المسلمين، وكل ما كان من الأعمال التي تجمع منفعة الدين وأهله واللعب بالحراب من تدريب الجوارح على معاني الحروب فهو جائز في المسجد وغيره، اهـ. –عمدة القاري: 4/220، دار إحياء التراث العربي – بيروت.

“এ অধ্যায়টি মসজিদে বর্শা নিয়ে প্রবেশ বৈধ হওয়া সম্পর্কে। এখানে ‘আসহাবুল হিরাব’ দ্বারা ওই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ উদ্দেশ্য, যারা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্ষেত্রে শক্তি অর্জনের জন্য বর্শা বা এ জাতীয় অস্ত্র দ্বারা প্রশিক্ষণ নেয়। মুহাল্লাব রহ. বলেন, মসজিদ মুসলমানদের যৌথ কাজের জন্য। যে সকল কাজ দ্বীন ও দ্বীনদারদের কল্যাণে সাধিত হয়, তা মসজিদে জায়েয। আর বর্শা খেলা যুদ্ধের জন্য শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত। তা মসজিদে এবং মসজিদের বাইরে সর্বত্রই জায়েয।”–উমদাতুল কারী: ৪/২২০, আরও দেখুন: ফাতহুল বারী: ১/৫৪৯, মিনহাতুল বারী: ২/১৬৪, ই’লামুস সাজিদ বি আহকামিল মাসাজিদ: ৩৫৫, জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৩/১৩১

উপরের আলোচনা থেকে আশা করি পরিষ্কার হয়েছে যে, জিহাদের উদ্দেশ্যে মসজিদে শরীর চর্চা করতে অসুবিধা নেই। তবে এখানেও যে মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

والله سبحانه تعالى أعلم

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১০-০১-১৪৪৪ হি.

০৯-০৮-২০২২ ঈ.

আরো পড়ুনঃ

লিংকঃ বর্তমানে বাংলাদেশে কি জিহাদ ফরজ?

Related Articles

Back to top button