হজ-ওমরাফাতওয়া  নং  ২৭৭

হজের অর্থ জিহাদে খরচ করলে কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে?

হজের অর্থ জিহাদে খরচ করলে কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে?

হজের অর্থ জিহাদে খরচ করলে কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

কারো উপর হজ ফরয হয়েছে। আর বর্তমানে জিহাদও সবার উপর ফরয। এখন সে কি ফরয হজ আদায় করবে? না, হজের টাকাটা জিহাদের পথে খরচ করবে? জিহাদের পথে খরচ করার দ্বারা কি হজের যিম্মাদারী আদায় হবে?

প্রশ্নকারী- নুরে আলম চৌধুরী

 

উত্তরঃ

হজ ও জিহাদ দু’টি স্বতন্ত্র ও ভিন্ন ভিন্ন ইবাদত। একটির দ্বারা আরেকটি আদায় হবে না, যেমন সালাতের দ্বারা সাওম আদায় হয় না। কাজেই যার উপর হজ ফরয হয়েছে, যিম্মা মুক্ত হতে হলে তাকে হজই আদায় করতে হবে, জিহাদের পথে খরচের দ্বারা হজের যিম্মা আদায় হবে না। একজন মুসলিমের জন্য সব ফরয পালন করা অপরিহার্য, যতক্ষণ না দুটি ফরয এমনভাবে সাংঘর্ষিক হয় যে, একটি পালন করতে গেলে অপরটি সম্ভবপর নয়।

এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, যেটি পিছিয়ে দিয়ে পরে আদায় করা সম্ভবপর,সেটি পরে আদায় করতে হবে। আর যেটি পেছানোর সুযোগ নেই,সেটি আগে আদায় করতে হবে। বর্তমানে জিহাদ যদিও ফরযে আইন, তবে সকলের জন্য তা হজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরং হজ ও জিহাদ উভয়টিই পালন করা সম্ভবপর। সুতরাং এ অবস্থায় সামর্থ্যবানরা হজও আদায় করবেন, আবার সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদের পথেও খরচ করবেন।

হাঁ কোথাও যদি জরুরি ভিত্তিতে জিহাদের কোনো কাজে সুনির্দিষ্ট কোনো মুজাহিদের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং আমীরের পক্ষ থেকে অবিলম্বে তার সেখানে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ হয়, তাহলে তিনি আগে আমীরের নির্দেশ অনুযায়ী জিহাদের কাজ আঞ্জাম দিবেন, হজ পরে আদায় করবেন।

একইভাবে কোনো ভূখণ্ডের অবস্থা যদি এতই নাজুক হয় যে, শত্রু আক্রমণ করে বসেছে এবং এই মুহূর্তে হজ স্থগিত রেখে জিহাদে শরীক হওয়া ব্যতীত শত্রু প্রতিহত করা সম্ভবপর নয় বা তাতে মুসলিমদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে; তাহলেও সেখানকার লোকেরা হজ পিছিয়ে দিয়ে জিহাদে শরীক হয়ে যাবে, অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন  পড়লে ব্যয় করে ফেলবে। পরবর্তীতে সামর্থ্য হলে হজ আদায় করবে।

উল্লেখ্য, ফরয হজ আদায় করার পর নফল হজ অপেক্ষা জিহাদে খরচ করা উত্তম। আর যদি বর্তমান সময়ের মতো জিহাদ ফরয হয় এবং কারো সম্পদ জিহাদের জন্য অপরিহার্য হয়, তখন জিহাদের পথে  খরচ করাই জরুরি।

حَدَّثَنِى حَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ الْحُلْوَانِىُّ حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ سَلاَّمٍ عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ قَالَ حَدَّثَنِى النُّعْمَانُ بْنُ بَشِيرٍ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ رَجُلٌ مَا أُبَالِى أَنْ لاَ أَعْمَلَ عَمَلاً بَعْدَ الإِسْلاَمِ إِلاَّ أَنْ أُسْقِىَ الْحَاجَّ. وَقَالَ آخَرُ مَا أُبَالِى أَنْ لاَ أَعْمَلَ عَمَلاً بَعْدَ الإِسْلاَمِ إِلاَّ أَنْ أَعْمُرَ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ. وَقَالَ آخَرُ الْجِهَادُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ أَفْضَلُ مِمَّا قُلْتُمْ. فَزَجَرَهُمْ عُمَرُ وَقَالَ لاَ تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ عِنْدَ مِنْبَرِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَهُوَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَلَكِنْ إِذَا صَلَّيْتُ الْجُمُعَةَ دَخَلْتُ فَاسْتَفْتَيْتُهُ فِيمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ. فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ) الآيَةَ إِلَى آخِرِهَا. -صحيح مسلم للنيسابوري (6/ 36)، الرقم: 4979، دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت

“নুমান বিন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বারের নিকট ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ইসলাম গ্রহণের পর হাজীদের পানি পান করানো ছাড়া অন্য কোনো (উল্লেখযোগ্য) আমল যদি আমি করতে নাও পারি, তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আরেকজন বলে উঠল, মুসলিম হওয়ার পর ‘মসজিদে হারাম’ আবাদ করা ছাড়া (উল্লেখযোগ্য) অন্য কোনো

আমল যদি আমি নাও করতে পারি, তাতে আমার কোনো পরোয়া নেই। অন্য একজন বলে উঠল, তোমরা যেসব আমলের কথা বলছ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা সেগুলোর চেয়ে উত্তম। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে ধমক দিয়ে বললেন, তোমরা রাসূলের মিম্বারের কাছে উঁচু আওয়াজে কথা বলো না। দিনটি ছিল জুমআর দিন। অবশ্য জুমআর সালাত পড়া হয়ে গেলে তোমরা যে বিষয়ে কথা বলছ, সে ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করব। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতটি নাযিল করলেন-

أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَوُونَ عِنْدَ اللَّهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.

“তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো ও মসজিদুল হারাম আবাদ করার কাজকে সেই ব্যক্তির (কার্যাবলীর) সমান মনে করো, যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে? আল্লাহর কাছে তারা সমতুল্য হতে পারে না। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না।” (সূরা তাওবা,আয়াত-১৯) –সহীহ মুসলিম ৪৯৭৯

حدثنا أحمد بن يونس وموسى بن إسماعيل قالا حدثنا إبراهيم بن سعد قال حدثنا ابن شهاب عن سعيد بن المسيب عن أبي هريرة : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم سئل أي العمل أفضل ؟ فقال ( إيمان بالله ورسوله ) . قيل ثم ماذا ؟ قال ( الجهاد في سبيل الله ) . قيل ثم ماذا ؟ قال ( حج مبرور ). -صحيح البخاري (1/ 18)، الرقم: 26، ط. دار ابن كثير ، اليمامة – بيروت؛ صحيح مسلم للنيسابوري (1/ 62)، الرقم: 258، دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت؛ وهذا لفظ البخاري

“আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, এরপর শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হলো, তারপর কোন আমলটি শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, মাকবুল হজ।” –সহীহ মুসলিম ২৫৮

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৮-১১-১৪৪৩ হি.

২৯-০৬-২০২২ ঈ.

আরো দেখুনঃ

মৃত পিতার জন্য কি নফল হজ করা যাবে?

Related Articles

Back to top button