কোনো মুহাজির পথিমধ্যে নিহত হলে কি শহীদ হবেন?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
যদি কোনো ব্যক্তি ইসলাম প্রতিষ্ঠার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জেহাদের কোনো ভূমিতে হিজরত করার উদ্দেশ্য রওনা হন। কিন্তু পথিমধ্যে এয়ারপোর্ট বা অন্য কোন স্থান থেকে তাগুত বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করে দেয়। তাহলে কি তিনি হাকিকি শহীদের মর্যাদা পাবেন?
প্রশ্নকারী-খালিদ আল হিন্দি
ঠিকানা-অজ্ঞাত
উত্তর:
প্রথমত যিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন, গন্তব্যে পৌঁছার আগে মৃত্যু বরণ করলে বা নিহত হলে, তিনি হিজরতের সওয়াব পেয়ে যাবেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا.
“যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার জন্য বের হয়, অতঃপর তার মৃত্যু এসে পড়ে, তার সওয়াব আল্লাহর কাছে স্থিরীকৃত হয়ে যায়। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” –সূরা নিসা (০৪) : ১০০
হিজরতের নির্দেশ নাযিল হওয়ার পর এক সাহাবি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ ও অসুস্থ। পথিমধ্যেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেন যে, এ সাহাবির হিজরতের দায়িত্ব পালন হল কি না? অপরদিকে মুশরিকরাও তাকে নিয়ে উপহাস করতে লাগল, সে না তার পরিবার পরিজনের কাছে মরতে পারল, আর না তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারল। তার সবই ব্যর্থ। তখন আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতটি নাযিল করেন। -তাফসিরে তাবারি: ৯/১১৬, ১১৭
ইবনে কাসির রহ. (৭৭৪ হি.) বলেন,
ومن يخرج من منزله بنية الهجرة فمات في أثناء الطريق فقد حصل له عند الله ثواب من هاجر. -تفسير ابن كثير ط العلمية: 2/ 345
“যে ব্যক্তি হিজরতের নিয়তে বাড়ি থেকে বের হল এবং পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তাআলার কাছে তিনি মুহাজিরের সওয়াব পেয়ে যাবেন।” -তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/৩৪৫
দ্বিতীয়ত যেহেতু তাকে দ্বীনের জন্য হত্যা করা হয়েছে, তাই তিনি শহীদের মর্যাদাও লাভ করবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من قتل فى سبيل الله فهو شهيد. -صحيح مسلم: 5050
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হবে সে শহীদ।” -সহীহ মুসলিম: ৫০৫০
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ. –مسند أحمد ط الرسالة: 1652، سنن الترمذي: 1421، قال الترمذي: هذا حديث حسن صحيح. اهـ
“যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে নিহত হবে সে শহীদ। যে তার পরিবার পরিজন রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ। যে তার প্রাণ রক্ষার্থে নিহত হবে সেও শহীদ।” -মুসনাদে আহমাদ: ১৬৫২, সুনানে তিরমিযি: ১৪২১
তবে ওই মুহাজির ভাই যদি রিমান্ডে তাগূতের শাস্তি চলমান অবস্থায় বা তাদের ফায়ারে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তিনি হাকিকি তথা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় বিচারে শহীদ বলে গণ্য হবেন। তাকে গোসল দেয়া হবে না। বরং বিনা গোসলে জানাযা পড়ে দাফন করা হবে। আর যদি আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা দেয়া হয় কিংবা তিনি খাওয়া দাওয়া করেন বা সচেতন অবস্থায় পূর্ণ এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মৃত্যু বরণ করেন, তাহলে তিনি হুকমি শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন এবং আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবেন। কিন্তু দুনিয়ায় তার ওপর শহীদের বিধান কার্যকর হবে না; বরং তার গোসল ও কাফন দাফন সাধারণ মাইয়েতের মতোই হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/২৫১-২৫২
উল্লেখ্য, বর্তমানে যেহেতু আমাদের এই ভূমিতেই বৈশ্বিক জিহাদের কাজ চলমান, তাই সমরবিশেষজ্ঞ ও মুজাহিদ ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে কয়েকটি কারণে এখানেই কাজের ফিকির করা উচিৎ। কারণগুলো যথাক্রমে ক. জিহাদ একটি জামাতবদ্ধ আমল। সংঘবদ্ধ শত্রুর বিরুদ্ধে এককভাবে তা আদায় করা কঠিন। খ. জিহাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামগ্রিকভাবে বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদের কোনো বিকল্প নেই। এই বৈশ্বিক জিহাদে যুক্ত হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল, বৈশ্বিক জিহাদি কাফেলায় যুক্ত হওয়া। তারপর কাফেলার দায়িত্বশীলদের নির্দেশনায় জিহাদি কাজ আঞ্জাম দেয়া। গ. স্বাভাবিক অবস্থায় নিজ দেশে জিহাদ করা, ভিনদেশে জিহাদ অপেক্ষা সহজ ও অধিক ফলপ্রসূ। ঘ. জিহাদের জন্য অন্য ভূমিতে হিজরতের প্রয়োজন হলে, সেটাও বৈশ্বিক জিহাদের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া কাম্য। এককভাবে হিজরত নিরাপদ নয়। -মিম্বারুত তাওহিদ, ফাতওয়া নং: ২২৫, ৩৩৭, আরো দেখুন আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৪৯,২৫১-২৫১
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদী
০১-০৪-১৪৪২ হি.
১৭-১১-২০২০ ইং
আরো পড়ূন
নিজের অস্ত্রে নিহত মুজাহিদের বিধান