জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৪৩৯

নারীরা কি সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করবে?

নারীরা কি সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করবে?

নারীরা কি সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ করবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

আমরা জানি, বর্তমানে সামর্থ্যবান সকল পুরুষ ও নারীদের উপর জিহাদ ফরযে আইন। এ ফরয পুরুষরা কীভাবে আদায় করবে তা তো জানা আছে। কিন্তু নারীরা কীভাবে আদায় করবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা নেই। কেউ কেউ বলে, নারীরা তাদের সন্তানদেরকে মুজাহিদ হিসাবে গড়ার চেষ্টা করবে, স্বামীদেরকে জিহাদে পাঠাবে বা জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে, মুজাহিদদের টাকা দিয়ে সাহায্য করবে, মুজাহিদদের জন্য দোয়া করবে ইত্যাদি। এতেই তাদের জিহাদের ফরয আদায় হয়ে যাবে। জিহাদের ময়দানে গিয়ে জিহাদ করার দরকার নেই! আল্লাহ ভীরু, সত্যান্বেষী, সাহসী অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী এবং মা-বোন এ বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তাদের মতে, পুরুষদের মতো মহিলাদেরকেও জিহাদের ময়দানে যুদ্ধ করতে হবে, নতুবা মহিলাদের এ ফরয দায়িত্ব আদায় হবে না। আমার প্রশ্ন, এখন এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী? নারীরা কীভাবে জিহাদের ফরয আদায় করবে? বিস্তারিত জানতে চাই।

-জামিলুর রহমান

উত্তর:

নারীদের জন্য দুই অবস্থায় সশস্ত্র কিতালে অংশগ্রহণ ফরয হয়:

এক. আত্মরক্ষার জন্য। অর্থাৎ যদি কেউ কোনো নারীর উপর আক্রমণ করে, তখন নিজেকে রক্ষার জন্য তার উপর আক্রমণকারীকে যথাসাধ্য প্রতিহত করা ফরয হয়ে যায়। -উমদাতুল কারী: ১৪/১৬৬ (দারু ইহইয়ায়িত তুরাস); আরও দেখুন: আত-তাওযীহ: ১৭/৫৬৯ (দারুন নাওয়াদির, দিমাশক); সুবুলুসু সালাম: ২/৪৬০ (দারুল হাদীস, কায়রো)

দুই. যখন শত্রুরা কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে আক্রমণ করে এবং নারীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত শুধু পুরুষরা তাদের প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট না হয়, তখন নারীদের উপরও কিতাল ফরযে আইন হয়ে যায়। -শরহুস সিয়ার: পৃ: ২০১; আলমুহিতুল বুরহানী: ৭/১১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ২/১৮৯

এছাড়া নারীদের উপর সশস্ত্র কিতাল ফরয নয়। বিভিন্ন হাদীসে বিষয়টি এসেছে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার একটি বর্ণনায়ও বিষয়টি পরিষ্কার এসেছে।

عن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها قالت : استأذنت النبي صلى الله عليه و سلم في الجهاد فقال ( جهادكن الحج ). -صحيح البخاري (3/ 1054): 2720

“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তোমাদের (নারীদের) জিহাদ হলো হজ।” -সহীহ বুখারী: ৩/১০৫৪, হাদীস নং ২৭২০

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ، أَلَا نَخْرُجُ نُجَاهِدُ مَعَكُمْ؟ قَالَ: ” لَا، جِهَادُكُنَّ الْحَجُّ الْمَبْرُورُ، هُوَ لَكُنَّ جِهَادٌ “. -مسند أحمد ط الرسالة (40/ 484): 24422، قال المحققون: حديث صحيح. اهـ

“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরাও কি আপনাদের সঙ্গে জিহাদ করতে বের হবো না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- না, তোমাদের জিহাদ হলো হজে মাবরুর, এটাই তোমাদের জন্য (শ্রেষ্ঠতম) জিহাদ।” -মুসনাদে আহমাদ : ২৪৪২২

عن عائشة، قالت: قلت: يا رسول الله، على النساء جهاد؟ قال: “نعم، عليهن جهاد لا قتال فيه، الحج والعمرة”. -سنن ابن ماجه ت الأرنؤوط (4/ 146): 2901، باب: الحج جهاد النساء، قال المحققون: إسناده صحيح. اهـ

“আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি জানতে চাইলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, নারীদের উপর কি জিহাদ আছে? তিনি উত্তর দেন, হাঁ, তাদের উপরও জিহাদ আছে, তবে সে জিহাদে কোন লড়াই নেই, তা হচ্ছে হজ ও উমরাহ।” –সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৯০১

عن عائشة بنت طلحة، قالت: أخبرتني أم المؤمنين عائشة قالت: قلت يا رسول الله، ألا نخرج فنجاهد معك، فإني لا أرى عملا في القرآن، أفضل من الجهاد، قال: «لا، ولكن أحسن الجهاد وأجمله، حج البيت، حج مبرور». -سنن النسائي (5/ 114): 2628، ط. مكتب المطبوعات الإسلامية – حلب

“আয়েশা বিনতে তালহা বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা (নারীরাও) কি আপনার সাথে বের হয়ে জিহাদ করবো না? কুরআনে তো আমি জিহাদের চেয়ে অধিক ফযীলতের কোনো আমল দেখছি না! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দেন, না। (তোমাদের জন্য) সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও ভালো জিহাদ হচ্ছে বাইতুল্লাহর হজ, হজে মাবরুর।” –সুনানে নাসায়ী: ২৬২৮

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (৮৫২ হি.) রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وقال ابن بطال: دل حديث عائشة على أن الجهاد غير واجب على النساء … وإنما لم يكن عليهن واجبا لما فيه من مغايرة المطلوب منهن من الستر ومجانبة الرجال، فلذلك كان الحج أفضل لهن من الجهاد. -فتح الباري (6/ 76)، كتاب الجهاد والسير، باب جهاد النساء، الناشر: دار الفكر (مصور عن الطبعة السلفية)

“ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটি এ কথার দলীল যে, নারীদের উপর জিহাদ ওয়াজিব নয়। … ওয়াজিব না হওয়ার কারণ হচ্ছে, নারীরা যে বিষয়গুলো পালনে আদিষ্ট, যেমন পর্দা করা, পুরুষদের থেকে আলাদা থাকা, জিহাদে এর বিপরীত বিষয়গুলোর সম্মুখীন হতে হয়। এ কারণে তাদের জন্য জিহাদের চেয়ে হজ উত্তম।” -ফাতহুল বারী (দারুল ফিকর): ৬/৭৬, কিতাবুল জিহাদ, নারীদের জিহাদ সংক্রান্ত অধ্যায়

বরং নিরুপায় পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে, নারীদের জন্য সরাসরি কিতালে অংশ গ্রহণ করা ঠিক নয়। অবশ্য জিহাদ যখন আমভাবে সবার উপর ফরয হয়ে যায়, যেমন বর্তমানে হয়ে আছে, তখন নারীদেরও নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ, দাওয়াত ও ‍মুজাহিদদের নুসরত ইত্যাদির মাধ্যমে জিহাদের অন্যান্য কাজে অংশ গ্রহণ করা জরুরি। -সূরা তাওবা (০৯): ৯১; সুনানে আবু দাউদ: ৪/১৫৯, হাদীস নং: ২৫০৪; (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ); আহকামুল কুরআন: ৩/১৪৮, ১৮৬ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ)

আরও জানতে দেখুন ফতোয়া নং ৪১২: নারীদের জন্য সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণের বিধান

ফতোয়া নং ১৮৫ “নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে আত্মহত্যাকারিনী কী গুনাহগার হবেন?

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২২-০৫-১৪৪৫ হি.

০৭-১২-২০২৩ ঈ.

Related Articles

Back to top button