বিবিধফাতওয়া  নং  ৪৫৪

জমি এগ্রিমেন্ট করার বিধান

জমি এগ্রিমেন্ট করার বিধান

জমি এগ্রিমেন্ট করার বিধান

জমি এগ্রিমেন্ট করার বিধান

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমার বাবা আমার নানার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দিয়ে ৪৫ শতক জমি এগ্রিমেন্ট নেন। জমি এগ্রিমেন্ট করা কি সুদের মধ্যে পড়ে? অনেকে বলে এটা সুদের মধ্যে পড়ে। শুনেছি, ‘বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমির মালিককে দিলে তা আর সুদের মধ্যে পড়ে না’। কথাটি কি সঠিক?

-হাসান

উত্তরঃ

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم، أما بعد:

আমাদের সমাজে জমি বন্ধক রাখার যে পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে (জমি বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করা হয় অতঃপর ঋণগ্রহীতা যতদিন ঋণ পরিশোধ না করে, ততদিন ঋণদাতা জমি ভোগ করতে থাকে) তা সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত। ঋণের বিনিময়ে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা সুদ। এই কারবারকে হালাল করার জন্য কেউ কেউ একটি বাহানার আশ্রয় নিতে চায়। তারা বাৎসরিক নামমাত্র কিছু টাকা কেটে দিয়ে মনে করে কারবারটি বৈধ হয়ে গেছে। যেমন ধরুন, কেউ এক বিঘা জমি বন্ধক দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করল। পাঁচ বছর পর ঋণ গ্রহীতা যখন ঋণ পরিশোধ করে জমি ফেরত নেয়, তখন ঋণদাতা জমির ভাড়া বাবদ প্রতি বছরের জন্য পাঁচশো/হাজার টাকা করে কেটে অবশিষ্ট টাকা ফেরত নেয়।

বস্তুত এতেও কারবারটি সুদ মুক্ত হয় না। কারণ, এখানে বাস্তবে আলাদা কোনো ভাড়া চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র কিছু টাকা ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত হয়। ঋণের চুক্তি না হলে জমির মালিক এত সামান্য ভাড়ায় রাজি হত না। অতএব আপনি ‘বছরে একটা নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা জমির মালিককে দিলে তা আর সুদের মধ্যে পড়ে না।’ মর্মে যা শুনেছেন তা সঠিক নয়।

হ্যাঁ, কারো যদি টাকার প্রয়োজন হয় এবং তার কাছে জমি থাকে, তাহলে উক্ত জমির মাধ্যমে টাকার প্রয়োজন পূরণের বৈধ ব্যবস্থা শরীয়তে আছে। তার জন্য ঋণ বা বন্ধকি চুক্তি করা যাবে না। বরং শুরু থেকে জমি ভাড়া দেয়ার চুক্তি করতে হবে। মনে করুন, একজনের নিকট এক বিঘা জমি আছে। তার পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রয়োজন। উক্ত জমিটির বার্ষিক ন্যায্য ভাড়া হচ্ছে দশ হাজার টাকা। তাহলে সে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া দিয়ে ভাড়া বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে জমির চুক্তিকৃত ভাড়া যদি ন্যায্য ভাড়া থেকে সামান্য কম-বেশি হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। তবে অস্বাভাবিক কম-বেশি করা যাবে না। তারপর মেয়াদ শেষে জমির মালিককে জমি ফেরত দিতে হবে, অর্থদাতা কোনো অর্থ ফেরত পাবেন না।

তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি তারা উভয়ে ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করতে সম্মত হন কিংবা অন্য কোনো শরঈ কারণে ইজারা চুক্তি শেষ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াকে; চুক্তির অবশিষ্ট মেয়াদের ভাড়া ফেরত দিতে হবে। যেমন উপর্যুক্ত উদাহরণে তিন বছর পর চুক্তি ভঙ্গ হলে বাকি দুই বছরের বিশ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ১৫০৬৮, ১৫০৬৯; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২১০৭৭; বাদায়েউস সানায়ে: ৬/১৪৬; রদ্দুল মুহতার: ৬/৪৮২;  আলফুলকুল মাশহুন ফি মা ইয়াতাআল্লাকু বিনতিফায়িল মুরতাহিনি বিলমারহুন-আব্দুল হাই লখনবি: ৩৬-৩৭; ইলাউস সুনান: ১৮/৬4; ইমদাদুল আহকাম: ৬/৯৫

দেখুন:

ফতোয়া নং ২৫৫, জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতি বৈধ হওয়ার কি কোন উপায় আছে?

ফতোয়া নং ১১২, জমি বন্ধকের প্রচলিত পদ্ধতির হুকুম কী?

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৩-০৯-১৪৪৫ হি.

২৪-০৩-২০২৪ ঈ.

Related Articles

Back to top button