জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ১৪৪

দ্বীনের যে কোনো কাজে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সাদাকা কি জিহাদের কাজে ব্যয় করা যাবে?

দ্বীনের যে কোনো কাজে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সাদাকা কি জিহাদের কাজে ব্যয় করা যাবে?

দ্বীনের যে কোনো কাজে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সাদাকা কি জিহাদের কাজে ব্যয় করা যাবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন-১

কেউ যদি সাধারণভাবে যে কোনো দ্বীনি কাজের কথা বলে বা মাদ্রাসার কাজের কথা বলে জিহাদের জন্য টাকা উঠান, তাহলে কি তা জায়েয হবে? এমনিভাবে কেউ যদি মজলুম মুসলমানদের সহায়তা করার জন্য বা জিহাদের জন্য এ কথা বলে টাকা উঠান যে, আমার এক বন্ধু খুব অসুস্থ তাকে কিছু সহায়তা করা প্রয়োজন। আর বাস্তবেও তার বন্ধু অসুস্থ হয়। তাহলে কি তা জায়েয হবে?

-আবু কুদামা

 

প্রশ্ন-২

কেউ যদি রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তা করার কথা বলে টাকা উঠান এবং সেই টাকা কাশ্মীর বা সিরিয়ার মুসলমানদের জন্য পাঠিয়ে দেন কিংবা জিহাদের যে কোনো খাতে ব্যয় করার জন্য দিয়ে দেন তাহলে কি তা জায়েয হবে?

উল্লেখ্য, বর্তমানে সাধারণ ভাবে রোহিঙ্গাদের কথা সবার কাছে বলা গেলেও কাশ্মীর বা সিরিয়ার কথা বলা যায় না। এজন্যই এটি করতে হয়। বিষয়টি পরিষ্কার করে জানালে অনেক উপকৃত হতাম।

-আব্দুল হাদী

 

উত্তর: 

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله و الصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد

কেউ যদি আমভাবে দ্বীনি কাজের কথা বলে বা মজলুম মুসলিমদের সহায়তার কথা বলে কিংবা জিহাদের কাজের কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করেন, তবে তা জিহাদের যে কোনো খাতেই দেয়া যাবে এবং যে কোনো অঞ্চলের মাজলুম মুসলিমদের জন্যই পাঠানো যাবে।

পক্ষান্তরে দাতাগণ যদি কোনো খাত, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নির্দিষ্ট করে দেন অথবা উত্তোলনকারী নির্দিষ্ট কোনো খাত, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করেন, তাহলে তা সে খাতেই ব্যয় করা জরুরি, ব্যতিক্রম করা জায়েয নয়। কাজেই নির্দিষ্ট কোনো মাদরাসা বা ব্যক্তির কথা বলে অর্থ উঠালে, তা অন্যত্র ব্যয় করা যাবে না। এমন করতে হলে দাতার অনুমতি নিতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/২৬৯, ৬/৬৯৯; আলমুজতাবা, যাহিদি রহ.: ১/৩৯৬, আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ: ২৮৯৬

প্রশ্নে যেমনটি বলা হল, বর্তমানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায়, কিন্তু কাশ্মীর বা সিরিয়ার মুসলিমদের জন্য করা যায় না, এটি একটি বাস্তব সমস্যা, একথা ঠিক। কারণ রোহিঙ্গা মুহাজির ভাইরা যদিও এখনো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, তবুও তারা বিশ্বের বহু অঞ্চলের মজলুম মুসলিমদের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন। বিশ্বের বহু অঞ্চলে এমন অসংখ্য মুসলিম আছেন, যারা তাদের চেয়েও করুণভাবে দিনাতিপাত করছেন এবং যাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো তাদের চেয়েও অনেক বেশি জরুরি। তাছাড়া অর্থ যেহেতু জিহাদের অন্যতম উপাদান, এজন্য আমাদের স্থানীয় ও বিদেশি তাগুত গোষ্ঠী জিহাদের অর্থের উৎসগুলো বন্ধ করার জন্য মরিয়া। যার কারণে যারা এপথে অর্থ ব্যয় করতে চান, তাদের অনেকে মুখলিস হওয়া সত্ত্বেও তাগুতের রোষানলে পড়ার ভয়ে তা থেকে বিরত থাকেন। এরকম আরো নানাবিধ সমস্যা এখানে আছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান এটা নয় যে, আমরা এক খাতের কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে তা অন্য খাতে দিব; রোহিঙ্গা মুসলিমদের কথা বলে তা কাশ্মীর বা সিরিয়ার মুসলিমদের জন্য পাঠিয়ে দেব। কারণ এটি শরীয়তে নাজায়েয। নাজায়েয পদ্ধতিতে দ্বীনের কাজ করার দায়িত্ব আল্লাহ আমাদের দেননি; যদিও আমাদের কাছে মনে হতে পারে, এ পদ্ধতিতে করলে দ্বীনের কাজগুলো অধিক তরান্বিত হত। বস্তুত শরীয়াহ সম্মত কাজেই আল্লাহ বারাকাহ রেখেছেন, যদিও বাহ্যত আমাদের দৃষ্টিতে তা কম ফলদায়ক ও ধীর গতির মনে হয়।

এখানে আমাদের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে, প্রকৃত বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা। বাস্তবতার আলোকে মুসলিম নির্যাতনের বিষয়গুলো তুলে ধরে এই পরিস্থিতিতে একজন মুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব ও করণীয় কি, তা শরীয়াহর আলোকে স্পষ্ট করা। অর্থ সংগ্রহের চেয়েও এবিষয়টির প্রতি আমাদের বেশি জোর দেয়া উচিত। যাতে প্রত্যেক মুমিন নিজের দায়িত্ব বুঝে, নিজ দায়িত্বে তার অর্থ নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে হলেও যথাস্থানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আমাদের জানামতে সহীহ মানহাজের জিহাদি সংগঠনগুলো অর্থ সংগ্রহের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয় এভাবে একজন মুসলিমকে তার দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার প্রতি। আর এটাই স্থায়ী ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি; যদিও তা হয় ধীর গতিতে।

আর আপাতত যারা জিহাদের বিষয়টি বুঝেন, তাদেরকে জিহাদের কথা বললাম, যারা না বুঝেন, তাদেরকে আমভাবে দ্বীনি কাজের কথা বললাম বা রোহিঙ্গা মুসলিমসহ যেখানে যেখানে অসহায় ও মজলুম মুসলিম আছে, আমভাবে তাদের সবার কথা বললাম। তাহলে এ অর্থ যে কোনো অঞ্চলেই দেয়া যাবে এবং জিহাদের যে কোনো খাতেই খরচ করা যাবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া কেউ নিজ থেকে মাদরাসা কিংবা রেহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য খাস করে দান করতে চাইলে, যে সংগঠনে এই খাতগুলো আছে, তারা তো এগুলো নিবেনই। সহীহ মানহাজের সংগঠনে এই খাতগুলোও থাকার কথা।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, দ্বীন ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হলে সে কাজের পদ্ধতিও শরীয়তসম্মত হতে হবে। অন্যথায় আমাদের অবস্থা হবে তাদের মতো, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,

{قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا (103) الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا (104)} [الكهف]

বল, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের কথা জানাব, যারা আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত? দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করছে, তারা ভাল কাজই করছে’!” -সূরা কাহাফ: ১০৩-১০৪

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৪-০১-১৪৪২ হি.

০৯-০১-২০২১ ইং

আরও পড়ুন 

যে কোনো দ্বীনী কাজের কথা বলে কি জিহাদের জন্য সদকা সংগ্রহ করা যাবে?

 

Related Articles

Back to top button