জিহাদের কাজে ব্যয়ের নিয়তে খতমে কুরআনের টাকা নেওয়ার বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমরা জানি, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন শরীফ খতম করে টাকা নেওয়া জায়েয নেই। তবে কেউ যদি এই নিয়তে টাকা নেয় যে, সে তা নিজে খরচ করবে না; বরং জিহাদের কাজে ব্যয় করবে। তাহলে কি তার জন্য এভাবে টাকা নেওয়া জায়েয হবে?
প্রশ্নকারী- আবরার
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا ومسلما
না, জায়েয হবে না। জিহাদ বা অন্য কোনো নেক কাজে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে হলেও এ ধরনের খতম পড়ে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না।
সাদাকা কবুল হওয়ার শর্ত হলো, তা হালাল সম্পদ থেকে হতে হবে। হারাম কামাই করে সাদাকা করলে সাওয়াব তো হবেই না, উল্টো হারাম কামাই এবং সাওয়াবের নিয়তে হারাম সাদাকার কারণে দ্বিগুণ গুনাহ হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا. -صحيح مسلم (دار الجيل): 3\85، الرقم: 2393، كتاب الزكاة، باب قبول الصدقة من الكسب الطيب وتربيتها
“হে লোক সকল, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পবিত্র। তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই কবুল করেন।” –সহীহ মুসলিম: ২৩৯৩
আরও ইরশাদ করেন,
لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ. -صحيح مسلم (دار الجيل): 1/ 140، الرقم: 557
“পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল হয় না। খিয়ানতের মাল থেকে সাদাকা কবুল হয় না।”–সহীহ মুসলিম: ৫৫৭
অন্য হাদীসে ইরশাদ করেন,
“من جمع مالا حراما، ثم تصدق به، لم يكن له فيه أجر، وكان إصره عليه”. -صحيح ابن حبان ت الأرنؤوط (8\153، الرقم: 3367)، ذِكْرُ الْبَيَانِ بِأَنَّ الْمَالَ إِذَا لَمْ يَكُنْ بِطَيِّبٍ أُخِذَ مِنْ حِلِّهِ لَمْ يُؤْجَرِ الْمُتَصَدِّقُ بِهِ عَلَيْهِ، وقال الشيخ شعيب: إسناده حسن. اهـ
“যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে, তারপর তা সাদাকা করবে, সে তাতে কোনও সাওয়াব তো পাবেই না, উল্টো এর গুনাহ তার ঘাড়ে বর্তাবে।” –সহীহ ইবনে হিব্বান: ৩৩৬৭
ভালো নিয়তের দ্বারা মুবাহ ও জায়েয বিষয় সাওয়াবে পরিণত হয়। এমনিভাবে সাওয়াবের কাজের সাওয়াব ভালো নিয়তের দ্বারা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু হারাম বিষয়, ভালো নিয়তের দ্বারা হালাল কিংবা সাওয়াবে পরিণত হয় না।
ইমাম গাযালী রহিমাহুল্লাহ (৫০৫ হি.) বলেন,
الطاعة تنقلب معصية بالقصد والمباح ينقلب معصية وطاعة بالقصد فأما المعصية فلا تنقلب طاعة بالقصد أصلا. -إحياء علوم الدين (دار المعرفة): 4/370، كتاب النية والإخلاص والصدقة، بيان تفصيل الأعمال المتعلقة بالنية
“নেক কাজ (বদ) নিয়তের কারণে গুনাহে পরিণত হয়। মুবাহ কাজ কখনও (বদ) নিয়তের কারণে গুনাহে, আবার কখনও (ভালো নিয়তের কারণে) নেক কাজে পরিণত হয়। কিন্তু গুনাহের কাজ কখনোই (ভালো) নিয়তের কারণে নেক কাজে পরিণত হয় না।” –ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন: ৪/৩৭০
তিনি বিষয়টিকে আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে বলেন,
اعلم أن الأعمال وإن انقسمت أقساما كثيرة …فهي ثلاثة أقسام معاص وطاعات ومباحات القسم الأول المعاصي وهي لا تتغير عن موضعها بالنية فلا ينبغي أن يفهم الجاهل ذلك من عموم قوله عليه السلام إنما الأعمال بالنيات فيظن أن المعصية تنقلب طاعة بالنية كالذي يغتاب إنسانا مراعاة لقلب غيره أو يطعم فقيرا من مال غيره أو يبني مدرسة أو مسجدا أو رباطا بمال حرام وقصده الخير فهذا كله جهل والنية لا تؤثر في إخراجه عن كونه ظلما وعدوانا ومعصية بل قصده الخير بالشر على خلاف مقتضى الشرع شر آخر فإن عرفه فهو معاند للشرع وإن جهله فهو عاص بجهله إذ طلب العلم فريضة على كل مسلم. -إحياء علوم الدين (دار المعرفة): 4/368-369، كتاب النية والإخلاص والصدقة، بيان تفصيل الأعمال المتعلقة بالنية
“শোনো, আমল যদিও অনেক ভাগে বিভক্ত … কিন্তু (মৌলিকভাবে) তা তিন প্রকারে সীমাবদ্ধ। ক. গুনাহ; খ. নেক; গ. মুবাহ।
প্রথম প্রকার হলো, গুনাহ। এই প্রকারের আমলসমূহ (ভালো) নিয়তের কারণে নিজের বৈশিষ্ট্য থেকে পরিবর্তিত হয় না। … যেমন কেউ কোন ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য অপর কারও গীবত করলো। অন্যের মাল থেকে কোনো গরীবকে খানা খাওয়ালো। হারাম মাল দ্বারা মসজিদ, মাদরাসা অথবা সরাইখানা বানিয়ে দিলো। এ সব ক্ষেত্রে তার নিয়ত ভালো। কিন্তু বাস্তবে এর সবটাই মূর্খতা। (ভালো) নিয়ত এ কাজগুলোকে জুলুম, সীমালঙ্ঘন ও গুনাহের গণ্ডি থেকে বের করে দিবে না। বরং শরীয়তের নিয়মের বিপরীতে মন্দ কাজের দ্বারা ভালো নিয়ত করা আরেকটি মন্দ কাজ। বিষয়টি বুঝার পরও তা করে থাকলে তো সে ‘মুআনিদ’ তথা জেনে বুঝে শরীয়ত প্রত্যাখ্যানকারী গণ্য হবে। অজ্ঞতাবশত করে থাকলে (অন্তত) অজ্ঞতার কারণে গুনাহগার হবে। কারণ (প্রয়োজন পরিমাণ) ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয।”–ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন: ৪/৩৬৮-৩৬৯
মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ (১০১৪ হি.) বলেন,
التصدق بالمال الحرام سيئة، ولا يمحو الله الأعمال السيئات بالسيئات، بل قال بعض علمائنا: من تصدق بمال حرام ورجا الثواب كفر، ولو عرف الفقير ودعا له كفر. –مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (5/ 1898)
“হারাম মাল সাদাকা করা গুনাহের কাজ। … বরং আমাদের মাযহাবের কোনো কোনো ইমাম তো বলেছেন, সাওয়াবের নিয়তে হারাম মাল সাদাকা করলে কাফের হয়ে যাবে। গরীব লোকটি (যাকে এ হারাম দান করা হয়েছে) হারামের বিষয়টি জানার পরও যদি দাতার জন্য দোয়া করে, তাহলে সেও কাফের হয়ে যাবে।”–মিরকাত: ৫/১৮৯৮
বুঝাই যাচ্ছে, বিষয়টি কত ভয়াবহ যে, ক্ষেত্র বিশেষে তা ঈমান নষ্টের দিকেও গড়াতে পারে। আল্লাহ তাআলা হেফাযত করুন।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৭-১১-১৪৪৪ হি.
১৭-০৬-২০২৩ ঈ.
আরও পড়ুনঃ বিয়ে করলে জিহাদ থেকে সরে পড়ার আশঙ্কা হলে করণীয় কী?