বিবিধফাতওয়া  নং  ৩৯৩

মৃত্যু যন্ত্রণা বিষয়ক দুটি হাদীসের সমন্বয় সাধন

মৃত্যু যন্ত্রণা বিষয়ক দুটি হাদীসের সমন্বয় সাধন

মৃত্যু যন্ত্রণা বিষয়ক দুটি হাদীসের সমন্বয় সাধন

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

মুমিনের মৃত্যু যন্ত্রণা সম্পর্কিত কিছু কিছু হাদীস থেকে জানা যায় যে, মুমিন বান্দার রূহ এমন সহজে তার দেহ ত্যাগ করে, যেভাবে পানির পাত্র উপুড় করে দিলে পানি গড়িয়ে পড়ে। আবার অন্য হাদীস দ্বারা জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর মৃত্যুর পূর্বক্ষণে পানির পাত্র থেকে হাত ভিজিয়ে ভেজা হাতে মুখ মোছা অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রণার কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী উপরের দুটি অবস্থা কি বিপরীত হয়ে গেলো না? এই দুই বর্ণনার মাঝে কীভাবে সমন্বয় সাধন করা হবে?

-ইবাদুর রহমান

 

উত্তরঃ

উভয় হাদীসই সহীহ। প্রথমটি মুসনাদে আহমাদসহ হাদীসের একাধিক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে([1] ), আর দ্বিতীয়টি সহীহ বুখারীসহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।( [2])

উভয় হাদীসে বাহ্যত কিছুটা বৈপরীত্য মনে হয়। তবে আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামি ও মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ; দুজন দুভাবে এই বৈপরীত্যের সমাধান দিয়েছেন। মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ১০১৪ হি.) বলেন,

 

والحاصل أن لا منافاة بين إضطراب الجسد وسهولة خروج الروح، بل قد يكون الأول سبباً للثاني، كما أن رياضة النفس وتضعيف البدن عند السادة الصفية الصوفية موجب لقوة الروح على العبادة والمعرفة.

‘মোটকথা, শারীরিক অস্থিরতা ও রূহ সহজে বের হওয়া; দুইয়ের মাঝে কোনও বৈপরীত্য নেই। বরং কখনও প্রথমটি দ্বিতীয়টির কারণ হয়। যেমন সুফিয়ায়ে কেরামের মতে আত্মার সাধনা ও শরীরকে দুর্বল করে রাখা, ইবাদত ও মারিফাতের ক্ষেত্রে রূহের শক্তির কারণ হয়’। ([3] )

তবে মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহর ব্যাখ্যার তুলনায় আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামি রহিমাহুল্লাহর ব্যাখ্যা অধিক যৌক্তিক মনে হয়। আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামি রহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৯৭৪ হি.) বলেন,

ولا ينافي ذلك ما مر أن المؤمن يشدد عليه عند النزع دون غيره، لأن محله فيما قبل خروج الروح.

আল্লামা হাইতামী রহিমাহুল্লাহর ব্যাখ্যার মর্মার্থ হচ্ছে, মুমিনের মৃত্যুর সময় কষ্ট হয়ে থাকে রূহ বের হওয়ার পূর্বে। আর রূহ সহজেই বের হয়ে যায়। তাহলে উভয়ের মাঝে বৈপরীত্য থাকে না।([4] )

তবে মনে রাখতে হবে, রূহ বের হওয়ার পূর্বের এই কষ্ট মর্যাদা কমতির প্রমাণ বহন করে না। যেমনটি হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলছেন,

وفي الحديث أن شدة الموت لا تدل على نقص في المرتبة، بل هي للمؤمن إما زيادة في حسناته، وإما تكفير لسيئاته.

‘হাদীসের আলোকে স্পষ্ট, মৃত্যুর কষ্ট মর্যাদা কমতির প্রমাণ বহন করে না। বরং তা মুমিনের নেকি বৃদ্ধির কারণ হয়, নতুবা তার গুনাহ মাফের কারণ হয়’। ( [5])

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (গুফিরা লাহু)

১৬-১২-১৪৪৪ হি.

০৫-০৭-২০২৩ ঈ.

[1] মুসনাদে আহমাদ, ৩০/৫০০, হাদীস নং: ১৮৫৩৪, ‍মুআসসাসাতুর রিসালাহ।

[2] সহীহ বুখারী, পৃ: ১৫৩০, হাদীস নং: ৬৫১০, মুআসসাসাতুর রিসালাহ নাশেরুন।

[3] মিরকাতুল মাফাতিহ, ৪/৯১, হাদীস নং: ১৬৩০, দারুল কুতুবিল ইলমিইয়া।

[4] ولكن تعقب عليه علي القاري بقوله: “فليس في محله، لأن حالة النزع هو وقت خروج الروح، فبين كلاميه تناقض بين”. -أقول- أياً ما كان المراد بالنزع؛ وقت خروج الروح أو قبل خروج الروح، ولكن أراد الهيتمي بقوله أن الشدة محلها قبل خروج الروح والسهولة محلها وقت خروج الروح. فلا منافاة بين الروايتين. والله أعلم بالصواب.

[5] ফাতহুল বারী, ২০/২৮৫, আররিসালাতুল আলামিইয়া

আরও পড়ুনঃ একটি হাদীসের তাহকীক

Related Articles

Back to top button