বিবিধফাতওয়া  নং  ৪৮৬

চাকরির জন্য কি দাড়ি কাটা যাবে?

চাকরির জন্য কি দাড়ি কাটা যাবে?

প্রশ্ন:

আমি মামাদের বাড়িতে বড় হয়েছি। মামারাই দেখা শোনা করে বড় করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাকে যখন থেকে দীনের বুঝ দিয়েছেন সাধ্যমতো দীন পালনের চেষ্টা করছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে পড়ছি। দাড়িও রেখেছি। কিন্তু মামারা একে তেমন পছন্দ করছেন না। অতি সম্প্রতি তাঁরা আমার জন্য একটি চাকরি ঠিক করেছেন। যার জন্য আমাকে দাড়ি কাটতে হয়েছে। সামনেও আরও চার-পাঁচ বার কাটতে হতে পারে। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? দাড়ি কাটতে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে। এদিকে আমার চাকরিটাও দরকার। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে অনেক উপকৃত হবো।

-মুহাম্মদ রাফিদ

উত্তর:

লম্বায় এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তাই চাকরির জন্য বা মামাদের সন্তুষ্ট করার জন্য দাড়ি মুণ্ডানো কিংবা একমুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে কাটা জায়েয হবে না। হাদীসে এসেছে,

عن علي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة لبشر في معصية الله». –صحيح البخاري (9/88 رقم: 7257 ط. دار طوق النجاة) صحيح مسلم (3/1469 رقم: 1840 ط. دار إحياء التراث) مصنف ابن أبي شيبة (18/243 رقم: 34398 ط. دار القبلة) واللفظ له.

“আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” –সহীহ বুখারী: ৯/৮৮ হাদীস: ৭২৫৭ (দারু তাওকিন নাজাহ); সহীহ মুসলিম: ৩/১৪৬৯ হাদীস: ১৮৪০ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ১৮/২৪৩ হাদীস: ৩৪৩৯৮ (দারুল কিবলাহ)

উমারাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,

نزل معضد إلى جنب شجرة، فقال: ما أبالي أطعت رجلا في معصية الله، أو سجدت لهذه الشجرة من دون الله. -مصنف ابن أبي شيبة (18/245 رقم: 34402 ط. دار القبلة)

“(বিশিষ্ট তাবেয়ী) মিদাদ (রহিমাহুল্লাহ) একটি গাছের পাশে অবতরণ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা, আর আল্লাহর পরিবর্তে এই গাছকে সিজদা করা আমার নিকট বরাবর।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ১৮/২৪৩ বর্ণনা নং: ৩৪৪০২ (দারুল কিবলাহ)

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

«من التمس رضى الله بسخط الناس رضي الله عنه، وأرضى الناس عنه، ومن التمس رضا الناس بسخط الله سخط الله عليه، وأسخط عليه الناس». -رواه الترمذي (4/188 رقم: 2414 ط. دار الغرب الإسلامي) وابن حبان في «صحيحه» (1/510 رقم: 276 ط. الرسالة) مرفوعا، ورواه ابن الجعد في «مسنده» (ص: 241 رقم: 1593 ط. مؤسسة نادر) موقوفا، وقال الشيخ عوامة في تعليقه على المصنف (16/109 ط. دار القبلة) : «والذي يبدو أن هذا الاختلاف ليس من قبيل الاختلاف في رفع الحديث ووقفه على سبيل الوهم، بل كلا الوجهين صحيح». وقال الشيخ الألباني في «سلسلة الأحاديث الصحيحة» (5/394) : «ومجيئه من وجوه مرفوعا يقوي رفعه … وجملة القول أن الحديث قد صح عن عائشة مرفوعا وموقوفا، ولا منافاة بين الأمرين». وله شاهد من حديث ابن عباس، أخرجه الطبراني في «المعجم الكبير» (11/ 268 رقم: 11696 ط. مكتبة ابن تيمية) وقال المنذري في «الترغيب والترهيب» (3/200 ط. مكتبة مصطفى البابي الحلبي)  : «إسناده جيد قوي».

“যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন। পক্ষান্তরে যে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও অসন্তুষ্ট করে দেন।” -জামে তিরমিযী: ৪/১৮৮ হাদীস: ২৪১৪ (দারুল গরবিল ইসলামী); সহীহ ইবনে হিব্বান: ১/৫১০ হাদীস: ২৭৬ (আর-রিসালাহ)

আপনি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে দাড়ি রাখুন। এতে যদি আপনার চাকরি চলেও যায় তাহলেও ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনাকে এরচেয়ে উত্তম রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا -الطلاق: 2، 3

“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ খুলে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করে না। যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহ তাঁর বিষয় পূর্ণ করেই ছাড়েন। সবকিছুর জন্যই তিনি একটি সীমা নির্ধারিত করেছেন।” -সূরা তালাক ৬৫: ০২-০৩

ইমাম তাবারি রহ. (৩২১ হি.) বর্ণনা করেন,

أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ كَانَ يَقُولُ: ….. أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: لَا يَقْدِرُ رَجُلٌ عَلَى حَرَامٍ ثُمَّ يَدَعُهُ، لَيْسَ بِهِ إِلَّا مَخَافَةُ اللَّهِ، إِلَّا أَبْدَلَهُ اللَّهُ فِي عَاجِلِ الدُّنْيَا قَبْلَ الْآخِرَةِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ذَلِكَ. –تفسير الطبري (17/446 ط. الرسالة)

“…রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যে কোনো ব্যক্তি কোনো হারাম বিষয়ে সক্ষম হয়, তারপর একমাত্র আল্লাহর ভয়ে তা পরিহার করে, তাকে আল্লাহ আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে দুনিয়াতেই এমন বস্তু দান করেন, যা তার চেয়ে উত্তম।” -তাফসীরে তাবারী: ১৭/৪৪৬ (আর-রিসালাহ)

এক হাদীসে এসেছে,

إنك لن تدع شيئا اتقاء الله عز وجل، إلا أعطاك الله خيرا منه. -رواه احمد (34/342 رقم: 20738 ط. الرسالة) وقال الهيثمي في «مجمع الزوائد» (10/ 296 ط. مكتبة القدسي) : «رجاله رجال الصحيح».

“তুমি আল্লাহর ভয়ে যেকোনো জিনিস বর্জন করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করবেন।” -মুসনাদে আহমাদ: ৩৪/৩৪২ হাদীস নং: ২০৭৩৮ (আর-রিসালাহ)

উল্লেখ্য, এখনো এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে চাকরির জন্য দাড়ি প্রতিবন্ধক নয়। বর্তমান চাকরি চলে গেলে আপনি সেখানে যান। প্রয়োজনে ছোট চাকরি করেন। দ্বীন রক্ষার স্বার্থে এতটুকু বিসর্জন তো দিতেই হবে। বড় চাকরির আশায় শরীয়তবিরোধী কাজ করা জায়েয হবে না। তাও সম্ভব না হলে ছোট-খাটো কোন ব্যবসা করুন বা অন্য কোন পেশা অবলম্বন করুন। মনে রাখবেন ইসলাম কোন হালাল পেশাকে অবজ্ঞা করে না। আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদার মাপকাঠি তো তাকওয়া ও তাঁর ভয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ. -الحجرات : 13

‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী ওই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক মুত্তাকি।’ -সুরা হুজুরাত (৪৯): ১৩

দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। মুসা আলাইহিস সালাম দশ বছর পর্যন্ত ছাগল চরিয়েছেন। বরং আমাদের নবিজীসহ সকল নবীই ছাগল চরিয়েছেন। (দেখুন—সুরা আম্বিয়া (২১) : ৮০; সুরা সাবা (৩৪) : ১০ সুরা কাসাস (২৮) : ২৭; সহীহ বুখারী: ২২৬২, ২০৭২; সহীহ মুসলিম: ২৩৭৯)

পরের বোঝা হওয়ার অসম্মান থেকে যেকোনো হালাল পেশা অবলম্বন করে নিজের উপার্জন নিজে করা অনেক বড় সম্মান ও মর্যাদার বিষয়; চাই তা বাহ্যত যত ছোট পেশাই হোক না কেন।

আরও দেখুন,

ফাতওয়া: ৭১- দাড়ি রাখার হুকুম কী?

ফাতওয়া: ১৫- ইসলামে আত্মহত্যা করার কোনো উপায় আছে?

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

০১-০১-১৪৪৫ হি.

০৮-০৭-২০২৪ ঈ.

Related Articles

Back to top button