ফাতওয়াফাতওয়া  নং  ৫৩৯

স্বল্প মূল্যে পণ্য কিনে উদ্বৃত্ত অংশ কি সুপারভাইজার রেখে দিতে পারবে?

স্বল্প মূল্যে পণ্য কিনে উদ্বৃত্ত অংশ কি সুপারভাইজার রেখে দিতে পারবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

আমি একটি দোকানের সুপারভাইজারের দায়িত্বে আছি। দোকানের সম্পূর্ণ দায়িত্বই আমার কাছে। আমি প্রতিদিনের বিক্রির নির্দিষ্ট একটি অংশ প্রতিদিনই মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিই। মাস শেষে সে আমাকে নির্ধারিত বেতন দেয়। আমার বেতন একই দোকানে থাকা ভারতীয় এক কর্মচারীর বেতনের চেয়ে কম। নিয়োগের সময় আমার সাথে তার থাকা-খাওয়া ও বেতনের ব্যাপারে কথা হয়েছে। আমি তার দোকানে কাজ করবো, বিনিময়ে সে আমাকে থাকা-খাওয়া ও বেতন দিবে। এর বাহিরে অন্য কোনো কাজ করতে পারব, কি পারব না, এ নিয়ে কোনও কথা হয়নি।

এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমি যখন দোকানের জন্য কোনো পণ্য কিনি তখন যদি উক্ত পণ্যের কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে কিনি এবং দোকানের বিলে স্বাভাবিক মূল্য উল্লেখ করি, তাহলে বাকি টাকাটা কি আমার জন্য বৈধ হবে? যেমন, টিপ বিস্কুটের কোম্পানির নির্ধারিত মূল্য ১০০ টাকা। এ টাকাতে ক্রয় করে বিক্রি করলেই দোকানের লাভ থাকে। এখন আমি যদি আমার চেষ্টা প্রচেষ্টার মাধ্যমে ওই বিস্কুট ১০০ টাকার জায়গায় ৮০ টাকা দিয়ে ক্রয় করি এবং বিলে ১০০ টাকা লিখি তাহলে বাকি ২০ টাকা কি আমার জন্য বৈধ হবে?

-আলতাফ হুসাইন

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد

 

জী না, প্রশ্নোক্ত কাজটি জায়েয হবে না। আপনি যেহেতু মালিকের পক্ষ থেকে উকিল হয়ে কিনছেন, তাই মালিকের অনুমতি ব্যতীত ক্রয়মূল্যের বেশি নেওয়া মিথ্যা, প্রতারণা ও আমানতের খেয়ানত বলে গণ্য হবে। আপনি নিজস্ব চেষ্টার মাধ্যমে কম মূল্যে ক্রয় করতে পারলে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ। আপনার সুযোগ থাকলে মালিকের প্রতি এতটুকু কল্যাণকামিতা আপনার নৈতিক দায়িত্ব।

মালিক যদি বাস্তবেই ন্যায্য বেতন না দিয়ে আপনার প্রতি অন্যায় করেন, তবুও আপনি একারণে তার সাথে অন্যায় করতে পারবেন না। বরং আপনাকে নিষ্ঠা ও সততার সাথেই কাজ করে যেতে হবে। এভাবে সততার সঙ্গে কাজ করলে হয়তো একসময় মালিকও আপনার প্রতি খুশি হয়ে বেতন বাড়িয়ে দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ (34) وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ. –السجدة: 34-35

“ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দকে প্রতিহত কর এমন পন্থায়, যা হবে উৎকৃষ্ট। ফলে যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা আছে, সে সহসাই তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। আর এ গুণ কেবল তাদেরকেই দান করা হয়, যারা সবর করে এবং এ গুণ কেবল তাদেরকেই দান করা হয় যারা মহাভাগ্যবান।” –সূরা সাজদাহ ৪১: ৩৪-৩৫

হাদীসে এসেছে,

صل من قطعك، وقل الحق ولو على نفسك، وأحسن إلى من أساء إليك. –رواه ابن الأعرابي في “معجمه” (2/ 744 رقم: 1507 ط. دار ابن الجوزي) وأبو عمرو بن السماك كما في “سلسلة الأحاديث الصحيحة” (4/542) وقال الشيخ الألباني: هذا إسناد صحيح.

“যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখ। হক কথা বলো যদিও তা নিজের বিপক্ষে হয় এবং যে তোমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে তুমি তার সাথে সদাচার করো।” -মুজামু ইবনিল আরাবী: ২/৭৪৪ হাদীস: ১৫০৭

অপর হাদীসে নবীজী ইরশাদ করেন,

لا تكونوا إمعة، تقولون: إن أحسن الناس أحسنا، وإن ظلموا ظلمنا، ولكن وطنوا أنفسكم، إن أحسن الناس أن تحسنوا، وإن أساءوا فلا تظلموا. -رواه الترمذي (3/ 432 رقم: 2007 ط. دار الغرب الإسلامي) وقال: هذا حديث حسن.

“তোমরা অন্ধ অনুকরণশীল হয়ো না যে, তোমরা বলবে, লোকেরা যদি সদ্ব্যবহার করে তবে আমরাও সদ্ব্যবহার করব। আর তারা যদি অন্যায় আচরণ করে তবে আমরাও অন্যায় আচরণ করব। বরং তোমরা নিজেদের এতে অভ্যস্ত করে নাও যে, লোকেরা সদাচরণ করলে তো সদাচরণ করবেই এমনকি তারা অসদাচার করলেও তোমরা অন্যায় আচরণ করবে না।” -জামে তিরমিযী: ৩/৪৩৩ হাদীস: ২০০৭ (দারুল গরবিল ইসলামী)

হাঁ, মালিক আপনার সঙ্গে কৃত চুক্তি ঠিক না রাখলে আপনি তাকে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন, চুক্তি নবায়ন করতে পারে কিংবা ইচ্ছা করলে তার কাজ ছেড়েও দিতে পারেন।

আরো দেখুন: সহীহ বুখারী: ৩/১৫০ ও ৪/২০৭ হাদীস: ২৫৫১, ৩৬৪২ (দারু তাওকিন নাজাহ); আত-তামহীদ: ২/১০৮ (ওযারাতুল আওকাফ, মরক্কো); আল-মুহিতুল বুরহানী: ১৫/৮১ (ইদারাতুল কুরআন, করাচি); আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ৩/৫৭৫ (দারুল ফিকর); রদ্দুল মুহতার: ৫/৫১৮, ৫১৯ (দারুল ফিকর); মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, পৃ: ২৭৪ ধারা: ১৪৬৩; ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমা: ১৪/২৭৩ ফাতাওয়া নং: ৮২৬৭ (রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুসিল ইলমিয়্যাহ); ইমদাদুল আহকাম (মাকতাবায়ে দারুল উলুম, করাচি): ৪/১৪৪; কিতাবুন নাওয়াযিল: ১২/৩৪ (আল-মাজলিসুল ইলমী, মুরাদাবাদ)

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৫-০৮-১৪৪৬ হি.

১৫-০২-২০২৫ ঈ.

আরও পড়ুনঃ সিগারেট কোম্পানিতে চাকরি করার বিধান

Related Articles

Back to top button