মান্নত, কসম, কাফফারাফাতওয়া  নং  ৫৫৪

মান্নতের পশু হীলা করার বিধান

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

মান্নতের পশু হীলা করার বিধান

প্রশ্ন:

এক ব্যক্তি মান্নত করছে, একটি বকরি ইয়াতীম ও গরীবদের খাওয়াবে। মনে মনে নিয়ত ছিল, কোনো মাদরাসায় দিবে। এখন জানার বিষয় হলো,

এক. কোনো ইয়াতীমকে দিয়ে এ মান্নতের হিলা করা কি ঠিক হবে?

দুই. যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কাউকে দিয়ে হিলা করা কি ঠিক হবে?

তিন. ইয়াতীম ছাড়া যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত অন্য কাউকে দিয়ে দিলে কি মান্নত আদায় হবে?

চার. বর্তমানে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে যেভাবে হিলা করা হয়ে থাকে, তা সঠিক কি না?

পাঁচ. কেউ মান্নত করল, আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠলে মাদরাসার ছাত্র-উস্তাদেরকে খানা খাওয়াবো। এ খাবার কি ছাত্র-উস্তাদদের মধ্যে ধনী-গরীব সবাই খেতে পারবে?

-আবদুল গনী

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

حامدا ومصليا ومسلما

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মান্নতকারী যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো গরীব মুসলিমকে একটি ছাগল দান করে দিলেই তার মান্নত আদায় হয়ে যাবে। ইয়াতীম হওয়া জরুরি নয়। ছাগল না দিয়ে ছাগলের মূল্য দেয়ারও অবকাশ আছে। মাদরাসার গরীব কোনো ছাত্র বা উস্তাদকেও দিতে পারেন। বাহিরের কাউকে দেয়ার পরিবর্তে মাদরাসায় দিলে গরীবের সেবার পাশাপাশি ইলমের খেদমতেরও সাওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। মান্নত করার সময় মনে মনে মাদরাসায় দেওয়ার নিয়ত থাকার কারণে মাদরাসায়ই দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। -আদ্দুররুল মুখতার: ৩/৭৪১, কিতাবুল আয়মান, দারুল ফিকর

মান্নতকারী ছাগল বা ছাগলের মূল্য মাদরাসায় দেয়ার পর মুহতামিম সাহেব মাদরাসার গরীব ছাত্র-উস্তাদ ব্যতীত বাহিরের কোনো গরীবকে তা দান করতে পারবেন না। কারণ মুহতামিম হচ্ছেন দাতার উকিল। উকিলের জন্য মুয়াক্কিলের নির্দেশের খেলাফ করার সুযোগ নেই। -ফতোয়া তাতারখানিয়া: ৩/২২৯, যাকাত, যাকারিয়া; রদ্দুল মুহতার: ২/২৬৯, যাকাত, দারুল ফিকর; ইমদাদুল আহকাম: ৩/৯০, ৯২, যাকাত, যাকারিয়া

গরীব ব্যক্তিকে দান করার ক্ষেত্রে তাকে পূর্ণ মালিক বানিয়ে দিতে হবে। সে চাইলে তা নিজে ভোগ করতে পারে, চাইলে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে দানও করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। হাঁ, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দানের ফযীলত তুলে ধরে তাকে উৎসাহিত করতে পারেন। উৎসাহিত হয়ে স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করে দিলে হীলা সহীহ বলে গণ্য হবে।

তা না করে যদি শুধু নামমাত্র হাত বদল করা হয়, যেখানে গ্রহীতা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়; বরং সে মনে করে—তাকে অবশ্যই দান করে দিতে হবে, না দিলে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে গ্রহীতাকে মালিক বানানো হয়নি। এই পদ্ধতিতে হিলা সহীহ হবে না। বলা বাহুল্য, কোনো কোনো মাদরাসায় এমনটি হয়ে থাকে, যা সহীহ নয়। এতে কর্তৃপক্ষ গোনাহগার হবেন। -ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ): ৮/১৮১-১৮২, যাবায়েহ-উযহিয়্যা, যাকারিয়া; কেফায়াতুল মুফতি: ৪/৩০৩-৩০৫, যাকাত, দারুল ইশাআত; ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ: ৬/৮৩, যাকাত, দারুল ইশাআত এবং ১৫/৫৯১; আল-ইলম ওয়াল উলামা: ৪২০-৪২৩, ইদারায়ে ইফাদাতে আশরাফিয়া-লখনৌ; ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ): ৩/৫৩২, কিতাবুয যাকাত।

একইভাবে নাবালেগকে দিয়ে যদি কাজটি করানো হয় এবং সে স্বেচ্ছায় মাদরাসায় দান করে দেয়, তাও সহীহ হবে না। কারণ সে নিজ সম্পদ দান করতে পারবে না। দান করলে কারও জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ নয়; বরং তা তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার (শামীসহ): ৬/১৭৩, কিতাবুল মাযুন, দারুল ফিকর; হিন্দিয়া: ৫/১২৯, কিতাবুল মাযুন, আশরাফিয়্যা; আল-ইলম ওয়াল উলামা (থানভী রহিমাহুল্লাহ): ৩৮৪, লখনৌ

আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনি এক থেকে চার নং প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

পাঁচ নং প্রশ্নের উত্তর:

হাঁ, এ সুরতে মান্নতকারী যদি ধনী-গরীব সকলকে খাওয়াতে চান, তাহলে সকলেই খেতে পারবেন। গরীবদের অংশ মান্নত গণ্য হবে, ধনীদের অংশ সাধারণ দাওয়াত গণ্য হবে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া (জাদিদ): ৫/৫৩৯, আয়মান, যাকারিয়া

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি উফিয়া আনহু

২২-১০-১৪৪৬ হি.

২১-০৪-২০২৫ ইং

Related Articles

Back to top button