বিবিধফাতওয়া  নং  ৪৭৩

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ প্রসঙ্গে

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ প্রসঙ্গে

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ প্রসঙ্গে

জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ গ্রহণ প্রসঙ্গে

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

আমার এক বন্ধুর তিন বছর বয়সের একটা মেয়ে আছে। সে আপাতত কোনো সন্তান নিতে চাচ্ছে না। জানার বিষয় হলো, তার স্ত্রীর জন্য ঔষুধ খাওয়া কিংবা অন্য এমন কিছু ব্যবহার করা জায়েয হবে কিনা যাতে এখন সন্তান না হয়?

-মাহদি হাসান

 

উত্তরঃ

আসলে জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা যদি বলেন, তাহলে বলতে হবে এটা বান্দার পক্ষে সম্ভব নয়। জন্ম মৃত্যু সম্পূর্ণই আল্লাহর হাতে। বান্দা কখনোই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং পারবে না। এজন্য জন্মনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ের কেরামের এক প্রশ্নের উত্তরে ইরশাদ করেন,

…. ما مِن نَسَمَةٍ كَائِنَةٍ إلى يَومِ القِيَامَةِ إلَّا وهي كَائِنَةٌ. وراه الخدري، الرقم: 4138، ومسلم،  الرقم: 1438

“যে সত্তা কিয়ামতের পূর্বে জন্মগ্রহণ করার, তা অবশ্যই জন্মগ্রহণ করবে।”

হাঁ, বান্দাকে আল্লাহ যে সক্ষমতা দিয়েছেন, তা হলো গর্ভ নিরোধক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বান্দা গর্ভ নিরোধক কোনো উপায় অবলম্বন করলে আল্লাহর ইচ্ছায় তা কার্যকর হতেও পারে, নাও হতে পারে। এজন্যই দেখা যায়, অনেকে গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও তাদের সন্তান হয়ে যাচ্ছে।

ঔষুধ বা অন্য কোনো মাধ্যমে অস্থায়ী কোনো গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বৈধ। তবে কোনো ওযর ব্যতীত এমনটি করা ঠিক নয়। ইসলাম সন্তান লাভের চেষ্টা ও বেশি বেশি সন্তান কামনায় উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ. -البقرة: 187

“সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাক। …. সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন, তা অন্বেষণ করো।” -সূরা বাকারা ০২:১৮৭

আয়াতের তাফসীরে ইমাম আবুস সাউদ রহিমাহুল্লাহ (৯৮২ হি.) বলেন,

أي واطلُبوا ما قدّره الله لكم وقرَّره في اللوحِ من الوَلدِ وفيه أن المباشِرَ ينبغي أنْ يكونَ غرضُه الولدَ فإنه الحكمةُ في خلق الشهوة وشرع النكاحِ لا قضاء الشهوة. -تفسير أبي السعود (1/201 دار إحياء التراث العربي – بيروت)

“অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের তাকদীরে যে সন্তান রেখেছেন, তা অন্বেষণ করো। এ থেকে বুঝে আসে, সহবাসের সময় সন্তান উদ্দেশ্য হওয়াই কাম্য। এটাই মানুষের মাঝে যৌন কামনা প্রদান ও বিয়ে বৈধ করার হিকমত; (শুধু) যৌনাকাঙ্ক্ষা পূরণ করা নয়।” -তাফসীরে আবুস সাউদ: ১/২০১ (দারু ইহইয়ায়িত তুরাস)

হাদীসে এসেছে,

عن مَعْقِلِ بنِ يسارٍ، قال: جاء رجل إلى النبيٌ – صلَّى الله عليه وسلم – فقال: إني أصبتُ امرأةً ذاتَ حَسَبٍ وجَمَالٍ، وأنها لا تَلِدُ، أفاتزوجُها؟ قال: «لا» ثم أتاهُ الثانيةَ فنهاه، ثم أتاه الثالثةَ، فقال: «تزوجوا الوَدُودَ الوَلُودَ فإني مكاثِرٌ بِكُمُ الأمم». -سنن أبي داود ت الأرنؤوط (3/ 395 رقم:  2050 دار الرسالة العالمية، الطبعة: الأولى، 1430 هـ) صحيح ابن حبان – (9/ 364 رقم: 4057 مؤسسة الرسالة، بيروت الطبعة: الأولى، 1408 ه) وقال الحافظ ابن الصلاح في «شرح مشكل الوسيط» (3/ 528 دار كنوز إشبيليا، السعودية، الطبعة: الأولى، 1432 ه) : «وهو حسن الإسناد». وقال الإمام ابن دقيق العيد في «الإلمام بأحاديث الأحكام» (1/ 493 دار النوادر، سوريا الطبعة: الأولى، 1434 هـ) : «رواه مُستَلِم بن سعيد، وقال أحمد بن حنبل فيه: شيخٌ ثقةٌ.«

“মাকিল বিন ইয়াসার রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলো, আমি অভিজাত বংশের এক সুন্দরী রমণীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেন, না। অতঃপর সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞাসা করলে তখনও নিষেধ করলেন। তৃতীয়বার আসলে বললেন, তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান-প্রসবা নারীদের বিয়ে করো। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে (পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গর্ব করবো।” -সুনানে আবু দাউদ: ৩/৩৯৫ হাদীস: ২০৫০ (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ)

উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

ما آتي النساء على لذة ، فلولا الولد ما أردتهن. -مصنف ابن أبي شيبة (10/ 206 رقم: 19597 ط. دار القبلة)

“আমি যৌন সুখ লাভের জন্য স্ত্রী-সহবাস করি না। যদি সন্তান কামনা না থাকতো তবে আমি স্ত্রীদের চাইতাম না।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ১০/২০৬ বর্ণনা নং: ১৯৫৯৭ (দারুল কিবলাহ)

অপর বর্ণনায় এসেছে,

والله ما أقربكن شهوة، ولكني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «تزوجوا الودود الولود فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة». -تاريخ بغداد ت بشار (14/ 353 ط. دار الغرب الإسلامي) مسند الفاروق لابن كثير (2/ 132 رقم: 499 ط. دار الفلاح)

“আল্লাহর শপথ! আমি যৌনাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তোমাদের কাছে আসি না। বরং (এজন্য আসি যে) আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান-প্রসবা নারীদের বিয়ে করো। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে (পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গর্ব করবো।” –তারিখে বাগদাদ: ১৪/৩৫৩ (দারুল গরবিল ইসলামী); মুসনাদুল ফারুক: ২/১৩২ হাদীস নং: ৪৯৯ (দারুল ফালাহ)

যেহেতু আপনার বন্ধুর সন্তানের বয়স তিন বছর হয়ে গেছে এবং প্রশ্নে কোনো ওযরের কথা উল্লেখ নেই, তাই আমাদের ধারণা, আপনার বন্ধুর সন্তান গ্রহণে নিরুৎসাহিত হওয়ার মতো বাস্তবসম্মত কোনো ওযর নেই। এক্ষেত্রে তাদেরকে অধিক সন্তান কামনার ফযীলত ও গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করা চাই। কিন্তু তারপরও যদি তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান, তাহলে তার স্ত্রী অস্থায়ী কোনো গর্ভ নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে আরও জানতে নিম্মোক্ত ফাতওয়াটি দেখুন,

ফাতওয়া: ৩৯৭ সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে কি দেরি করার অবকাশ আছে?

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৬-১২-১৪৪৫ হি.

২৩-০৬-১৪২০২৪ ঈ.

Related Articles

Back to top button