বিবিধফাতওয়া  নং  ৩৯০

জাদু কাটানোতে সূরা ফালাক ও নাসের চিকিৎসা পদ্ধতি

জাদু কাটানোতে সূরা ফালাক ও নাসের চিকিৎসা পদ্ধতি

জাদু কাটানোতে সূরা ফালাক ও নাসের চিকিৎসা পদ্ধতি

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

সূরা ফালাক ও নাস কি যাদু কাটার জন্য নাযিল হয়েছে? যদি তা-ই হয়, তাহলে তার পদ্ধতি কী?

-আবদুল হক

উত্তরঃ  

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ইহুদী জাদু করে, ফলে তিনি জাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং অসুস্থতা বোধ করেন। আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে পাঠিয়ে জাদুর বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করেন। কোন কূপে যাদুর উপকরণ রাখা হয়েছে,তাও জানিয়ে দেন। ওই সময়ই এ সূরাদ্বয় নাযিল করা হয়। হাদীসে এসেছে,

عن زيد بن أرقم قال: سحر النبي -صلى الله عليه وسلم- رجل من اليهود. قال: فاشتكى، فأتاه جبريل، فنزل عليه بالمعوذتين وقال: “إن رجلا من اليهود سحرك، والسحر في بئر فلان”. قال: فأرسل عليا فجاء به، قال: فأمره أن يحل العقد “ويقرأ” آية، فجعل يقرأ ويحل, حتى قام النبي -صلى الله عليه وسلم- كأنما أنشط من عقال. –مسند عبد بن حميد: 271 ط. دار بلنسية.

قال المحقق الشيخ مصطفى العدوي: سند صحيح. اهـــــ. – مسند عبد بن حميد: 1/228 ط. دار بلنسية.  قال العلامة ابن حجر العسقلاني رحمه الله تعالى:

قوله: “وفي ذلك نزلت المعوذتان”، انتهى، وهذا ذكره الثعلبي في “تفسيره” من حديث ابن عباس تعليقا، ومن حديث عائشة أيضا تعليقا، وطريق عائشة صحيح؛ أخرجه سفيان بن عيينة في تفسيره رواية أبي عبيد الله عنه، عن هشام بن عروة، عن أبيه، عن عائشة، فذكر الحديث، وفيه “ونزلت: {قل أعوذ برب الفلق}. اهـــ. – التلخيص الحبير: 4/110 ط. دار الكتب العلمية.

قال الشيخ العلامة الألباني رحمه الله تعالى:

زيادة نزول جبريل بـ (المعوذتين) ، وسندها صحيح أيضا. ولها شاهد من حديث عمرة عن عائشة. اهـــــ. – سلسلة الأحاديث الصحيحة: 6/617 ط. مكتبة المعارف –الرياض

“যায়েদ ইবনে আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ইহুদী জাদু করলো। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অতঃপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আসলেন এবং তাঁর উপর ফালাক-নাস নাযিল করলেন। তিনি আরও বললেন, এক ইহুদী আপনাকে জাদু করেছে এবং জাদুর উপকরণ অমুক কূপে রেখেছে। যায়েদ ইবনে আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন, হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু (জাদুর উপকরণগুলো সে কূপ থেকে উঠিয়ে) নিয়ে আসলেন। তিনি আরও বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে গিরা খুলতে এবং আয়াত পড়তে নির্দেশ করলেন। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু আয়াত পড়তে লাগলেন এবং গিরা খুলতে লাগলেন। এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেন, যেন তাঁকে বাঁধন মুক্ত করা হয়েছে।” -মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ, হাদীস নং: ২৭১

 

জাদু কাটার পদ্ধতি

এতো গেলো শানে নুযুল সংক্রান্ত আলোচনা। আর কীভাবে জাদু কাটা হবে –এ বিষয়ে কথা হলো, ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহ রহিমাহুল্লাহ এর কিতাবে একটি পদ্ধতি বর্ণিত আছে। যেটা পরীক্ষিত ও অনেক কার্যকর বলে উলামায়ে কেরামের অনেকেই মতামত দিয়েছেন। ইমাম ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وفى كتب وهب بن منبه أن يأخذ سبع ورقات من سدر أخضر فيدقه بين حجرين ثم يضربه بالماء ويقرأ فيه آية الكرسى وذوات قل، ثم يحسو منه ثلاث حسوات ويغتسل به؛ فإنه يذهب عنه كل ما به إن شاء الله، وهو جيد للرجل إذا حبس عن أهله. اهــــ. – شرح صحيح البخارى لابن بطال: 9/446 ط. مكتبة الرشد – السعودية، الرياض.

“ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহের কিতাবে আছে, (জাদু কাটার জন্য) সাতটি সবুজ বড়ই পাতা নিবে এবং সেগুলোকে পাথর দ্বারা পিষবে। অতঃপর তা পানির সাথে মিশাবে এবং তাতে আয়াতুল কুরসী ও চার কুল (সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়বে। পরে সেখান থেকে তিন ঢোক পানি পান করবে। (আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে) গোসল করবে। এতে তার অসুস্থতা (জাদু) দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কাউকে জাদু করে স্ত্রী সহবাসে অক্ষম বানিয়ে ফেললে, চিকিৎসাটি এর মহৌষধ।” -শরহু সহীহিল বুখারী, ইবনে বাত্তাল: ৯/৪৪৬

অনুরূপ ফালাক-নাস সকাল সন্ধ্যায় পাঠ করলেও যাদু-টোনা সহ যাবতীয় অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যায়। হাদীসে এসেছে,

عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: خَرَجْنَا فِي لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي لَنَا، قَالَ: فَأَدْرَكْتُهُ، فَقَالَ: «قُلْ » فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ»، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، قَالَ: «قُلْ»، فَقُلْتُ، مَا أَقُولُ؟ قَالَ: ” قُلْ: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، وَالمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَتُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ ” قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ. اهـــــ. –سنن الترمذي:  3575، وأخرجه أيضا: الإمام ابو داود: 5082 و الإمام النسائي: 5428 قال العلامة محمَّدُ بنُ عزِّ الدِّينِ عبدِ اللطيف الحنفي المشهور بـ ابن المَلَك (المتوفى: 854 هـ) رحمه الله تعالى: تدفع هذه السُّوَرُ عنك شرَّ كلِّ ذي شرٍّ. اهـــــ. – شرح مصابيح السنة للإمام البغوي: 3/46 ط. إدارة الثقافة الإسلامية.

“হযরত মুয়াজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রহিমাহুল্লাহ তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা এক বর্ষণমুখর ও ভীষণ অন্ধকার রাতে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামকে খুঁজতে বের হলাম। যাতে তিনি আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। এক পর্যায়ে আমরা তাকে খুঁজে পেলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে বললেন, বলো। আমরা কিছুই বললাম না। আবার বললেন, বলো। তখনও আমরা কিছু বললাম না। তৃতীয়বার বললেন, বলো। তখন আমি বললাম, কী বলবো? তিনি বললেন বলো, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস), ফালাক ও নাস সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার করে। (যদি তা সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করো), তাহলে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে।”-সুনানে তিরমিযী: ৩৫৭৫, আবু দাউদ: ৫০৮২, নাসায়ী: ৫৪২৮

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৮-১১-১৪৪৪ হি.

১৮-০৬-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ একাধিকবার সমকামিতার কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির করণীয় কী?

Related Articles

Back to top button