বিবিধফাতওয়া  নং  ৩০৫

একাধিক স্ত্রীর মাঝে সমতা বলতে উদ্দেশ্য কী? এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা কি পরস্পর মাহরাম হবে?

একাধিক স্ত্রীর মাঝে সমতা বলতে উদ্দেশ্য কী? এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা কি পরস্পর মাহরাম হবে?

একাধিক স্ত্রীর মাঝে সমতা বলতে উদ্দেশ্য কী? এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা কি পরস্পর মাহরাম হবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

আমি বিবাহিত। কিন্তু দুটি সন্তানের পর দীর্ঘ অনেক বছর আর কোনো সন্তান হয়নি। তাই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করার ইচ্ছে করেছি। স্ত্রীও তাতে সম্মত আছে। এখন আমার কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।

এক. দুই স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ বা সমতা বলতে উদ্দেশ্য কী? একটু ব্যাখ্যা করে বলবেন।

দুই.

যে পাত্রীর প্রস্তাব চলমান, তার আগের ঘরের সন্তানেরা কি আমাকে বাবা ডাকতে পারবে?

তিন. আমার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের ছেলেরা কি পরস্পর মাহরাম হবে? এছাড়া আমার কোন কোন আত্মীয়ের জন্য তারা মাহরাম হবে?

প্রশ্নকারী: আব্দুল্লাহ, ঢাকা

 

بسم الله الرحمن الرحيم

حامدا ومصليا ومسلما

উত্তর:

এক. একাধিক স্ত্রী থাকলে, রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব। একজনের কাছে যতো রাত যাপন করবে, অন্য জনের কাছেও ততো রাত যাপন করতে হবে। তবে সহবাসে সমতা রক্ষা করা জরুরি নয়; সম্ভবপর হলে মুস্তাহাব। দিনের সময় যদি স্ত্রীদের কাছে থাকা হয়, সে ক্ষেত্রে কাঁটায় কাঁটায় হিসেব রাখা জরুরি না হলেও সবার প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। -ফাতহুল কাদীর: ৩/৪৩৩ ; রদ্দুল মুহতার: ৩/২০২,২০৭

রাত্রি বণ্টনের উত্তম নিয়ম হচ্ছে, প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য এক রাত করে বণ্টন করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যেক স্ত্রীর নিকট একদিন করে থাকতেন। তবে বিশেষ কারণে, দুই রাত, তিন রাত বা এক সপ্তাহ করেও বণ্টন করা যায়। স্ত্রীদের অনুমতি ব্যতীত ফুকাহায়ে কেরাম এর চেয়ে বেশি দীর্ঘায়িত করে স্ত্রীদের পালা বণ্টন করতে বারণ করেছেন। তবে স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে যতোদিন পর্যন্ত গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি না হবে, ততোদিন করে বণ্টন করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ): ৩/২০৭-২০৮

এভাবে সকল স্ত্রীর কাছে সমহারে রাত্রি যাপনের পর স্বামী ইচ্ছা করলে কিছু সময় সকল স্ত্রী থেকে আলাদা হয়ে একা থাকতে পারবেন। -ফাতহুল কাদীর: ৩/৪৩৬

তবে এত দীর্ঘ সময় আলাদা থাকা যাবে না যে, স্ত্রীদের গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

আর খোরপোষ তথা পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও বাসস্থানে সমতা জরুরি কি না, এ নিয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এই বিষয়গুলোও সকলকে সমান হারে দিতে হবে। তবে জুমহুর ফুকাহায়ে কিরামের মতে এগুলোতে ইনসাফ জরুরি; সমতা জরুরি নয়। অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রীকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী; স্বামী-স্ত্রী দুইজনের আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ খোরপোষ, পোশাক ও বাসস্থান দিতে হবে। এই বিষয়গুলোতে ন্যায্য অধিকার আদায়ে কারো ক্ষেত্রে ত্রুটি করা যাবে না। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ত্রুটি করে, তাহলে সে মারাত্মক গুনাহগার হবে।

অবশ্য সকল স্ত্রীর প্রয়োজন ন্যায়সঙ্গতভাবে পূরণ করার পর অতিরিক্ত কিছু দিতে চাইলে তাতেও সকলকে সমহারে দেয়া জরুরি নয়; বরং এক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা মুস্তাহাব। -আলবাহরুর রায়েক: ৩/২৩৪-২৩৫; রদ্দুল মুহতার: ৩/২০২, ৫৭৫; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত: ৩৪/৩১৬-৩১৭; ইমদাদুল আহকাম (৩/৩৭৭)

এ বিষয়ে আরও দেখুন ফাতওয়া নং ২৯০ একাধিক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ ও সমতা রক্ষার বিধান কী?

লিংক: একাধিক স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ ও সমতা রক্ষার বিধান কী?

দুই. হ্যাঁ, তারা আপনাকে বাবা বলে ডাকতে পারবে। -আলআসল: ৭/২১২; মাবসূত, সারাখসি: ৯/১৪২; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৫০৪

তিন. না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এই ছেলেগুলো আপনার প্রথম স্ত্রীর ঘরের মেয়ের জন্য মাহরাম হবে না। বালেগ হওয়ার পর থেকে তাদের পরস্পরের সঙ্গে পর্দা করা ফরয। তারা আপনার কোনো মহিলা আত্মীয়ের জন্যই মাহরাম হবে না। -রদ্দুল মুহতার: ৩/৩২

فقط والله تعالى أعلم بالصواب.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

০৭-০৫-১৪৪৪ হি.

০২-১১-২০২২ ঈ.

Related Articles

Back to top button