ব্রেইন স্টোক রোগীর কাযা নামায-রোযার বিধান
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
আমার নানু শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ ছিলেন। ব্রেইন স্টোক করেছিলেন। যার কারণে প্রায় এক বছরের বেশি নামায আদায় করতে পারেননি এবং ফরয রোযাও রাখতে পারেননি। গত রমযানে ইন্তেকাল করেছেন।
এখন জানার বিষয় হলো, তাঁর কাযা রোযা এবং নামাযগুলো কি তাঁর মেয়ে কিংবা ছেলে অথবা নাতনিরা কেউ আদায় করতে পারবে?
-আমজাদ হোসাইন
উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:
কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা যদি এ পর্যায়ের হয় যে, সে রোযা পালনে অক্ষম হয়ে যায় এবং রোযার সক্ষমতা ফিরে পাবার আগেই সে ইন্তেকাল করে, তাহলে ঐ অবস্থায় তার ছুটে যাওয়া রোযাগুলো মাফ হয়ে যায়। তা কাযা করতে হয় না।
অনুরূপ কেউ যদি এমন অসুস্থ হয়, যার দরুণ সে শুয়ে মাথায় ইশারা করেও নামায আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এ অবস্থায় একদিন-একরাতের বেশি সময় অতিবাহিত হয়, তাহলেও তার নামায মাফ হয়ে যায়। তা আর কাযা করতে হয় না।
তবে অসুস্থতা যদি এর চেয়ে আরও কম হয়, যার ফলে সে শুয়ে ইশারার মাধ্যমে নামায আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে তার নামায মাফ হয় না।
কারও নামায ও রোযা অপরজন আদায় করলে তা আদায় হয় না; বরং নিজের নামায-রোযা নিজেকেই আদায় করতে হয়। আদায় না করে মারা গেলে এর বিনিময়ে ফিদইয়া আদায়ের অসিয়ত করতে হয়।
সুতরাং আপনার নানীর অসুস্থতা যদি নামায-রোযা মাফের পর্যায়ে না পৌঁছে থাকে, আর তিনি এগুলোর জন্য ফিদিয়া আদায়ের অসিয়ত করে যান এবং তার পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা অসিয়ত পূরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রত্যেক রোযার জন্য একটি এবং বিতরসহ প্রত্যেক নামাযের জন্য একটি করে ফিদইয়া আদায় করতে হবে। তা না করে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে নামায ও রোযা আদায় করলে যথেষ্ট হবে না।
পক্ষান্তরে তিনি যদি অসিয়ত করে না যান অথবা এই পরিমাণ সম্পদ রেখে না যান, যার এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা অসিয়ত পূরণ করা সম্ভব, তাহলে তার নামায রোযার ফিদইয়া আদায় করা আপনাদের উপর ওয়াজিব নয়; বরং প্রাপ্ত বয়স্ক ওয়ারিসদের জন্য মুস্তাহাব। সামর্থ্য থাকলে আত্মীয় হিসেবে তার পক্ষ থেকে ফিদইয়া আদায় করা চাই এবং আশা করি আল্লাহ তাআলা এর উসীলায় তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। অসিয়ত না করার ক্ষেত্রে এবং অসিয়ত করলে এক-তৃতীয়ংশের বেশি খরচ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক সকল ওয়ারিসের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি লাগবে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অংশ খরচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফিদইয়া হলো এক সাদাকাতুল ফিতর পরিমাণ, যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া।
তা যদি আটা অথবা গম দিয়ে পরিশোধ করা হয়, তাহলে ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম আটা কিংবা গম অথবা তার মূল্য আদায় করতে হবে। আর যদি খেজুর, যব, কিশমিশ দিয়ে পরিশোধ করা হয়, তাহলে ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম অথবা তার মূল্য আদায় করতে হবে।
উপর্যুক্ত বস্তুসমূহের মধ্যে যে কোনো একটি দিয়ে আদায় করলেই ফিদইয়া আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য সামর্থ্যের ভিতরে সবচেয়ে দামিটা দিয়ে আদায় করা উত্তম। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১১৭; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস নং ২৯৩০; তাহকীক সুনানে আবু দাউদ, আরনাউত: ৪/৭৫; আলমুহীতুল বুরহানি: ২/১৪৩; আদ্দুররুল মুখতার; ২/৯৯; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১২৫, ১৩৭; উসূলুস সারাখসি: ১/৫১; ফতোয়া শামী: ২/৭২-৭৩
আরও জানার জন্য দেখুন ৩৭০ নং ফতোয়া: “একজনের রোযা কি আরেকজন রাখতে পারে?” লিংক: একজনের রোযা কি আরেকজন রাখতে পারে?
فقط. والله تعالى اعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২২-১২-১৪৪৪ হি.
১১-০৭-২০২৩ ঈ.