জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ৩৮৯

সাহায্যকারী ভূমিতে জিহাদের কাজ করলে কি কিতালের ফযীলত পাওয়া যাবে?

সাহায্যকারী ভূমিতে জিহাদের কাজ করলে কি কিতালের ফযীলত পাওয়া যাবে?

সাহায্যকারী ভূমিতে জিহাদের কাজ করলে কি কিতালের ফযীলত পাওয়া যাবে?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ  

আমরা জানি, জিহাদের ময়দান দুই ধরনের হয়ে থাকে । একটি হচ্ছে, সম্মুখ যুদ্ধের ময়দান। আরেকটি হচ্ছে, সাহায্যকারী ময়দান । বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ উভয় ময়দানেই জিহাদের কাজ হচ্ছে।

আমরা এও জানি যে, জিহাদ ও কিতালের বিপুল ফযীলতের কথা অসংখ্য হাদীসে এসেছে। যেমন, আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল কিংবা এক বিকাল পরিমাণ সময় দেওয়া, উটের দুধ দোহানো পরিমাণ কিতাল করা, আল্লাহর রাস্তায় ধূলি-মলিন হওয়া ইত্যাদির বিরাট বিরাট ফযীলতের কথা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,

ক) আমরা যারা বাংলাদেশের মতো সাহায্যকারী ভূমিতে জিহাদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করছি, আমরা যদি এসব কাজে পূর্ণ ইখলাস ও ইহতিসাবের সাথে (একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে সাওয়াব প্রাপ্তির আশায়) এক সকাল কিংবা এক বিকাল পরিমাণ অথবা উটের দুধ দোহানো পরিমাণ সময় দেই তাহলে কি সম্মুখ যুদ্ধের ময়দানে এক সকাল কিংবা এক বিকাল পরিমাণ অথবা উটের দুধ দোহানো পরিমাণ সময় দেয়ার সেই ফযীলত লাভ করতে পারবো?

একইভাবে আল্লাহর রাস্তায় ধূলি-মলিন হওয়ার যে ফযীলতের কথা হাদীসে এসেছে, আমরা যদি পূর্ণ ইখলাস ও ইহতিসাবের সাথে জিহাদী কোনো উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করি তাহলে কি সেই ফযীলত আমরা লাভ করবো?

খ) যদি আমাদের এখানকার কাজের দ্বারা এই সব ফযীলত লাভ করা না যায় তাহলে আমার জন্য শাম কিংবা এ ধরনের কোনো ময়দানে গিয়ে সেই ফযীলত অর্জনের চেষ্টা করা দীনী দিক থেকে অধিক নিরাপদ হবে কি না? মেহেরবানি করে একটু বিস্তারিত জানালে অনেক উপকৃত হবো।

-আব্দুর রহীম

 

উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহর নিকট কোন আমল অধিক পছন্দনীয়, কোন আমলের সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি, সে অন্বেষা প্রত্যেক মুসলিমের মধ্যে থাকা কাম্য। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আপনাকে এই অন্বেষা দান করেছেন। আপনাকে আমাকে এবং সকল মুসলিমকে আল্লাহ তাআলা এই নেয়ামত পূর্ণাঙ্গরূপে দান করুন এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন।

সাওয়াবের পরিমাণ তাওকীফীবিষয় 

কোনো আমলের সুনির্দিষ্ট সাওয়াব ও ফযীলতের বিষয়টি ‘তাওকীফী’  তথা শরীয়তের পক্ষ থেকে বর্ণনা নির্ভর বিষয়। কিয়াস ও যুক্তি দিয়ে তার বর্ণনা দেওয়া যায় না।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৭২৮ হি.) বলেন,

فالحاصل: أن هذا الباب يروى ويعمل به في الترغيب والترهيب لا في الاستحباب ثم اعتقاد موجبه وهو مقادير الثواب والعقاب يتوقف على الدليل الشرعي. -مجموع الفتاوى (18/ 68)

“… সাওয়াব ও আযাবের পরিমাণের বিষয়টি শরীয়তের দলীলের ওপর মওকুফ-নির্ভরশীল।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ১৮/৬৮

আব্দুল আযীয বিন আহমাদ আল-বুখারী রহিমাহুল্লাহ (৭৩০ হি.) বলেন,

الثواب والعقاب لا يعرفان إلا بورود السمع وليس في العقل إمكان الوقوف عليهما. اه -كشف الأسرار شرح أصول البزدوي (4/ 230(

“সাওয়াব ও আযাব শরীয়তের বর্ণনা ব্যতীত জানা যায় না, যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে তা নির্ণয় করার সুযোগ নেই।” –কাশফুল আসরার, শরহু উসূলিল বাযদাবী: ৪/২৩০

সব আমলের ফযীলত কুরআন সুন্নাহয় বর্ণিত হয়নি  

সব আমলের সুনির্দিষ্ট ফযীলত ও সাওয়াব কুরআন সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়নি। বিশেষ কোনো কারণে বিশেষ কিছু আমলের সুনির্দিষ্ট ফযীলত ও সাওয়াবের কথা কুরআন সুন্নাহ’য় বর্ণিত হয়েছে। কোনো আমলের বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হওয়া স্বাভাবিকভাবেই উক্ত আমলের বিশেষত্ব নির্দেশ করে, কিন্তু এর অর্থ আদৌ এটা নয় যে, যে আমলের ফযীলত বর্ণিত হয়নি, তার সাওয়াব ও মর্যাদা, যে আমলের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তার চেয়ে কমই হতে হবে। হতে পারে বিশেষ কোনো কারণে অন্য আমলের ফযীলত ও মর্যাদা এর চেয়েও বেশি হবে।

সাওয়াব বৃদ্ধির কারণ অনেক

একটি আমলের সাওয়াব ও মর্যাদা বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আমলটি কতটুকু প্রয়োজনীয়, কতটুকু উপকারী, কতটুকু কষ্টসাধ্য, কতটুকু ইখলাস ও ইহতিসাবের সঙ্গে করা হচ্ছে, আনুগত্যের কতটুকু অনুকূল হয়েছে, এমন নানান কারণে আমলের সাওয়াব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৭২৮ হি) বলেন,

ومما ينبغي أن يعرف أن الله ليس رضاه أو محبته في مجرد عذاب النفس وحملها على المشاق حتى يكون العمل كلما كان أشق كان أفضل كما يحسب كثير من الجهال أن الأجر على قدر المشقة في كل شيء لا ولكن الأجر على قدر منفعة العمل ومصلحته وفائدته، وعلى قدر طاعة أمر الله ورسوله. فأي العملين كان أحسن وصاحبه أطوع وأتبع كان أفضل. فإن الأعمال لا تتفاضل بالكثرة. وإنما تتفاضل بما يحصل في القلوب حال العمل. -مجموع الفتاوى (25/ 281-282(

“জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ শুধুই নফসকে শাস্তি দেওয়া আর যাবতীয় কষ্টসাধ্য কাজে বাধ্য করার মধ্যে নিহিত নয়। এমন নয় যে, সর্বদাই আমল যত কঠিন হবে তার ফযীলতও তত বেশি হবে। যেমনটা অনেক নির্বোধ মনে করে যে, সকল ক্ষেত্রেই কষ্ট অনুপাতে সাওয়াব নির্ধারিত হয়। না, বিষয়টা এমন নয়। বরং কাজের বিনিময় ও প্রতিদান নির্ধারিত হয় তার উপকারিতা, কল্যাণ ও ফায়েদার দিকে লক্ষ করে এবং কাজটা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে কতটা উত্তীর্ণ সে বিবেচনায়। সুতরাং প্রত্যেক দুটি আমলের মধ্যে যেটা অধিক সুন্দর এবং যার কর্তা অনুসরণ অনুকরণে বেশি অগ্রগামী, সেটাই শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হবে। কেননা দীনী কাজসমূহে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি সংখ্যাধিক্য নয়; বরং কাজের সময় অন্তরের অবস্থা কেমন ছিলো, সেটাই মুখ্য বিষয়।” –মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৫/২৮১-২৮২

তিনি অন্যত্র বলেন,

قول بعض الناس: الثواب على قدر المشقة ليس بمستقيم على الإطلاق … وأما الأجر على قدر الطاعة فقد تكون الطاعة لله ورسوله في عمل ميسر كما يسر الله على أهل الإسلام ” الكلمتين ” وهما أفضل الأعمال؛ ولذلك قال النبي صلى الله عليه وسلم {كلمتان خفيفتان على اللسان ثقيلتان في الميزان حبيبتان إلى الرحمن سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم} أخرجاه في الصحيحين. ولو قيل: الأجر على قدر منفعة العمل وفائدته لكان صحيحا. –مجموع الفتاوى: 10\620-621 

“অনেকে যে বলেন, ‘আমলের সাওয়াব এর কষ্ট অনুপাতে মিলবে’, একথাটি সর্বক্ষেত্রে পুরোপুরি সঠিক নয়। … বরং সাওয়াব হবে আনুগত্যের পরিমাণ অনুযায়ী। কখনও অনেক সহজ আমলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য থাকে। যেমন আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের জন্য দুটি কালিমা সহজ করে দিয়েছেন। অথচ এ কালিমাদ্বয় শ্রেষ্ঠ আমল। এজন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দুটি কালিমা আছে, যা যবানে অনেক হালকা, কিন্তু দাঁড়িপাল্লায় অনেক ভারি এবং দয়াময়ের কাছে অনেক প্রিয়। (কালিমা দুটি হচ্ছে-) سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم (আমরা আল্লাহর প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করছি, মহান আল্লাহ যাবতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে পবিত্র)’। (সুতরাং তা না বলে) যদি বলা হতো, সাওয়াব দেয়া হবে আমলের উপকারিতা ও ফায়দা অনুপাতে, তাহলে কথাটি সঠিক হতো।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ১০/৬২০-৬২১

সাওয়াব বৃদ্ধির একটি কেন্দ্রীয় মূলনীতি

সাওয়াব বৃদ্ধির একটি ‘আসলুল উসূল’ তথা কেন্দ্রীয় মূলনীতি হল, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

{مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ } [البقرة: 261[

“যারা আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্য দানা সাতটি শীষ উদগত করে এবং প্রতিটি শীষে একশত দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন, বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময় এবং সর্বজ্ঞ।” –সূরা বাকারা ০২:২৬১

অর্থাৎ আল্লাহ যাকে খুশি, তাকে বাড়িয়ে দেন এবং যত খুশি তত বাড়িয়ে দেন। এর কোনও সীমা পরিসীমা নেই।

একারণেই হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ. -صحيح البخاري: 3673

“হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পরিমাণ সোনাও (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, তাঁদের এক মুদ কি আধা মুদের সমানেও পৌঁছতে পারবে না।” -সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৩৬৭৩

উল্লেখ্য, মুদ হচ্ছে এক কেজির কাছাকাছি একটি পরিমাপ।

শুধু পরিমাণ নয়, সাওয়াবের মানেও ব্যবধান আছে

আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, মান ও পরিমাণের ব্যবধান। অন্য সবকিছুর মতো বান্দার আমলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। একারণেই যে ব্যক্তি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম শবে কদরের মতো ফযীলতপূর্ণ রাতে শুধু ইশা ও ফজরের ফরয আদায় করে বাকি রাত ঘুমিয়ে কাটায়, তার আমল ওই ব্যক্তির এমন হাজার রাতের আমল অপেক্ষা উত্তম, যে ইশা ও ফজর বাদ দিয়ে এই রাতগুলো বিনিদ্র নফল ইবাদতে যাপন করে।

একারণে হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল ফরযসমূহ। অর্থাৎ যখন যে পরিস্থিতিতে যে আমল বান্দার উপর ফরয, তা আল্লাহর নিকট অন্য সকল আমল থেকে অধিক পছন্দনীয় এবং বান্দার জন্যও তা সর্বাগ্রে করণীয়।

عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” إن الله قال: من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب، وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضت عليه، وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته: كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني لأعطينه، ولئن استعاذني لأعيذنه، وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن، يكره الموت وأنا أكره مساءته. -صحيح البخاري (8/ 105(

“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে আমার কোনও ওলীর সাথে দুশমনি করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো। আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, আমার কাছে তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনও আমল নেই, যা দিয়ে বান্দা আমার আরও অধিক নৈকট্য লাভ করতে পারে। নফল আমলসমূহের মাধ্যমে বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি, তার কান হয়ে যাই, যা দ্বারা সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখে। তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দান করি। আমি কোনও কাজ করতে গিয়ে অতটা দ্বিধান্বিত হই না, যতটা দ্বিধান্বিত হই মুমিনের মৃত্যুর ব্যাপারে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে। আর আমিও তাকে কষ্ট দিতে অপছন্দ করি।” –সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৬৫০২

ফরযে ফরযেও ব্যবধান আছে

ফরযের মধ্যেও স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় যেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটির মর্যাদা বেশি। যেমন একদিকে ফরয নামাযের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে কেউ আগুনে পুড়ে কিংবা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় দুটি কাজই ফরয হলেও, মরতে যাওয়া লোকটিকে উদ্ধার করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক মর্যাদাপূর্ণ।

ফরযে কেফায়া বিশেষ কারণে ফরযে আইনে পরিণত হয়

যে কাজগুলো মৌলিকভাবে ফরযে কেফায়া, সেগুলোতে আমীরের নির্দেশ, কাজটির জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হওয়া, কাজটিতে তার কোনও বিকল্প না থাকা ইত্যাদি কারণে একটি কাজ অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে যায়। বরং একাধিক ফরযে কেফায়া থেকে সুনির্দিষ্ট কাজটিই তার একমাত্র ফরয বা ফরযে আইন হয়ে যায়। যেমন নাফীরে আমের কারণে তাবুকের যুদ্ধ সবার জন্যই ফরয ছিলো। অপরদিকে পৃথিবীর বুকে একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র মদীনার রক্ষণাবেক্ষণও মুসলিমদের উপর ফরয ছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মদীনায় থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। স্বভাবতই আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতো মুখলিস বীর মুজাহিদ, যিনি সকল যুদ্ধে অগ্রগামী ছিলেন, তাঁর জন্য তাবুকের মতো সর্বব্যাপী যুদ্ধে না গিয়ে নারী ও শিশুদের সঙ্গে মদীনায় বসে থাকা ছিলো কষ্টকর। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন,

أَتُخَلِّفُنِي فِي الصِّبْيَانِ وَالنِّسَاءِ؟

“আপনি কি আমাকে নারী আর শিশুদের মধ্যে রেখে যাবেন?”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কষ্টের বিষয়টা বুঝলেন। তিনি তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,

أَلاَ تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى؛ إِلَّا أَنَّهُ لَيْسَ نَبِيٌّ بَعْدِي

“তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, আমার অপেক্ষা তোমার মর্যাদা তেমন, যেমন মূসা অপেক্ষা হারুনের মর্যাদা? তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আমার পরে কোনও নবী নেই।” –সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৪৪৪৬

এখানে যে বিষয়টি আমাদের জন্য লক্ষণীয়, তা হলো তাবুকের যুদ্ধ যেমন সবার উপর ফরয ছিলো, তেমনি সকলের অনুপস্থিতিতে মদীনায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা এবং মদীনার রক্ষণাবেক্ষণ করাও সমষ্টিগতভাবে সবার উপর ফরয ছিলো। কিন্তু মদীনায় অবস্থানের জন্য যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে অধিক সঙ্গত মনে করলেন এবং হুকুম করলেন, তখন তাঁর জন্য ময়দানে যাওয়া অপেক্ষা মদীনায় থাকা অধিক জরুরি ও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে গেল। শুধু তাই নয়; বরং এমতাবস্থায় তাঁর জন্য ময়দানে যাওয়াই নাজায়েয ছিলো এবং মদীনায় থাকা একমাত্র ফরয ছিলো।

বাইয়াহ বদ্ধ ভাইদের জন্য বাইয়াহ ভঙ্গ করা এবং নির্দেশ অমান্য করা নাজায়েয

সুতরাং যে ভাইরা শরীয়তের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ জিহাদের কোনো জামাতে বাইয়াহ বদ্ধ হয়েছেন, তাদের জন্য শরয়ী কোনো কারণ ছাড়া শুধু সরাসরি কিতালে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ ও আবেগের বশে জামাতের বাইয়াহ ভঙ্গ করে কিংবা নির্দেশ অমান্য করে সম্মুখ সমরের ময়দানে কিতালে যুক্ত হওয়া অপেক্ষা জামাতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অধিক মর্যাদার; চাই তা সমর্থক ভূমিতে জিহাদের ইদাদের কাজই হোক না কেন। কারণ শরঈ ওজর ব্যতীত এসব জামাআতের বাইয়াহ ভঙ্গ করা এবং আমীরের নির্দেশ অমান্য করা নাজায়েয।

এক হাদীসে এসেছে,

عن معاذِ بن جبَلٍ، عن رسولِ الله -صلَّى الله عليه وسلم- أنه قال: “الغَزْوُ غزوانِ: فأما من ابتغَى وجهَ اللهِ، وأطاعَ الإمامَ، وأنفقَ الكريمةَ، وياسَرَ الشريكَ، واجتنَبَ الفَسادَ، فإنَّ نومَه ونَبَهَه أجرٌ كُلُّه. وأما من غزا فخْراً ورِياءً وسُمعةً، وعصَى الإمامَ، وأفسدَ في الأرضِ، فإنه لم يَرجِع بالكَفَافِ”. -سنن أبي داود ت الأرنؤوط (4/ 169)، كتاب الجهاد، 24 – باب في من يغزو يَلتمِسُ الدنيا، الرقم: 2515

“মুয়ায ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুদ্ধ দুই ধরনের। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, আমীরের আনুগত্য করে, নিজের প্রিয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, সাথি-সঙ্গীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম থেকে দূরে থাকে, তার নিদ্রা ও জাগরণ সবই পুণ্যে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে যে দাম্ভিকতা, লোক দেখানো ও সুনাম-সুখ্যাতির জন্য লড়াই করে, আমীরের অবাধ্যতা করে এবং জমিনে শান্তি বিনষ্ট করে, সে প্রয়োজন পরিমাণ পুণ্য নিয়েও বাড়ি ফিরে না।” –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ২৫১৫

অতএব একথা যদি আমরা আপাতত ধরেও নেই যে, সুনির্দিষ্ট ফযীলতগুলো যেসব হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ইদাদের ভূমিতে কাজ করা ব্যক্তিরা সেসব হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নন, তবুও একথা বলতে হবে যে, উপরোল্লেখিত বিভিন্ন কারণে তাদের জন্য আমীরের নির্দেশ ও অনুমতি ব্যতীত ময়দানে যাওয়া অপেক্ষা, আমীরের আনুগত্য করে ইদাদের ভূমিতে কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ; যদিও বাস্তবে একথা বলার সুযোগ নেই যে, তারা ওইসব হাদীসের অন্তুর্ভুক্ত নন। যেমনটি আমরা সামনে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের প্রত্যেকের আত্মস্থ করা জরুরি।

আলোচ্য ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলোর বিশ্লেষণ

দ্বিতীয়ত আপনি যে ফযীলতগুলো উল্লেখ করেছেন, তার দুটির বিবরণ হাদীসের ভাষায় নিম্নরূপ:

এক.

عن أنس بن مالك رضي الله عنه : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( لغدوة في سبيل الله أو روحة خير من الدنيا وما فيها)  [ 2643 ]  [ ش أخرجه مسلم في الإمارة باب فضل الغدوة والروحة في سبيل الله تعالى رقم 1880 . – صحيح البخاري (3/ 1028):  2639

“আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও দুনিয়ায় যা কিছু আছে, সব থেকে উত্তম।” –সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ২৭৯২

দুই.

حدثنا إسحاق أخبرنا محمد بن المبارك حدثنا يحيى بن حمزة قال حدثني يزيد بن أبي مريم أخبرنا عباية بن رافع بن خديج قال  أخبرني أبو عبس هو عبد الرحمن بن جبر : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( ما اغبرت قدما عبد في سبيل الله فتمسه النار ). -صحيح البخاري (3/ 1035):  2656 

“আব্দুর রহমান ইবনে জবর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন হবে না যে, আল্লাহর রাস্তায় কোনো বান্দার পা ধূলো মলিন হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।”–সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ২৮১১

দুটি হাদীসই সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে এবং দুটিতেই ‘সাবীলুল্লাহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

‘সাবীলুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদ; শুধু কিতাল নয়

‘সাবীলুল্লাহ’ দ্বারা শুধু ‘কিতাল’ উদ্দেশ্য নয়; বরং ‘সাবীলুল্লাহ’ দ্বারা যে জিহাদ উদ্দেশ্য, এতে কারও দ্বিমত নেই। বলা বাহুল্য, কিতাল হচ্ছে জিহাদের একটি অংশ, পক্ষান্তরে জিহাদ হচ্ছে ব্যাপক, যা কিতাল ও কিতাল সংশ্লিষ্ট আরও অনেক কাজকে বুঝায়।

প্রথমোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৬৭৬ হি.) বলেন,

ومعناه أن الروحة يحصل بها هذا الثواب وكذا الغدوة والظاهر أنه لا يختص ذلك بالغدو والرواح من بلدته بل يحصل هذا الثواب بكل غدوة أو روحة في طريقه إلى الغزو. وكذا غدوه وروحة في موضع القتال؛ لأن الجميع يسمى غدوة وروحة في سبيل الله – شرح النووي على مسلم: 13/ 26

“অর্থাৎ এক বিকালের বিনিময়েই এই সাওয়াব লাভ হবে। এমনিভাবে এক সকালের বিনিময়েও। স্পষ্ট যে, নিজ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে এক সকাল ও এক বিকাল চলার মধ্যে এই সাওয়াব সীমাবদ্ধ নয়। বরং যুদ্ধে যাওয়ার পথে প্রত্যেক সকাল ও প্রত্যেক বিকালের বিনিময়ে এই সাওয়াব অর্জিত হবে। এমনিভাবে কিতালের ময়দানের এক সকাল ও এক বিকালের বিনিময়েও। কেননা, এ সবগুলোকেই ‘আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকাল’ বলা যায়।” –শরহুন নববী: ১৩/২৬

ইমাম ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وسبيل الله هَاهُنَا الْجِهَاد، وَالْمعْنَى أَن مَا يحصل للْإنْسَان من الثَّوَاب فِي غدوته أَو روحته فِي الْجِهَاد خير من كل مَا فِي الدُّنْيَا -كشف المشكل من حديث الصحيحين لابن الجوزي: 2/ 93

“এখানে ‘সাবীলুল্লাহ’র দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদ। অর্থাৎ ব্যক্তি জিহাদে থাকাবস্থায় এক সকাল কিংবা এক বিকালে যে সাওয়াব অর্জিত হয়, তা দুনিয়ার সব কিছু থেকে উত্তম।”  -কাশফুল মুশকিল: ২/৯৩

সাবীলুল্লাহ ‘মুতলাক’ বললে জিহাদ উদ্দেশ্য হয়

এছাড়া ‘সাবীলুল্লাহ’ যখন ‘মুতলাক’ তথা কোনও বন্ধন ব্যতীত উল্লেখ করা হয়, তখন তা দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য হয়, একথা উলামায়ে কেরামের অনেকেই বলেছেন।

হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলেন,

قال ابن الجوزي: إذا أطلق ذكر سبيل الله فالمراد به الجهاد. … وقال ابن دقيق العيد: العرف الأكثر استعماله في الجهاد. … قال: ويحتمل أن يراد بسبيل الله طاعته كيف كانت، والأول أقرب. – فتح الباري لابن حجر: 6/ 48

“ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন ‘সাবীলুল্লাহ’ মুতলাক (কোনও বন্ধন ছাড়া) বলা হয়, তখন তা দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য হয়। … ইবনু দাকীকিল ঈদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, প্রসিদ্ধ হলো, এর (সাবীলুল্লাহর) অধিকাংশ ব্যবহার জিহাদের ক্ষেত্রে। … তিনি বলেন, সাবীলুল্লাহ দ্বারা যে কোনও ইবাদত উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে প্রথমোক্ত মতটি অধিক সঠিক।” –ফাতহুল বারী: ৬/৪৮

ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ (৪৪৯ হি.) বলেন,

واختلفوا فى قوله تعالى: (وفى سبيل الله) فقال مالك، وأبو حنيفة، والشافعى، وأبو ثور، وإسحاق: هم الغزاة. … قال ابن القصار: وحجة من قال هم الغزاة، أن كل موضع ذكر فيه سبيل الله، فالمراد منه الغزو والجهاد، قال الله تعالى: (الذين يقاتلون فى سبيله صفا) [الصف: 4] وقال: (الذين آمنوا وهاجروا وجاهدوا فى سبيل الله) [التوبة: 20] ، فكذلك آية الصدقات. -شرح صحيح البخارى لابن بطال المالكي (3/ 497(

“(যাকাত বণ্টনের ক্ষেত্রে) আল্লাহর বাণী ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (وفى سبيل الله) এর মর্ম নির্ধারণে আলেমদের মতনৈক্য হয়েছে। মালেক, আবু হানীফা, শাফেয়ী, আবু সাওর, ইসহাক প্রমুখ ইমামগণ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য মুজাহিদগণ। … ইবনুল কাস্সার রহিমাহুল্লাহ বলেন, যাঁরা বলেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য মুজাহিদগণ, তাঁদের দলীল হলো, যত জায়গায় সাবীলুল্লাহ উল্লেখ করা হয়েছে, সবখানেই যুদ্ধ ও জিহাদ উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, الذين يقاتلون فى سبيله صفا (যারা সারিবদ্ধ ভাবে আল্লাহর পথে লড়াই করে…)  অন্যত্র বলেন, الذين آمنوا وهاجروا وجاهدوا فى سبيل الله (যারা ঈমান এনেছে এবং হিজরত করেছে, অতঃপর আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে …)। অতএব সাদাকার আয়াতেও এমনই হবে।” –শারহু সহীহিল বুখারী, ইবনে বাত্তাল: ৩/৪৯৭

মাওসুআ ফিকহিয়া কুয়েতিয়ায় বলা হয়েছে,

ذهب جمهور العلماء (الحنفية والمالكية والشافعية والثوري وأبو ثور وابن المنذر وهو رواية عن أحمد ، وقال ابن قدامة: إنه الصحيح) إلى أنه لا يجوز الصرف في الحج من الزكاة؛ لأن سبيل الله في آية مصارف الزكاة مطلق، وهو عند الإطلاق ينصرف إلى الجهاد في سبيل الله تعالى، لأن الأكثر مما ورد من ذكره في كتاب الله تعالى قصد به الجهاد، فتحمل الآية عليه. -الموسوعة الفقهية الكويتية: 23/ 323

“জুমহুর আলেমদের (হানাফী, মালেকী ও শাফেয়ী আলেমগণ, সুফিয়ান সাওরী, আবু সাওর, ইবনুল মুনযির এবং ইমাম আহমাদের এক বক্তব্য; -ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, এটিই আহমাদ রহিমাহুল্লাহ-এর বিশুদ্ধ মত- তাঁদের সকলের) মতে যাকাতের সম্পদ হজে ব্যয় করা জায়েয নেই। কেননা যাকাতের খাত সম্পর্কিত আয়াতে সাবীলুল্লাহ মুতলাক (কোনও বন্ধন ছাড়া) ব্যবহৃত হয়েছে। আর এরূপ স্থানে এর দ্বারা ‘জিহাদ ফী-সাবীলিল্লাহ’ই উদ্দেশ্য হয়। কারণ কুরআনে যতবার এর উল্লেখ হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর দ্বারা জিহাদ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আয়াতের অর্থ এমনই হবে।” –মাওসুয়া ফিকহিয়া কুয়েতিয়া: ২৩/৩২৩

উক্ত হাদীস দুটির ফযীলত জিহাদের জন্য; শুধু কিতালের জন্য নয়

‘সাবীলুল্লাহ’ শুধু কিতালে সীমাবদ্ধ না হওয়া; বরং তা কিতাল ও কিতাল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তথা জিহাদের জন্য ব্যাপক হওয়ার বিষয়ে যেহেতু সকল উলামায়ে কেরাম একমত, তাই আমরা সামনে এই আলোকেই কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

উপরের আলোচনা থেকে যে বিষয়টি পরিষ্কার, তা হলো উক্ত হাদীস দুটিতে যে ফযীলতের কথা এসেছে, তা মূলত যারা জিহাদের কাজে রত, তাদের জন্য। যারা কিতালে রত, শুধু তাদের জন্য নয়। এখন আমাদের দেখতে হবে, জিহাদ কী এবং কারা জিহাদে রত?

জিহাদ কী?

আলাউদ্দীন হাসকাফী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ১০৮৮ হি.) জিহাদের সংজ্ঞায় বলেন,

كِتَابُ الْجِهَادِ… وَهُوَ لُغَةً: مَصْدَرُ جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. وَشَرْعًا: الدُّعَاءُ إلَى الدِّينِ الْحَقِّ وَقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ شُمُنِّيٌّ. وَعَرَّفَهُ ابْنُ الْكَمَالِ بِأَنَّهُ بَذْلُ الْوُسْعِ فِي الْقِتَالِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مُبَاشَرَةً أَوْ مُعَاوَنَةً بِمَالٍ، أَوْ رَأْيٍ أَوْ تَكْثِيرِ سَوَادٍ أَوْ غَيْرِ ذَلِكَ. اهـ. -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 121)

“জিহাদ অধ্যায়: আভিধানিক অর্থে الْجِهَادِ (আলজিহাদ) শব্দটি جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ (জা-হাদা ফী সাবীলিল্লাহ) এর ক্রিয়ামূল। শরীয়তের পরিভাষায় জিহাদ হলো, ‘সত্য দীনের প্রতি আহ্বান করা এবং যে তা গ্রহণ করবে না, তার সঙ্গে কিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) করা’। (এই সংজ্ঞা দিয়েছেন) শুমুন্নী রহিমাহুল্লাহ। ইবনে কামাল পাশা রহিমাহুল্লাহ সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘সরাসরি কিতাল ফী সাবীলিল্লায় শক্তি সামর্থ্য ব্যয় করা অথবা সম্পদ, পরামর্শ, সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যমে তাতে সহযোগিতা করা’।” –আদদুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারের সঙ্গে মুদ্রিত): ৪/১২১

ইবনে আবেদীন শামী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ১২৫২ হি.) উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন,

)قَوْلُهُ وَقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ) أَيْ قِتَالُهُ مُبَاشَرَةً أَوْ لَا. فَتَعْرِيفُ ابْنِ كَمَالٍ تَفْصِيلٌ لِإِجْمَالِ هَذَا ح (قَوْلُهُ فِي الْقِتَالِ) أَيْ فِي أَسْبَابِهِ وَأَنْوَاعِهِ مِنْ ضَرْبٍ وَهَدْمٍ وَحَرْقٍ وَقَطْعِ أَشْجَارٍ وَنَحْوِ ذَلِكَ (قَوْلُهُ أَوْ مُعَاوَنَةً إلَخْ) أَيْ وَإِنْ لَمْ يَخْرُجْ مَعَهُمْ بِدَلِيلِ الْعَطْفِ ط (قَوْلُهُ أَوْ تَكْثِيرِ سَوَادٍ) السَّوَادُ الْعَدَدُ الْكَثِيرُ وَسَوَادُ الْمُسْلِمِينَ جَمَاعَتُهُمْ مِصْبَاحٌ (قَوْلُهُ أَوْ غَيْرِ ذَلِكَ) كَمُدَاوَاةِ الْجَرْحَى وَتَهْيِئَةِ الْمَطَاعِمِ وَالْمَشَارِبِ ط. – الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) ) 4/ 121(

“শুমুন্নী রহিমাহুল্লাহর বক্তব্যে ‘যে তা গ্রহণ করবে না, তার সঙ্গে কিতাল করা’ বলতে উদ্দেশ্য, সরাসরি নিজে করুক বা না করুক (অর্থাৎ সরাসরি নিজে কিতাল করুক বা কিতালে সহযোগিতা করুক উভয়টি শামিল) । এ হিসেবে ইবনে কামাল রহিমাহুল্লাহ কৃত সংজ্ঞাটি শুমুন্নী রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত সংজ্ঞারই বিশ্লেষণ।

‘কিতাল’ বলতে (সরাসরি কাফেরদের উপর) আক্রমণ, (তাদের স্থাপনা) ধ্বংস করা ও পুড়িয়ে ফেলা, (ফল-ফসলের) গাছ কেটে ফেলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের (সামরিক) কার্যক্রম উদ্দেশ্য।

‘সহযোগিতা’র মধ্যে মুজাহিদদের সাথে (বের হয়ে সহযোগিতা করা যেমন শামিল,) বের না হয়ে কৃত সহযোগিতাও শামিল। কারণ, প্রথমে বলা হয়েছে ‘হতে পারে তা সরাসরি কিতাল ও যুদ্ধে অংশ নিয়ে’ তারপর বলা হয়েছে, ‘কিংবা সহযোগিতা করে’। যা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট (যে, সরাসরি বের না হয়ে কৃত সহযোগিতাও জিহাদ বলে গণ্য) ।

‘অথবা দল ভারী করা’; অর্থাৎ মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাহিনী বড় করা। ‘আরও বিভিন্ন কাজ’; যেমন আহতদের চিকিৎসা করা এবং খাবার-দাবার প্রস্তুত করা।” -রদ্দুল মুহতার: ৪/১২১

জিহাদ হচ্ছে কিতাল ও কিতাল সংশ্লিষ্ট ও সহযোগী সকল কাজ

উপর্যুক্ত ইমাম চতুষ্টয়ের (শুমুন্নী, ইবনুল কামাল, হাসকাফী ও শামীর) জিহাদের সংজ্ঞা থেকে যে বিষয়টি পরিষ্কার, তা হচ্ছে কিতাল ও কিতাল সংশ্লিষ্ট প্রহার, জ্বলাও-পোড়াও, গাছ কর্তনসহ শত্রু ও শত্রুর শক্তি বিনাশী যাবতীয় ধ্বংসকার্য এবং আহত মুজাহিদদের সেবা, পানাহার প্রস্তুতসহ কিতালের সকল সহযোগিতার নাম জিহাদ; যদিও সহযোগী কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা; মুজাহিদদের সঙ্গে ময়দানে না যায়।

অতএব জিহাদের কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাও উক্ত ফযীলত লাভ করবেন

বলা বাহুল্য, বৈশ্বিক জিহাদী সংগঠনে যারা সাহায্যকারী ভূমিতে কাজ করছেন, তারা কিতাল করছেন না ঠিক, কিন্তু তারা যা করছেন সবই কিতালের সহযোগী জিহাদের কাজ। সুতরাং উপর্যুক্ত দুটি হাদীসের মতো যেসব হাদীসে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ জিহাদের বিভিন্ন ফযীলতের কথা এসেছে, সে হাদীসগুলোর সরাসরি ‘মিসদাক’ ও প্রতিপাদ্য হিসেবে ময়দানে কিতালরত মুজাহিদদের পাশাপাশি সহযোগী ভূমির মুজাহিদরাও সেই ফযীলত লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।

একটি মুরসাল হাদীসও প্রমাণ করে সকাল-বিকেলের ফযীলতটি জিহাদের জন্য

একটি মুরসাল হাদীসের বর্ণনা থেকেও বুঝা যায়, ফী সাবীলিল্লাহ’য় এক সকাল বা এক বিকেল অতিবাহিত করার হাদীসটি শুধু কিতালের জন্য নয়; বরং জিহাদের জন্য আম। হাদীসটি হচ্ছে,

بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم جيشا فيهم عبد الله بن رواحة، فتأخر ليشهد الصلاة مع النبي صلى الله عليه وسلم، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: والذي نفسي بيده لو أنفقت ما في الأرض ما أدركت فضل غدوتهم – رواه ابن المبارك في كتاب الجهاد (14) من مرسل الحسن و أخرجه الترمذي أيضا (527) في باب ما جاء في السفر يوم الجمعة، وقال: هذا حديث لا نعرفه إلا من هذا الوجه.

“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন, তাতে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাও ছিলেন। তিনি নবীজির পেছনে (জুমআর) নামায পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় তৎক্ষণাৎ বাহিনীর সাথে না গিয়ে রয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (দেখে) বললেন, ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, পৃথিবীর মধ্যে যা আছে, সব বিলিয়ে দিয়েও তুমি তাঁদের এই একটি সকালের ফযীলত লাভ করতে পারবে না।”–কিতাবুল জিহাদ, ইবনুল মুবারাক, হাদীস নং ১৪; জামে তিরমিযী, হাদীস নং: ৫২৭

আলোচ্য প্রথম হাদীসটিতে যেমন ফী সাবীলিল্লাহর এক সকাল বা এক বিকালকে দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা আছে, সবকিছু থেকে উত্তম বলা হয়েছে, এখানেও একটু ভিন্ন বাক্যে একই ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। কিতালের উদ্দেশ্যে সফরের এক সকালকে দুনিয়ার সব কিছু দান করা অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, কিতালের উদ্দেশ্যে যে সফর হয়, সেটা জিহাদ; কিতাল নয়। সুতরাং জিহাদে রত ব্যক্তিরাও উক্ত ফযীলত লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।

তৃতীয় ফযীলতটির বিবরণ হাদীসের ভাষায় নিম্নরূপ:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: مَرَّ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِعْبٍ فِيهِ عُيَيْنَةٌ مِنْ مَاءٍ عَذْبَةٌ فَأَعْجَبَتْهُ لِطِيبِهَا، فَقَالَ: لَوِ اعْتَزَلْتُ النَّاسَ، فَأَقَمْتُ فِي هَذَا الشِّعْبِ، وَلَنْ أَفْعَلَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «لَا تَفْعَلْ، فَإِنَّ مُقَامَ أَحَدِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهِ فِي بَيْتِهِ سَبْعِينَ عَامًا، أَلَا تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَيُدْخِلَكُمُ الجَنَّةَ، اغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ. – سنن الترمذي ت شاكر (4/ 181): 1650

“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক সাহাবী একবার এক পাহাড়ী উপত্যকা অতিক্রম করছিলেন। সেখানে ছিলো মিষ্টি পানির একটি ছোট ঝর্ণা। এর স্বাদ ও সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি ভাবলেন, আমি যদি মানুষ থেকে আলাদা হয়ে (ইবাদতের জন্য) এই উপত্যকায় বসবাস করতে পারতাম! কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুমতি না নিয়ে তো তা করা যায় না! এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, এমনটি করো না। সাবীলুল্লাহ তথা আল্লাহর পথে সামান্য সময় অবস্থান করা, ঘরে বসে সত্তর বছর সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন? আল্লাহর পথে লড়াই করে যাও! উটনীর দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণও যদি কেউ আল্লাহর পথে কিতাল করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” –সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ১৬৫০

শুধু এই হাদীসের ভিত্তিতে জিহাদের জন্য এই ফযীলত সাব্যস্ত করার সুযোগ নেই

উক্ত হাদীসে সরাসরি কিতাল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘উটনীর দুইবার দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণও যদি কেউ আল্লাহর পথে কিতাল করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’। সুতরাং যারা সহযোগী ভূমিতে কাজ করছেন, তারা যেহেতু কিতাল করছেন না, তাই তাদেরকে সরাসরি উক্ত হাদীসের মিসদাক ও প্রতিপাদ্য বলার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি শুধু উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে এটাও বলার সুযোগ নেই যে, তারা তাদের জিহাদী কাজের বিনিময়ে উক্ত হাদীসে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট ফযীলতটি লাভ করবেন।

অন্যান্য হাদীস দ্বারা এই ফযীলতটিও জিহাদের জন্য প্রমাণিত

তবে অন্যান্য কিছু হাদীস প্রমাণ করে, কিতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু কাজেও কিতালের সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন এক হাদীসে এসেছে,

حدثنا أبو معمر، حدثنا عبد الوارث، حدثنا الحسين، قال: حدثني يحيى، قال: حدثني أبو سلمة، قال: حدثني بسر بن سعيد، قال: حدثني زيد بن خالد رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ”من جهز غازيا في سبيل الله فقد غزا، ومن خلف غازيا في سبيل الله بخير فقد غزا“-صحيح البخاري (4/ 27(، الرقم: 2843

“যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোনও মুজাহিদকে আসবাব পত্র দিয়ে প্রস্তুত করে দিলো, সে যেন নিজে জিহাদ করলো। যে ব্যক্তি কোনও মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার-পরিজনকে উত্তমভাবে দেখা-শুনা করলো, সে যেন নিজে জিহাদ করলো।”–সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ২৮৪৩

হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু: ৮৫২ হি.) বলেন,

قوله: “فقد غزا” قال ابن حبان: معناه أنه مثله في الأجر وإن لم يغز حقيقة. ثم أخرجه من وجه آخر عن بسر بن سعيد بلفظ: “كتب له مثل أجره، غير أنه لا ينقص من أجره شيء” ولابن ماجه وابن حبان من حديث عمر نحوه بلفظ: “من جهز غازيا حتى يستقل كان له مثل أجره حتى يموت أو يرجع” وأفادت فائدتين إحداهما أن الوعد المذكور مرتب على تمام التجهيز، وهو المراد بقوله: “حتى يستقل”. ثانيهما أنه يستوي معه في الأجر إلى أن تنقضي تلك الغزوة. -فتح الباري لابن حجر (6/ 50(

“হাদীসের বাণী “فقد غزا” (সে যেন জিহাদ করলো), এ ব্যাপারে ইবনে হিব্বান রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এর অর্থ হলো, সাওয়াব ও প্রতিদানের ক্ষেত্রে সে মুজাহিদের মতোই, যদিও বাস্তবে সে কিতাল করেনি। এরপর তিনি বুসর ইবনে সাঈদের বরাতে ভিন্ন আরেক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেন এই শব্দে- “كتب له مثل أجره، غير أنه لا ينقص من أجره شيء” (তাঁর জন্য মুজাহিদের সমপরিমাণ সাওয়াব লেখা হবে, তবে ওই মুজাহিদের সাওয়াব থেকে কোনও কিছু কমানো হবে না)। ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বান উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে কাছাকাছি অর্থের আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন- “من جهز غازيا حتى يستقل كان له مثل أجره حتى يموت أو يرجع” (যে ব্যক্তি এমনভাবে কোনও মুজাহিদের আসবাবপত্র প্রস্তুত করে দিবে, যাতে সে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যায়, সেও ওই মুজাহিদের অনুরূপ সাওয়াব পাবে, যতক্ষণ না সে মৃত্যু বরণ করবে অথবা নিরাপদে ফিরে আসবে)। এই বর্ণনা থেকে দুটি ফায়দা পাওয়া যায়। এক. উল্লেখিত পুরস্কার অর্জিত হবে, যখন মুজাহিদের প্রয়োজনীয় সকল আসবাব সে সরবরাহ করা হবে। দুই. ওই যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত সব সাওয়াব সে সমান হারে পাবে।” –ফাতহুল বারী: ৬/৫০

আনওয়ার শাহ কাশমীরী রহিমাহুল্লাহ (১৩৫২ হি.) বলেন,

واعلم أن الفعل قد يحصل من واحد، وقد يحصل من جماعة، فإذا كان يحصل من الجماعة يحصل لكل منهم أجر كفاعله، سواء كان فعله بنفسه، أو أعان عليه بنوع، كالجهاد، فإنه لا يحصل إلا من جماعة تغزو، وكذا لا بد له ممن يعين عليه، ويقوم على الغازين، فالمعين له، والقائم عليه كلهم كالغزاة في سبيل الله….. فالحاصل أن من باشر القتال، ومن أعان عليه بنوع، كلهم مشتركون في الجهاد، وإن اختلفوا في الأجر زيادة ونقصانا بحسب تفاوت مراتب الخلوص، وسماحة الأنفس، وصرف الأموال، وبذل المهج. -فيض الباري على صحيح البخاري (4/ 171-172(

“জ্ঞাতব্য যে, কোনো কোনো কাজ একক ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়, কোনো কোনো কাজ হয় জামাআতের মাধ্যমে। যখন কাজ কোনও জামাআতের মাধ্যমে হয়, তখন এর প্রত্যেক সদস্যই মূল কর্তার সমান প্রতিদান পায়। চাই সে সশরীরে সে কাজ করুক অথবা কোনও ভাবে এর সহযোগীর ভূমিকা পালন করুক। যেমন জিহাদ। তা সংঘটিত হওয়ার জন্য এমন একটি দল প্রয়োজন, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। এমনিভাবে এমন কিছু লোকও এখানে থাকা জরুরি, যারা (বিভিন্ন দিক থেকে) এর সহযোগিতা করবে এবং যোদ্ধাদের দেখাশুনা করবে। সুতরাং সাহায্যকারী দল এবং যোদ্ধাদের দেখাশুনাকারী দল সকলেই আল্লাহর পথে সরাসরি যুদ্ধকারীর মতো গণ্য হবে।… মোটকথা যে ব্যক্তি সরাসরি কিতালে অংশ নেয়, আর যে ব্যক্তি কোনও প্রকারে তাতে সহায়তা করে, সকলেই জিহাদে অংশ নিয়েছে বলে বিবেচিত হবে। হ্যাঁ, ইখলাসের স্তর, (দীনের পথে) কুরবানীর মানসিকতায় কম-বেশ এবং সম্পদ ব্যয় ও প্রাণ উৎসর্গের ক্ষেত্রে কম-বেশের ভিত্তিতে সাওয়াবে কেউ কম কেউ বেশি হবে, সেটি ভিন্ন কথা।” –ফয়জুল বারী: ৪/১৭১

আরেক হাদীসে এসেছে,

عن رافع بن خديج قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: العامل على الصدقة بالحق كالغازي في سبيل الله حتى يرجع إلى بيته. حديث رافع بن خديج حديث حسن. -سنن الترمذي ت بشار (2/ 30(، الرقم: 645

“ন্যায়সঙ্গতভাবে যাকাত উসুলকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধরত মুজাহিদের মতো, যতক্ষণ না সে বাড়িতে ফিরে আসে।” –সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ৬৪৫

ইউসুফ বানূরী রহিমাহুল্লাহ (১৩৯৭ হি.) বলেন,

قوله: (كالغازي في سبيل الله) قال ابن العربي: (المعنى صحيح، وذلك أن الله ذو الفضل العظيم قال: «من جهز غازيا فقد غزا، ومن خلفه في أهله بخير فقد غزا»، والعامل على الصدقة خليفة الغازي، لأنه يجمع مال سبيل الله فهو غاز بعمله وهو غاز بنيته، وقد قال عليه السلام: «إن بالمدينة قوما ما سلكتم واديا ولا قطعتم شعبا إلا وهم معكم، حبسهم العذر»، فكيف بمن حبسهم العمل للغازي وخلافته وجمعُ ماله الذي ينفقه في سبيل الله؟ وكما لا بد عن الغزو فلا بد من جمع المال الذي يُغْزى به، فهما شريكان في العمل، فوجب أن يشتركا في الأجر). -معارف السنن: 5\253

“হাদীসের বাণী (كالغازي في سبيل الله) এ সম্পর্কে ইবনুল আরাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এর মর্ম সঠিক। কারণ, আল্লাহ তাআলা সীমাহীন অনুগ্রহের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোনও মুজাহিদকে আসবাব পত্র দিয়ে প্রস্তুত করলো, সে যেন নিজে জিহাদ করলো। যে ব্যক্তি কোনও মুজাহিদ জিহাদে যাওয়ার পর উত্তমরূপে তার পরিবার-পরিজনের দেখাশুনা করলো, সেও যেন নিজে জিহাদ করলো।’ আর সাদাকা সংগ্রহকারী ব্যক্তি মুজাহিদের দেখাশুনায় নিয়োজিত। কেননা সে আল্লাহর পথের জন্য মাল সংগ্রহ করে। অতএব সে তার আমলের মাধ্যমে মুজাহিদ, আবার সে তার নিয়তের কারণেও মুজাহিদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মদীনায় কিছু লোক আছে, যারা তোমরা যত পথ চলেছো, যত উপত্যকা অতিক্রম করেছো, সব জায়গায় (তাদের মন) তোমাদের সাথেই ছিলো (ফলে সাওয়াবেও তারা তোমাদের সাথে অংশীদার হবে)। (কিন্তু শারীরিক কিংবা আর্থিক) অক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে।’ যখন তাদের ক্ষেত্রে এমন, তাহলে ওই সাদাকা উসুলকারীদের হুকুম কী হবে, যারা মুজাহিদের প্রয়োজনে, তার পরিবারের দেখাশুনার প্রয়োজনে এবং ওই সম্পদ সংগ্রহের কাজে আটকা পড়েছে, যা মুজাহিদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে? যুদ্ধ যতটা জরুরি, যুদ্ধে ব্যয়ের জন্য মাল সংগ্রহ করা ততটাই জরুরি। কাজেই জিহাদের আমলে উভয়ে অংশীদার। সুতরাং প্রতিদানের ক্ষেত্রেও উভয়ে অংশীদার হওয়া জরুরি।” -মাআরিফুস সুনান: ৫/২৫৩, মাকতাবায়ে আশরাফিয়া

আরেকটি হাদীসে এসেছে,

عن عبد الله بن عبد الرحمن بن أبي حسين، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن الله ليدخل بالسهم الواحد ثلاثة الجنة: صانعه يحتسب في صنعته الخير والرامي به والممد به، وقال: ارموا واركبوا، ولأن ترموا أحب إلي من أن تركبوا، كل ما يلهو به الرجل المسلم باطل، إلا رميه بقوسه، وتأديبه فرسه، وملاعبته أهله، فإنهن من الحق. وهذا حديث حسن. -سنن الترمذي ت بشار (3/ 226(، الرقم: 1637

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা একটি তীরের মাধ্যমে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে দাখিল করাবেন। এর প্রস্তুতকারী, যে প্রস্তুতের সময় সাওয়াবের আশা করেছিলো; এর নিক্ষেপকারী এবং নিক্ষেপের সময় নিক্ষেপকারীর হাতে এক এক করে তীর তুলে দিয়ে সাহায্যকারী।

তিনি আরও ইরশাদ করেন, তোমরা তীরন্দাজি ও অশ্বারোহণ রপ্ত করো। আর তোমাদের অশ্বারোহণের তুলনায় তীরন্দাজী শেখা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়। মুসলিম ব্যক্তি যত খেল-তামাশা করে, সবই পরিত্যাজ্য। তবে ধনুক থেকে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো ভালো কাজ।”–সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং: ১৬৩৭

হাদীসগুলোর সারকথা

এসব হাদীস থেকে বুঝা যায়, যারা ময়দানের পেছনে থেকে, কিতাল করা ও চালিয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি রসদ, পরামর্শ ও জ্ঞান সরবরাহের কাজ আঞ্জাম দেন, তারাও ময়দানে কিতালরত মুজাহিদদের অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ করে যারা জিহাদ ও কিতালের মতো জামাতবদ্ধ ও সমষ্টিগত কাজে, কর্ম বণ্টন নীতির ভিত্তিতে এবং আমীরের নির্দেশ পালনার্থে পেছনে থেকে দায়িত্ব আঞ্জাম দেন, সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ময়দানে যেতে পারেন না, তারা অবশ্যই কিতালের ফযীলত ও মর্যাদা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। বরং আমীরের নির্দেশ, বিশেষ যোগ্যতা, প্রয়োজন ইত্যাদির কারণে যদি শরঈ দিক থেকে এই কাজের জন্য তারা বিকল্পহীন হয়ে পড়েন, তখন তা তাদের জন্য ময়দানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ।

সহীহ বুখারীতে এসেছে,

عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: «… طوبى لعبد آخذ بعنان فرسه في سبيل الله، أشعث رأسه، مغبرة قدماه، إن كان في الحراسة، كان في الحراسة، وإن كان في الساقة كان في الساقة، إن استأذن لم يؤذن له، وإن شفع لم يشفع». -صحيح البخاري (4/ 34 (

“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, … সুসংবাদ ওই বান্দার জন্য, যে নিজ ঘোড়ার লাগাম ধরে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়েছে। মাথার চুল তার এলোমেলো। পা ধূলিমলিন। তাকে পাহারায় নিযুক্ত করা হলে পাহারায়ই থাকে। বাহিনীর পশ্চাতে রাখা হলে পশ্চাতেই থাকে। (অথচ সে এতই সাধারণ স্তরের মানুষ) যদি কারও সাক্ষাতের অনুমতি চায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদি কারও জন্য সুপারিশ করে সুপারিশ গৃহীত হয় না।” –সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ২৮৮৭

তুরিবিশতী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

قال التوربشتي رحمه الله: أراد بالحراسة حراسته من العدو أن يهجم عليهم، وذلك يكون في مقدمة الجيش، والساقة مؤخرة الجيش، فالمعنى ائتماره لما أمر، وإقامته حيث أقيم، لا يفقد من مكانه بحال. -مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (8/ 3230 (

“পাহারা দ্বারা উদ্দেশ্য, বাহিনীকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এটা হয় বাহিনীর অগ্রভাগ থেকে। আর ‘সাকা’ অর্থ বাহিনীর পশ্চাৎভাগ। হাদীসের মর্ম হলো, তাকে যে আদেশই করা হয়, তা মেনে নেয়। যে কাজই তাকে দেওয়া হয়, সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করে। সে তার কাজ ছেড়ে কোথাও যায় না।” –মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৩২৩০

একটি ফতোয়া

মিম্বারুত তাওহীদে প্রকাশিত; শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসী (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু)র একটি ফতোয়া লক্ষ করুন,

هل يجوز لشاب فيه إستطاعة القتال أن يجلس خلف الحاسوب للجهاد الاعلامي؟ رقم السؤال: 1066

السلام عليكم و رحمة الله و بركاته أنا أعمل مع احدى مؤسسات المجاهدين الإعلامية؛ ولكن قلبي ليس مطمئنا؛ لأن صحتي الحمد لله جيده و إن شاء الله لدي استطاعة القتال ضد الكفار والمرتدين ولكن هناك إخواننا يقولون العمل الإعلامي أفضل لك بسبب قلة إعلام المجاهدين هناك في خراسان. سؤالي هل يجوز لي أن أجلس خلف الحاسوب؟ ام أقاتل في الجبهات؟ و إن كان الجواب كلاهما جهاد في سبيل الله فأيهما أفضل؟ 1 – الجهاد في الجبهات مع المجاهدين؟ 2 – الجهاد الإعلامي؟ الرجاء أريد الجواب من شيخ المجاهدين الشيخ أبي محمد المقدسي حفظك الله من كيد الكفار و من معهم من المرتدين سامحوني! لا أفهم لغة العربية الا قليلا ابو زياد من ارض خراسان (افغانستان)

السائل: ابو زياد

المجيب: الشيخ أبو محمد المقدسي

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله أخانا الفاضل جزاك الله خيرا على حرصك على تحري الأفضل والأحب إلى الله؛ وما دمت كذلك فاقرأ قوله تعالى: (إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ) فالقتال والجهاد الجماعي الذي تضبطه إمارة وجماعة ومنهج واضح وتحت راية نقية؛ هذا هو أفضل الأعمال وأكملها وأحبها إلى مولانا وهو ذروة سنام الإسلام؛ وهذا النوع من الجهاد لا يكمل ولا ينجح ولا تتأتى أهدافه بالقتال وحده، وإن كان القتال من أعظم الأعمال فيه؛ ولكن لابد فيه من جوانب أخرى تردف هذا الجهاد وتكون لسانه الفصيح الناطق الذي يوضح غاياته وأهدافه ويذب عنه تحريف المحرفين وشبهات المبطلين، ورحمه التي تزوده بالدعاة والمجاهدين ولا تعقم، أو نهره الذي يزوده بالرجال والأموال ولا ينضب؛ وغير ذلك مما يحتاجه الجهاد ولا يكمل ويؤتي ثماره إلا به؛ ولذلك يحب الله القتال والجهاد الذي يقوم به من وصفهم بأنهم (صفا كأنهم بنيان مرصوص) يشد بعضه بعضا ويكمل بعضه بعضا، ويكون فيه للردء أجر المباشر للقتال، لأن المباشر للقتال لن يستمر في قتاله ولن ينجح فيه بغير أخيه الذي هو معه ردءا .. وعليه فما أستطيع نصحك به؛ أنه إذا كان عملك الإعلامي الذي تقوم به بتكليف من أميرك أو من المجاهدين فلا يحل لك أن تتركه وتهمل الثغر الذي وضعوك فيه بغير إذنهم ودون التنسيق معهم، بأن تعلمهم بأن نفسك اشتاقت للقتال وملت القعود خلف الحاسوب، وحبذا لو يوفروا غيرك ليسد مكانك ويقوم مقامك؛ فإن أذنوا وفعلوا فاستعن بالله وتوكل عليه وإلا فلا يحل لك إن كنت مؤتمنا على أمانة لا يوجد من يقوم بها غيرك أن تفرط فيها وتضيعها، والله يتولاك وإن علم منك صدقا بلغك منازل الشهداء ولو مت على فراشك .. وفقك الله وإيانا لما يحب ويرضى ..

কিতালে সক্ষম যুবকের জন্য মিডিয়া জিহাদের কাজে কম্পিউটারে বসে থাকা জায়েয আছে কি?

প্রশ্ন নং ১০৬

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ!

আমি মুজাহিদদের একটি মিডিয়া সংস্থার সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু আমার মন আশ্বস্ত হতে পারছে না। আমার স্বাস্থ্যগত অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো। ইনশাআল্লাহ কাফের মুরতাদদের বিরুদ্ধে আমি কিতাল করতে পারবো এবং সে সক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু আমাদের এখানকার ভাইয়েরা বলছেন, ‘আপনার জন্য মিডিয়ার কাজ করাই উত্তম হবে। কারণ, এখানে খোরাসানে মুজাহিদদের মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যম অনেক কম।’ আমার প্রশ্ন হলো, আমার জন্য কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা কি জায়েয হচ্ছে? না, আমি ময়দানে সম্মুখ সমরে লড়াইয়ের জন্য চলে যাবো? যদি ‍উত্তর হয় যে, উভয়টিই জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ, তাহলে প্রশ্ন হলো, কোনটি উত্তম? মুজাহিদ ভাইদের সঙ্গে রণাঙ্গণে লড়াই করা, নাকি মিডিয়া জিহাদের কাজ করা?

শায়খুল মুজাহিদীন শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসীর কাছে উত্তর আশা করছি। আল্লাহ তাঁকে কুফফার ও কুফফারদের দোসর মুরতাদদের ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ রাখুন।

আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আমি আরবী ভাষা খুব ভালো জানি না।

নিবেদক

আবু যিয়াদ

খোরাসান (আফগানিস্তান)

উত্তর:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

মুহতারাম ভাই! আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন যে, আল্লাহর কাছে কোনটি উত্তম ও অধিক পছন্দের, তা আপনি অনুসন্ধান করছেন। এই যখন আপনার প্রত্যাশা, আপনি আল্লাহ তাআলার এই আয়াতে কারীমাটি পড়ুন:

} إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ} [الصف: 4[

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভলোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যু্দ্ধ করে; যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর।’’ (সূরা সফ ৬১:০৪)

যে জিহাদ ও কিতাল হবে জামাআতবদ্ধ, আমীর ও জামাআতের অধীনে। যার থাকবে সুস্পষ্ট একটি মানহাজ, সম্পাদিত হবে একটি পরিচ্ছন্ন ঝাণ্ডার ছায়ায়, সে জিহাদই হবে শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ। আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় এবং সে জিহাদই ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া।

এ ধরনের জিহাদ শুধু কিতালের মাধ্যমে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। সফল ও পূর্ণ হতে পারে না। কিতাল যদিও জিহাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি আমল, কিন্তু সফলতার জন্য কিতালের সহযোগী আরও অনেক কিছু প্রয়োজন, যা ‘বিশুদ্ধ ও স্পষ্টভাষী মুখপাত্র হয়ে জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য মানুষের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরবে এবং বিকৃতিকারীদের বিকৃতি ও বাতিলপন্থীদের সংশয়ের প্রতিরোধ করবে, উর্বর গর্ভ হয়ে অনবরত দাঈ ও মুজাহিদ জন্ম দিবে, অনিঃশেষ ধারার নদী হয়ে মাল ও রিজাল প্রবাহিত করবে। এ ছাড়াও কিতালের জন্য এমন সব কিছু সরবরাহ করবে, যা ছাড়া এ কিতাল পরিপূর্ণ হতে পারে না এবং কাঙ্ক্ষিত ফলও বয়ে আনতে পারে না।

এ জন্যই আল্লাহ তাআলা সেই জিহাদ পছন্দ করেন, যা সম্পাদিত হয় এমন ব্যক্তিদের মাধ্যমে, যাদের বৈশিষ্ট্য তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে যে, ‘তারা হবে এমন সুশৃঙ্খল ও সারিবদ্ধ; যেন সীসা ঢালা প্রাচীর’। তারা একে অপরকে শক্তিশালী করবে, পরস্পর পরস্পরকে পূর্ণতা দান করবে। এখানে যারা সহযোগী হবে, সরাসরি কিতালে অংশগ্রহণকারীর সাওয়াব তারাও পাবে। কারণ যারা ময়দানে লড়াই করছেন, তারা কখনোই লড়াই অব্যাহত রাখতে পারবেন না এবং সফল হতে পারবেন না; তাদের সে ভাইদের বাদ দিয়ে, যারা তাদের সহযোগিতায় আছেন।

সুতরাং এর আলোকে আমি আপনার প্রতি যে নসীহা পেশ করতে পারি তা হলো, মিডিয়ার যে কাজ আপনি করছেন, তা যদি আপনার আমীর বা মুজাহিদদের পক্ষ থেকে অর্পিত হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের অনুমোদন এবং তাঁদের সঙ্গে কোনোরকম বোঝাপড়া ছাড়া তাঁরা আপনাকে যে কাজে নিয়োজিত রেখেছেন, তা খালি ফেলে রেখে চলে যাওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। আপনার কর্তব্য, আপনি তাঁদের জানাবেন যে, আপনার মন লড়াইয়ের জন্য উদগ্রীব এবং কম্পিউটারের সামনে বসে বসে ক্লান্ত। বড় ভালো হয় যদি তারা আপনার পরিবর্তে এমন কাউকে পেয়ে যান, যিনি আপনার শূন্যতা পূরণ করতে পারবেন এবং আপনার স্থলাভিষিক্ত হয়ে কাজ করতে পারবেন।

(তাদেরকে জানানোর পর) যদি তাঁরা অনুমতি দেন, তাহলে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন এবং তাঁর উপর ভরসা করে অগ্রসর হোন। অন্যথায় এমন কোনো দায়িত্বে যদি আপনি তাঁদের আস্থা ভাজন হয়ে থাকেন; যেখানে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে আপনার জন্য জায়েয হবে না সে দায়িত্বে কোনও ত্রুটি করা বা তা ব্যর্থতার মুখে ফেলে চলে যাওয়া। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। তিনি যদি আপনার মাঝে সততা দেখেন, তবে বিছানার শয্যায় মৃত্যু হলেও তিনি আপনাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর পছন্দ ও সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক দান করুন!

উত্তর প্রদানে: শায়খ আবু মুহাম্মাদ আলমাকদিসী

দুর্দিনের আমলের সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি

আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, দুর্দিনের আমলের সাওয়াব ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে সুদিনের আমল অপেক্ষা বেশি। কিতাল যদিও অনেক দিক থেকে এবং অনেকের জন্য বেশ কঠিন একটি আমল, কিন্তু কিতালের পর্বের কাজের ধরন, শক্তি সামর্থ্যের স্তর, শত্রুর ক্ষতি সাধন, লক্ষ্যে পৌঁছার তৃপ্তি, বিজয়ের স্বাদ ও প্রত্যাশা, গনীমতের প্রাপ্তি, আবেগের প্রশ্রয় ইত্যাদির মতো বেশ কিছু কারণ থাকে, যা অনেক ক্ষেত্রে কর্মীকে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে সবল রাখে এবং কিতালের কাজকে প্রস্তুতি পর্বের কাজের চেয়ে সহজ করে দেয়। পক্ষান্তরে প্রস্তুতি পর্বে এবিষয়গুলোর অনুপস্থিতি এবং দুর্বলতা কাজ ও কর্মীদের মনোবলকে অনেক কঠিন ও দুর্বল করে রাখে। এই বিবেচনায় এই পর্বের কাজের সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি। একারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলেছেন, যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে খরচ করেছে এবং কিতাল করেছে, আর যারা মক্কা বিজয়ের পরে করেছে, তারা কখনও সমান হতে পারে না। বরং যারা বিজয়ের আগে করেছে, তাদের মর্যাদা অনেক বেশি। ইরশাদ হচ্ছে,

}وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ} [الحديد: 10[

“কী কারণে তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করছো না, অথচ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত মীরাস আল্লাহরই জন্য। তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে ও কিতাল করেছে, তারা (পরবর্তীদের) সমান নয়। মর্য়াদায় তাঁরা সেই সকল লোক অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, যারা মক্কা বিজয়ের পরে ব্যয় করেছে ও কিতাল করেছে। তবে আল্লাহ কল্যাণের প্রতিশ্রুতি সকলকেই দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।” -সূরা হাদীদ ৫৭: ১০

আল্লামা কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وإنما كانت النفقة قبل الفتح أعظم، لأن حاجة الناس كانت أكثر لضعف الإسلام، وفعل ذلك كان على المنفقين حينئذ أشق والأجر على قدر النصب. -تفسير القرطبي (17/ 240(

“বিজয়ের আগের দান শ্রেষ্ঠ ছিলো, কারণ ইসলামের দুর্বলতার দরুন মানুষের প্রয়োজন তখন অনেক বেশি ছিলো। তাছাড়া যারা দান করেছেন, তাদের জন্যও (দারিদ্র্য ইত্যাদির কারণে) কাজটা অনেক কঠিন ছিলো।” –তাফসীরে কুরতুবী: ১৮/২৪০

আমলে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

আসলে কাজ কোনটা করছি বা কোনটা আমার ভাগে পড়লো, সেটা বড় বিষয় নয়। আমলের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মূল বিষয় দুটি।

এক. কাজটি শরীয়তের উসুল ও নীতি অনুযায়ী করছি কি না? যেমন শরীয়তের তাকাযা অনুযায়ী করা, শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে করা, ইখলাসের সঙ্গে করা, ইহতিসাব ও সাওয়াবের আশায় করা, আল্লাহর ভয়ে করা ইত্যাদি।

দুই. সর্বোচ্চ ফযীলত ও মর্যাদার এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানীর কাজটি করার জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত কি না, তার সত্যিকার অন্বেষা আছে কি না এবং সুযোগ পেলে আমলের মাধ্যমে তার সত্যায়ন করছি কি না?

এ দুটি বিন্দুতে যে যত অগ্রগামী হবে, তার আমলের সাওয়াব তত বেশি হবে। এই দুই বিন্দুতে যারা দুর্বল, তারা বাহ্যত অনেক বড় আমল করেও যে সাওয়াব পাবে না, যারা এই দুই বিন্দুতে সবল, তারা অনেক ছোট আমল করেও তার চেয়ে অধিক সাওয়াব লাভ করবে। একজন বীর বিক্রমে কিতাল করেও যে সাওয়াব পাবে না, আরেকজন মুজাহিদদের রান্নার খড়ি কুড়িয়ে তার চেয়ে বেশি সাওয়াব লাভ করবে। যেমন ইতিমধ্যে সাহাবায়ে কেরামের ‘মুদ’ ও ‘নিসফে মুদ’ পরিমাণ দানের একটি হাদীস আমরা উল্লেখ করেছি।

এজন্যই হাদীসে এসেছে,

من سألَ اللَّهَ الشَّهادةَ صادقًا بلَّغَه اللَّهُ منازلَ الشُّهداءِ وإن ماتَ علَى فراشِه. -أخرجه مسلم برقم: 5039، كتاب الإمارة، باب استحباب طلب الشهادة في سبيل الله.

“যে সততা ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাঁকে শহীদদের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করবেন; যদিও সে তাঁর বিছানায় মৃত্যু বরণ করে।” –সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ৫০৩৯

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, এই দুটি বিন্দুতে কার কোথায় দুর্বলতা আছে, তা খুঁজে বের করা এবং তার সংশোধন ও উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে শরীয়তের প্রতিটি বিষয় যথাযথ বুঝার এবং সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানী করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

وما توفيقي إلا بالله، والله تعالى أعلم بالصواب، وعلمه أتم وأحكم، وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وصحبه أجمعين ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (গুফিরা লাহু)

১৬-১২-১৪৪৪ হি.

০৫-০৭-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ জিহাদের কাজে ব্যয়ের নিয়তে খতমে কুরআনের টাকা নেওয়ার বিধান

Related Articles

Back to top button