জিহাদ-কিতাল:মুফতি আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদী

দারিদ্য ও জিহাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে বিয়ে না করার বিধান?

দারিদ্য ও জিহাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে বিয়ে না করার বিধান?

দারিদ্য ও জিহাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে বিয়ে না করার বিধান

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ
আমি অবিবাহিত। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বিয়ে করানোর সামর্থ্য আমার বাবার আছে। কিন্তু আমি নিজের মাঝেই কিছু দুর্বলতা অনুভব করছি। বিয়ের কথা চিন্তা করলেই খুব ভয় লাগে। যেমন ভয় হয়, বিয়ে করলে জিহাদ করবো কীভাবে? সামনে দুর্ভিক্ষ আসলে তখন কী করবো? এমন নানা ভয়।
এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি? আমার করণীয় কী? আমাকে একটু পরামর্শ দিলে অনেক উপকৃত হব।

-আব্দুল্লাহ জাফর

উত্তর:
বিয়ে জিহাদের জন্য প্রতিবন্ধক নয়। বর্তমানে যারা জিহাদ করছেন এবং অতীতে যারা করেছেন তাদের প্রায় সবাই বিবাহিত। নবী-রাসূলগণ বিয়ে করেই নবুওয়াত ও রিসালাতের মতো গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। বিয়েকে জিহাদের জন্য প্রতিবন্ধক মনে করা আসলে এক ধরনের ভীরুতা ও হীনমন্যতা।
এটা ঠিক যে বিয়ের পূর্বে জিহাদে যোগদান করা তুলনামূলক সহজ। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তো জিহাদের বিধান দিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা করার জন্য। তিনি দেখতে চান, আমরা অর্থ সম্পদ, আত্মীয় স্বজন ও স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা উপেক্ষা করে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারি কি না? যদি আমরা তা করতে পারি তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব। কিন্তু যদি ভয়ের কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করি তাহলে উত্তীর্ণ কীভাবে হবো? যে ছাত্র ভয়ে পরীক্ষার হলেই প্রবেশ করেনি সে পাশ কীভাবে করবে? আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ. – التوبة: 24
“(হে নবী! মুসলিমদেরকে) বলুন, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের সেই ব্যবসা, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং বসবাসের সেই ঘর, যা তোমরা পছন্দ কর, তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আল্লাহ অবাধ্যদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না।” -সূরা তাওবা ০৯:২৪
আর বিয়ের দ্বারা রিযিক বৃদ্ধি পায়। তাই বর্তমানে বিয়ের সামর্থ্য থাকলে আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে বিয়ে করে নেয়া কাম্য। ভবিষ্যতে অভাব-অনটন হওয়ার ভয়ে বিয়ে না করা ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ. -النور: 32
“তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত (তারা পুরুষ হোক বা নারী) তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের গোলাম ও বাঁদীদের মধ্যে যারা বিবাহের উপযুক্ত, তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” –সূরা নূর ২৪:৩২
আয়াতের তাফসীরে আল্লামা তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন,
اس آیت میں یہ تلقین کی گئی ہے کہ جو بالغ مرد وعورت نکاح کے قابل ہوں، تمام متعلقین کو یہ کوشش کرنی چاہۓ کہ ان کا نکاح ہو جائے، اور یہ اندیشہ نہ کرنا چاہۓ کہ اگرچہ اس وقت تو وسعت موجود ہے، لیکن نکاح کے نتیجے میں بیوی بچوں کا خرچ زیادہ ہونے کی وجہ سے کہیں مفلسی نہ ہو جائے، بلکہ جب اس وقت نکاح کی وسعت موجود ہے تو اللہ تعالیٰ کے بھروسے پر نکاح کرلینا چاہۓ ۔ پاک دامنی کی نیت سے نکاح کیا جائے گا تو اللہ تعالیٰ آئندہ اخراجات کا بھی مناسب انتظام فرما دے گا۔ البتہ اگلی آیت میں ان لوگوں کا ذکر ہے جن کے پاس اس وقت بھی نکاح کی وسعت نہیں ہے۔ ان کو یہ تاکید کی گئی ہے کہ جب تک اللہ تعالیٰ اپنے فضل سے ان میں وسعت پیدا کرے، اس وقت تک وہ پاک دامنی کے ساتھ رہیں۔توضيح القرآن: 2/1076 (ط. مكتبہ معارف القرآن)
“আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বালেগ নারী-পুরুষ যদি বিবাহের উপযুক্ত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত তাদের বিবাহের জন্য চেষ্টা করা। এখন যদিও সচ্ছল, কিন্তু বিবাহের পর স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সে অভাবে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় বিবাহ বিলম্বিত করা সমীচীন নয়। চরিত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে বিবাহ দিলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য আল্লাহ তাআলাই উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা করে দেবেন। বাকি যাদের বর্তমান অবস্থাও সচ্ছল নয় এবং বিবাহ করার মতো অর্থ-সম্পদ হাতে নেই, তারা কী করবে? পরের আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে সামর্থ্য দান না করেন, ততক্ষণ তারা সংযম অবলম্বন করবে এবং নিজ চরিত্র রক্ষায় যত্নবান থাকবে।” -তাওযীহুল কুরআন: ২/১০৭৬, (বাংলা অনুবাদ): ২/৪৩১
উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«ابتغوا الغنى في الباءة». –رواه ابن أبي شيبة (9/ 31 رقم: 16162 ط. دار القبلة) عن إبراهيم بن محمد بن المنتشر مرسلا، ورواه عبد الرزاق (6/170 رقم: 10385 ط. المجلس العلمي، الهند) عن الحسن مرسلا، وزاد: وتلا عمر: [إن يكونوا فقراء يغنهم الله من فضله].
“তোমরা বিয়ের মাধ্যমে সচ্ছলতা অন্বেষণ কর।” এরপর তিনি উপর্যুক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৬/১৭০ বর্ণনা নং: ১০৩৮৫ (আল-মাজলিসুল ইলমী, ভারত); মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৯/৩১ বর্ণনা নং: ১৬১৬২ (দারুল কিবলা)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثلاثة حق على الله عونهم: المجاهد في سبيل الله، والمكاتب الذي يريد الأداء، والناكح الذي يريد العفاف». -رواه الترمذي (3/236 رقم: 1655 ط. دار الغرب الإسلامي) وقال: «هذا حديث حسن».
“তিন প্রকার লোককে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করবেন, (এক) আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ। (দুই) যে মুকাতাব (নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে মুক্তি লাভের চুক্তিকারী) দাস, (চুক্তির অর্থ) পরিশোধের ইচ্ছা পোষণ করে। (তিন) যে বিবাহিত ব্যক্তি নিজেকে পবিত্র রাখতে চায়।” -জামে তিরমিযী: ৩/২৩৬ হাদীস: ১৬৫৫ (দারুল গরবিল ইসলামী)

এ বিষয়ে আরো জানতে নিম্মোক্ত ফাতওয়াগুলো দেখুন,
ফাতওয়া: ২৮২- বিয়ে কি জিহাদের জন্য প্রতিবন্ধক?
ফাতওয়া: ৩৬১- বিয়ে করলে জিহাদ থেকে সরে পড়ার আশঙ্কা হলে করণীয় কী?
ফাতওয়া: ৪৪৭- বিয়ের পর সন্তান না নেওয়ার বিধান

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
১৬-১২-১৪৪৫ হি.
২৩-০৬-2024 ঈ.

Related Articles

Back to top button