ফাতওয়াবিবিধফাতওয়া  নং  ৩৮৪

একাধিকবার সমকামিতার কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির করণীয় কী?

একাধিকবার সমকামিতার কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির করণীয় কী?

একাধিকবার সমকামিতার কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির করণীয় কী?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

অপ্রাপ্ত বয়সে আমি কঠিন কিছু পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। যার ফলে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার পর সমকামিতার মতো জঘন্য গুনাহে জড়িয়ে পড়ি। ভার্সিটিতে গিয়েও এ গুনাহ ছাড়তে পারিনি। এটি খুবই জঘন্য একটি গুনাহ, তা জানা সত্ত্বেও একাধিক বার তাতে লিপ্ত হয়েছি। বর্তমানে আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি এবং তাওবা করেছি, একাজ আমি আর কখনও করবো না। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, জেনে বুঝে এমন জঘন্য কাজ বারবার করেছি, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি কীভাবে আল্লাহর ক্ষমা পাবো? আমি চাই, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। এর জন্য আমি কী করতে পারি?

-আব্দুল্লাহ ইবরাহীম

উত্তরঃ

বান্দা যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে গুনাহের পথ থেকে ফিরে আসে, আল্লাহর কাছে লজ্জিত হয়ে তাওবা করে এবং আর কখনও গুনাহ করবে না বলে সঙ্কল্প করে, আল্লাহ তাআলা তার পিছনের সব গুনাহ মাফ করে দেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ. -الشورى: 25

“আর তিনিই নিজ বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং সব গুনাহ মাফ করে দেন। আর যা কিছু তোমরা করো, (সব) তিনি জানেন।” –সূরা শূরা ৪২:২৫

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ. –الزمر 53

“আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমালঙ্ঘন করেছো, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” -সূরা যুমার ৩৯:৫৩

এক হাদীসে এসেছে,

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « كَيْفَ تَقُولُونَ بِفَرَحِ رَجُلٍ انْفَلَتَتْ مِنْهُ رَاحِلَتُهُ تَجُرُّ زِمَامَهَا بِأَرْضٍ قَفْرٍ لَيْسَ بِهَا طَعَامٌ وَلاَ شَرَابٌ وَعَلَيْهَا لَهُ طَعَامٌ وَشَرَابٌ فَطَلَبَهَا حَتَّى شَقَّ عَلَيْهِ ثُمَّ مَرَّتْ بِجِذْلِ شَجَرَةٍ فَتَعَلَّقَ زِمَامُهَا فَوَجَدَهَا مُتَعَلِّقَةً بِهِ ». قُلْنَا شَدِيدًا يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَمَا وَاللَّهِ لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنَ الرَّجُلِ بِرَاحِلَتِهِ ». -صحيح مسلم للنيسابوري (8/ 93)، الرقم: 7135

“বারা বিন আযিব রাযিয়‌াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন, বলো তো, ঘাস-পানি শূন্য এক মরু ময়দানে এক ব্যক্তির বাহনটি ছুটে গেল। সেই মরুভূমিতে না খাওয়ার মতো কিছু আছে আর না পানি আছে। তার বাহনটির উপর তার খাবারও ছিলো, পানিও ছিলো। লোকটি বাহনটি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়লো (কিন্তু পেলো না)।

এরপর ঘটনা ঘটলো, বাহনটি একটি গাছের গোড়ার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন তার লাগাম তাতে আটকে গেল। লোকটি গিয়ে বাহনটিকে তাতে আটকা পেয়ে গেল। বলো তো, লোকটির আনন্দের কী হাল হবে? আমরা উত্তর দিলাম, সে খুবই খুশি হবে ইয়া রাসূলাল্লাহ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শোনো, আল্লাহর কসম, এই লোক তার বাহন ফিরে পেয়ে যেমন খুশি হয়, বান্দার তাওবায় আল্লাহ এর চেয়েও বেশি খুশি হন।” –সহীহ মুসলিম: ৭১৩৫

অন্য একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً. هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ. -سنن الترمذي ت بشار (5/ 440)، الرقم: 3540، أبواب الدعوات، بَاب فِي فَضْلِ التَّوْبَةِ وَالِاسْتِغْفَارِ وَمَا ذُكِرَ مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ بِعِبَادِهِ

“আল্লাহ তা‌আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে, আমার কাছে আশা করতে থাকবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকবো; তোমার গুনাহ যতই হোক। কোনও পরোয়া করবো না। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহ আসমান সমানও হয়ে যায়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। কোনও পরোয়া করবো না। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভরা গুনাহ করো, তারপর আমার সঙ্গে কোনও কিছু শরীক না করে আমার সামনে উপস্থিত হও; আমি জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে হাজির হবো।” -জামে তিরমিযী: ৩৫৪০

অতএব, আপনি নিরাশ হবেন না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া বড় গুনাহ। কিছুতেই তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

{إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ } [يوسف: 87]

“আল্লাহর রহমত হতে একমাত্র কাফের সম্প্রদায়ই নিরাশ হয়।” –সূরা ইউসুফ ১২:৮৭

সত্য দিলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখুন, সত্যিকার তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।

এক হাদীসে এসেছে,

عن أبي عبيدة بن عبد الله عن أبيه، قال: قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم -: “التائب من الذنب كمن لا ذنب له. – سنن ابن ماجه ت الأرنؤوط (5/ 320)، الرقم: 4250، قال المحققون: حديث محتمل للتحسين بشواهده. اهـ

“গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো, যার কোনও গুনাহ নেই।” –সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫০

পাশাপাশি বেশি নেক আমল করতে থাকুন। সালাত, সাওম, যিকির, তিলাওয়াত, দান-সাদাকা যথাসাধ্য বেশি বেশি করতে থাকুন এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে থাকুন।

মন্দ সাথি-সঙ্গীদের থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। পূর্বেকার কোনো চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসলে কোনো পাত্তা দিবেন না। পাশাপাশি নেক ও বুযুর্গ ব্যক্তিদের সাহচর্য অবলম্বন করুন। নেক জীবন লাভের পথে এটি অনেক বড় সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

০৭-১১-১৪৪৪ হি.

২৮-০৫-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ মিডিয়া কর্মীদের উপার্জন কী হালাল, না হারাম?

Related Articles

Back to top button