পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
হাত তুলে দোয়া করার সময় কখন দরূদ পড়তে হয় এবং কীভাবে পড়তে হয়?
-মুহাম্মাদ মুয়ায
উত্তর:
দোয়ার একটি আদব হলো, দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পড়া, তারপর দোয়া করা। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
كنت أصلي والنبي صلى الله عليه وسلم، وأبو بكر، وعمر معه، فلما جلست بدأت بالثناء على الله، ثم الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم دعوت لنفسي، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: سل تعطه، سل تعطه. -رواه الترمذي (1/ 732 رقم:593 ط. دار الغرب الإسلامي) وقال: حديث حسن صحيح.
“আমি সালাত আদায় করছিলাম, আবু বকর ও উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমাসহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তখন সেখানে ছিলেন। (সালাত শেষে) যখন বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর সানা–সিফাত (গুণকীর্তন) করলাম তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দরূদ পাঠ করলাম, এরপর আমার নিজের জন্য দোয়া করলাম। তখন নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে।” -জামে তিরমিযী: ৫৯৩
ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন,
إذا أراد أحدكم أن يسأل، فليبدأ بالمدحة والثناء على الله بما هو أهله، ثم ليصل على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم ليسأل بعد فإنه أجدر أن ينجح. – المعجم الكبير للطبراني (9/ 155 رقم: 8780 ط. مكتبة ابن تيمية) وقال الهيثمي في مجمع الزوائد (10/ 160 ط. مكتبة القدسي) : “حديث جيد.” وقال السخاوي في “القول البديع في الصلاة على الحبيب الشفيع” (ص: 419 ط. مؤسسة الريان) : “رجاله رجال الصحيح.”
“তোমাদের কেউ যখন দোয়া করার ইচ্ছা করে তখন যেন সে আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা দ্বারা শুরু করে, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করে তারপর দোয়া করে। কেননা এটা দোয়া কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত।” -মুজামে কাবীর, তাবারানী: ৮৭৮০
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
كل دعاء محجوب حتى يصلى على محمد وآل محمد صلى الله عليه وسلم. -المعجم الأوسط (1/ 220 رقم: 721 ط. دار الحرمين) وقال الهيثمي في مجمع الزوائد (10/ 160) : ورجاله ثقات.
“সকল দোয়া (কবুল হতে) বাধাপ্রাপ্ত হয় যতক্ষণ না মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি দরূদ পড়া হয়।” -মুজামে আওসাত, তাবারানী: ৭২১
অবশ্য দোয়ার মাঝে ও শেষেও দরূদ পড়া যাবে। বরং অনেক আলেম দোয়ার শুরু-শেষ ও মাঝে দরূদ পড়াকে মুস্তাহাব বলেছেন এবং এর স্বপক্ষে একটি যয়ীফ হাদীসও রয়েছে। -মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ২/২১৫ হাদীস: ৩১১৭ (আল-মাজলিসুল ইলমী); আল-আযকার, পৃ: ১১৮ (দারুল ফিকর); জিলাউল আফহাম: পৃ: ৩৭৫ (দারুল আরুবাহ); আল-কাওলুল বাদী, পৃ: ৪১৭, ৪১৮ (মুআসসাসাতুর রাইয়ান); আদদুররুল মানদুদ, পৃ: ২৩৩; রদ্দুল মুহতার: ১/৫১৮-৫২০ (দারুল ফিকর)
দোয়ার সময় দরূদ পড়ার বিশেষ কোনো পদ্ধতি নেই, অন্যান্য আরবী দোয়া যেভাবে পড়া হয় সেভাবে পড়লেই হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো দরূদ পড়া যায়। তবে সবচেয়ে উত্তম দরূদ হলো দরূদে ইবরাহীম। কেননা খোদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শিখিয়েছেন। -সহীহ বুখারী: ৬/১২০ হাদীস: ৪৭৯৭ (দারু তাওকিন নাজাহ); সহীহ মুসলিম: ১/৩০৫ হাদীস: ৪০৬ (দারু ইহয়ায়িত তুরাস); মিরকাতুল মাফাতিহ: ২/৭৩৯ (দারুল ফিকর); আত-তাবাকাতুল কুবরা, সুবকী: ১/১৮৫ (দারু হাজর) আল-কাউলুল বাদী, পৃ: ১৪১, ১৪৪ (মুআসসাসাতুর রাইয়ান); আদদুররুল মানদুদ পৃ: ১০১ (দারুল মিনহাজ); ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ: ১/১৭২; ফাতাওয়া মাহমুদিয়্যাহ: ৫/২৮১-২৮৩ (যাকারিয়া বুক ডিপো); ফাতাওয়া রহিমিয়্যাহ: ২/২৯৬ (যাকারিয়া বুক ডিপো); কিতাবুন নাওয়াযেল: ১/৪৮৭ (আল-মজলিসুল ইলমী, মুরাদাবাদ)
উল্লেখ্য, শুরুর ন্যায় দোয়ার শেষও আল্লাহ তাআলার হামদ-সানা দিয়ে করা উত্তম। ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
أجمع العلماء على استحباب ابتداء الدعاء بالحمد لله تعالى والثناء عليه، ثم الصلاة على رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكذلك تختم الدعاء بهما. -الأذكار للنووي ت الأرنؤوط (ص: 117) دار الفكر.
“আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তাআলার হামদ ও সানা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। একইভাবে দোয়ার শেষেও আল্লাহ তাআলার হামদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পড়া মুস্তাহাব।” -আল-আযকার, পৃ: ১১৭ (দারুল ফিকর); আরো দেখুন, তাফসীরে কুরতুবী: ৮/৩১৪ (দারুল কুতুবিল মিসরিয়্যাহ); সিলাহুল মুমিন, পৃ: ১১৯ (দারু ইবনি কাসীর)
فقط، والله تعالى أعلم ب`الصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৪-১০-১৪৪৬ হি.
আরও পড়ুনঃ কুরআন অবমাননাকারীর হুকুম কী?