মজলুম থেকে ক্ষমা পাওয়ার পদ্ধতি
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্নঃ
কেউ যদি অতীত জীবনে অনেকের ওপর জুলুম করে থাকে তাহলে এখন তার করণীয় কী? যেমন, কেউ পুলিশে চাকরি করা কালীন অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে পিটিয়েছে, যাদের কাছ থেকে মাফ নেওয়াও সম্ভবপর নয়।
প্রশ্নকারী- আবু আব্দুল্লাহ
উত্তরঃ
হাদীস শরীফে এসেছে,
عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: «أتدرون ما المفلس؟» قالوا: المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع، فقال: «إن المفلس من أمتي يأتي يوم القيامة بصلاة، وصيام، وزكاة، ويأتي قد شتم هذا، وقذف هذا، وأكل مال هذا، وسفك دم هذا، وضرب هذا، فيعطى هذا من حسناته، وهذا من حسناته، فإن فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه أخذ من خطاياهم فطرحت عليه، ثم طرح في النار» -صحيح مسلم: 2581
“আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান, প্রকৃত দেউলিয়া কে? তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (অর্থকড়ি) ও আসবাবপত্র (ধন-সম্পদ) নেই, সেই তো দেউলিয়া। তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি প্রকৃত দেউলিয়া, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে (দুনিয়াতে) একে গালি দিয়েছে, ওকে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ ভোগ করেছে, ওকে হত্যা করেছে, ওকে মেরেছে। এসব মাজলুমকে তার নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে। দেনা পরিশোধের আগেই যখন তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে, তখন তার বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” -সহীহ মুসলিম: ২৫৮১
অতএব দুনিয়াতে কারো প্রতি যেকোনো ধরনের অন্যায়-অবিচার করে থাকলে, অবশ্যই তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
«من كانت له مظلمة لأخيه من عرضه أو شيء، فليتحلله منه اليوم، قبل أن لا يكون دينار ولا درهم، إن كان له عمل صالح أخذ منه بقدر مظلمته، وإن لم تكن له حسنات أخذ من سيئات صاحبه فحمل عليه». -صحيح البخاري: 2449
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী, সে যেনো আজই তার কাছ থেকে দায়মুক্ত হয়ে নেয়, সেদিন আসার পূর্বে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। তার কোনো সৎকর্ম থাকলে জুলুমের সমপরিমাণ সেখান থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। সৎকর্ম না থাকলে প্রতিপক্ষের সমপরিমাণ পাপ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।” –সহীহ বুখারী: ২৪৪৯
তবে মাজলুমের খোঁজ না পাওয়া বা অন্য কোনো কারণে ক্ষমা চাওয়া সম্ভবপর না হলে, আল্লাহর নিকট তার জন্য এবং নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। হাদীসে এই বিষয়ে সুন্দর একটি দোয়া শেখানো হয়েছে।
عن أبي هريرة، أن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: «اللهم إني أتخذ عندك عهدا لن تخلفنيه، فإنما أنا بشر، فأي المؤمنين آذيته شتمته، لعنته، جلدته، فاجعلها له صلاة وزكاة، وقربة تقربه بها إليك يوم القيامة». -صحيح مسلم: 2601، [أنظر: الدعوات للبيهقي (575)، وتكملة فتح الملهم (5/208[(
“আবূ হুরায়রা (রাযি) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি, (আশা করি) আপনি কখনো এর বিপরীত করবেন না। আমি তো একজন মানুষ। সুতরাং আমি যেকোনো মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়েছি, গালি দিয়েছি, লানত করেছি, প্রহার করেছি, তা তার জন্য রহমত ও (গুনাহ থেকে) পবিত্রতার কারণ বানিয়ে দিন এবং এমন নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দিন, যা দ্বারা তাকে কিয়ামতের দিন আপনি আপনার নিকটবর্তী করে নিবেন।” -সহীহ মুসলিম: ২৬০১
-আরও দেখুন: তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম: ৫/২০৮, আদ্দা’ওয়াত, বাইহাকী: ৫৭৫
আল্লাহর কাছে আশা রেখে এভাবে দোয়া করতে থাকলে আশা করি, আল্লাহ তায়ালা যেকোনো উপায়ে তার থেকে আপনার ক্ষমা নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন ইনশাআল্লাহ।
একটি হাদীসে এসেছে,
عن العباس بن مرداس السلمي: أن النبي – صلى الله عليه وسلم – دعا لأمته عشية عرفة بالمغفرة، فأجيب: إني قد غفرت لهم ما خلا الظالم، فإني آخذ للمظلوم منه، قال: أي رب، إن شئت أعطيت المظلوم من الجنة، وغفرت للظالم” فلم يجب عشيته، فلما أصبح بالمزدلفة أعاد الدعاء، فأجيب إلى ما سأل، قال: فضحك رسول الله – صلى الله عليه وسلم – أو قال: تبسم – فقال له أبو بكر وعمر: بأبي أنت وأمي! إن هذه لساعة ما كنت تضحك فيها، فما الذي أضحكك؟ أضحك الله سنك! قال: “إن عدو الله إبليس، لما علم أن الله عز وجل قد استجاب دعائي، وغفر لأمتي، أخذ التراب فجعل يحثوه على رأسه، ويدعو بالويل والثبور، فأضحكني ما رأيت من جزعه”. أخرجه ابن ماجه في السنن (3013)، وقال البوصيري في مصباح الزجاجة (3/ 203): هذا إسناد ضعيف اهـ.
“আব্বাস ইবনে মিরদাস (রাযি) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন বিকালে নিজের উম্মাতের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। উত্তর দেয়া হলো, ‘আমি জালিম ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। আর আমি মাজলুমের পক্ষ হয়ে জালিমকে পাকড়াও করবো।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে আমার রব! আপনি ইচ্ছা করলে মাজলুমকে জান্নাত দিয়ে জালিমকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।’ কিন্তু সেদিন বিকালে তাঁর দোয়ায় সাড়া দেয়া হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুযদালিফায় ভোরে উঠলেন, তখন আবার সেই দোয়া করলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা চেয়েছিলেন তা তাঁকে দেয়া হলো। বর্ণনাকারী আব্বাস (রাযি) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন অথবা তিনি (বর্ণনাকারী) বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুচকি হাসলেন। এ সময় আবু বকর ও উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বললেন, আমাদের পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এটি এমন একটি সময়, যে সময় আপনি ইতোপূর্বে কখনো হাসেননি। কিসে আপনাকে হাসালো? আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরও হাসিখুশি রাখুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলিস যখন জানতে পারলো, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন এবং উম্মতকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন সে মাটি উঠিয়ে নিজের মাথায় ছিটাতে লাগলো আর বলতে লাগলো, হায় আমার কপাল! হায় আমার দুর্ভাগ্য! ইবলিসের এই অস্থিরতা দেখেই আমার হাসি এসেছে।” -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩০১৩
উল্লেখ্য, এ হচ্ছে, কারো প্রতি জুলুম অত্যাচারের বিষয়ে করণীয়। পক্ষান্তরে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করে, তার মাসআলা ভিন্ন। সেক্ষেত্রে মালিকের নিকট বা তার অবর্তমানে ওয়ারিশদের নিকট তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি তা সম্ভবপর না হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে সাদাকা করে দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে সাইটে প্রকাশিত ১৫৯ নং ফতোয়াটি দেখুন। ‘বান্দার হক ফিরিয়ে না দিয়ে দান করে দিলে কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে?’
লিংকঃ বান্দার হক ফিরিয়ে না দিয়ে দান করে দিলে কি দায়মুক্ত হওয়া যাবে?
فقط والله تعالى أعلم بالصواب.
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৭-০৫-১৪৪৪ হি.
০২-১১-২০২২ ঈ.