জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়া  নং  ১৬৪

যে কোনো দ্বীনী কাজের কথা বলে কি জিহাদের জন্য সদকা সংগ্রহ করা যাবে?

যে কোনো দ্বীনী কাজের কথা বলে কি জিহাদের জন্য সদকা সংগ্রহ করা যাবে?

যে কোনো দ্বীনী কাজের কথা বলে কি জিহাদের জন্য সদকা সংগ্রহ করা যাবে?

পিডিএফ ডাউলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্নঃ

বর্তমানে অনেকের কাছেই সরাসরি জিহাদের কথা বলে সদকা চাওয়া যায় না। কখনো অনলাইনে জানানো হলেও তা যে নিরাপদ না তা সবারই জানা। এ পরিস্থিতিতে আমভাবে দ্বীনি কাজের কথা বলে বা মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা কিংবা মজলুম ও অভাবী মুসলিমদের জন্য ব্যয় করার কথা বলে কি জিহাদের জন্য সদকা সংগ্রহ করা যাবে?

প্রশ্নকারী- আব্দুল্লাহ বিন আদম

 

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله و الصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد

আমভাবে দ্বীনি কাজের কথা বলে বা মজলুম মুসলিমদের সহায়তার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করলে, তা জিহাদি সংগঠনে দেয়া যাবে। এই খাতগুলো সাধারণত প্রত্যেক জিহাদি সংগঠনেই থাকে। একইভাবে অভাবীদের কথা বলে উঠালে অভাবী মুজাহিদদের বা অভাবী বন্দী পরিবারকে দেয়া যাবে।

পক্ষান্তরে সুনির্দিষ্ট কোনো খাত বা প্রতিষ্ঠানের কথা বলে টাকা উঠালে তা ওই খাতে এবং ওই প্রতিষ্ঠানেই দিতে হবে। কাজেই মসজিদ মাদ্রাসার কথা বলে টাকা উঠালে তা মসজিদ মাদ্রাসায়ই দিতে হবে, জিহাদের খাতে দেয়া যাবে না। অবশ্য দাতা যদি আমভাবে মসজিদ বা মাদরাসার কথা বলে দেন; সুনির্দিষ্ট কোনো মসজিদ বা মাদ্রাসার কথা না বলেন, তাহলে যেসব মসজিদ বা মাদ্রাসায় ব্যয় করলে জিহাদের কাজে সহযোগী হবে সেগুলোতে দেয়া উত্তম হবে। সরাসরি মুজাহিদদের অধীনস্থ বা মুজাহিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা মসজিদে দেয়া গেলে আরও উত্তম হবে। এতে সাদকা ও ইলমের খেদমতের পাশাপাশি জিহাদে সহযোগিতার সওয়াবও পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

জিহাদের কথা বলে টাকা উঠানো যায় না, এটি একটি বাস্তব সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান এটি নয় যে, আমরা এক খাতের কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে তা অন্য খাতে দিব। এটি শরীয়তে নাজায়েয। নাজায়েয পদ্ধতিতে দ্বীনের কাজ করার দায়িত্ব আল্লাহ আমাদের দেননি; যদিও আমাদের কাছে মনে হতে পারে, এ পদ্ধতিতে করলে দ্বীনের কাজগুলো অধিক তরান্বিত হত। বস্তুত শরীয়াহ সম্মত কাজেই আল্লাহ বারাকাহ রেখেছেন, যদিও বাহ্যত আমাদের দৃষ্টিতে তা কম ফলদায়ক ও ধীর গতির মনে হয়।

এখানে আমাদের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে, প্রকৃত বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা। বাস্তবতার আলোকে মুসলিম নির্যাতনের বিষয়গুলো তুলে ধরে এই পরিস্থিতিতে একজন মুসলিম হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব ও করণীয় কী, তা শরীয়াহর আলোকে স্পষ্ট করা। অর্থ সংগ্রহের চেয়েও এবিষয়টির প্রতি আমাদের বেশি জোর দেয়া উচিত। যাতে প্রত্যেক মুমিন নিজের দায়িত্ব বুঝে, নিজ দায়িত্বে তার অর্থ নিরাপদ পথ খুঁজে কিংবা প্রয়োজনে নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে হলেও যথাস্থানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। আমাদের জানামতে সহীহ মানহাজের জিহাদি সংগঠনগুলো অর্থ সংগ্রহের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয় এভাবে একজন মুসলিমকে তার দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার প্রতি। আর এটাই স্থায়ী ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি; যদিও তা হয় ধীর গতিতে।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, দ্বীন ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হলে সে কাজের পদ্ধতিও শরীয়তসম্মত হতে হবে। অন্যথায় আমাদের অবস্থা হবে তাদের মতো, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,

{قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا (103) الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا (104)} [الكهف]

“বল, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকদের কথা জানাব, যারা আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত? দুনিয়ার জীবনে যাদের শ্রম ব্যর্থ হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করছে, তারা ভাল কাজই করছে’!” -সূরা কাহাফ (১৮): ১০৩-১০৪

এ ব্যাপারে আপনি নিচের ফতোয়াটিও দেখতে পারেন,

ফতোয়া নং ১৪৪ : দ্বীনের যে কোনো কাজে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সাদাকা কি জিহাদের কাজে ব্যয় করা যাবে?

উল্লেখ্য, কারো কাছে যদি বাস্তব বিষয়গুলো পরিষ্কার থাকে, সে ক্ষেত্রে অনলাইনে বা ফোনে শুধু নিরাপত্তার ঢাল হিসেবে যদি এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা থেকে শত্রুরা হয়তো সাধারণ কোনো বিষয় মনে করবে, কিন্তু আমার উদ্দেশ্য হবে, উক্ত শব্দের দূরবর্তী ও অস্বাভাবিক কোনো অর্থ, তাতে অসুবিধা নেই। যেমন আমি বললাম ভাই মাদরাসার চাঁদাটা অমুকের হাতে পৌঁছে দিন। শত্রু বুঝবে সাধারণ কোনো মাদরাসার বিষয়। কিন্তু আমার উদ্দেশ্যে হবে জিহাদি সংগঠন। কারণ, বিশেষ চিন্তা চেতনার দরস ও পাঠদানের জন্য বস্তুত জিহাদি সংগঠনও একটি মাদরাসা ও পাঠশালা।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১০-০৮-১৪৪২ হি.

২৪-০৩-২০২১ ইং

Related Articles

Back to top button