প্রবন্ধ-নিবন্ধ

গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

 

গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, fatwaa.org

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

ভূমিকা

সম্মানিত তাওহীদবাদী ভাই ও বোনেরা! মুহতারাম শাহ্‌ ইদরীস তালুকদার হাফিযাহুল্লাহ’র ‘ গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ’ গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা  আপনাদের সম্মুখে বিদ্যমান। গুরুত্বপূর্ণ এই লেখায় তিনি বাংলাদেশ এর গভীর সঙ্কটগুলো সংক্ষেপে এবং সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। নিঃসন্দেহে এই প্রবন্ধে আমরা আমাদের করণীয় সম্পর্কেও দিক-নির্দেশনা পাব ইনশা-আল্লাহ।

এই লেখাটির উর্দু সংস্করণ ইতোপূর্বে ‘জামা‌আত কায়িদাতুল জিহাদ উপমহাদেশ শাখা’র অফিসিয়াল উর্দু ম্যাগাজিন ‘নাওয়ায়ে গাযওয়ায়ে হিন্দ’ এর গত মে-জুলাই ২০২২ ইংরেজি সংখ্যায় “ বাংলাদেশ এক দাওরাহে পর!” (بنگلہ ديش ايک دوراہےپر!) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটির মূল বাংলা অনুবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি। আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

আম-খাস সকল মুসলিম ভাই ও বোনের জন্য এই রিসালাহটি ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে। সম্মানিত পাঠকদের কাছে নিবেদন হল- লেখাটি গভীরভাবে বারবার পড়বেন, এবং নিজের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হবেন ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ এই রচনাটি কবুল ও মাকবুল করুন! এর ফায়দা ব্যাপক করুন! আমীন।

সম্পাদক

৬ই সফর, ১৪৪৪ হিজরি

৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ইংরেজি

 

 

গভীর সঙ্কটের মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ এর জন্য বিগত দশক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ বিশেষ অনেকগুলো ঘটনা সামনে এসেছে। এই দশকে বাংলাদেশ সরকারের উপর ভারতের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আধিপত্য জোরালো হতে দেখা গেছে। মিডিয়া থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পর্যন্ত – প্রত্যেকটা বিভাগে ভারতের আধিপত্য এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অধিকাংশ বিভাগই ভারতের স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই দশকে সমাজের মধ্যে শিরক, কুফর ও বেহায়াপনার বিস্তার পূর্বের তুলনায় বেশি এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। ইসলাম এবং মুসলিমদের উপর অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হামলা চালানো হয়েছে।

অন্য দিকে এই দশকে ইসলামের জাগরণ দেখা গেছে। মুজাহিদদের পক্ষ থেকে গুপ্তহত্যার সুন্নাহ বাস্তবায়ন দ্বারাই এই জাগরণের সূচনা হয়েছিল। বাংলাদেশ এর মুজাহিদগণ তাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং দ্বীন ইসলামের সাথে অবমাননাকারীদেরকে হত্যা করে তাদের মান-মর্যাদা, দৃঢ় সংকল্প ও বীরত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তাদের এই কাজের বদৌলতে প্রতিক্রিয়ার এক ধারাবাহিকতা চালু হয়ে গেছে, যা বাংলাদেশ এর ওলামায়ে কেরামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

শুরুতে হাসিনা সরকার এই আন্দোলনকে শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে, পরবর্তীতে ধোঁকা, প্রতারণা ও রাজনৈতিক কৌশলে পিষে ফেলতে চেয়েছিল। যাইহোক, ঈমানের বৃক্ষে সিঞ্চনের জন্য যে রক্ত ঢালা হয়েছে তা বাংলাদেশে সামাজিকভাবে ইসলামকে নতুন জীবন দান করেছে। এতদসত্ত্বেও বাংলাদেশের মুসলিমরা এখনো দুর্বল ও অসহায় অবস্থায় আছে।

এর একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত হল – বাংলাদেশ সরকার বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার ভয়ংকর অপরাধের ব্যাপারেও একদম চুপ ছিল। যখন সমস্ত পৃথিবীর মুসলিমেরা এই অভিশপ্ত মুশরিকদের মাত্রাতিরিক্ত অপরাধের নিন্দা করছিল, এমনকি মুসলিমদের উপর চেপে বসা তাগুত শাসকরা পর্যন্ত যখন রাষ্ট্রীয় ভাবে ভারতের সামনে তাদের পেরেশানি ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তখনো কিছুই বলেনি, কোন কিছু করেনি। এর থেকেই বুঝা যায়, বাংলাদেশে ইসলাম ও ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের কী অবস্থা!

বিগত তের বছর ধরে বাংলাদেশে ভারতের তাবেদার গোলাম হাসিনার শাসন চলছে। শত শত আলেম, ইসলামী দলের নেতা ও মুজাহিদগণ জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে। ইসলাম এবং ইসলামের নিদর্শনগুলোকে সমাজ থেকে ধীরে ধীরে মুছে দেয়া হচ্ছে। কুরআনের শিক্ষা এবং সুন্নাত নিয়ে শুধু মাত্র আলোচনা করার কারণেও মুসলিমদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেফতার আর বন্দি করতে বিন্দুমাত্রও বিলম্ব করছে না। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিজেপি ও হাসিনার স্বয়ংক্রিয় তত্ত্বাবধানে সারা দেশে তাদের জাল বিছিয়ে রেখেছে।

দেশে মাদকের রমরমা অবস্থা। লাখ লাখ মানুষ মাদকে আসক্ত। কর্পোরেট ও স্বার্থান্বেষী মহল সমাজে সব ধরনের অশ্লীলতা ছড়াতে তৎপর। অনৈতিকতা ছড়িয়ে পড়েছে, ভেঙে পড়ছে পরিবার ব্যবস্থা। তালাক ও ব্যভিচার বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম বিষণ্ণতা ও হতাশায় ভুগছে। যুবকদের আত্মহত্যা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশ এক সংকটময় পর্যায় অতিক্রম করছে। নির্মাণ ও উন্নয়ন নিয়ে হাসিনার মিথ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে দেশের মুদ্রার মূল্য কমতে শুরু করেছে। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংকগুলো খুবই দুর্বল ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বেকারত্ব বাড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসা ও কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বড় পুঁজিপতিরা তাদের সম্পদ ও পুঁজি সুইস ব্যাংকে জমা করছে। হাসিনা ও তার অনুসারীরা বাস্তব জগতের সাথে যোগাযোগ হারাচ্ছে। ভারতীয় ব্যারেজ থেকে আসা বন্যার পানিতে মানুষ ডুবে মরছে আর হাসিনা ভারতের সাথে তার বন্ধুত্ব উদযাপন করছে। হাস্যকরভাবে ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হাত দিচ্ছে।

রাজনৈতিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দলটির সমস্ত মনোযোগ এখন ২০২৩ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের দিকে। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার কুখ্যাত খুনি ‘র‍্যাব’কে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিল। র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। একারণে বিরোধী দলীয় সেক্যুলারদের অনেকেই হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বা আমেরিকার নেতৃত্বে ক্ষমতার হাত বদলানোর অপেক্ষায় আছে।

সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনাকে আরও গোলামী করতে বাধ্য করার জন্যই এই নিষেধাজ্ঞাগুলি দিয়েছে। আমেরিকা এশিয়ার উপর তার পররাষ্ট্রনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায়, বিশেষ করে চীনকে ধরাশায়ী করার জন্য। আর এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। হাসিনা ক্রমশ ভারতের কাছাকাছি আসছে, ভারতের উপর তার নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট না করে চীনের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে।

ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে খেয়াল করলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা ফিকির করা জরুরী হয়ে যায়। এই বিষয়ও অনুমান করা যায় যে, ভবিষ্যতে আরও কি হবে।

হাসিনার বয়স এখন ৭৪ বছর। সে অত্যন্ত অহংকারী ও ক্ষমতালোভী। রাজনীতি থেকে তার অবসরের তারিখ সম্পর্কে বারবার সে মিথ্যা বলেছে। তবুও আজ হোক কাল হোক, একদিন না একদিন তাকে ক্ষমতার গদি ছাড়তে হবে। হয়তো তার নিজের সম্মতিতে অথবা মৃত্যুর অপরিবর্তনীয় নীতিতে – যা থেকে কারো রেহাই নেই, অথবা অন্য কোনও উপায়ে। কিন্তু হাসিনার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পরে তার কোন উত্তরসূরি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দুর্নীতির জন্য কুখ্যাত। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভেতরেই তাকে ‘অনির্ভরযোগ্য’ মনে করা হয়। অনেকেই বলে থাকে, জয় জটিল মানসিক রোগে ভুগছে। এসব সত্য হোক বা না হোক, সজিব ওয়াজেদ জয়ের নিজের দলের পক্ষ থেকে সমর্থনও নেই – এটাই বাস্তবতা। তার বোন সায়মা ওয়াজেদ আরও কম গ্রহণযোগ্য।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টিও রয়েছে। বলা হয়, হাসিনার ছোট বোন রেহানার বাংলাদেশের ক্ষমতায় হাসিনার উত্তরসূরী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। রেহানার ছেলে রিজওয়ান সিদ্দিক ববি’কে তার খালাতো ভাই সজিব ওয়াজেদ জয়ের চেয়ে অনেক বেশি চতুর ও ধূর্ত মনে করা হয়। আন্তর্জাতিক অস্ত্রব্যবসার সাথে তার উল্লেখযোগ্য লেনদেন রয়েছে এবং সে ভারতীয় গোয়েন্দাদের খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ লেবার পার্টির সদস্য এবং হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন (Hampstead and Kilburn) এলাকার এমপি।

হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা – তারিক আহমেদ সিদ্দিকী। সে দেশের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং হাসিনার জুলুমের ক্ষমতাযন্ত্রের মূল স্থপতি। এই ব্যক্তি রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকীর ছোট ভাই। তাই হাসিনার মৃত্যু হলে বাংলাদেশের সিংহাসন জয় বা তার বোন সায়মার হাতে চলে যাবে বলে মনে হয় না। বরং, এ দু’জনের চেয়ে রেহানার ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা আপাতত শক্তিশালী মনে হয়।

আরেকজন ক্ষমতার ক্ষুধার্ত আশাবাদী – ফজলে নূর তাপস। সে হাসিনারই আরেক আত্মীয় এবং বর্তমানে ঢাকার মেয়র। বলা হয় তার ক্ষমতার চুড়ায় পৌঁছানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

এত কিছুর পরও উপড়ে উল্লিখিত নামের কোনোটিই হাসিনার উপযুক্ত বদলি নয়। অনেক মানুষ, এমনকি আওয়ামী লীগের ভেতরেই অনেকেই মনে করেন- হাসিনার মৃত্যুর পরে, তা স্বাভাবিক বা অন্য যে কারণেই হোক না কেন, দেশে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এবং অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।

বাংলাদেশের অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদের আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও শক্তি নেই। বরং, তারা আমেরিকা এবং ইউরোপের মতো বহিরাগত ত্রাণকর্তাদের উপর তাদের আশা পোষণ করতে পছন্দ করে। কিন্তু এই বহিরাগত ত্রাণকর্তারা তাদের আশা পূরণ করবে বলে মনে হয় না।

আমেরিকার মতো দেশ ও রাষ্ট্রের পক্ষে তাদের সমস্ত ধারণা এবং বিশ্বাস সত্ত্বেও, নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য হাসিনার মতো স্বৈরশাসকদের সহ্য করা, বরং এদেরকে ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করা স্বাভাবিক বিষয়। আর যেখানে আমেরিকার নিজস্ব এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয় আসে, শুধুমাত্র সেখানেই আমেরিকা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার মতো মতবাদগুলোর বুলি আওড়াতে ইচ্ছুক হয়ে পড়ে।

ঘটনাক্রমে এই লোকেরা (ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দল) আমেরিকার সহায়তায় ক্ষমতার আসনে পৌঁছতে সফল হলেও, তারা তাদের ধর্মনিরপেক্ষকরণ এবং বৈশ্বিক ক্রুসেডার, জায়নবাদী, হিন্দুত্ববাদী দাদাদের দাসত্বের আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রাখবে। হাসিনার মতো তারাও হাজী শরীয়তউল্লাহর জমিনে ইসলামের উত্থান ও প্রসার রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

মোটকথা: হাসিনা হোক বা তার বংশীয় কোন উত্তরাধিকারী অথবা ধর্মনিরপেক্ষ কোন বিরোধী দল – এরা সবাই কুফরের তাবুতে বসে আছে। যদিও তারা তাদের ভিতর গত বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি করে কিন্তু মৌলিকভাব এরা সবাই আল্লাহর পরিবর্তে গাইরুল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এরা সবাই পশ্চিমা সেক্যুলার ব্যবস্থার সমর্থক এবং “নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার“ এর গোলামী করতে ঐক্যবদ্ধ। সারকথা হল; আমরা ভবিষ্যতের দুটি অবস্থা দেখতে পাই। (এ ছাড়া অন্য কোন অবস্থা হওয়াও সম্ভব, কিন্তু সেটাও এই দুইয়ের যে কোন একটার সাথে সম্পৃক্ত হবে, অথবা এগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য ধারণকারী হবে):

ক. আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে আমরা একটি নতুন সরকার দেখতে পাব। সেখানে ভারতের গোলাম হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হবে আমেরিকার অনুগত আরেকজন দাস। সেক্ষেত্রেও ইসলাম ও মুসলিমদের উপর ধর্মনিরপেক্ষ আগ্রাসন অব্যাহত থাকবে।

খ. অথবা বাংলাদেশ আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে পাবে, যা অবশ্যই খুব অশান্ত এবং সহিংসভাবে ঘটবে। বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষী – এ ধরনের পরিবর্তন প্রায়ই অরাজক অবস্থা তৈরি করে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনার পিতা শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ তাকে হত্যা করে। স্বৈরশাসক এরশাদ অত্যন্ত দীর্ঘ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সহিংস আন্দোলনের পর ক্ষমতাচ্যুত হন। হাসিনা নিজেও একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে – যেখানে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছিল – এবং সবচেয়ে নৃশংস আগ্রাসনের পরে ক্ষমতার আসনে পৌঁছেছে।

হাসিনার শাসনামল – জুলুম ও অত্যাচারের আমল। ভারতের পরিকল্পনায় বিডিআর বিদ্রোহ, হাসিনার নিজের ঘটানো হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও নৃশংসতার মতো ঘটনাগুলোর কারণে অনেকের মনে হাসিনার প্রতি তীব্র ঘৃণা ও শত্রুতা রয়েছে। হাসিনা তার শাসনামলের ইতিহাস লিখেছে রক্ত দিয়ে। এর সমাপ্তি শান্তিপূর্ণভাবে হবার সম্ভাবনা কম।

এসবের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতে আর্থিক সংকটের আভাস দেখা যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে, আসামে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, সেই সাথে ভারত ও মায়ানমারের মুসলিমদের জন্য ক্রমবর্ধমান সমস্যা বৃদ্ধি – এর সবই বাংলাদেশকে প্রভাবিত করছে।

মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সত্যিই একটি সংকটপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এখন প্রশ্ন হল উত্তরণের সময় কবে আসবে?

দুঃখজনক ব্যাপার হল – বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনগুলো এসব পরিস্থিতিতে কোনও ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। দুর্ভাগ্যবশত, ইসলামী আন্দোলনগুলো এবং অধিকাংশ উলামাগণ ধর্মনিরপেক্ষ জোটে নিম্নস্তরের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ পেয়েই সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হয়ে যান। অথবা তারা সামান্য ও নগণ্য লাভের জন্য এই ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং তাদের সম্মতি অর্জনের কৌশল অনুসরণ করতে পেরেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু এই কৌশল যে ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু আনবে না, এটি তারা বুঝছেন না।

দুটি পরস্পর বিরোধী ও সাংঘর্ষিক ‘বিশ্বাস এবং জীবন ব্যবস্থার’ মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব না। এমন পরিস্থিতিতে একটি অন্যটির উপর বিজয়ী না হয় বা আধিপত্য করে। এর কোন ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব না। ইসলাম আর সেকুলার ব্যবস্থার মাঝে কোন সম্প্রীতি বা সামঞ্জস্যতা নেই। বরং রয়েছে অন্তহীন এবং অবিরাম সংঘাত। কাজেই এ দুয়ের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য।

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ শাসক যতদিন থাকবে, জনগণের মধ্যে বিচ্যুতি ও বিকৃতি তত বাড়বে। এই ধর্মনিরপেক্ষ ও দুর্নীতিবাজ শাসকরা যত বেশি দিন শাসনের সুযোগ পাবে, তারা এবং তাদের বিশ্ব প্রভুরা ততোই জনগণের ফিতরাকে নষ্ট করবে। এর ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামের অস্তিত্ব হ্রাস পাবে ও দুর্বল হতে থাকবে। এমনকি আলেমদের আকীদা-বিশ্বাসেও ভিতরে ভিতরে বিকৃতি ঘটবে। এটি এমন একটি ধ্রুব সত্য যা কখনো ব্যতিক্রম হবার নয়। পাশ্চাত্যের খ্রিস্টধর্মের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছে। সেক্যুলারাইজেশন (ধর্মনিরপেক্ষতা) তাদের বিশ্বাস, ধর্ম, পরিবার, প্রকৃতি, পরিচয়, সব কিছু খেয়ে ফেলেছে। আজ এমন অবস্থা হয়েছে যে তারা তাদের নিজেদের শরীর নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে আছে; তারা নারী, নাকি পুরুষ এটাও তারা আজ আর নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না।

ইসলামী আন্দোলনগুলো, উলামায়ে কেরাম এবং দ্বীনদার যুবকদের জন্য জরুরী হল; তারা যেন বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ করে। অতঃপর বাংলাদেশের বিশেষ অবস্থা এবং তাদের নিজেদের সীমাবদ্ধ সক্ষমতার হিসেব করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) রাজনীতিবিদদের সামনে নতজানু হয়ে বসার অর্থ তো এটাই যে, নিজের দেশ ও জাতিকে কুফরের অন্ধকার ও গোমরাহিতে লিপ্ত হওয়ার ও  তাতে হারিয়ে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া। (নাউযুবিল্লাহ)

যদি বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশে ইসলাম একেবারে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং মুসলিমদের ইসলামী পরিচয় একে একে মুছে যাবে। এই জন্য জরুরী হল – আপনি নিজেকে এই শিকল থেকে মুক্ত করুন। যাতে করে ফলস্বরূপ বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে ভারত এবং পশ্চিমাদের গোলামী থেকেও মুক্ত করা যায়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ তাকাযা হল – এমন কোন পদক্ষেপ বা কৌশল আবিষ্কার করা, যার দ্বারা এই জমিন ও এর মুসলিম বাসিন্দাদের উপর থেকে সেক্যুলার ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপ ও আধিপত্য খতম করা সম্ভব হবে। একটি কার্যকর কর্মকৌশল অবলম্বন করতে হবে। এটি ফলপ্রসূ হতে হয়তো কয়েক বছর লাগবে, অথবা এই প্রচেষ্টায় কয়েক যুগও লেগে যেতে পারে। কিন্তু তবুও এটা আবশ্যক যে, পা বাড়াতেই হবে (কাজ শুরু করে দিতে হবে)। সফর যদিও হাজার মাইলের হয়, তার আরম্ভ প্রথম কদম থেকেই শুরু হয়। আর যদি আমরা এমনটি না করি তবে যে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্ম’ কুফরের অন্ধকার ও গোমরাহিতে জন্ম নেবে, তারা আমাদেরকেই দোষারোপ করবে। ইতিহাসও আমাদেরকে ক্ষমা করবে না।

আমার আলোচনার সমাপ্তি হাকীমুল উম্মত শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরীর কথা দ্বারা করবো। এ কথা তিনি বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:

“হে আমার বাংলাদেশী মুসলিম ভাইয়েরা,

ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্রুসেডারদের সেই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, যা এই উপমহাদেশীয় ও পশ্চিমা শীর্ষস্থানীয় অপরাধীগুলোর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই আক্রমণ ইসলাম, ইসলামের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে। তারা চায় আপনাদেরকে একটা স্বৈরাচারী ও কুফরী শাসনের দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে। তারা আপনাদের উপর যে জীবন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে: মানবজাতিকে দাসে পরিণত করা, তাদের সম্পদ লুঠে নেয়া এবং তাদেরকে নৃশংস ও নারকীয় পদ্ধতিতে বিভক্ত করে রাখা।

আমি আপনাদেরকে ইসলামী আইন-কানুন, বিধি-বিধান ও আদর্শ আঁকড়ে ধরার জন্য আহবান করছি। আপনারা ইসলামী শরীয়তের অনুসরণ করে জীবন অতিবাহিত করুন, এবং আপনাদের সন্তানদেরকে মজবুতভাবে ইসলামের অনুসরণের উপর বড় করুন।

আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা হক্কানী ওলামাদেরকে চারপাশে জড়ো হোন, তাদেরকে সাহায্য ও সমর্থন করুন, তাদেরকে নিরাপত্তা দিন।

আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, ইসলামের হেফাজত করার জন্য ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে এক গণজাগরণ সৃষ্টি করুন।

আমি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামদেরকে আহবান করছি,

দ্বীন ইসলাম আপনাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পূর্ণ করুন।

আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা ইসলামী শরীয়তের পরিপূর্ণ কর্তৃত্বের মূলনীতিকে আঁকড়ে ধরুন, এবং মানবরচিত সংবিধান ও আইনের উপরে শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বকে আঁকড়ে ধরুন, যেন তা সাধারণ জনগণের ইচ্ছার উপর কর্তৃত্বশীল থাকে।  এবং শরীয়ত যেন তাদের খেয়াল-খুশি কিংবা অন্য কোনও কর্তৃত্বের অধীন না হয়।

আমি আপনাদেরকে আহবান করছি, আপনারা সাধারণ জনগণকে এক বিশাল ও সর্বব্যাপী ঈমানী জাগরণের নেতৃত্ব দিন, এমন এক জাগরণের নেতৃত্ব দিন যার জোয়ারে কোনও ভাটা পড়ে না এবং যার গতিশীলতা কখনো হ্রাস পায় না, যতক্ষণ না ইসলামের জমিনে শুধুমাত্র ইসলামী শরীয়তের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা অন্য কোনও কর্তৃত্বের অধীন না থেকে বরং নিজেই কর্তৃত্বশীল হয়, যা অন্যের নির্দেশের অধীন না হয়ে বরং নিজেই নির্দেশদাতা হয়, যা অন্যদেরকে নেতৃত্ব দেয়, অন্যের নেতৃত্বের অধীন থাকে না”।

 

***

আরো পড়ুন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ভারতের প্রভাব

Related Articles

Back to top button