ওয়ালা-বারা:ফাতওয়াসকল ফাতওয়াফাতওয়া  নং  490

অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিধান

অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিধান   

প্রশ্ন: ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের প্রতি কি শ্রদ্ধাশীল হওয়া যাবে? কোনো কোনো আলেমকে ওয়াজ মাহফিলে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা হিন্দু ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল তবে চিন্তার জন্য মাঝে মাঝে কিছু যৌক্তিক কথা ছুঁড়ে দেই’ এ ধরনের কথা কি বলা যাবে? যারা বলেন তাঁদের বিধান কী?

-আবদুল জালিল

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد:

ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও সম্মান প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ শরীয়তে নেই।

ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম এবং একমাত্র ইসলামের অনুসারীরাই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। অন্য সব ধর্ম মিথ্যা ও বাতিল এবং তার অনুসারীরা কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ. سورة آل عمران: 19

“নিশ্চয় আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলাম।” -সূরা আলে ইমরান ০৩: ১৯

অন্যত্র ইরশাদ করেন,

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ. -سورة آل عمران: 85

“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন অন্বেষণ করবে, তার থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” -সূরা আলে ইমরান ০৩: ৮৫

একজন মুমিন কখনোই বাতিল ও মিথ্যা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারে না। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, মূলত ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মের একটি কুফরী আকীদা। যাতে মনে করা হয়, ধর্মের মধ্যে সত্য মিথ্যা বলে কিছু নেই। ধর্ম পরকালের জন্য নয়; বরং ধর্ম শুধুই মানুষের ইহকালীন মানসিক প্রশান্তির অবলম্বন মাত্র। সুতরাং যে যে ধর্ম গ্রহণ করে কিংবা বর্জন করে প্রশান্তি লাভ করে, তার জন্য সেটাই ধর্ম; সেটাই সত্য। অন্য সবার নৈতিক দায়িত্ব, একজন মানুষের অবলম্বনকে সম্মান করা, সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীকে সমান মনে করা, কোনো ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীকে অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর উপর প্রাধান্য না দেয়া এবং ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ব্যবধান না করা। এটি ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অতএব এই অর্থে ‘আমরা হিন্দু ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল’ বলা বা এমন আকীদা রাখা যে কুফর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। -আদদুররুল মুখতার: ৭৫৯

তবে ইসলাম কাউকে তার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে না। ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে একজন কাফের ইসলামী আইনের গণ্ডিতে থেকে তার ধর্ম পালন করতে পারে। মাজুর, ভীরু, অজ্ঞ কিংবা অপরিণামদর্শী আলেমদের কেউ কেউ এধরনের অর্থেও ‘অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা’র কথাটি বলে থাকেন। এ উদ্দেশ্যে ‘অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা’র কথা বললে যদিও তা কুফর হবে না, তথাপিও তা পরিহার করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যই জরুরি। একজন আলেমের জন্য তো তা মোটেই সমীচীন নয়। আর যদি তার এমন বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, তাহলে অবশ্যই তা মস্ত বড় অন্যায় এবং একারণে তিনি গোনাহগার হবেন।

কারণ বর্তমান গণতান্ত্রিক বিশ্বে আলোচ্য বাক্যটির কুফরী অর্থটি প্রতিষ্ঠিত। ব্যাখ্যা ছাড়া বললে সাধারণত মানুষ প্রতিষ্ঠিত ও প্রসিদ্ধ অর্থটিই বুঝে। একজন আলেমের দায়িত্ব, মানুষের সামনে এসব কথা ও আকীদার অসারতা পরিষ্কার করে ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। তাদের মুখে অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার বাক্য উচ্চারিত হওয়া তাদের আকীদা বিশ্বাস ও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের পরিপন্থী। এমনিভাবে তা সমাজে ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের ব্যাপারে সংশয় উদ্রেককারী এবং কুফরের প্রতি নমনীয়তা ও ঈমান-কুফর গুলিয়ে ফেলার পথ উন্মোচনকারী, যা অনেক বড় অন্যায়।

কেউ যদি সত্য প্রকাশের সৎ সাহস না রাখেন কিংবা নিজেকে অক্ষম মনে করেন, তার দায়িত্ব ঘরে বসে থাকা। জনসম্মুখে এসে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়া এবং সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কিছুতেই জায়েয নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

{وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ} [البقرة: 42]

“সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলো না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না।” –সূরা বাকারা ০২: ৪২

আরো ইরশাদ করেন,

{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا } [النساء: 135]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে ইনসাফের উপর অবিচল থাকো; যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে, পিতা-মাতার বিরুদ্ধে কিংবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। তারা যদি ধনী কিংবা গরীব হয়, তবে আল্লাহ তাদের উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়ের ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (দ্ব্যর্থহীন সত্যের পরিবর্তে) যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে (মনে রেখো) তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্মক অবগত।” –সূরা নিসা ০৪: ১৩৫

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৩-০২-১৪৪৬ হি.

২৯-০৮-২০২৪ ঈ.

 

Related Articles

Back to top button