অন্তরে ঈমান মুখে কুফরি বাক্য উচ্চারণের হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
কোন ব্যক্তি যদি শত্রুর জুলুম-নিপীড়নের কারণে বাধ্য হয়ে অন্তরে ঈমান রাখার পরও মুখে কুফরি বাক্য উচ্চারণ করে কিংবা কোন কুফরি কাজ করে, তাহলে তার হুকুম কী?
প্রশ্নকারী- আব্দুল্লাহ
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
সাধারণ কোন জুলুম-নিপীড়ন, যেমন স্বল্প সময়ের জন্য বন্দি হওয়া, সামান্য মারধরের শিকার হওয়া ইত্যাদি কারণে কুফরি বাক্য উচ্চারণ করা বা কুফরি কাজ করা জায়েয নেই। তবে যদি প্রবল ধারণা হয় যে, কুফরি প্রকাশ না করলে হত্যা, অঙ্গহানি, অসহনীয় প্রহার বা দীর্ঘ বন্দিত্বের শিকার হতে হবে, তাহলে অন্তরে পরিপূর্ণ ঈমান রেখে; মুখে কুফরি বাক্য উচ্চারণ করলে বা কোন কুফরি কাজ করলে, ঈমান ভঙ্গ হবে না।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ (106) النحل
“যাকে (কুফরি করতে) বাধ্য করা হয়, অথচ তার অন্তর ঈমানের উপর অটল থাকে, সে ব্যতীত যে কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করবে এবং কুফরির জন্য মন উম্মুক্ত করে দিবে, তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি।” (–সূরা নাহল (১৬) : ১০৬)
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (রহ) (৭২৮ হি.) বলেন, অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুখে কোন কুফরি কথা বলবে, সে কাফির হয়ে যাবে। তবে কাউকে যদি জানের ভয় দেখিয়ে কুফরি কথা বলতে বাধ্য করা হয়, আর সে অন্তরে ঈমান বহাল রেখে জান বাঁচানোর জন্য শুধু মুখে কুফরি কথা উচ্চারণ করে, তাহলে সে কাফির হবে না। কিন্তু এ অবস্থায়ও যদি কেউ মন থেকে কুফরি কথা বলে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। (আসসারিমুল মাসলুল: ৫২৪)
তবে এ অবস্থায়ও উত্তম হল, বাহ্যিকভাবেও কুফরি না করে ঈমানের উপর অটল থাকা। একারণে যদি মৃত্যুবরণ করতে হয়, তাহলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হবে ইনশা-আল্লাহ। যদি তা সম্ভবপর না হয়, তাহলে অন্তত তাওরিয়া ও রূপকতার আশ্রয় গ্রহণ করার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ এমন দ্ব্যর্থবোধক আচরণ বা উচ্চারণ প্রকাশ করবে, যাতে শত্রু মনে করবে কুফরি করছে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য থাকবে ভিন্ন কিছু। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিতে বাধ্য করলে, মুখে যদিও মুহাম্মাদ বলবে, কিন্তু মনে মনে নিয়ত করবে, আমি মুহাম্মদ নামের অন্য কাউকে গালি দিচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে এধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমীন। (তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৬০৫; তাফসীরে কুরতুবি: ১০/১৮২; ফাতহুল কাদীর: ৯/২৩৫; হিদায়া: ৩/২৭২: বাদায়িউস সানায়ে: ৭/১৭৬: রদ্দুল মুহতারা: ৬/১৩৩)
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
–আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৮-০৭-১৪৪৩ হি.
০২-০৩-২০২২ ঈ.
আরও পড়ুনঃ তাগুতি আইনে জামিনের আবেদন করার হুকুম কী?