ঈমান-আকীদাফাতওয়া  নং  ৫০৯

শাতিমের তাওবা কি কবুল হবে?

প্রশ্ন: কোনো নাস্তিক, শাতেমে রাসূল যদি খাঁটি দিলে তাওবা করে, তাহলে কি তার তাওবা কবুল হবে?

-সাইফুল ইসলাম হায়দার

 

উত্তর:

بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد!

কোনো মুসলমান যদি নাস্তিক হয়ে যায় অতঃপর খাঁটি দিলে তাওবা করে ইসলামে ফিরে আসে, আল্লাহ তাআলার কাছে তার তাওবা কবুল হবে এবং আখিরাতে সে নাজাত পাবে। এমনিভাবে কোনো শাতিমে রাসূলও যদি খাঁটি দিলে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন এবং আখিরাতে সে নাজাত পাবে। এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

{قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ} [الزمر: 53]

“বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমা লংঘন করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” -সূরা যুমার ৩৯: ৫৩

তবে শাতিমে রাসূল তাওবার দ্বারা আখিরাতে মাফ পেলেও দুনিয়ার বিচারে তার তাওবা কবুল হবে কিনা, অর্থাৎ সে হত্যা থেকে নিষ্কৃতি পাবে কি না, এ বিষয়ে আইম্মায়ে কেরামের দ্বিমত রয়েছে। কারো কারো মতে, সে তাওবা করলেও দুনিয়ার শাস্তি মওকুফ হবে না; বরং তাকে হত্যা করতে হবে। তবে হানাফি ও শাফেয়ি মাযহাবের ফতোয়া হচ্ছে, তাওবা করলে দুনিয়ার বিচারেও শাতিমের তাওবা কবুল হবে এবং সে হত্যা থেকে নিষ্কৃতি পাবে।

তারা বলেন, কোনো মুসলমান কুফর করে মুরতাদ হয়ে গেলে তার তাওবা কবুল হয় এবং তাকে হত্যা করা হয় না। মুরতাদের তাওবা কবুলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

{كَيْفَ يَهْدِي اللَّهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (86) أُولَئِكَ جَزَاؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (87) خَالِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ (88) إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ (89)} [آل عمران: 8689]

“আল্লাহ এমন লোকদের কিভাবে হেদায়াত দেবেন, যারা ঈমান আনার পর কুফর অবলম্বন করেছে, অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, রাসূল সত্য এবং তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলীও এসেছিল। আল্লাহ এরূপ জালিমদেরকে হেদায়াত দান করেন না। এরূপ লোকদের শাস্তি হচ্ছে, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফিরিশতাদের ও সমস্ত মানুষের লানত। তারই মধ্যে (লানতের মধ্যে) তারা সর্বদা থাকবে। তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না। অবশ্য যারা এসব কিছুর পরও তাওবা করবে ও নিজেদেরকে সংশোধন করবে, (তাদের জন্য) আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” -সূরা আলে ইমরান ০৩: ৮৬-৮৯

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করাও একটি কুফর। এর দ্বারা ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদ হয়ে যায়। সুতরাং ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে আবার ইসলামে ফিরে আসলে অন্যান্য মুরতাদের মতো তারও তাওবা কবুল হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে ইমাম তাকিউদ্দিন সুবকি রহিমাহুল্লাহ (৭৫৬ হি.) বলেন,

وهذه نص في قبول توبة المرتد، وعمومها يدخل فيه الساب. -السيف المسلول على من سب الرسول، ص: 175

“উল্লেখিত আয়াত মুরতাদের তাওবা কবুল হওয়া প্রসঙ্গে স্পষ্ট। এর ব্যাপকতার মধ্যে শাতিমও অন্তর্ভুক্ত হবে।” -আসসাইফুল মাসলুল, পৃ: ১৭৫

ইমাম আবু ইউসুফ রহিমাহুল্লাহ (১৮২ হি.) বলেন,

وأيما رجل مسلم سب رسول الله صلى الله عليه وسلم أو كذبه أو عابه أو تنقصه؛ فقد كفر بالله وبانت منه زوجته؛ فإن تاب وإلا قتل. –كتاب الخراج لأبي يوسف: 199

“যেকোনো মুসলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালমন্দ করল বা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল বা বদনাম করল অথবা তাঁর শান-মান খাটো করল, সে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কুফর করল! তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। যদি সে তাওবা করে ভালো, অন্যথায় তাকে হত্যা করা হবে।” -কিতাবুল খারাজ: ১৯৯

আরও দেখুন- আননুতাফ: ২/৬৯৪; রদ্দুল মুহতার: ৪/২৩১-২৩৫; রসায়েলে ইবনে আবেদিন শামি: ১/৩২৩

শাতিমের তাওবা কবুল হওয়ার আরও একটি দলীল হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক শাতিমকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। শাতিমকে হত্যা করা আবশ্যক হলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করতেন না। -আসসাইফুল মাসলুল, পৃ: ১৭৭

উল্লেখ্য, মুতাআখখিরিন হানাফি ইমামদের কারো কারো কিতাবে বলা হয়েছে, শাতিমে রাসূল তাওবা করলেও তাকে হত্যা করতে হবে। তবে এটি হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ও ‘মুফতা বিহি’ মত নয়। এ বিষয়ে ইবনে আবিদিন শামি রহিমাহুল্লাহ ‘তাম্বিহুল উলাতি ওয়ালহুক্কাম…’ নামে একটি তাহকীকি পুস্তিকা লিখেছেন। যারা বিস্তারিত তাহকীক জানতে চান পুস্তিকাটি পড়ে নিতে পারেন।

ইলাউস সুনান ১২/৬৪২-৬৪৪ (এদারাতুল কুরআন করাচি)-তেও বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে, সেখানেও দেখে নিতে পারেন ইনশাআল্লাহ।

ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ২/৪৯৩-৪৯৪; ফাতাওয়া হক্কানিয়া (১/১৩৯); কিতাবুন নাওয়াযেল, সালমান মানসুরপুরী: ১/৪১৯ এবং বিন্নুরি টাউন ও দারুল উলূম দেওবন্দের ওয়েবসাইটেও একই কথা বলা হয়েছে।

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৮-০৩-১৪৪৬ হি.

০২-১০-২০২৪ ঈ.

 

আরো পড়ুন লিংক-

অন্তরে ঈমান মুখে কুফরি বাক্য উচ্চারণের হুকুম কী?

Back to top button