জিহাদ-কিতাল:ফাতওয়াফাতওয়া  নং  ৪১৭

জিহাদের জন্য কি ইমাম থাকা শর্ত?

জিহাদের জন্য কি ইমাম থাকা শর্ত?

জিহাদের জন্য কি ইমাম থাকা শর্ত?

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

প্রশ্ন:

জিহাদের জন্য কি আমীর কিংবা ইমাম থাকা শর্ত?

-আব্দুস সামাদ

উত্তর:

জিহাদ যদিও ক্ষেত্র বিশেষে এককভাবে করা যায় এবং কখনও করতে হয়, কিন্তু মৌলিকভাবে তা একটি জামাআতবদ্ধ আমল। স্বভাবতই কোনো জামাআতবদ্ধ আমল আমীর ছাড়া সুশৃঙ্খলভাবে আঞ্জাম দেওয়া যায় না। তাই সুশৃঙ্খলভাবে জিহাদের কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য অবশ্যই আমীর জরুরি এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধু জিহাদ নয়, মুসলিমদের যেকোনো ইজতেমায়ী কাজেই আমীর জরুরি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إذا خرج ثلاثة فى سفر فليؤمروا أحدهم. -رواه أبو دواد من حديث أبي سعيد الخدري: 4/249، رقم:  2608 ط. دار الرسالة العالمية) وقال عبد الحق الإشبيلي (581 هـ) في “الأحكام الصغرى” (2/ 482 مكتبة ابن تيمية، القاهرة) “يُروى هذا مرسلًا عن أبي سلمة، والذي أرسله أحفظ.” ولكن قال ابن القطان الفاسي (628 هـ) في “بيان الوهم والإيهام في كتاب الأحكام” (5/ 290 دار طيبة – الرياض) “إن للحديث طريقا آخر لا بأس به ” ثم ذكر ما أخرجه البزار (1/ 462 رقم: 329 ط. مكتبة العلوم والحكم – المدينة المنورة) وابن خزيمة في “صحيحه” (4/ 141 رقم: 2541 ط. المكتب الإسلامي – بيروت) عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنه قال: “إذا كنتم ثلاثة في سفر فأمروا عليكم أحدكم ذاك أمير أمره رسول الله صلى الله عليه وسلم.” ثم قال: “فهذا الطريق صحيح”.

“তিন ব্যক্তি সফরে বের হলে তারা যেন একজনকে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেয়।” –সুনানে আবু দাউদ: ৪/২৪৯, হাদীস নং: ২৬০৮ (দারুল রিসালাতিল আলামিয়্যাহ)

আরেক বর্ণনায় এসেছে,

لا يحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم. -رواه الإمام أحمد فى المسند عن عبد الله بن عمرو (11/ 227 رقم: 6647 ط. مؤسسة الرسالة)

“যেকোনো তিন ব্যক্তির জন্য কোনো মরু ময়দানে অবস্থান করা জায়েয নয়, যতক্ষণ না তারা তাদের একজনকে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেয়।” –মুসনাদে আহমদ: ১১/২২৭, হাদীস নং: ৬৬৪৭ (মুআসসাসাতুল রিসালাহ)

সুতরাং যেখানে তিনজনের ক্ষুদ্র একটি অস্থায়ী জামাআতের জন্য একজন আমীর জরুরি, সেখানে জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইজতেমায়ী বিষয়ে আমীরের জরুরত প্রশ্নাতীত। তাছাড়া যেকোনো ইজতেমায়ী কাজই যে একজন আমীর ছাড়া সম্ভব নয়, তা একটি স্বভাবজাত বিষয়ও বটে।

তবে জিহাদের জন্য আমীর শর্ত নয়। জরুরি হওয়া আর শর্ত হওয়া এক কথা নয়। শর্ত হল এমন বিষয়, যা না থাকলে কাজটি করা যায় না বা করা গেলেও তা শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন নামাযের জন্য পবিত্রতা শর্ত। এজন্য পবিত্রতা ছাড়া কেউ নামায আদায় করলেও শরীয়তে তা গ্রহণযোগ্য নয়। হজ ফরয হওয়ার জন্য সামর্থ্য শর্ত। এজন্য সামর্থ্য না থাকলে হজ করা যায় না এবং হজ ফরযও হয় না। পক্ষান্তরে জরুরি এমন বিষয়, যা থাকা একান্তই কাম্য, কিন্তু তা না থাকলেও মূল কাজটির অস্তিত্ব সম্ভব। যেমন ফরয নামাযের জন্য জামাআত জরুরি, ইমাম জরুরি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ইমাম ও জামাআত না হলে ফরয নামায পড়া যাবে না বা সহীহ হবে না। ফরয নামাযের জন্য জামাআত ও ইমাম যেমন জরুরি, তেমনি জিহাদের জন্য আমীর জরুরি; যদিও জরুরতের মাত্রায় ব্যবধান আছে। তবে জিহাদের জন্য আমীর বা ইমাম শর্ত নয়।

আব্দুল কাদের জিলানি রহিমাহুল্লাহ (৫৬১ হি.) বলেন,

فقد شبهت مذاهب الروافض باليهودية، قال الشعبي: محبة الروافض محبة  اليهود، قالت اليهود: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من آل داود، وقالت الروافضة: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من ولد على بن أبي طالب؛ وقالت اليهود: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المسيح الدجال، وينزل بسبب من السماء، وقالت الروافض: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المهدي وينادي مناد من السماء -الغنية لطالبي طريق الحق عز وجل مع حاشية أبي عبد الرحمن صلاح بن محمد، دار الكتب العلمية، بيروت، ج:1، ص: 184

“রাফেজিদের মাযহাব ইহুদী ধর্মের সদৃশ।। শাবি রহিমাহুল্লাহ বলেন, রাফেজিদেরকে ভালোবাসা ইহুদীদেরকে ভালোবাসার নামান্তর। কারণ ইহুদীরা বলে, ইমামত একমাত্র দাউদের বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। আর রাফেজিরা বলে ইমামত একমাত্র আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। এমনিভাবে ইহুদীরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় কোনো জিহাদ নেই, যতক্ষণ না মাসিহে দাজ্জাল আকাশ থেকে একটি মাধ্যম ব্যবহার করে অবতরণ করবে। আর রাফেজিরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ নেই, যতক্ষণ না ইমাম মাহদি বের হবেন এবং আকাশ থেকে একজন আহ্বায়ক আহ্বান করবেন।” –‘আলগুনইয়াহ লিতালিবি তারিকিল হাক, আবু আব্দুর রহমান সালাহ কৃত টীকাসহ: ১/১৮৪

ইবনু আবিল ইয আলহানাফী রহিমাহুল্লাহ (৭৯২ হি.) বলেন,

قوله : ( وَالْحَجُّ وَالْجِهَادُ مَاضِيَانِ مَعَ أُولِي الْأَمْرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ، بَرِّهِمْ وَفَاجِرِهِمْ ، إلى قِيَامِ السَّاعَة ، لَا يُبْطِلُهُمَا شَيْءٌ وَلَا يَنْقُضُهُمَا ) .

ش : يُشِيرُ الشَّيْخُ رحمه الله إلى الرَّدِّ على الرَّافِضَة ، حَيْثُ قَالُوا : لَا جِهَادَ في سَبِيلِ الله حتى يَخْرُجَ الرِّضَا مِنْ آلِ مُحَمَّدٍ ، وَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ : اتَّبِعُوهُ !! وَبُطْلَانُ هَذَا الْقَوْلِ أَظْهَرُ مِنْ أَنْ يُسْتَدَلَّ عليه بِدَلِيلٍ . -شرح العقيدة الطحاوية لإبن أبى العز الحنفي، تحقيق أحمد محمد شاكر: 2/ 443

“তাহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘নেককার হোক ফাসেক হোক, মুসলিম উলুল আমরদের সাথে মিলে কিয়ামত পর্যন্ত হজ ও জিহাদ চলমান থাকবে। কোনো কিছুই তা বাতিল ও নস্যাৎ করতে পারবে না।”

ব্যাখ্যা: শায়খ রহিমাহুল্লাহ রাফেজিদের খণ্ডনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। রাফেজিরা বলে, ‘যতদিন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ থেকে রেজা আত্মপ্রকাশ না করবে এবং আকাশ থেকে ঘোষণা না আসবে যে, তোমরা তার অনুসরণ কর, ততদিন ফী সাবীলিল্লাহ কোনো জিহাদ করা যাবে না’।

একথাটির বাতুলতা এতই সুস্পস্ট, যার জন্য দলীল প্রমাণ নিষ্প্রয়োজন।” –শরহুল আকীদাতিত তাহাবিয়া, ইবনু আবিল ইয: ২/৪৪৩

যেহেতু জিহাদের জন্য আমীর শর্ত নয়, এজন্যই যখন অতর্কিত আক্রমণ হয়, তখন আমীর না থাকলে, আমীরের অনুমতি নেয়ার সুযোগ না থাকলে কিংবা আমীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদ করা ফুকাহায়ে কেরাম ফরয বলেছেন।

শারহুস সিয়ারিল কাবীরে এসেছে,

وإن نهى الإمام الناس عن الغزو والخروج للقتال فليس ينبغي لهم أن يعصوه إلا أن يكون النفير عاما. اهـ

“ইমাম যদি লোকজনকে যুদ্ধ করতে এবং কিতালে বের হতে নিষেধ করেন, তাহলে তাদের জন্য তার আদেশ অমান্য করা জায়েয নয়। তবে যদি নাফিরে আম হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন কথা।” -শারহুস সিয়ারিল কাবীর: ২/৩৭৮

মাজদুদ্দীন ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ (৬৫২ হি.) বলেন,

ولا يجوز الغزو إلا بإذن الإمام، إلا أن يفاجئهم عدوٌ يُخشى كَلَبُه بالإذن فيسقط. – المحرر في الفقه،  للإمام عبد السلام بن عبد الله بن الخضر بن محمد، ابن تيمية الحراني، أبو البركات، مجد الدين (المتوفى: 652هـ) (2/170 الناشر: مكتبة المعارف- الرياض، الطبعة الثانية 1404هـ)

“ইমামের অনুমতি ব্যতীত জিহাদ করা জায়েয নেই। তবে শত্রু আকস্মিক আক্রমণ করায় যদি অনুমতি নিতে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে অনুমতি নেয়ার বিধান রহিত হয়ে যাবে।” -আল মুহাররার ফিল ফিকহ: ২/১৭০ (মাকতাবাতুল মাআরিফ, রিয়াদ)

খতীব শারবিনী রহিমাহুল্লাহ (৯৭৭ হি.) বলেন-

]فصل ] فيما يكره من الغزو، ومن يحرم أو يكره قتله من الكفار، وما يجوز قتالهم به ( يكره غزو بغير إذن الإمام أو نائبه ) تأدبا معه، ولأنه أعرف من غيره بمصالح الجهاد، وإنما لم يحرم؛ لأنه ليس فيه أكثر من التغرير بالنفوس وهو جائز في الجهاد  …

تنبيه : استثنى البلقيني من الكراهة صورا .

إحداها : أن يفوته المقصود بذهابه للاستئذان .

ثانيها : إذا عطل الإمام الغزو وأقبل هو وجنوده على أمور الدنيا كما يشاهد .

ثالثها : إذا غلب على ظنه أنه لو استأذنه لم يأذن له. -مغني المحتاج، دار الكتب العلمية 1415 هـ. ج: 6، ص: 24

“ইমাম বা তার নায়েবের অনুমতি ছাড়া জিহাদ মাকরূহ। … তবে বুলকিনি রহিমাহুল্লাহ কয়েক সূরতকে এর ব্যতিক্রম বলেছেন।

০১. অনুমতি নিতে গেলে যদি মূল উদ্দেশ্য জিহাদই হাতছাড়া হয়ে যায়।

০২. যদি ইমাম ও তার সৈন্য-সামন্ত জিহাদ বন্ধ করে দেয় এবং দুনিয়ামুখী হয়ে পড়ে; যেমনটি বর্তমানে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।

০৩. যদি প্রবল ধারণা হয় যে, অনুমতি চাইলে অনুমতি দেবেন না।” –মুগনিল মুহতাজ: ৬/২৪

ইমামুল হারামাইন আব্দুল মালিক আল-জুয়াইনি রহিমাহুল্লাহ ‘গিয়াসুল উমামে’ইমাম না থাকার সময়ের করণীয় সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন:

فإذا شغر الزمان عن كاف مستقل بقوة ومنة، فكيف تجري قضايا الولايات، وقد بلغ تعذرها منتهى الغايات. فنقول:

– أما ما يسوغ استقلال الناس [فيه] بأنفسهم ولكن الأدب يقتضي فيه مطالعة (مطاوعة) ذوي الأمر، ومراجعة مرموق العصر، كعقد الجمع، وجر العساكر إلى الجهاد، واستيفاء القصاص في النفس والطرف، فيتولاه الناس عند خلو الدهر.

ولو سعى عند شغور الزمان طوائف من ذوي النجدة والبأس في نفض الطرق عن السعاة في الأرض بالفساد، [فهو] من أهم أبواب الأمر بالمعروف، والنهي عن المنكر.

– وإنما ينهى آحاد الناس عن شهر الأسلحة استبدادا إذا كان في الزمان [وزر] قوام على أهل الإسلام، فإذا خلا الزمان عن السلطان، وجب البدار على حسب الإمكان إلى درء البوائق عن أهل الإيمان.

ونهينا الرعايا عن الاستقلال بالأنفس من قبيل [الاستحثاث] على ما هو الأقرب إلى الصلاح، والأدنى إلى النجاح، فإن ما يتولاه السلطان من أمور السياسة أوقع وأنجع، وأدفع للتنافس، وأجمع لشتات الرأي في تمليك الرعايا أمور الدماء، وشهر الأسلحة، وجوه من الخبل لا [ينكرها] ذوو العقل.

وإذا لم يصادف الناس قواما بأمورهم يلوذون به فيستحيل أن يؤمروا بالقعود عما يقتدرون عليه من دفع الفساد، فإنهم لو تقاعدوا عن الممكن، عم الفساد البلاد والعباد. اهـ

“যদি এমন যামানা আসে, যখন শক্তি ও সক্ষমতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগ্য কোনো ইমাম না থাকে, তাহলে নেতৃত্ব—কর্তৃত্ব কীভাবে পরিচালিত হবে; যখন তা অক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে? (এর সমাধানে) বলবো,

যেসব বিষয় জনগণ নিজেরাই আদায় করে নেয়ার বৈধতা আছে, তবে আদব হল দায়িত্বশীল ও বিশিষ্ট জনদের অবগতি ও নির্দেশনা সাপেক্ষে করা; যেমন জুমআ কায়েম করা, জিহাদের জন্য বাহিনী প্রেরণ করা, হত্যা অথবা জখমের কেসাস নেয়া; ইমাম না থাকলে জনগণ নিজেরাই সেগুলো আঞ্জামের ব্যবস্থা নেবে।

ইমাম না থাকার সময়ে যদি শক্তিধর কিছু দল জমিনে সন্ত্রাস ও ফাসাদ বিস্তারকারীদের থেকে জনচলাচলের পথঘাটসমূহে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তা (শুধু বৈধই নয়, বরং) অতি গুরুত্বপূর্ণ আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকারের কাজ হবে।

(ইমামের অনুমতি ব্যতীত) জনগণ নিজেরাই (এসব বিষয়ে) পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা নিষেধ করেছিলাম অধিকতর শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও কামিয়াবি অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য। কেননা, সুলতান নিজে যে বিষয়ের পদক্ষেপ নেন ও পরিচালনা করেন, সেটি তুলনামূলক অধিক কার্যকর ও সফল হয়। বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা কম হয়। জনগণকে বিচারাচার ও অস্ত্র প্রয়োগের স্বাধীনতা দিয়ে দিলে অনেক রকমের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, যা কোনো বিবেকবান ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু জনগণের সার্বিক দেখা-শুনার মতো যোগ্য ইমাম যদি না থাকে, যার কাছে তারা আশ্রয় নেবে, তাহলে যতটুকু ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করার সামর্থ্য তাদের আছে, ততটুকুও আঞ্জাম না দিয়ে বসে থাকতে আদেশ দেয়া একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ, যতটুকু সামর্থ্যে আছে, ততটুকু যদি আঞ্জাম না দেয়, তাহলে দেশ—জনগণ সবকিছুই ফাসাদে ভরে যাবে।”-গিয়াসুল উমাম: ১/৩৮৬—৩৮৭

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার রহিমাহুল্লাহ একদম স্পষ্ট করেই বলেছেন, দিফায়ী জিহাদের জন্য কোনো শর্তই প্রযোজ্য নয়; বরং সকলের জন্যই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মোকাবেলা করা জরুরি। তিনি বলেন-

وأما قتال الدفع فهو أشدّ أنواع دفع الصائل عن الحرمة والدين، فواجب إجماعاً، فالعدوُّ الصائلُ الذي يفسد الدين والدنيا لا شيء أوجب بعد الإيمان من دفعه، فلا يشترط له شرط، بل يدفع بحسب الإمكان، وقد نصَّ على ذلك العلماء أصحابنا وغيرهم، فيجب التفريق بين دفع الصائل الظالم الكافر وبين طلبه في بلاده. -الفتاوى الكبرى (4/608)

“প্রতিরোধমূলক যুদ্ধ মুসলমানদের দীন ও সম্মানের উপর আক্রমণকারীকে প্রতিরোধ করার সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ স্তর, যা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয। যে আগ্রাসী শক্তি মুসলমানদের দীন-দুনিয়া ধ্বংস করে, ঈমানের পর তাকে প্রতিরোধের চেয়ে গুরুতর ফরয দ্বিতীয় আরেকটি নেই। এই ক্ষেত্রে কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়, বরং সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের ও অন্যান্য (মাযহাবের) ফুকাহায়ে কেরাম সকলেই তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব, (মুসলিম ভূমিতে আক্রমণকারী) আগ্রাসী জালেম কাফেরকে প্রতিহত করা, আর শত্রুকে তার আপন দেশে গিয়ে আগে বেড়ে তলব করা, এ দুইয়ের মাঝে ব্যবধান করা আবশ্যক।” -আল ফাতাওয়াল কুবরা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৬০৮

উল্লেখ্য, খলীফাতুল মুসলিমীন যাকে জিহাদের আমীর নিযুক্ত করবেন তিনিই আমীর। খলীফা না থাকলে কিংবা তিনি জিহাদ ত্যাগ করলে, যারা জিহাদের জন্য জামাআতবদ্ধ হবেন, তারা যাকে নিযুক্ত করবেন, তিনিই আমীর। পক্ষান্তরে পুরো দেশের সকল মুসলিমের ঐক্যবদ্ধ আমীর থাকতে হবে কিংবা সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের এক আমীর থাকতে হবে, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো সম্পূর্ণ বিভ্রান্তি। -সহীহ বুখারী: ২/৭২, হাদীস নং: ১২৪৬ (দারু তাওকীন নাজাহ); সীরাতে ইবনে হিশাম: ২/৩৮৯ (শারিকাতু মাতবাআতু মুসতফা ও আওলাদিহ, মিসর); আল-মুগনী: ৯/২০২ (মাকতাবাতুল কাহেরাহ) ফাতহুল বারী: ৬/১৮০ (দারুল ফিকির)

এখানে আরও যে বিষয়টি বুঝা জরুরি, তা হচ্ছে জিহাদের জন্য আমীর জরুরি, কিন্তু ইমামুল মুসলিমীন কিংবা খলীফাতুল মুসলিমীন জরুরি নয়। অনেকে জিহাদের জন্য খলীফা থাকাকেও শর্ত অথবা জরুরি বলে বিভ্রান্তি ছড়ায়। হ্যাঁ, মুসলিমদের যদি খলীফা থাকেন এবং তিনি জিহাদের কাজ আঞ্জাম দেন, তখন অবশ্যই জিহাদ তার অধীনেই হবে। কিন্তু খলীফা না থাকলে কিংবা খলীফা ফরয জিহাদ পরিত্যাগ করলে, খলীফাকে উপেক্ষা করেই ফরয জিহাদ আদায় করা জরুরি।

ইবনে কুদামা রহিমাহুল্লাহ (৬২০ হি.) বলেন,

فان عدم الامام لم يؤخر الجهاد لان مصلحته تفوت بتأخيره، وان حصلت غنيمة قسموها على موجب الشرع، قال القاضي وتؤخر قسمة الاماء حتى يقوم إمام احتياطا للفروج.اهـ

“যদি ইমাম না থাকে তাহলে এ কারণে জিহাদ পিছিয়ে দেয়া যাবে না। কেননা, পিছিয়ে দেয়ার দ্বারা জিহাদে নিহিত মাসলাহাত ও কল্যাণসমূহ হাতছাড়া হয়ে যাবে। গনীমত লাভ হলে হকদারদের মাঝে শরীয়তে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী বণ্টন করে নেবে। তবে কাজী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত লজ্জাস্থান হালাল হওয়ার বিষয়ে সতর্কতাবশত দাসীদের বণ্টন স্থগিত রাখবে।” –আলমুগনী: ১০/৩৭৪

শারহুস সিয়ারিল কাবীরে এসেছে,

وإن نهى الإمام الناس عن الغزو والخروج للقتال فليس ينبغي لهم أن يعصوه إلا أن يكون النفير عاما؛ لأن طاعة الأمير فيما ليس فيه ارتكاب المعصية واجب كطاعة السيد على عبده فكما أن هناك بعد نهي المولى لا يخرج إلا إذا كان النفير عاما فكذلك ها هنا. اهـ.

“ইমাম যদি লোকজনকে যুদ্ধ করতে এবং কিতালে বের হতে নিষেধ করেন, তাহলে তাদের জন্য তার আদেশ অমান্য করা জায়েয নয়।। তবে যদি নাফিরে আম হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন কথা। কেননা যেখানে আমীরের আনুগত্য করতে গেলে নাফরমানীতে লিপ্ত হতে হয় না, সেখানে আমীরের আনুগত্য ফরয। যেমন গোলামের জন্য মনিবের আনুগত্য ফরয। সেখানে যেমন মনিব নিষেধ করলে গোলাম জিহাদে যাবে না, তবে নাফিরে আম হলে (নিষেধ করলেও) যাবে, এখানে (ইমামের ক্ষেত্রে)ও বিষয়টি তেমনই।” -শরহুস সিয়ারিল কাবীর: ২/৩৭৮

والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

১৯-০২-১৪৪৫ হি.

০৫-০৯-২০২৩ ঈ.

আরও পড়ুনঃ নারীদের জন্য সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণের বিধান

Related Articles

Back to top button