পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন: গর্ভবতী মায়েরা কি তাদের শিশুদেরকে দুধ পান করাতে পারবে? এ ব্যাপারে একাধিক আলেম থেকে একাধিক মত শুনেছি। দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
-আবদুল মুকীত
উত্তর:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
حامدا ومصليا ومسلما، أما بعد!
গর্ভাবস্থায় দুধ পান করানোর ব্যাপারে দুই রকম হাদীস পাওয়া যায়। যেমন এক হাদীসে এসেছে,
عن أسماء بنتِ يزيدَ بنِ السَّكَنِ، قالت: سمعتُ رسولَ الله- صلَّى الله عليه وسلم- يقول:”لا تَقْتُلُوا أولادَكم سِرّاً، فإن الغَيْلَ يُدْرِكُ الفارِسَ فيُدَعْثِرُهُ عن فرسِه”. -سنن أبي داود ت الأرنؤوط (6/ 30) ، باب في الغَيْل، كتاب الطب. الرقم: 3881
আসমা বিনতে ইয়াযিদ রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (গর্ভাবস্থায় দুধ পান করিয়ে) তোমাদের সন্তানদেরকে অবচেতনভাবে হত্যা করো না। কারণ গর্ভাবস্থায় পান করানো দুধ ঘোড়সওয়ারকে আক্রান্ত করতে পারে এবং তাকে ঘোড়া থেকে ফেলে দিতে পারে (যা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে)।’’ -সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮১
অর্থাৎ পরিণত বয়সে এর প্রভাব দেখা দিতে পারে এবং ব্যক্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে। তবে এ নেতিবাচক প্রভাবটি সুনিশ্চিত এবং দৃশ্যমান নয় এবং খুব বেশিও নয়, বরং সামান্য ও অদৃশ্য। এ কারণে অন্যান্য হাদীসে গর্ভাবস্থায় দুধ পান করানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীসে এসেছে,
عن عبدِ الرحمن بنِ حَرْمَلَةَ أن ابنَ مسعودٍ كان يقولُ: كان نبيُّ اللهِ -صلَّى الله عليه وسلم- يَكْرَهُ عشرَ خِلالٍ: …وفسادَ الصبي، غَير مُحَرِّمِهِ. – سنن أبي داود ت الأرنؤوط (6/ 279)، باب في خاتم الذهب، كتاب الخاتم، الرقم: 4222
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০টি বিষয় অপছন্দ করতেন। (তন্মধ্যে একটি হলো: গর্ভাবস্থায় দুধ পান করিয়ে) শিশুকে আক্রান্ত করা, তবে এটাকে হারাম সাব্যস্ত করেননি।’’ -সুনানে আবু দাউদ: ৪২২২
অন্য হাদীসে এসেছে,
عَنْ جُدَامَةَ بِنْتِ وَهْبٍ الْأَسَدِيَّةِ، أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ، حَتَّى ذَكَرْتُ أَنَّ الرُّومَ وَفَارِسَ يَصْنَعُونَ ذَلِكَ، فَلَا يَضُرُّ أَوْلَادَهُمْ». -صحيح مسلم (2/ 1066)، الرقم: 1442، كتاب النكاح، بَابُ جَوَازِ الْغِيلَةِ، وَهِيَ وَطْءُ الْمُرْضِعِ، وَكَرَاهَةِ الْعَزْلِ
জুদামাহ বিনতে ওয়াহাব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি তো গর্ভাবস্থায় দুধ পান করানো নিষেধ করে দেয়ারই ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। তারপর মনে হলো, রোম-পারস্যের লোকেরা তো এটা করে, তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না।’’ -সহীহ মুসলিম: ১৪৪২
অন্য হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ، أَخْبَرَ وَالِدَهُ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ، أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: إِنِّي أَعْزِلُ عَنِ امْرَأَتِي، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِمَ تَفْعَلُ ذَلِكَ؟» فَقَالَ الرَّجُلُ: أُشْفِقُ عَلَى وَلَدِهَا، أَوْ عَلَى أَوْلَادِهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كَانَ ذَلِكَ ضَارًّا ضَرَّ فَارِسَ وَالرُّومَ». -صحيح مسلم (2/ 1067)، الرقم: 1443، كتاب النكاح، بَابُ جَوَازِ الْغِيلَةِ، وَهِيَ وَطْءُ الْمُرْضِعِ، وَكَرَاهَةِ الْعَزْلِ
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘‘আমি তো আমার স্ত্রীর সঙ্গে ‘আযল’ করি (সহবাসের সময় স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বাইরে বীর্যপাত করি কিংবা সহবাস করা থেকে বিরত থাকি।) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘কেন এমনটি কর?’’ লোকটি বলল, ‘‘আমার স্ত্রীর (দুগ্ধপোষ্য) সন্তানের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে (যাতে গর্ভবতী না হয়ে যায় এবং গর্ভাবস্থার দুধ পান করে তার ক্ষতি না হয়)।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তা ক্ষতিকর হতো তাহলে রোমক ও পারসিকদেরও ক্ষতি করতো।’’ -সহীহ মুসলিম: ১৪৪৩
মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ (১০১৪ হি.) বলেন,
قَالَ الْقَاضِيَ: كَانَ الْعَرَبُ يَحْتَرِزُونَ عَنِ الْغِيلَةِ وَيَزْعُمُونَ أَنَّهَا تَضُرُّ الْوَلَدَ وَكَانَ ذَلِكَ مِنَ الْمَشْهُورَاتِ الذَّائِعَةِ عِنْدَهُم، فَأَرَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَنْهَى عَنْهَا لِذَلِكَ فَرَأَى أَنَّ فَارِسَ وَالرُّومَ يَفْعَلُونَ ذَلِكَ وَلَا يُبَالُونَ بِهِ ثُمَّ إِنَّهُ لَا يَعُودُ عَلَى أَوْلَادِهِمْ بِضَرَرٍ فَلم يَنْهَ. اهـ مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (5/ 2092)
‘‘কাজী ইয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আরবরা গর্ভবতী অবস্থায় দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকতো। তারা মনে করতো, তা সন্তানের ক্ষতি করবে। এটা তাদের কাছে প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত ছিল। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করে দেওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখলেন, রোম ও পারস্যের লোকেরাও দেদারসে এটা করে, তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই আর নিষেধ করেননি।’’ -মিরকাতুল মাফাতিহ: ৫/২০৯২
অতএব, গর্ভবতী মা দুধের শিশুকে দুধ পান করানোতে মৌলিকভাবে অসুবিধার কিছু নেই। তবে কোনো মায়ের ব্যাপারে যদি প্রমাণ হয় যে, গর্ভাবস্থায় তার দুধ শিশুর ক্ষতি করবে, তাহলে তিনি বিরত থাকবেন। শিশুকে অন্য কোনো মহিলার মাধ্যমে দুধ পানের ব্যবস্থা করবেন।
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
২৯-১১-১৪৪৬ হি.
২৮-০৫-২০২৫ ঈ.