দাড়ি রাখার হুকুম কী?
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
প্রশ্ন:
আমি একজন ছাত্র। বর্তমান পরিস্থিতে কোন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বা চাকরিরত অবস্থায় দাড়ি রাখতে কঠোর নিষেধ আছে। এই স্যেকুলার সমাজে দ্বীন বুকে নিয়ে চলাই দায়। তো কিছু মানুষ এমন বলে, “চাকরি করার পর বা বিয়ে করার পর না হয় দাড়ি রাখ। [এটা শয়তানি ধোকা কিনা সেটাও সংক্ষেপে বলার অনুরোধ রইল] “এখন বর্তমান পরিস্থিতি মেনে চলো”। আমি কিন্তু কাটছাট দাড়িও রাখতে চাই না। সম্পূর্ণ শরিয়ত মোতাবেক দাড়ি রাখতে চাই। এখন আমার ও জেনারেল পড়ুয়া অন্যান্য ভাইদের জানার বিষয় হল, বর্তমান পরিস্থিতে এমন বাধার সম্মুখীন হলে আমরা কী করবো? শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু দাড়ি রাখা বা কাটা বৈধ? জানালে কৃতজ্ঞ হবো।
প্রশ্নকারী-গুলজার হুসাইন
উত্তর:
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد.
দাড়ি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। দাড়ি লম্বা রাখা সকল পুরুষের ওপর ওয়াজিব। মুণ্ডানো বা এক মুষ্টির কমে ছাঁটাই করা কাফের-মুশরিক ও অগ্নিপূজারীদের রীতি।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
خالفوا المشركين أحفوا الشوارب، وأوفوا اللحى -صحيح مسلم، رقم: 623؛ ط. دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت
“তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর। গোঁফ সম্পূর্ণ কর্তন কর, দাড়ি লম্বা রাখ।” -সহীহ মুসলিম: ৬২৫
ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে এসেছে-
أحفوا الشوارب وأعفوا اللحى -صحيح مسلم، رقم: 623؛ ط. دار الجيل بيروت + دار الأفاق الجديدة ـ بيروت
“গোঁফ সম্পূর্ণ কর্তন কর, দাড়ি লম্বা রাখ।” -সহীহ মুসলিম ৬২৩
অন্য হাদীসে এসেছে,
انهكوا الشوارب وأعفوا اللحى -صحيح البخاري، رقم: 5554؛ ط. دار ابن كثير، اليمامة – بيروت؛ تحقيق: د. مصطفى ديب البغا
“গোঁফ একেবারে ছোট কর, দাড়ি লম্বা রাখ।” -সহীহ বুখারি: ৫৫৫৪
উপরোক্ত হাদীসসমূহ সহ আরো বিভিন্ন হাদীস এবং সাহাবা ও তাবিয়িনের আমলের ভিত্তিতে উম্মাহর সকল ইমাম একমত যে, অন্তত এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর কমে ছাঁটাই করা বা মুণ্ডিয়ে ফেলা নাজায়েয।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
وأما إعفاء اللحية فإنه يترك، ولو أخذ ما زاد على القبضة لم يكره … فأما حلقها فمثل حلق المرأة رأسها وأشد لأنه من المثلة المنهي عنها وهي محرمة. اهـ . شرح العمدة فى الفقه- شيخ الإسلام ابن تيمية ج: 1، ص: 236؛ تحقيق د. سعود صالح العطيشان، الناشر: مكتبة العبيكان، سنة النشر 1413
“দাড়ি লম্বা রাখা সম্পর্কে কথা হল, দাড়ি না কেটে ছেড়ে দিতে হবে। অবশ্য এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেললে মাকরূহ হবে না। … কিন্তু দাড়ি মুণ্ডিয়ে ফেলা মহিলাদের মাথা মুণ্ডনোর মতোই (গুনাহ); বরং তার চেয়েও জঘন্য। কারণ এটি নিষিদ্ধ ‘মুছলা’ তথা চেহারা বিকৃতির পর্যায়ভুক্ত, যা হারাম।” –শরহুল উমদাহ: ১/১১৩
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১ হি.) বলেন,
وأما الأخذ منها وهي دون ذلك (أي دون القبضة – الراقم) كما يفعله بعض المغاربة ومخنثة الرجال فلم يبحه أحد. اهـ فتح القدير ج: 2، ص: 347؛ ط. دار الفكر
“একমুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা; যেমনটা কতক পশ্চিমা লোক এবং হিজড়াপ্রবণ লোকেরা করে থাকে, কোনো ইমামই এর বৈধতা দেননি।” -ফাতহুল কাদীর: ২/৩৪৭
ইবনে হাযম রহ. (মৃত্যু ৪৫৬ হি.) এ বিষয়ে ইজমা বর্ণনা করে বলেন,
واتفقوا أن حلق جميع اللحية مثلة لا تجوز. اهـ مراتب الإجماع لابن حزم ص: 157، الناشر : دار الكتب العلمية – بيروت
“সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, সম্পূর্ণ দাড়ি মুণ্ডিয়ে ফেলা ‘মুছলা’ তথা চেহারা বিকৃতির অন্তর্ভুক্ত, যা নাজায়েয।” -মারাতিবুল ইজমা: ১৫৭
অতএব, দাড়ি মুণ্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির নিচে ছাঁটাই করা জায়েয হবে না।
আর আপনি যে ঢালাওভাবে সকল ইন্টারভিউ ও চাকরির কথা বলেছেন, বিষয়টি আসলে এমন নয়। বরং এখনো এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে ইন্টারভিউ বা চাকরির জন্য দাড়ি প্রতিবন্ধক নয়। আপনি সেখানে যান। প্রয়োজনে ছোট চাকরি করেন। দ্বীন রক্ষার স্বার্থে এতটুকু বিসর্জন তো দিতেই হবে। বড় চাকরির আশায় শরীয়তবিরোধী কাজ করা জায়েয হবে না। তাও সম্ভব না হলে ব্যবসা করুন।
আর অনেকে যা বলে, চাকরির পর বা বিয়ের পর দাড়ি রেখো, এটি যে শয়তানের সুস্পষ্ট ধোঁকা, তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। এই নির্বোধেরা যে বলে, পরে দাড়ি রেখো, তারা কি আপনার জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, তার আগে আপনার মৃত্যু আসবে না। যদি তার আগেই মৃত্যু হয়ে যায়, তখন যে দাড়ি মুন্ডানো বিকৃত চেহারা নিয়ে আপনাকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে, তখন কি তারা আপনার জবাব দিতে পারবে? বা আপনি পারবেন?
আপনি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের ওপর অটল থাকার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন এবং দুনিয়ার তুচ্ছ কিছু ভোগ বিলাসের বিষয় ত্যাগ করে আমল শুরু করে দেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আপনার দুনিয়া আখেরাতে সুব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তাহলে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।” -সূরা তালাক (৬৫) : ২-৩
এক হাদীসে এসেছে,
إنك لن تدع شيئا اتقاء الله عز وجل، إلا أعطاك الله خيرا منه. رواه احمد: 5/78
“তুমি আল্লাহর ভয়ে যে কোনো জিনিস বর্জন করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করবেন।” মুসনাদে আহমাদ: ৫/৭৮
والله سبحانه وتعالى أعلم وعلمه أتم وأحكم
আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)
০৪-১২-১৪৪১ হি.
২৬-০৭-২০২০ ইং
আরো পড়ূন
নিরাপত্তার স্বার্থে কি দাড়ি কেটে ফেলা যাবে?
দ্বীনের কাজের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কি দাড়ি কামানো যাবে?