বিবিধফাতওয়া  নং  ৫৬০

মাযারের টাকা খরচ করার সঠিক খাত

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন 

প্রশ্ন:

একটি মাজারে প্রতি মাসে প্রচুর পরিমাণে টাকা জমা হয়। দ্বীনের সঠিক বুঝ রাখেন এমন কিছু লোক কিছু দিন আগে সেই মাজার কমিটির দায়িত্বশীল নিযুক্ত হন। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, উক্ত মাজারের টাকাগুলো শরীয়ত সম্মতভাবে খরচ করার সঠিক খাত কী? বিস্তারিত জানালে টাকাগুলো তাঁরা সেভাবেই খরচ করবেন।

-মুহাম্মদ আবদুল্লাহ

উত্তর:

بسم الله الرحمن الرحيم

حامدا ومصليا ومسلما أما بعد!

এক. মাযারে টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র দেয়া বিদআত। কবরবাসীকে খুশি করার জন্য তার নামে মান্নত করা কুফর। -আল-বাহরুর রায়েক (আল-মাকতাবুল ইসলামী): ২/৩২০; রদ্দুল মুহতার (দারুল ফিকর): ২/৪৩৯

 

অতএব মাযার কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ হবে, এই ঈমান বিধ্বংসী কাজের ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা এবং তা থেকে বিরত রাখা ও নিরুৎসাহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ উদ্দেশ্যে নগদে যে কাজটি করা যায়, তা হলো প্রতিটি দানবক্সের পাশে একটি ঘোষণাপত্র টানিয়ে দেয়া, যাতে বড় ও স্পষ্ট হরফে নিম্নোক্ত পয়েন্টগুলো লিখা থাকবে (এটি একটি নমুনামাত্র। বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ সাপেক্ষে সেখানকার পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু রদবদলও করা যেতে পারে),

১. মান্নত একটি ইবাদত, যা শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য করা যায়। পক্ষান্তরে কবরবাসীকে খুশি করার জন্য মান্নত করা কুফর। এতে দাতা ঈমানহারা হয়। কবরবাসীরও কোনো উপকার হয় না।

২. মৌলিকভাবে কবর বা মাযার দানের ক্ষেত্র নয়। হাঁ, কেউ চাইলে মুসলিম গোরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণে দান করতে পারে।

৩. কবরবাসীকে সাওয়াব পৌঁছানোর জন্য যেকোনো কল্যাণের কাজে বা যেকোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করা যায়।

৪. এই দানবক্সের সকল অর্থ নিম্নোক্ত খাতসমূহে ব্যয় করা হবে;

(এরপর শরীয়ত সম্মত যেসব খাতে কর্তৃপক্ষ উক্ত অর্থ খরচ করতে পারবেন, সেগুলো লিখে দিবেন। উদাহরণত:)

ক. উক্ত গোরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ।

খ. সংশ্লিষ্ট মসজিদের যাবতীয় খরচ।

গ. সংশ্লিষ্ট মক্তব/মাদরাসার যাবতীয় খরচ।

ঘ. এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী শরীয়ত সম্মত যেকোনো জনকল্যাণমূলক কাজ।

এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের পূর্বে যেসব অর্থ জমা হয়েছে, সেগুলো এমন দ্বীনি ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করবে, যাতে দাতাদের মৌন সমর্থন রয়েছে। এই জন্য নিচে কিছু পরামর্শমূলক উদ্যোগের কথা তুলে ধরছি:

ক. মাযারের নিকটস্থ মসজিদ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। মসজিদের প্রয়োজনীয় খরচ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ব্যয়ভার বহন এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

খ. মসজিদভিত্তিক মক্তব কার্যক্রম চালু করা এবং চালু থাকলে তা জোরদার করা।

গ. মসজিদভিত্তিক দ্বীনি তালিম, বয়স্ক শিক্ষা ও দ্বীনি আলোচনার কার্যক্রম চালু করা কিংবা জোরদার করা। মুসলিম জনসাধারণের মাঝে মৌলিক দ্বীনি ইলম বিতরণ এবং বিশেষ করে মাযারভিত্তিক শিরকি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ধীরে ধীরে সচেতনতা তৈরি করা, এর একটি মৌলিক উদ্দেশ্য থাকবে।

ঘ. হক্কানী উলামায়ে কেরামকে দাওয়াত করে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক দ্বীনি আলোচনার ব্যবস্থা করা।

ঙ. নির্ভরযোগ্য আলেমদের মাধ্যমে দ্বীনি সচেতনতামূলক পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরি করে বিতরণ করা।

চ. অসহায় গরীবদের সহযোগিতা কার্যক্রম চালু করা।

ছ. মেধাবী ও গরীব তালিবুল ইলমদের সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করা। নগদ আর্থিক সাহায্য প্রদান, প্রয়োজনীয় কিতাব বিতরণ ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

বিজ্ঞ আলেম-উলামা ও দ্বীনদার বিজ্ঞজনদের সাথে পরামর্শ করে এ জাতীয় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৫/৫২৭; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ১/৩১৬, ১/৩২০, ১৫/১৬৫; ফাতাওয়া দীনিয়া: ১/২৩২, ১/২৭৮

فقط، والله تعالى أعلم بالصواب

আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি (উফিয়া আনহু)

২৯-১১-১৪৪৬ হি.

২৮-০৫-২০২৫ ঈ.

Related Articles

Back to top button